এরিনের জন্য ভালোবাসা

ডানা মেলে এরিন
ডানা মেলে এরিন

আমরা তখন আল আইনের পর্বত শিখরে। জেবেল হাফিত এর নাম। এখানে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওমানের পর্বত। এই সুযোগে সবাই আরেকটা দেশকেও ছুঁয়ে নিলাম। সমতল পৃষ্ঠ থেকে ১২৪৯ মিটার ওপরে ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে তিন গাড়িতে মিলেছি চার পরিবারের ১২ সদস্য। দেখছি সবুজ শহরের দৃশ্য। এ গল্প পরে হবে। এখন বরং বলি প্রকৃতির কন্যা এরিনের কথা। এও এক গল্প।

তোমার নাম?
এরিন ইয়ানা।
ছড়া জানো?
হ্যাঁ, আমার বড়দা শিখিয়েছে। এরিন তার পিতামহকে বড়দা বলে ডাকে।
আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ,
এত ডাকি তবু কথা কয় না কেন বউ! ফোনে শেখা ছড়া। মিহি সুরে বলে যায় এরিন।
এ ছড়া শেষ হতে না হতেই, মামনি শিখিয়েছে ভালো একটা ছড়া, বার্তা দেয় এরিন।
কি সেই ছড়া?
ডিম্ ডিমা ডিম্ ডিম্, কিসের বাদ্য বাজে,
তাইতো তারা সাজে।
আগে যায় গাড়ি ঘোড়া, পিছে যায় হাতি,
তার সাথে যায় ব্যাঙ, কাঁধে নিয়ে ছাতি।

ওমানের গা ঘেঁষে জেবেল হাফিতের চূড়ায়
ওমানের গা ঘেঁষে জেবেল হাফিতের চূড়ায়

আইন শব্দের অর্থ যেখানে মাটি থেকে নালিপথে পানি ওঠে। মানে, প্রকৃতির সঙ্গে স্থানটির বাস। আর আরবিতে ইংরেজির দ্য হচ্ছে আল। আল আইন নাম এ জন্যই। সবুজ শহর আল আইন। এখানেই এরিনের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। জেবেল হাফিতের চূড়ায় ওমান আল আইন জিরো লাইনে আমি কথা বলি তার সঙ্গে। পর্বতের শীর্ষস্থানে এক বন্ধু জোটে এরিনার। তাকে নিয়েও বেশ ব্যস্ত সে।
তোমার এ বন্ধুর নাম কি?
মিউ।

বন্ধুকে এরিনের আপ্যায়ন
বন্ধুকে এরিনের আপ্যায়ন

এরিন তার দিকে চিপস ছুড়ে মারে। আর ওর বন্ধু তা ধরে নেয় কৌশলে। সে তাকে রান্না ঘর করে দেবে।
ভূতের গল্প জানে এরিন।
কোন সে ভূত?
নাম তার শাঁকচুন্নি।
ওকি শাক চুরি করে খায়?
না, ভয় দেখায় শুধু।
কাকে, তোমাকে?
যারা খেতে চায় না। পাখি দেখিয়ে খাওয়াতে হয়।
এরিনের দেশের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া। তাদের যৌথ পরিবার। বাড়ির মানুষ তাকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে।
কে কে ভালোবাসে?
দাদারা—পিয়াল-তমাল। ওরা ওর জ্যাঠতুতো ভাই।
আর?
মাংকি খুব দুষ্টু, ছোট ভাইয়া। জ্যাঠতুতো দিদির ছেলের কথা আনে সে।
ও খুব মিষ্টি!
কীভাবে?
ও বলে—ও মাসি, ও মাসি!
প্রশ্ন আমার শেষ হয় না।
লেখাপড়া, স্কুল?
লেখাপড়া ভালো লাগে না, কষ্ট খুব! পরক্ষণেই বলে—স্কুলে যাব।

ওমানের গা ঘেঁষে এরিনসহ সবাই
ওমানের গা ঘেঁষে এরিনসহ সবাই

ওর বাবা প্রকৌশলী বিকো, মা ইংকিং। দুজনই খুলনার সন্তান। পুরো দস্তুর বাঙালি হয়েও তাদের নাম এমন কেন সে কথাও পরে বলার চেষ্টা করব। তারা বললেন, এই সেপ্টেম্বরেই এরিনা স্কুলে যাচ্ছে।
অভিনন্দন! ভালোবাসা! আমার আনন্দে ওর মুখে তখন স্বর্গের হাসি। আমি ওকে আদর করলাম।
সবাই উপভোগ করল এরিনার সাক্ষাৎকার।
ও পাখির মতো ডানা মেলল। আমি ছবি তুললাম ওর এবং ওর সঙ্গে সবার।

*নিমাই সরকার: সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিপ্রবাসী।