প্রেম-মিলন

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

শিশুকাল থেকেই মানবজীবনে ভালোবাসার অন্তর-চক্ষু সৃষ্টি হয়। মানুষ নানাভাবে ভালোবাসার স্বাদ নিতে থাকে। ফ্রয়েডের মতে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। তিনি মানব ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যৌনবাসনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সব ক্ষেত্রে তিনি যৌনবাসনা দেখেছেন। শিশুর মল ত্যাগ করার সময় জায়গা বদল করে করে আনন্দ নিতে চায়। ফ্রয়েডের মতে এটি হচ্ছে, একজন শিশুর যৌন অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ!

মানুষের জীবন চক্রটি এক অদ্ভুত প্রকৃতির। শিশুকালে ভালোবাসা নামক যে রসের সৃষ্টি হয়, সেটি ধীরে ধীরে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিপক্ব হতে থাকে। অর্থাৎ মনের মাঝে ভালোবাসার একটি জগৎ তৈরি হতে থাকে। কিশোর বয়সে ভালোবাসা জিনিসটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। কিন্তু সে বয়সে তা মুখে প্রকাশ করতে পারে না। এ বয়সে লজ্জা বেশি কাজ করে বিধায় ভালোবাসা নামক জিনিসটি কিশোর-কিশোরী বয়সে খুব কষ্ট দিয়ে থাকে।
তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সে জীবনের প্রেমের মহাপ্রলয় ঘটে। অনেক সময় এই বয়সী কিশোর-কিশোরীরা ভালোবাসার জন্য মা-বাবা, গুরুজন এমনকি সমাজকেও মানে না। তাদের হৃদয়ে সুনামি ঘটে যায়। সে সময় তাদের চোখ দিয়ে শুধু ভালোবাসা দেখে আর মনের গভীরে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। ভালোবাসার জন্য সমাজ-পরিবার সব ত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। তখন চোখের দৃষ্টি দিয়ে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু দেখে না।

লেখক
লেখক


ওই বয়স পার হওয়ার পর ভালোবাসার ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ সময় ভালোবাসার জন্য খুন-খারাবি পর্যন্ত করে থাকে। কুড়ি বছর পর প্রেমের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনতা জড়িয়ে পড়ে। এ সময় যুবক-যুবতীরা প্রেম করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিলনের জন্য থিসিস শুরু করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে প্রেমের মধ্যে এক ধরনে অপবিত্রতা ভর করে আর বিভিন্ন অনাহূত ঘটনা ঘটতে থাকে।
মানবজীবন ত্রিশের নিকটে হলে, ভালোবাসায় ভাটির টান লক্ষ্য করা যায় এবং বাস্তবতা মানবজীবনকে গ্রাস করে। শেষমেশ একজন জীবনসঙ্গিনী খুঁজে বিয়ে করে ফেলে। এ সময় প্রেমের আরেক অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। তখন প্রেম হয় ক্ষণিক অতিথির মতো। প্রেমের রস ক্ষরণ হয়ে গেলে, সাময়িকভাবে প্রেমচর্চা ঘুমিয়ে পড়ে এবং সময়ে পুনরায় জাগ্রত হয়। এমনি করে নিজ গতিতে চলতে থাকে প্রেমের গাড়ি। বলা যায় বিয়ের পর প্রেমের গতি হয় ধীর গতি। এমনিভাবে প্রেম অবিরাম চলতে থাকে মানব হৃদয়ে। বয়স যখন প্রৌঢ়ত্বে পড়ে, মানব হৃদয়ে প্রেম শেষ বারের মতো বিশালভাবে দোলা দেয়, যেমনিভাবে দোলা দেয় উঠতি বয়সে। এটি চেরাগ নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তের মতো। চেরাগের আলো নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তে দপ করে একবার বিশাল আলো দিয়ে জ্বলে উঠে নিভে যায়।
প্রৌঢ় বয়সে অনেক মানুষকে আবার একটি বিয়ে করতে মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায়। তখনো সে সমাজ মানতে চায় না। এমনকি প্রেমে অন্ধ হয়ে তার দুই চোখের লজ্জার পর্দা উঠে যায়। অনেক সময় মেয়ের বয়সী নারীকে বিয়ে করে প্রেমের ক্ষুধা মিটায়।
মানব জনমে প্রেম এক রহস্যময় জগৎ। সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে তার প্রভেদ ঘটলেও রং একই থাকে। ভালোবাসা দিবসের শিকল দিয়ে ভালোবাসাকে কখনো বাঁধা যাবে না। এটি একটি নিতান্তই মানব মনের ব্যাপার। ইচ্ছে করলেই নির্দিষ্ট দিনে ভালোবাসা যায় না! ভালোবাসা যেমন শাশ্বত, যৌন বাসনাও তেমন একটি জিনিস, যেগুলোর কোনো কাল-ভাদ্র নেই!

মোহাম্মদ আবদুল মালেক: লন্ডন, যুক্তরাজ্য।