মনকল্প

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

কাউকে বিশ্বাস করতে খুব মন চায়! 

যেমন করে মনের ভেতরে সাজানো থাকে ঘর বাড়ি,
ঠিক যেমন; রঙিন ছাপা শাড়িগুলি সাজানো থাকে আলনায়।

এ হৃদয় কাউকে খুব ভালোবাসতে চায়!
যেমন করে প্রেম নিবেদন করি,
কল্পনায় সাজি তার পূজারি,
প্রিয়কে সাজাই ‘প্রিয়তম’ মুগ্ধতায়!

মানুষটা যেন অবিকল হেঁটে যায়
কল্পনার আলপনায়
ধীর চলন, কবিতার চরণের মতোন,
পেছনে হাত দুটি; আটকানো মুঠি,
রেললাইন ধরে; হাঁটে তার পা
একটু একটু করে; বর্ণ শব্দ বাক্য হয়ে পার
আরও সামনে শব্দের অন্ত-মিলনে,
যেমন করে কষ্ট আড়াল তার
ঝুল আস্তিনে
তেমনি…

অপেক্ষার রেলিঙে দাঁড়ানো গতি অপেক্ষায়,
ভুল বৃষ্টিতে আর; না যেন ভিজে এই চোখ,
কারও আঙুল যেন; না শাসায় অহেতুক,
অবরোধ দিয়ে যাও প্রিয়, সকল ছলনায়।

দুই. অন্ধ গোলাপ

জন্মান্ধ মেয়েটি
আমার; স্মৃতিময় কৈশোরের সুখ,
ঝলমলে জরিন ওড়নার ভালো লাগা,
যৌবনের টান টান বুক।
আমি আর মেয়েটি
একই সাথে চিনেছি
শৈশব, কৈশোর আর—
কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের প্রকৃতি।
কোমল ত্বকের স্পর্শ-পেলব ছুঁয়ে বুঝেছি,
পরম যুবতী আমরা তখন।
ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের তীব্র উদ্দীপনায়
ভালোবাসতে শিখেছি-চন্দন, পুদিনা,
কাগজিলেবু, ধনেপাতা
তুলসী, কাঁঠালি-চাঁপা,
সোঁদা মাটির ঘ্রাণ...
সে আমাকে কখনো উদ্ধত হতে দেয়নি,
ছলনার পারদর্শিতায়—
হতে দেয়নি কামুক, স্বৈরিণী।
আমার সংযমী জীবনের সমগ্র যাতনা,
ধৈর্য আর ত্যাগের নীরব সাথি; সেই মেয়েটি।
শৈশবে ওর ভিখারিনি মায়ের পাশে
ওকে দেখতাম লাজুক অবয়বে; মিষ্টি হেসে
মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়ানো,
মা তার ভিক্ষা চাইছে জনারণ্যে...
মেয়েটির চোখ দুটোয়; কখনো তারা দেখিনি।
কেবলই ফ্যাকাশে অক্ষিগোলক দুটো কোটরে গাঁথা, সাদা!
কেন যেন, আয়নায় কখনো নিজের চোখ দেখতে পাইনি,
নিজের চোখের তারায় যতবার খুঁজেছি; উচ্ছল মায়া,
তারুণ্যের ঝিকিমিকি,
দেখেছি; আমার চোখে সেই মেয়েটির সাদা ফ্যাকাশে চোখ; তারাহীন!
আজ অবধি আমিও তাই; জন্মান্ধের মতোই।
পথ চলি; তৃতীয় নয়নের আলোকে,
রং চিনি; অনুভূতির অদৃশ্য রঙে।
সমস্ত জীবনে একটি গোলাপই কেবল ছিঁড়েছি,
যৌবনের সমগ্র তাড়নাকে নিয়ন্ত্রিত আবেগে
পরিণত করার ইচ্ছেতে
ভালোবাসার গোলাপটিকে উৎসর্গ করেছি
ওই—
অন্ধ যুবতীকে,
১৯৯৪-র ‘ভালোবাসা দিবসে’।

নিবেদিতা পুণ্যি সঞ্চারিণী: দাম্মাম, সৌদি আরব।