সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আমি লজ্জিত

ছবি প্রথম আলো
ছবি প্রথম আলো

আহারে! একটু ডাইল রান্না করতে পারলাম না। তৃতীয়বারের মতো রাজীবের মামাতো বোন বললেন।
অনেক কিছুই তো করেছেন। মুরগির রান চিবোতে চিবোতে মনে মনে বললাম, আমরা ভালো ছেলে, ডাইল খোর না।
বিদায় নেওয়ার আগে আরও অন্তত দুবার বললেন, রাজু, তোর বন্ধুটারে নিয়া আসলি কিছুই খাওয়াইতে পারলাম না। একটু ডাইলও রান্না করতে পারলাম না।
সেদিন রিকশায় করে ফেরার সময় রাজীব বলল, কিছু মনে করিস না। আমার এই দিদিটা একটু অন্যরকম। অন্য রকমই বটে! না হলে কি একটা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছেলের প্রতি কেউ এত মায়া দেখান!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যখন হিন্দুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলে তখন সেই মমতাময়ী বোনটিকে বলতে ইচ্ছে করে, ক্ষমা করো দিদি, আমাদের জন্য এত মায়া দেখিয়ো না। আমরা তোমাদের এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

যখন স্কুলে পড়ি পূজার সমর দলবেঁধে যেতাম রণজিৎ, সঞ্জয় ও জয়দের বাড়িতে। খাতির করে ঘরে নিয়ে গিয়ে নাড়ু-সন্দেশ খেতে দিত। আসার সময় আবার একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিত কখনো কখনো। আমাদের ঈদের সময় আমরা হিন্দু বন্ধুদের দাওয়াত করতাম। তারা আসত ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। এটাই তো আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সংস্কৃতি। আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য।
একটা ছবি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। কাবা শরিফের ওপর একজন হিন্দু দেবতাকে বসিয়ে সেটা ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যে এটা করেছে সে যে অন্যায় করেছে, ইসলামের অবমাননা করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে অন্যায়টা করেছে শাস্তি তো তারই পাওয়া উচিত। ইসলাম বলে, একের দোষে অন্যকে দোষী করা যাবে না। তাহলে গণহারে হিন্দুদের ওপর যারা হামলা চালাল, বাড়িঘর পোড়াল অথবা লুটপাট করল তারাও তো অন্যায় করল।
কাবা শরিফের ওপর এক হিন্দু দেবতাকে বসিয়ে দেওয়া আর হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করা; দুটোই গর্হিত কাজ, ধর্মের অবমাননা।
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। জেনে রেখ, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এই বাড়াবাড়ির কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, পুরো ব্যাপারটাই অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনার জন্য আমার বন্ধুমহল, ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগণ, সর্বোপরি সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে আমি লজ্জিত।