এসআই নিয়োগে ভাইভার প্রস্তুতি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পুলিশের বহিরাগত ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আপনারা যাঁরা সাব-ইন্সপেক্টরের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন। যেকোনো লিখিত পরীক্ষা দিয়ে জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করা হয়। আর ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া হয় আপনাকে যে চাকরিটা দেওয়া হবে, সেটার জন্য আপনি কতটা যোগ্য সেটা সামনাসামনি যাচাই করতে। সুতরাং এখানে কিন্তু বুঝতে বাকি থাকে না যে আপনাকে সুন্দরভাবে ভাইভা বোর্ডের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

ভাইভায় আপনি কতগুলো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনি কতটা সাহস ও কনফিডেন্সের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। আপনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটার পরিপ্রেক্ষিতে না বলাটার মধ্যেও একটা শিল্প থাকা উচিত বলে মনে করি।

সর্বোপরি একটা কথা মনে রাখতে হবে, সুযোগ জীবনে বারবার আসে না। তাই আপনার যতটুকু সাহস ও মনোবল থাকবে, ততটুকু দিয়েই ভাইবা ফেস করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, আপনার কনফিডেন্স আপনাকে আপনার সফলতার কাছে নিয়ে যাবে। আসুন এবার আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

আমি প্রথমেই রানি এলিজাবেথের একটা বিখ্যাত বাণী দিয়ে শুরু করছি। তিনি বলেছেন ‘A good face is the best letter of recommendation’. এ কথাটার সঙ্গে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। আমি কথাটা মনে ধারণ করেই ভাইভা বোর্ডে ঢুকেছিলাম। কিন্তু এতটা বেশি ধারণ করেছিলাম যাতে আমার ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাকে দেখে বলেই ফেলেছিলেন, ‘বা বা, তোমাকে তো চার্লি চ্যাপলিনের মতো লাগছে।’ তাই বেশি সিরিয়াসনেস না দেখানো ভালো। তবে আমি কিন্তু মোটেও ভয় আর লজ্জাও পাইনি। কারণ আমি জানতাম যে হয়তো আমাকে ও আমার কনফিডেন্স লেভেলকে পরীক্ষার জন্য এমন করে বলেছেন। তাই আমি আমার জায়গা থেকে খুব একটা বিচলিত হইনি। সত্যি বলতে কি, সেই সেদিনের ভাইবা বোর্ডের চার্লি চ্যাপলিন আজকের সাব-ইন্সপেক্টর। তার মানে আমাকে কিন্তু মজা করেই চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন। চাকরির বাজারে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি হিসেবে সাব-ইন্সপেক্টরের গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই বেশি। এতক্ষণ কিন্তু আমার কথাই বলে যাচ্ছি। এবার আসি আসল কথায়।

ভাইভা বোর্ড: আমাদের সময় ভাইভা বোর্ড ছিল একটা। কিন্তু গত বছর তিনটা বোর্ড করেছিল। এটা নির্ভর করে পরীক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর। বোর্ড সাধারণত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট হয়। সদস্য ছয়জনও থাকতে পারেন। কিন্তু সেটা নিয়ে আপনি না ভাবলেও চলবে। আপনাকে ভাবতে হবে আপনি একা হলেও তাঁদের ছয়জনের চেয়ে আপনি বেশি পারেন। মূলত তাঁরা সবাই চান আপনাকে চাকরিটা দিতে। কিন্তু আপনাকে সেটা অর্জন করতে হবে। ভাইভা বোর্ডের সবাই আপনাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করবেন। আপনি আস্তে আস্তে করে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবেন। যদি কোনো উত্তর না পারেন, তবে মুখে হাসি রেখে সুন্দর করে বলুন, ‘স্যার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।’ কিন্তু মনের ভুলেও না পারলে আমতা-আমতা করবেন না। এটা আপনার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

যেসব বিষয়ে প্রশ্ন আপনাকে জিজ্ঞেস করা হতে পারে ভাইভা বোর্ডে
# আপনার সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন করবেই। সুতরাং আপনার সাবজেক্টের বেসিক প্রশ্ন সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা রাখবেন। সাবজেক্টিভ প্রশ্ন না পারা কিন্তু ডিসক্রেডিট। আর এ ক্ষেত্রে আপনার ওপর একটা খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে।

# আপনাকে বর্তমান সরকারের অর্জন, মুক্তিযুদ্ধে আপনার জেলা-থানা প্রভৃতি বিষয় ভালো করে জেনে নিতে হবে। আপনার জেলার সবকিছু খুঁটিনাটি জানতে হবে। আপনার জেলার কুখ্যাত ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম জানতে হবে। আপনার জেলা কেন বিখ্যাত? এগুলো জানতে হবে।

# এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যাবেন। এখান থেকে প্রশ্ন হবেই। বিশেষ করে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ সালের ঘটনাগুলো প্রেক্ষাপটসহ দেখে যাবেন।

# একটি বা দুটি ইংরেজি ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেকোনো গ্রামার বইয়ের এ সংক্রান্ত অংশটি দেখে যাবেন। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। খুব সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে। যেমন ধরুন—এখান থেকে ৩৩টি পতাকা দেখা যাচ্ছে, এখন পাঁচটা বাজে, টেবিলে একটা কলম রয়েছে, আমার পকেটে একটা কলম আছে ইত্যাদি।

# আপনার নামের অর্থ জেনে যেতে ভুলে যাবেন না। আপনার নামের বিখ্যাত কেউ থাকলে অবশ্যই তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যাবেন।

# বর্তমানে আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। যেমন: কাশ্মীর সমস্যা, রোহিঙ্গা সমস্যা ও এর সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব, উত্তর কোরিয়া সমস্যা। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার পর থেকে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংখ্যাগুলো ভালোভাবে পড়ে নেবেন। এখান থেকে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।

ভাইভা পর্যালোচনা
পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদের ভাইভা নম্বর ১০০। ভাইভাতে উপস্থিত হলে ৫০ নম্বর। এই ৫০ নম্বর মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়, যা আপনি আপনার বোর্ডের সামনে নিজেকে সঠিক উপস্থাপনের মাধ্যমে পেতে পারেন। বাকি ৫০ নম্বর নির্ভর করবে আপনার প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া ও মার্জিত আচার-ব্যবহারের ওপর।

চাকরি নিশ্চিত করতে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ভাইভাতে ভালো করা জরুরি।

মৃদুল মিত্র
সাব-ইন্সপেক্টর,
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ,
ওয়ারী বিভাগ, ঢাকা।