প্রবাসে আবাস প্রবাসে নির্বাস-ছয়

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট এনরোলমেন্ট টেস্টে অংশ নিতে এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশ ভ্রমণ করে এলাম প্রায় সপ্তাহ হলো। এই সংগঠনের যে দৈন্যদশা অবলোকন করে এসেছি, তার ওপর সামান্য আলোকপাত করার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলাম। কিন্তু সতর্কতা নামক বাক্যের রোষানলে পড়ে প্রায় পথহারা পথিক, দিকহারা মাঝি আর কূল ছাড়া নদীর মতো রচনাটা আলো দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল যথেষ্ট। কেন? এই কেনর উত্তরে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন ‘সতর্কতা’ কতটা মানুষকে পশ্চাতে টেনে ধরে রাখে। অবশ্যই এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং আশা করি পাঠককুল আমাকে ক্ষমা করে দেবেন যদি আমার সঙ্গে একমত হতে না পারেন।

অনেক বড় বড় কাজগুলো সতর্কতার সঙ্গে করতে চাইলে হয়তো কখনো করা হবে না। ধরেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা। বঙ্গবন্ধু বললেন যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তিনি কি সতর্ক ছিলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আছে গোলাবারুদ, কামান এবং আছে হিংস্র হায়েনার নির্লজ্জ ও কাপুরুষোচিত চোখে প্রাকৃতিক লালসা আর পশুপ্রবৃত্তি। তিনি কি সতর্ক ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের লাঠিসোঁটা, ঝাঁটা ছাড়া আর কিছুই নেই—যা দিয়ে একটি দেশকে স্বাধীন করা যায়! অতিষ্ঠ জনগণের প্রাণের দাবি সময়ের প্রয়োজনে তিনি সাগ্রহে ঘোষণা দেন, সতর্কতা অবলম্বন করেননি। ৩০ লাখ প্রাণ এবং লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা (সত্যিকারে কি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন? প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না)। আমি মনে করি অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করলে বড় বড় কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের যে দৈন্যদশা দেখলাম, তা নিয়ে লেখার জন্য অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন। আমার বৈদেশিক অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু লিখতে গিয়ে বার কাউন্সিলের অবকাঠামো দেখে থমকে দাঁড়াতে হলো। এখানে সভাপতির দায়িত্বে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আবার এনরোলমেন্ট কমিটিতে আছেন বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন আদালতের অভিজ্ঞ সম্মানিত বিচারকেরা। কিছু লিখতে হলে তো অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে লিখতে হবে। কিন্তু ডুবন্ত প্রায় ডিঙি নৌকাকে পালতোলা জাহাজ বলা তো যাবে না। এ সংগঠনের অনেকেই গুণী ব্যক্তি, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ। তাঁদের প্রতি আমার সম্মান আছে। সম্মান আছে আইন পেশার ওপর এবং সর্বোপরি আমি এও বুঝি যে, তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠনের সদস্যদের প্রবিধান ও নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। যা পাবলিক ইন্টারেস্ট প্রোটেক্ট করছে। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা হয়তো কর্তাদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, যা থেকে অনেকেই পেতে পারেন উপকারিতা। তাই সতর্কতার সঙ্গে আজকের এই প্রবন্ধ অনেকটা সাহস করেই উপস্থাপন করছি।
বার কাউন্সিল কি? বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিসনার্স ৶ বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির অর্ডার নম্বর ৪৬-এর ১৯৭২)-এর অধীন গঠিত একটি লাইসেন্সিং ও রেগুলেটরি বডি। সংক্ষেপে এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংগঠন, যাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের অ্যাডভোকেটদের নিয়ন্ত্রিত করা, নিয়মের অধীন নিয়ে আসা, জনস্বার্থ নিশ্চিত করা এবং আইন শিক্ষার কাঠামো নির্ধারণ করা। অ্যাডভোকেটদের পেশাদারি আচরণ ও শিষ্টাচার নিয়ন্ত্রণ করা বার কাউন্সিলের কাজ। শুধু তাই নয়, তাদের উচিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও ইতিবাচক অবদান রাখা। এই ইতিবাচক অবদান প্রতিষ্ঠানটি তখনই রাখতে পারবে যখন পার্লামেন্ট কোনো আইন পাস করার আগে আইনের খসড়া তৈরি করে পাবলিক কন্সালটেশনে পাঠাবে। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, আজ সংবিধানের ষোলোতম সংশোধনী নিয়ে যে তোলপাড় কাণ্ড হচ্ছে, তার উদ্রেক হতো না যদি আমাদের দেশে জবাবদিহিমূলক স্বচ্ছ পদ্ধতিতে আইন প্রণয়নের আগে আইনের খসড়া পাবলিক কন্সালটেশনে প্রেরণের প্রক্রিয়া বজায় রাখা হতো।
প্রসঙ্গে ফিরে আসি। হয়তো অনেকেই জানেন, প্রায় ৪৫ হাজার আইনের ওপর স্নাতক ডিগ্রিধারী ছাত্রছাত্রী এবারে অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্টের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন গত ২১ জুলাই। ভাগ্যক্রমে আমিও তাদের দলের একজন ছিলাম। বার কাউন্সিল অ্যাডমিশন টেস্টে অংশ নিতে প্রতিটি জেলার ছাত্রছাত্রীদের ঢাকায় আসতে হয়েছিল। ঢাকার হোটেলগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। আমার মতো অনেকেই এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। আরও দুবার পরীক্ষায় অংশ নিতে আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। MCQ অ্যাডমিশন টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একবার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে এবং পাস করলে আরেকবার মৌখিক পরীক্ষা দিতে সেই ঢাকাতেই যেতে হবে। প্রতিবার দুই লাখ টাকা করে খরচ হলে আমাদের ব্যয় করতে হবে গুনে গুনে ছয় লাখ টাকার মতো।
আমার মতো একজন খুদে আইনজীবীর বোধগম্য নয় কেন এই পরীক্ষাগুলো অন্য জেলায় নেওয়া সম্ভব নয়। কেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়! বারবার ইংল্যান্ডে বসবাসরত ছাত্রছাত্রীরা বার কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে এই পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ যেন অরণ্যরোদন। এখান থেকে একজন ছাত্রের বাংলাদেশে তিনবার ভ্রমণের খরচ ছাড়াও আমার মতো অনেকেরই হয়তো বারবার কাজ থেকে ছুটি নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। আর যদি একটি পরীক্ষায় উপস্থিত হতে না পারা যায় তবে তিনটি পরীক্ষায় আবার অংশ নিতে হবে। ৪৫ হাজার স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রী অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্ট টেস্টের জন্য দরখাস্ত করেছেন। এটা ভালো ছাড়া খারাপ কিছু নয়। ইংল্যান্ডে অনেকগুলো রেগুলেটরি বডি আছে এবং একেকটা সংগঠনে ৪৫ হাজারের ওপর মেম্বার আছে। তাদের অ্যাডমিশন টেস্টে আবার আইনের ধারা (section) মুখস্থ আছে কিনা পরীক্ষা না করে অ্যাডভোকেসি ও প্রফেশনাল কনডাক্টের ওপর কম্পালসারি ট্রেনিং প্রদান করলে কতগুলো লোকের কর্মসংস্থান হতো তা কি বার কাউন্সিল একবার ভেবে দেখেছে!
দেখা যায় বার কাউন্সিলের চোখ কপালে উঠে গেছে এত ছাত্রছাত্রীরা আইনের ওপর স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ফেলেছেন দেখে! তাঁরা এখন উপায় খুঁজছেন কীভাবে এই বেকার ছাত্রছাত্রীদের এই পেশা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। অথচ এই বার কাউন্সিল একদিকে যেমন এই ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রীদের অ্যাডভোকেসির ওপর ট্রেনিং প্রদান করতে পারত অন্যদিকে সরকারের কাছে আবেদন করতে পারত উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে। উপজেলা পর্যায়ের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো আবার চালু হলে, যেমন অনেক অনেক লোকের চাকরির ব্যবস্থা হতো, তেমনি গ্রাম পর্যায়ের গরিব লোকেরা সহজে ও সস্তায় পেত ন্যায়বিচার। বার কাউন্সিলের জন্য এটা একটা চমৎকার সুযোগ ছিল আইন শাস্ত্রে উত্তীর্ণ বেকার এই ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে। আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষ। থানা-উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খুবই প্রয়োজন। এই ১৭ কোটি জনতার এই দেশে বর্তমান নিবন্ধনভুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে আরও ৪৫ হাজার আইনজীবী যোগ হলে এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কিন্তু সেকেলে মনমানসিকতা আমাদের সর্বদাই ইতিবাচক উদ্যোগ থেকে নিরুৎসাহিত করে রাখে।
এখন একটু অনুসন্ধান করে দেখা যাক বহির্বিশ্ব কীভাবে চলছে। ইংল্যান্ডে সেকেলে মানসিকতা নয় বরং রেগুলেটরি বডিগুলো প্রতিনিয়ত গবেষণায় লিপ্ত আছে কীভাবে আইন পেশায় আরও অধিক লোকদের উৎসাহিত করা যায়। কমপিটিশন অ্যাক্ট ১৯৯৮ ও এন্টারপ্রাইজ অ্যাক্ট ২০০২ যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মতো এখন এই দেশে শুধুমাত্র একটি বার কাউন্সিলই শুধু আইনজীবীদের রেগুলেট করছে না। বরং এখানে আরও আছে রেগুলেটরি বডি যারা মেম্বারশিপ নিতে ও মেম্বারদের বিভিন্ন বেনিফিট দিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তার মানে এই নয় যে, এই দেশে পাবলিক ইন্টারেস্ট প্রটেক্ট করা হচ্ছে না।
এখানে আছে এসআরএ (সলিসিটার রেগুলেশন অথোরিটি), চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লিগ্যাল এক্সিকিউটিভ, সিএলসি—সম্পত্তি আইন রেগুলেটর এবং এসিএল কাউন্সিল ফর কস্টস লইয়ার। তাদের মেম্বাররা প্র্যাকটিস করতে পারেন এবং তাদের মক্কেলদের পক্ষে কোর্টে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। এই রেগুলেটরি বডিগুলো ইউনিভার্সিটি ও কলেজগুলো যে এলএলবি ডিগ্রি প্রধান করে তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। এই কাউন্সিলগুলো এলএলবির ওপর স্নাতক ডিগ্রি করার পরপর ছাত্রছাত্রীদের আইনের ধারার ওপর পরীক্ষা না নিয়ে বরং উৎসাহিত করে লিগ্যাল প্র্যাকটিসের ওপর আরও এক বৎসরের ট্রেনিং নিতে।

লেখক
লেখক

পরিতাপ ও লজ্জার বিষয় বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনের ধারা মুখস্থ আছে কিনা তার ওপর পরীক্ষা নেয় (আমার কোনো ভাষা নেই কী বলে তাদের উপদেশ দেব)। ইংল্যান্ডে রেগুলেটরি বডিগুলো স্নাতকোত্তর ট্রেনিং কোর্সগুলোর স্ট্রাকচার নির্ধারণ করে এবং সে ট্রেনিংগুলোও দেওয়ার দায়িত্ব দেয় কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোকে। এখানে রেগুলেটরি বডিগুলো নিশ্চিত করতে চেষ্টা করে যে ছাত্রছাত্রীদের আইনবিদ্যা বাস্তবে প্রয়োগ করতে শিখেছে এবং প্রফেশনাল নৈতিকতার ওপর আইনজীবীদের সম্যক ধারণা আছে। এই বডিগুলো নিশ্চিত করে পাবলিক ইন্টারেস্ট কোনোক্রমেই যেন আইনজীবীদের ধারা বিঘ্ন না ঘটে। সর্বোপরি তাদের এক্সট্রা ফান্ডস ও ইনস্যুরেন্স করা থাকে যদি কোনো সাধারণ লোক পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পান এবং তারা কোনো আইনজীবী কর্তৃক প্রতারিত হয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, এখানে অন্য দেশ থেকে যদি কোনো প্রাকটিসিং আইনজীবী আসেন তবে রেজিস্টার্ড হতে কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। শুধু রেজিস্টার্ড হয়ে ফরেন আইনজীবী নাম নিয়ে এখানেও প্র্যাকটিস করতে পারেন। অবশ্য উপাধি সলিসিটার অথবা ব্যারিস্টার নিতে হলে ট্রেনিং কোর্স শেষ করতে হয়।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের জন্য কিছু প্রস্তাব

আইনের ধারা মুখস্থ আছে কিনা তা পরীক্ষা না নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান স্নাতকোত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের এক বৎসরের একটি ট্রেনিং কোর্সের স্ট্রাকচার তৈরি করতে পারে। এই ট্রেনিং কোর্সে থাকবে অ্যাডভোকেসি স্কিলস, আইনজীবীদের আদালত ও তাদের নিজস্ব মক্কেলদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, স্বার্থের দ্বন্দ্ব চিহ্নিত করা এবং কীভাবে একজন আইনজীবী সেই দ্বন্দ্ব এড়িয়ে মক্কেলের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করে আদালতের অফিসার হিসেবে কাজ ও কীভাবে আইনবিদ্যা বাস্তবে প্রয়োগ করবেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এই ট্রেনিং কোর্স প্রণয়ন করতে কোনো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সলিসিটার্স ট্রেনিং কোর্স এলপিসি (লিগ্যাল প্র্যাকটিস কোর্স) অথবা ব্যারিস্টার এট ল ট্রেনিং কোর্স বিপিটিসি (বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স) মডেল হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
কোনো ধরনের অ্যাডমিশন টেস্ট ছাড়াই সাফল্যের সঙ্গে এই ট্রেনিং করলে তাদের অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোল করা হবে। মনে রাখতে হবে আইনের ছাত্রদের আইন পেশা থেকে বিরত রাখা বার কাউন্সিলের কাজ নয়। সর্বোপরি, বার কাউন্সিল উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ফিরে নিয়ে আসতে সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারে। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের মতো বিভিন্ন জেলা অথবা বিভাগ ভিত্তিক বার কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। যে কাউন্সিলগুলো তাদের মেম্বারদের রেগুলেট করবে। আইনজীবীদের ভর্তি পরীক্ষা যদি একান্তই নিতে হয় তা হতে হবে অ্যাডভোকেসি স্কিলস ও পেশাগত নৈতিকতার ওপর।
বহির্বিশ্বে কর্মরত সলিসিটার অথবা ব্যারিস্টারেরা আবার এডমিশন টেস্টে অংশগ্রহণ কেন করবেন আমার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে লিখতে বিব্রত বোধ করছি। এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, ইংল্যান্ডের ট্রেনিংগুলো বাংলাদেশের ডিগ্রি ও ট্রেনিংয়ের চেয়ে অনেক উন্নতমানের। এখানে যারা প্র্যাকটিস করেন তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যে নিয়ম চালু করা হয়েছে তা আমার কাছে মনে হয় প্রতিহিংসামূলক। অথচ কয়েক বৎসর আগেও রেজিস্টার্ড সলিসিটার্স ও ব্যারিস্টারদের বাংলাদেশে অ্যাডমিশন নিতে কোনো অ্যাডমিশন টেস্টের মুখোমুখি হতে হতো না। একজন আইনজীবী যেকোনো দেশে আইন প্র্যাকটিস করতে পারেন। আইনের ধারাগুলো যেমন জাজেরও মুখস্থ রাখতে হয় না তেমনই একজন আইনজীবী আইনের ধারার বই সঙ্গে করে নিয়ে কোর্টে ঢুকতে পারেন। যদি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কোনো কর্তা আমার এই লেখাটা লক্ষ করে বার কাউন্সিলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন তবে আমার এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি। (চলবে)

লেখক: ব্যারিস্টার। ইংল্যান্ডে আইন পেশায় কর্মরত। ফেসবুক:

ধারাবাহিক এই রচনার আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: