হোম অফিসে চাপে ভারতের চাকরিজীবীরা, চান না অফিসে ফিরতে

ঘরে বসে কাজের কারণে বেড়েছে কর্মঘণ্টা।
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ এর নয়া বাস্তবতায় চলছে হোম-অফিস। অনেক প্রতিষ্ঠান চায়, তাদের সব কর্মী সব সময়ের জন্যই ঘরে থেকে কাজ করুন। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার তা চায় না। তবে কর্মকর্তারা যা-ই ভাবুন না কেন, ঘরে থেকে যাঁরা কাজ করছেন তারা চাপ অনুভব করছেন, বিষণ্ন বোধ করছেন। ভারতের এক-তৃতীয়াংশ কর্মী গত ৭ মাস ধরে বাড়িতেই অফিসের কাজ করছেন। হোম অফিসের কাজ করার কারণে ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করেছে তাদের ওপর। অফিসের সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করার কারণে ৩৫ শতাংশ ভারতীয় কর্মী স্নায়বিক চাপে ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন। মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটের ওয়ার্ক ট্রেন্ড ইনডেক্স সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্ক্রল ডট ইনের খবরে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ঘরে থেকে অফিসের কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠানই। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা হোম অফিস করছেন। প্রায় আটটি দেশের ছয় হাজার কর্মীর ওপর পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে মাইক্রোসফট জানায় ‘এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ ভারতীয় কর্মী ঘরে থেকে বেশি কাজ করার ফলে অবসন্নতায় ভুগছেন। দেশটিতে যারা হোম অফিসে চাকরি করছেন তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চাকরিজীবীরা বলছেন, বাড়িতে কাজের পরিবেশ আলাদা রাখতে সমস্যা হচ্ছে। আর বাসায় কাজের ফলে বেড়েছে কর্মঘণ্টা। তবে তারা কিন্তু আবার অফিসে ফিরে কাজ করতে চান না।  

সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করায় ৩৫ শতাংশ ভারতীয় চাকরিজীবী বাড়তি চাপ পড়ার কথা জানিয়েছেন।
ছবি: সংগৃহীত

গত ২৫ মার্চ ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই ঘরে থেকে কাজের নিয়মটি বাধ্যতামূলকভাবে চালু করে দেশটির সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। দেশটির বেশির ভাগ স্থান এখন লকডাউনের আওতামুক্ত থাকলেও, বেশ কিছু কোম্পানি এখনো তাদের কর্মীদের হোম অফিসের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সংক্রমণ রোধ এবং কর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এ ছাড় দিচ্ছে তারা। লকডাউন উঠে যাওয়ার ফলে কিছু দপ্তর খুললেও সেখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।

বাড়িতে কাজের পরিবেশ আলাদা রাখার সমস্যা

৪০ শতাংশ ভারতীয় চাকরিজীবী জানান, বাড়িতে থেকে কাজ করার সময় তারা ব্যক্তিগত জীবন এবং অফিসের কাজের মধ্যে খুব কম পার্থক্য অনুভব করছেন। মহামারিতে অনলাইনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার কারণেই তারা মানসিকভাবে ক্লান্তি অনুভব করছেন।

এ ছাড়া, সহকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে কাজের নতুন পরিবেশও তাদের স্নায়ু চাপ সৃষ্টি করছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৫ শতাংশ ভারতীয় চাকরিজীবী তাদের এমন অনুভূতির কথা জানান। এত চাপের পরও অবশ্য অনেক ভারতীয় অফিসে ফিরতে চাইছেন না। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। ভারতে চলছে করোনার মারাত্মক সংক্রমণ। বিশ্বের দুই নম্বর স্থানে উঠে এসেছে দেশটি আক্রান্তের সংখ্যায়। ৭০ লাখের বেশি আক্রান্তের দেশে ইতিমধ্যেই প্রাণহানি এক লাখ ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় ৪০ শতাংশ ভারতীয় কর্মী জানিয়েছেন, অফিসে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে তারা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন।

এর আগে অ্যাসোসিয়েট চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (অ্যাসোচ্যাম) এবং প্রাইমাস পার্টনার্সের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছিল, চাকরিজীবীদের এক-চতুর্থাংশ বাড়ি থেকে অফিসের সব কাজ করতে আগ্রহী। অথবা নিজ সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের সময়ে রদবদল করার নীতিতে বিশ্বাসী। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে ১৮% চাকরিজীবী পুরোপুরি বাড়ি থেকে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। আর ৫৬% আংশিকভাবে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করায় আগ্রহী। ২৬ শতাংশ অফিসে গিয়ে কাজ করতে চান। এতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গণপরিবহন এড়াতে চাইছেন অধিকাংশ অফিসগামীযাত্রী। পরিবর্তে তাঁরা বাড়ি বসে অফিসের কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ভারতের নয়াদিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দারাবাদ, কলকাতা, আমদাবাদ ও পুনে শহরের বাসিন্দাদের ওপরে এ সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন