দেশে অর্থ পাঠিয়ে গাড়ি জিতলেন বাংলাদেশি শ্রমিক

মামুনের হাতে গাড়ির চাবি দিচ্ছেন এরাবিয়ান মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা
মামুনের হাতে গাড়ির চাবি দিচ্ছেন এরাবিয়ান মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা

কাতার থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে লটারিতে গাড়ি জিতেছেন একজন বাংলাদেশি শ্রমিক। তাঁর নাম মামুন (২৫)। গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় দোহায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেয় এরাবিয়ান মানি এক্সচেঞ্জ। প্রায় তিন মাস আগে এই এক্সচেঞ্জের শাহানিয়া শাখা থেকে বাংলাদেশে অর্থ পাঠিয়েছিলেন মামুন।

লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে মামুন কাতারে আসেন প্রায় চার বছর আগে। তিন লাখ টাকা খরচ করে কাতারে আসার সময় তাঁকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি ৪০ টাকা হাজার বেতনে কোনো এক দোকানে কাজ করবেন তিনি। কিন্তু কাতারে আসার পর মামুন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণা শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি তাঁর নিয়োগকর্তার উট-ঘোড়া ও অন্যান্য পশু প্রতিপালন এবং বিভিন্ন কাজে কর্মরত রয়েছেন। প্রথম আলোকে মামুন জানান, আমার নিয়োগকর্তা ভালো মানুষ বিধায় আর কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করিনি। তাঁর মাসিক বেতন ৮৫০ রিয়াল বলে জানান তিনি।
লটারিতে মামুনের নাম ওঠার পর তাঁর কাতারে ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা টাকা পাঠানোর রশিদ থেকে প্রাপকের নম্বরে যোগাযোগ করেন। এতে বাংলাদেশে থাকা মামুনের বাবার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এবং তাঁর লটারি জেতার খবর জানান। পরে বাংলাদেশ থেকে খবর পেয়ে মামুন ওই এক্সচেঞ্জে যোগাযোগ করেন এবং পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন এক্সচেঞ্জের কাতারি কর্তৃপক্ষের মোহাম্মদ মাকবুল হাবিব খালফান ও আবদুল্লাহ মাকবুল, এরাবিয়ান এক্সচেঞ্জের জেনারেল ম্যানেজার নুরুল কবির চৌধুরী ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবু ওয়াসিম নুর প্রমুখ।
লটারিতে জিতে নিশান কোম্পানির সানি মডেলের ২০১৭ সংস্করণের গাড়ির মালিক হয়েছেন মামুন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। গত তিন মাসে এরাবিয়ান এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার অভিবাসী। এদের মধ্যে লটারিতে দুজনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। মামুন ছাড়া আরও একজন জর্ডানি অভিবাসী একইরকম গাড়ির পুরস্কার জিতেছেন। তিনি কাতার এয়ারওয়েজে কর্মরত।
নুরুল কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আমি নিজে একজন বাংলাদেশি। ফলে একজন বাংলাদেশি যখন বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্য থেকে লটারিতে এমন পুরস্কার জেতেন, তখন আমার একটু বেশি আনন্দ লাগছে। তা ছাড়া পুরস্কার বিজেতা একজন নিম্নআয়ের শ্রমিক, এটি তাঁর জন্য অনেক বড় পুরস্কার বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অন্য বাংলাদেশি প্রবাসীরা বৈধ পথে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মামুন প্রথম আলোকে জানান, তাঁর নিজের গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ফলে তিনি সেটি বিক্রি করে দেবেন। ইতিমধ্যে গাড়িটির শোরুমের কর্তারা তাঁকে এটি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে অর্থ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।