প্যারিসে একুশে বইমেলা

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী একুশে বইমেলা। এবার মেলার স্লোগান ছিল ‘শিক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশের চেতনায় জেগে ওঠো বিশ্ব তারুণ্য’। এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের ফ্রান্স শাখা। ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় একুশের চেতনা ও বর্তমান বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা। এরপর আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন যুব ইউনিয়নের ফ্রান্স শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট রমেন্দু কুমার চন্দ। পরিচালনা করেন ফাহাদ রিপন। প্রধান অতিথি ছিলেন ফ্রান্সের ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড. ফিলিপ বেনোয়া। প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বিশেষ বক্তা ছিলেন যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উদীচীর ফ্রান্স শাখার সভাপতি কিরণময় মণ্ডল ও সিপিবির ফ্রান্স শাখার সম্পাদক আহমদ আলী। কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপুর লেখা একুশের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন তানভীর সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলা উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক রহমত উল্লাহ চৌধুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন জহুরুল ইসলাম, ম্যাডাম ক্লেয়ার ও দোলন মাহমুদ প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও হেড অব চ্যান্সারি হজরত আলী খান, হাসনাত জাহান, কণ্ঠশিল্পী আরিফ রানা, কুমকুম সাঈদা, চিত্রশিল্পী ইসমাইল হোসেন, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটি ফ্রান্স শাখার সদস্যসচিব শাখাওয়াত মিয়া, চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিলয় সূত্রধর ও জুয়েল দাস লেনিনসহ প্রমুখ।
ফিলিপ বেনোয়া বলেন, এ বছর ঢাকার একুশে বইমেলায় আমার যাওয়া হয়নি। কিন্তু যখন শুনলাম এখানে একুশে বইমেলা হবে তখন আমি খুব খুশি হয়েছি। যারা এই বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বই আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। বইয়ের মাধ্যমে লেখকেরা বাক্‌স্বাধীনতার জন্য কাজ ও লড়াই করেন। বাক্‌স্বাধীনতার হ্রাস সবার জন্য সর্বনাশের কারণ হয়। তাই বাক্‌স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শহীদ দিবস নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর মাধ্যমে একুশের চেতনা ও উপলব্ধিটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমরা সফল হয়েছি।
মেলায় ফ্রান্সপ্রবাসী কবি বদরুজ্জামান জামানের একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘নানা রঙের ছড়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন ফিলিপ বেনোয়া।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে শিশু শিল্পী অনুপমা চন্দ রিতু ও অমিত। সংগীত পরিবেশন করেন খন্দকার আতাউর রহমান। আবৃত্তি করেন বদরুজ্জামান জামান, গিয়াস বাবু ও মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ। পুঁথি পাঠ করেন পুঁথিশিল্পী কাব্য কামরুল। এ ছাড়া প্রবাসী যুব ইউনিয়ন কর্মীদের গণসংগীত এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ফ্রান্সের শিল্পীদের নাটিকা ও সংগীতানুষ্ঠান পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে এক ভিন্নমাত্রা দান করে।
প্যারিসের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় স্টল থেকে দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দের লেখকদের বই ক্রয় করেন।