জাপানে সরস্বতী পূজা উদ্যাপিত

সমবেত ভক্তদের একাংশ
সমবেত ভক্তদের একাংশ

প্রতি বছরের মতো এবারও সর্বজনীন পূজা কমিটি জাপান সাড়ম্বরে বিদ্যা ও আরাধনার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পূজা যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালন করেছে। টোকিওর পার্শ্ববর্তী সাইতামা প্রিফেকচারের ওয়ারাবি শহরের কিতামাচি কমিউনিটি সেনটার এ আয়োজিত এবারের আয়োজন ছিল ২৩তম।

সমবেত ভক্তদের একাংশ
সমবেত ভক্তদের একাংশ

অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবে পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন অগণিত ভক্ত।
জাপানে নির্ধারিত দিন কর্মদিবস থাকায় সঠিক সময়ে পূজা আয়োজন সম্ভব নয় বলে পরবর্তী সাপ্তাহিক বন্ধের দিন পূজা পালন করতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে হল প্রাপ্তির সংকট। তাই জাপানপ্রবাসী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গতকাল ২৮ জানুয়ারি রোববার এ পূজা পালন করতে হয়।

সমবেত ভক্তদের একাংশ
সমবেত ভক্তদের একাংশ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রণতি জানান তাঁরা।
বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পাদদেশে বসে পুরোহিত জ্যোতি অলকেশের কাছ থেকে এবার পাঁচজন শিশু হাতে খড়ি নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনের সূচনা করে। এরা হচ্ছে শ্রেয়া পাল, ঈশ্বরীয়ান শ্রিয়াস বিশ্বাস, সম্প্রীতি ঘোষ, শ্রেয়া দাস ও মৃণ্ময়ী পাল।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল পূজার্চনা, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি ও আলোকসজ্জা।

সমবেত ভক্তদের একাংশ
সমবেত ভক্তদের একাংশ

দুপুরে পূজার প্রসাদ বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় পূজা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। তনুশ্রী বিশ্বাসের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্স কাউন্সেলর মো. হাসান আরিফ। তিনি জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রতিনিধিত্ব করেন।
অতিথি ও পূজারি ভক্তদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সর্বজনীন পূজা কমিটি জাপানের সভাপতি সুনীল রায়। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ।
উপদেষ্টা সুখেন ব্রহ্ম তার বক্তব্যে সরস্বতী পূজার তাৎপর্যে জ্ঞান গভীর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পুরান ও সাহিত্যে সরস্বতীকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরস্বতী পূজার মাস, তিথির মধ্যেও আছে নানা বৈচিত্র্য। বহু নামে, বহু অভিধায় তিনি পরিচিত। যেমন ব্রাহ্মী, ভারতী, ভাষা, বাক্বাণী, ইরা, বাগদেবী ও ঈশ্বর। সরস্বতীর রূপ কল্পনার মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি কোথাও পদ্মের ওপর বসে আছেন, কোথাও দণ্ডায়মান, কোথাও পদ্মে উপবিষ্ট হংসবাহন আবার কোথাও বা ময়ূরাবাহনা সরস্বতী, সিংহবাহিনী সরস্বতী। পদ্ম সৌন্দর্য সৃষ্টির, জল জীবনের এবং মুকুট তার সম্মানের প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, এই পূজা শুধু বাঙালিদের মধ্যেই প্রচলিত নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলসহ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে যেমন জাপান, গ্রিক এমনকি বৌদ্ধধর্ম ও জৈন ধর্মেও সরস্বতীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপান রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী মেধসানন্দ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিশুকিশোরদের বিদ্যাদেবী মা সরস্বতীর আদর্শে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

হাসান আরিফ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকালীন ছাত্র থাকাকালে জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে জাপানে বাংলাদেশকে তুলে ধরাসহ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ২৩ বছর যাবৎ জাপানে পূজা আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে আয়োজক ও কমিউনিটিকে ধন্যবাদ জানান।
সর্বজনীন পূজা কমিটি জাপানের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. অতুনু সাহার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এর মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন তনুশ্রী বিশ্বাস। স্বরলিপির শিক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোররা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
এবারের পূজায় জাপানি শিল্পী শান্তি ইযুমিকা তার নিজের লেখা ও সুর করা ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়া অন্যান্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। পূজায় ভক্তিমূলক গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খন্দকার ফজলুল হকের পরিচালনায় উত্তরণ অংশ নেয়। উত্তরণের শিল্পীরা গানে গানে অতিথি দর্শকদের মন ভরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

সংবাদ প্রেরক: হাসিনা বেগম রেখা, টোকিও, জাপান।