চেরি ফুলকে ঘিরে জাপান জুড়ে চলছে উৎসব

কিনবুচি পার্কের চেরি উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা
কিনবুচি পার্কের চেরি উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা

ফুল যে সত্যিই ভালোবাসা, মনে-প্রাণে জাগিয়ে তোলা ভালো লাগা আর শিহরণের প্রতীক—তা টের টের পাওয়া গেল জাপানের চেরি উৎসবে। শীতের বিদায় আর গ্রীষ্মের আগমন। আর এই আগমনী বার্তায় ক্যামেলিয়া-টিউলিপ ইত্যাদি নানান বাহারী ফুলের সঙ্গে চেরির শুভ্রতা যেন পবিত্র করে দিয়ে যায় সবার মন। নবজীবনের জয়গানের বার্তা নিয়ে এপ্রিল মাসে জাপানের বিভিন্ন স্থানে চলে চেরির মন মাতানো উৎসব। যদিও চীন ও কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক স্থানে চেরি ফুল ফোটে, কিন্তু জাপানের মতো এত উৎসব কোথাও পালিত হয় না।

কিনবুচি পার্কের গাছে গোলাপি রঙের চেরি
কিনবুচি পার্কের গাছে গোলাপি রঙের চেরি

প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ আর ক্লান্তি ও অবসাদকে পেছনে ফেলে জাপানিরা চেরিতে খুঁজে পায় নতুন জীবনের সন্ধান। নানান বয়সী মানুষগুলো যেন শুধু অপেক্ষায় থাকেন কখন চেরি ফুটবে। যদিও চেরি ফুল এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় না। তারপরেও এই উৎসব ঘিরে জাপানিদের উন্মাদনার যেন শেষ নেই। আজ যেন হারিয়ে যেতে নেই কোনো মানা...কেউ বা হারিয়ে যায় আপনজনের সঙ্গে, কেউ আবার সঙ্গ দেয় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। পুরো বছরের আনন্দের এই মুহূর্তগুলো স্মৃতির পাতায় সাজিয়ে রাখতে অনেকেই মেতে থাকে সেলফি অথবা গ্রুপ ছবি ওঠাতে। সপ্তাহব্যাপী এভাবেই চলতে থাকে চেরির উন্মাদনা।

চেরি উৎসবে কাগাওয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি
চেরি উৎসবে কাগাওয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি

আমরা বাঙালিরাও কম কীসে? কোকিলের কুহু কুহু ডাক শুনতে না পেলেও জাপানিদের উৎসবের সাজ যেন আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বাংলাদেশে বসন্তের যখন আগমন ঘটে তখনো জাপানের অধিকাংশ স্থানে শীতের প্রকোপ শেষ হয় না। তাই, বাংলাদেশের বসন্ত উৎসবে মনের আকুলতা আর ব্যাকুলতাকে পুষিয়ে নিতে সবাই জাপানিদের মতো অপেক্ষায় থাকে চেরি উৎসবের। অবশেষে চেরির আগমনে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন ছবির হিড়িক পড়ে যায়। যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন চেরির সঙ্গে ছবি ওঠাতে কেউ ভুল করে না।

চেরি উৎসবে কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে লেখক
চেরি উৎসবে কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে লেখক

এমনই একটি চেরি উৎসবে প্রতিবারের মতো গত রোববার (৯ এপ্রিল) জাপানের কাগাওয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি একসঙ্গে গিয়েছিলাম চেরির আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। স্থানীয় কিনবুচি পার্কে আমরাই মিনি বাংলাদেশ। আমাদের কাছে পেয়ে যেন জাপানিরাও আনন্দে আপ্লুত। তাই, একসঙ্গে ছবি ওঠাতে ভুল করেনি অনেকে। হই-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা আর আড্ডায় ভালোই কাটল সারাটি দিন। দিন শেষে আমরাও নতুন উৎসাহ আর উদ্দীপনাকে সঙ্গী করে বিদায় নিলাম জাপানিদের সঙ্গে।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, পিএইচডি শিক্ষার্থী, কাগাওয়া, জাপান।