গণিত ও বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো করতে হলে...

বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো করতে হলে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতো করে ছোট ছোট নোট করতে পারেন
ছবি: চাকরি–বাকরি

লিখিত পরীক্ষায় যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি নম্বর তোলার সুযোগ আছে তা হলো গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা। এতে চেষ্টা করলে ৯০-এর বেশিও পাওয়া যায়। আবার ঝুঁকিও আছে। না পারলে অতি দ্রুতই নম্বর কাটা শুরু হবে। তবে আশার কথা হলো, গণিতের একটা পরিসীমা আছে। ভালো করে চর্চা করলে কমন পড়বে বা জানা সূত্র ও কমনসেন্স দিয়ে মিলিয়ে দিয়ে আসা যাবে। আর মানসিক দক্ষতা হলো অনেকটা ৫০ নম্বরের প্রিলিমিনারির মতো। যেকোনো বিষয় আসতে পারে।

এখানে গাণিতিক যুক্তিতে ৫০ নম্বর বরাদ্দ আছে, যাতে বীজগণিত, পাটিগণিত ও জ্যামিতি তিনটি অংশ থেকেই প্রশ্ন হবে। কখনো কখনো উচ্চতর গণিতের কিছু অংশ থেকেও ইদানীং প্রশ্ন করে পিএসসি। ৫ নম্বর করে দশটির উত্তর করতে হতে পারে। আবার কিছু গুচ্ছ বা জোড়া ও একক প্রশ্নও থাকতে পারে। সেটি নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। গণিত জানা থাকলে সব ফরম্যাটেই উত্তর দিয়ে আসা যাবে। আর মানসিক দক্ষতায় ৫০টি বিভিন্ন বিষয়ে এমসিকিউর উত্তর করতে হবে। প্রতিটি ভুলের জন্য অর্জিত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। এটিই লিখিত পরীক্ষার একমাত্র নেগেটিভ মার্কিং। প্রস্তুতির জন্য কী করা যায়, তা বলা যাক।

অ) বিগত বছরের গণিত ও মানসিক দক্ষতার অংশগুলো খুব ভালো করে শেষ করবেন। এমনকি জ্যামিতিগুলোও। কারণ, গণিত প্রশ্ন রিপিট হতে দেখা গেছে।

আ) ১৯৯৭ সালের পূর্বের নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের একটা গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। এটি লিখেছেন দেবব্রত চাকী। মূল বইটা আর পাওয়া যায় না। এর পাটিগণিত অঙ্কগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সরল, সুদকষা, ক্ষেত্রফল, বর্গ, উৎপাদক, ঐকিক নিয়ম উল্লেখযোগ্য।

ই) বর্তমান নবম-দশম শ্রেণির বীজগণিত ও জ্যামিতি বই উদাহরণসহ শেষ করতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এখান থেকে প্রশ্ন হবেই।

ঈ) জ্যামিতি অংশের জন্য অধ্যায় দুই ও অধ্যায় পাঁচ ভালো করে পড়বেন। কমপক্ষে ২০টি উপপাদ্য আয়ত্তে রাখবেন।

উ) বাসায় গণিত অনুশীলন করার সময় শর্টকাট করবেন না। পুরো অঙ্ক লিখে করবেন। জ্যামিতির ক্ষেত্রে পুরো জ্যামিতি না দেখে লিখবেন। না হলে পরীক্ষার হলে গিয়ে মেলাতে পারবেন না। তাই সাবধান।

ঊ) কোনো অধ্যায় বা অঙ্ক যদি খুব কঠিন লাগে, তা করতে যেয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করবেন না। ছেড়ে দিন।

ঋ) অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞান আপনাকে মানসিক দক্ষতায় ভালো করতে সাহায্য করবে। এই অংশটি সতর্কভাবে উত্তর করবেন। প্রশ্ন খুব বেশি কঠিন বা অজানা হলে কম উত্তর করবেন। কারণ, নেগেটিভ মার্কিং আছে কিন্তু যা দাগানোর সময় অনেকেই ভুলে যায়। যদি সম্ভব হয় জয়কৃষাণ ও প্রেমকৃষাণের লেখা ‘How to crack test of Reasoning’ বইটি থেকে মানসিক দক্ষতা অনুশীলন করতে পারেন। বইটি অনলাইনেও পিডিএফ আকারে পাওয়া যায়।

এ) বাজার থেকে যেকোনো একটি গণিত লিখিত গাইড সংগ্রহ করে করে নেবেন। ওরাকল হতে পারে।

ঐ) রিভিশন করার সময় সব অঙ্ক করতে যাবেন না, শুধু কঠিন অংশগুলো দেখবেন।

ও) গণিতের বিভিন্ন সূত্র রয়েছে। সব সূত্র অবশ্যই আয়ত্তে রাখতে হবে। যেমন বেলনের আয়তনের সূত্র না জানলে ওই অঙ্ক আপনি কখনোই মিলিয়ে আসতে পারবেন না। সব সূত্র আলাদা একটা জায়গায় নোট করা থাকলে রিভিশন বা পড়ার সময় সুবিধা হয়।

ঔ) গণিতে বেশি দুর্বল হলে গণিতে অভিজ্ঞ এমন কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। তা ছাড়া পড়ার রুটিনে প্রতিদিন গণিতচর্চা রাখবেন।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি নিয়ে বলছি। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ নম্বর বরাদ্দ আছে এবং সময় ৪ ঘণ্টা। ৪০টি ছোট প্রশ্নের উত্তর করতে হয় কখনো, কখনো আবার বড় প্রশ্নও থাকে, কখনো টীকাও থাকে কিছু, ছোট প্রশ্নও থাকতে পারে। নতুন নিয়ম করা হয়েছে, এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রশ্ন থাকবে ৫০ নম্বরের মতো। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে উত্তর শেষ করে আসাই মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ বিষয়াবলির পরিধি অনেক বড়। তা ছাড়া এর অর্জিত জ্ঞান অন্যান্য বিষয়, যেমন বাংলা ও ইংরেজি রচনায় কাজে লাগে। তাই একে খুব গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। বিশেষ করে তথ্য মাথায় রাখতে হবে। তথ্য জানা থাকলে বডি দাঁড় করাতে পারবেন। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো করতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন...

ক) বিগত বিসিএস পরীক্ষার শুধু টীকা ও ছোট প্রশ্ন পড়বেন। এখানে কিছু বিষয় আছে, যা বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে বা আর নেই, তা বাদ দিন।

খ) সমসাময়িক বিষয় ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন (‘চলতি ঘটনা’ হতে পারে) থেকে ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ অবশ্যই পড়বেন।

গ) নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস বইটি আরেকবার রিডিং দিয়ে দেবেন।

ঘ) বাংলাদেশ সংবিধান থেকে ১ থেকে ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত খুব ভালো করে পড়বেন। এর পরের অনুচ্ছেদগুলো বাছাই করে পড়বেন। আর সংবিধান লেখার সময় নিজের ভাষায় লিখবেন।

ঙ) অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২১ থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য পড়ে নেবেন। আর ছক মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রথম ও সর্বশেষ তথ্য, হার বা চিত্র মাথায় রাখলেই হবে।

চ) প্রফেসর মোজাম্মেল হকের লেখা ‘উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন’ দ্বিতীয় পত্র বইটি পড়বেন। ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি মনে রাখলেই হবে।

ছ) সমসাময়িক জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালো করে পড়বেন। যেমন করোনা পরিস্থিতি, টীকাদান কর্মসূচি, করোনায় অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি।

জ) ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন পড়ার সময় পয়েন্ট, উক্তি, তথ্য, গ্রন্থের নাম ইত্যাদি বেশি মনে রাখবেন।

ঝ) সম্ভব হলে বিভিন্ন বিষয়ে ছোট ছোট করে নিজের মতো করে নোট করতে পারেন। পরীক্ষার আগে রিভিশনে কাজে লাগবে।

ঞ) ‘সম্পাদকীয় সমাচার’ নামে একটি পুস্তিকা সংগ্রহ করে নিতে পারেন, যাতে পত্রিকা থেকে সংগৃহীত সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ও বাংলা কলাম আছে।

ট) বাজারে প্রচলিত যেকোনো একটি বাংলাদেশ বিষয়াবলির লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। একটিই যথেষ্ট।

ঠ) যেকোনো মূল্যেই হোক, পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে কম করে লিখবেন। কম জানা থাকলেও ধারণার ওপর কিছু একটা লিখে দিয়ে আসবেন।

ড) অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাদেশ বিষয়াবলিতেও রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যত রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি থাকবে, লেখা তত ভারী।

ঢ) প্রতিটি প্রশ্নের শুরুতে ছোট্ট একটা ভূমিকার মতো থাকবে এবং শেষে অল্প করে সমাপনী বক্তব্য দিয়ে দেবেন। সেটা দু-তিন বাক্যও হতে পারে।

ণ) নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন। এটি আপনাকে ব্যাপক সাহায্য করবে। পত্রিকার কোন কোন টপিক পড়বেন, তা বলা হলো।

সংবাদপত্রকে বলা হয় Store House of Knowledge. এটি আমরা ছোটবেলায় পড়েছি। কথাটি ঠিক তা-ই। কারণ, সংবাদপত্রে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই থাকে। অতীতে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ দিন আসলে ওই বিষয়ের ওপর আলোচনা ও স্মৃতিচারণা থাকে। আর বর্তমানের সব চিত্র তো থাকেই। থাকে ভবিষ্যতে ঘটবে, এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আভাস। সুতরাং সংবাদপত্র এবং এর তথ্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক মাত্রায় বাড়াতে সাহায্য করবে।

একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে আপনাকে একটু সতর্কভাবেই পত্রিকাটি পড়তে হবে। কারণ, আপনাকে অনেক কিছু পড়তে হয়।

তাই সংবাদপত্রের যে টপিকস পড়বেন ও নোট করবেন, তা নিচে দেওয়া হলো।

● সড়ক দুর্ঘটনা, কারণ, চিত্র ও নিরাপত্তা

● বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস উৎপাদন ও পরিকল্পনা

● বিশ্ব ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদন

● রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইরান, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, ভারত ইত্যাদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

● ঢাকার যানজটচিত্র

● নগরের অবস্থা

● দুর্নীতিচিত্র (বাংলাদেশ ও বিশ্ব)

● পোশাক, চামড়া ও পর্যটনশিল্প

● আইসিটি অবস্থা (মোবাইল ও ইন্টারনেট)

● পরিবেশবিষয়ক প্রতিবেদন

● ব্যাংকিং সেবা ও সামগ্রিক হালচাল

● নারীবিষয়ক খবর

● মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা

● সমুদ্র অর্থনীতি

● জিডিপি পরিস্থিতি

● গুরুত্বপূর্ণ দিবসের প্রতিপাদ্য

● বিদেশে কর্মী প্রেরণের চিত্র ও প্রবাসী আয়

● মাদক পরিস্থিতি

● রপ্তানি ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগচিত্র

● গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সম্মেলন ও প্রতিপাদ্য

● চিকিৎসাসেবার বর্তমান চিত্র

● বিশেষ ক্রোড়পত্র ( যেমন ৭, ৮, ১৭, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ৫ জুন)

● বাংলাদেশি খেলোয়াড় ও দলের যেকোনো বড় অর্জন।

● সরকারের মেগা প্রকল্পর প্রতিবেদন (যেমন মেট্রোরেল)

● ঢাকায় নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত

● উগ্রপন্থী সংগঠনবিষয়ক প্রতিবেদন

● শিশু-কিশোরদের অবস্থা ও প্রতিবেদন এবং নির্যাতন

● করোনা পরিস্থিতি

● চলমান সংকট (বিশ্ব ও বাংলাদেশ)

উপরিউক্ত বিষয়গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে ও নোট করে রাখতে হবে। তথ্যসূত্রও লিখে রাখবেন এবং পরীক্ষার খাতায় যথাসম্ভব উপস্থাপন করতে হবে। আশা করি পত্রিকার কোন বিষয় পড়তে হবে, তা নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

ত) বাংলা অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক বেশ কিছু ঘটনা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। যেমন পলাশীর যুদ্ধ, বঙ্গভঙ্গ, শোষণের ২৪ বছর ইত্যাদি।

এভাবে যদি ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন এবং পরীক্ষার খাতায় ঠান্ডা মাথায় উপস্থাপন করে আসতে পারেন, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো একটা নম্বর আসবে প্রত্যাশা করি। তাই সময় নষ্ট না করে কাজে লেগে পড়ুন। ধন্যবাদ সবাইকে।