ভালোবাসি, কিন্তু বলা হয়নি

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

‘ভাইজান, সাবধান। হিটলার আপনারে খুঁজতেছে। আমারে কইছে, আপনি আওয়া মাত্র তার রুমে পাঠাই দিতে।’

দরজা খুলে দিয়েই শেফালি নিচু স্বরে কথাগুলো বলল। তার গলার স্বরে আতঙ্ক ফুটে উঠলেও চেহারায় তা ফুটে ওঠেনি। তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। কারণ এই মুহূর্তে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন এবং সামনের কয়েকটি মুহূর্ত কী কী ঘটতে পারে তা নিয়ে তার মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। শেফালি দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের বাসায় আছে। আমাদের গ্রামের মেয়ে। বয়স ১১ কি ১২ হবে। বাসায় কাজের জন্য আনা হলেও তাকে কেউ কাজের মেয়ে মনে করে না। আমি তাকে সিএনএন বলে ডাকি। কারণ বাসার যাবতীয় লেসেস্ট খবর তার কাছেই পাওয়া যায়। প্রথম প্রথম সিএনএন ডাকলে সে মাইন্ড করত। কিন্তু এখন সিএনএন ডাকলে আর মাইন্ড করে না বরং মজা পায়। যদিও সে জানে না সিএনএন মানে কি। সিএনএনের প্রকৃত ব্যাখ্যায় না গিয়ে তাকে আমি বলেছি সিএনএন হলো একজন সাংবাদিক। যার কাছে সব খবর পাওয়া যায়। কী বুঝেছে জানি না। তবে সাংবাদিক জানার পর থেকে তার মধ্যে একটা ভাব এসেছে। সে এখন বাসার কাজ কমিয়ে দিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বেশি সময় ব্যয় করছে।
—অবস্থা কি বেশি খারাপ। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম।
—ভাইজান আমার তেমনই মনে হইতাছে। তয় ডরাইয়েন না। আমি অস্ত্র সব সরায়ে ফেলছি। হিটলার একটাও খুঁইজ্জা পাইব না। শেফালির চোখে মুখে বিশ্বজয়ের ছাপ।
আমাদের বাসায় সব থেকে গুরুগম্ভীর মানুষটি হচ্ছেন হিটলার, মানে আমার বাবা। হিটলার নামটি আমার দেওয়া। তাঁর ভয়ে ঘরের সবাই তটস্থ থাকেন। মূলত এই পরিবারে তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আমার বড়ভাই, বড় বোন, ছোট বোন বা মা—কারও সঙ্গে তাঁর কোনোপ্রকার সমস্যা সাধারণত হয় না। কারণ তারা সবাই তাঁর মর্জি মোতাবেক চলেন। যত সমস্যা আমাকে নিয়ে। তার ধারণা আমার মাঝে বেয়াদবের হরমোন বেশি আছে। অথচ আমি বেয়াদব না এবং তাঁর সামনে কখনো কোনো বেয়াদবি করিনি।
তবে আমি দুষ্টু সেটা মানি। দুষ্টুমি করতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু দুষ্টুমি আর বেয়াদবি তো আর এক নয়। অথচ তার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেয়াদব ছেলেটি আমি। কেন? কারণ আমার চোখ থেকে পানি বের হয় না। তিনি আমাকে বিভিন্ন দুষ্টুমির কারণে ছোটবেলা থেকে অসংখ্যবার মেরেছেন। মারার ক্ষেত্রে ঝাড়ু, বেত, বাঁশের কঞ্চিসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। কোনো ফল হয়নি। একফোঁটা পানিও বের হয়নি চোখ থেকে। অনেকবার মারতে মারতে লাঠি ভেঙে গেছে, তাঁর হাত ব্যথা হয়ে গেছে কিন্তু ফল শূন্য। আমার মার খাওয়া দেখে মা নীরবে চোখের পানি ফেলতেন। মা অবশ্য সারা দিনই কান্নার মধ্যই থাকেন। দুঃখেও কাঁদেন, আনন্দেও কাঁদেন। অথচ আমার চোখে শুষ্কতা। তাই বাবা মাঝে মাঝেই মাকে বলেন, তুমি কি সিয়োর এটা তোমার সন্তান? এমনও হতে পারে বাচ্চা অদলবদল হয়েছে।
মা মুচকি হেসে বলতেন, তাহলে আপনার মতো এত সুন্দর চেহারা পেল কি করে। এ কথায় বাবা খুশি হতেন কিন্তু তার মুখ দেখে সেটা বোঝা যেত না। কারণ তিনি তার কঠিন রাগী খোলসটা কখনো খুলতে চাইতেন না।
—ভাইজান এবার আপনার অস্ত্র দুইটাও দেন সরায়ে ফেলি। না হইলে আবার এ দুইটা দিয়ে আক্রমণ শুরু করবে নে।
আমি তাড়াতাড়ি আমার স্যান্ডেল দুটো খুলে দিলাম। শেফালি স্যান্ডেল দুটি নিয়ে লুকাতে চলে গেল। আসলে আমাকে কাবু করার বা অপমানিত করার একমাত্র অস্ত্র হলো জুতা বা স্যান্ডেল। অন্য কিছু দিয়ে আঘাত করলে আমার ব্যথা লাগে কিন্তু চোখে পানি বের হয় না। জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে মারলেও চোখে পানি বের হয় না কিন্তু জুতা বা স্যান্ডেল দিয়ে মারলে আমি কেন জানি খুবই অপমানিত হই। দীর্ঘ গবেষণার পর হিটলার এই তথ্যটি আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এখন তিনি আমার বেলায় সেই অস্ত্র ব্যবহার করেন। তাই শেফালিকে বলা আছে বাবা যখনই আমার ওপর রেগে যাবেন, তখনই সে বাসার সব জুতা ও স্যান্ডেল লুকিয়ে ফেলবে এবং বাবা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে রাখবে। এ ব্যাপারে মা ও ছোট বোন শেফালিকে সাহায্য করে।
একটু পরেই শেফালি এসে বলল, ভাইজান সব লুকানো শেষ। চিন্তার কিছু নাই।
—হিটলার কই?
—ওনার ঘরেই আছেন। আপনে যান।
—আজকের যুদ্ধের কারণ কি? হিটলার চেতল কেন?


ঘটনা জানার জন্য প্রশ্ন করলাম। আসলে আমার মনে পড়ছে না আজ আমার দ্বারা কী অপকর্ম ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে আমি কিছুটা ভুলোমনো ও উদাসীন।
—ঘটনা অনেক জটিল।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বলে একটু থামল। শেফালির এই এক অদ্ভুত সমস্যা। কোনো কিছু সে সংক্ষেপে ভূমিকা ছাড়া বলতে পারে না। তাকে তাগাদা দিয়েও লাভ নেই। তার কাছ থেকে তথ্য পেতে হলে আপনাকে ধৈর্য ধরতেই হবে। আমার ধারণা সে এই গুণটি রপ্ত করেছে বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল দেখে। সিরিয়ালে যেমন একটি ঘটনাকে টেনে টেনে লম্বা করে, সেও তেমনি একবাক্যে যে কথা বলা সম্ভব তাকে উপন্যাস বানিয়ে ছাড়বে। বাসার অন্যরা কেউই ওর এই বদঅভ্যাসকে পছন্দ করে না।

—শুনেন ভাইজান, আমি সন্ধ্যাবেলা ঘর ঝাড়ু দিতাছি। এ সময় কলিংবেল বাইজা উঠল। আমনে (আপনে) তো জানেন কাজের মাঝখানে কেউ আইলে আমার মেজাজ গরম হইয়া যায়। ভাবলাম যার খুশি আহুক আমার কী। আমি আমার কাজ করতে লাগলাম। আবার বেল বাজে। কিন্তু দরজা খোলার কেউ নাই। খালাম্মার বাতের ব্যথা। হে বিছানায় হুইয়া ব্যথায় কুঁ-কুঁ করতাছে। নিলা আপা বাথরুমে। বড় ভাইয়া অফিস থেকে তখনো আহে নাই। কী আর করা, আমারেই ঝাড়ু ফেলাইয়া আইতে হইল।
এই পর্যন্ত বলে একটু দম নিল। মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে যেভাবে টেনে লম্বা করছে। আল্লাহ জানে কতক্ষণ লাগবে আসল কাহিনি জানতে। যদি শেফালি না হয়ে এটা আমার ছোট বোন নিলা হতো, তাহলে এতক্ষণে কষে একটা থাপ্পড় দিতাম। কিন্তু শেফালিকে কিছুই বললাম না। একটু পর আবার শুরু করল।
—আইসা দেখি কেডা জানি দরজার মাঝের ছিটকিনি না লাগাইয়া ওপরেরটা লাগাইছে। আমনে তো জানেন, আমি ওপরের ছিটকিনি লাগল পাই না। তারপর চেয়ার আইনা দরজা খুললাম। ওমা দেখি খালু আইছে। আমি তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে নামলাম। কইলাম, খালু আজ এত আগে আইলেন? ঘটনা কি? খালু আমার কথার উত্তর না দিয়া উল্টা আমারে জিগায়, ‘হারামজাদা কি বাসায় ফিরছে?’ আমি কইলাম, না। আমিতো বুঝছি হিটলারে আমনের কথা জিগাইছে। এ বাসায় তো খালু আমনেরেই হারামজাদা কয়। তারপর...।
শেফালি বাক্য আর শেষ করার সুযোগ পেল না। এর মধ্যে নিলা এসে হাজির।
—ভাইয়া তুই কখন আসলি? আব্বা তোরে খুঁজছে।
—শুনেছি। কাহিনি কী সেটাই জানার চেষ্টা করছি সিএনএনের কাছ থেকে। কিন্তু এখনো মূল পয়েন্টে আসতে পারেনি। যদিও দশ পাতা পরিমাণ কথা বলে ফেলছে। সম্ভবত আরও ঘণ্টাখানিক লাগবে। এখন বিরক্ত করিস না। আগে পুরা ঘটনাটা শুনে নেই। তারপর যাচ্ছি।
—ঘটনাটা কী আব্বা কাউকে বলেনি, ও জানবে কি করে। তুই বরং আমার সঙ্গে আয়। আমি সামাল দেব।
এই বাসায় আব্বার সামনে সব থেকে ক্ষমতাধর হচ্ছে নিলা। হিটলার তাকে কিছুই বলে না। নিলা হিটলারের চোখের মণি।
—তুমি একটা আস্ত বেয়াদব জানতাম। কিন্তু তোমার বেয়াদবি যে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে সেটা আমার জানা ছিল না।
হিটলারের রুমে ঢুকতেই গম্ভীর গলায় টেনে টেনে কথাগুলো বললেন। আমি হিটলারের রুমে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। অবশ্য সব সময় তাই থাকি। আমি কখনই তার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাই না। নিলা আমার পাশে দাঁড়ানো। মা বিছানায় শুয়ে আছেন। তিনি বাতের ব্যথায় কাহিল। এতক্ষণ ব্যথায় কুঁ কুঁ করছিলেন। হিটলারের গলার আওয়াজ শুনেই তিনি তার ব্যথার কথা ভুলে গেলেন। এই মুহূর্তে তিনি আর কুঁ কুঁ করছেন না। কোনো কারণ ছাড়াই তিনি আমাকে দুনিয়ার সব থেকে বেশি ভালোবাসেন। যদিও আমি তার সঙ্গে সব সময় খারাপ ব্যবহার করি। আমার প্রতি কেউ বেশি ভালোবাসা দেখালে কেন জানি অস্বস্তি লাগে।
—ও কি করেছে? খুবই নিচু স্বরে মা প্রশ্নটি করলেন।
—কী করেনি, সেটা বল। আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দেখলাম হারামজাদা সিগারেট ফুঁকছে। ভুল বললাম সিগারেট নয় বিড়ি ফুঁকছে। আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল, বিড়িতো ফেললই না। আমার মুখের ওপর আরও একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে চলে গেল। কত বড় বুকের পাটা।
খুবই শান্ত স্বরে কথাগুলো বললেন। ঝড় শুরু হওয়ার আগের মুহূর্ত। যেকোনো মুহূর্তে বজ্রপাত শুরু হবে।
আমার কপালটাই খারাপ। না হলে জীবনে এই প্রথম একটা সিগারেট, না ভুল হলো একটা বিড়ি খেলাম। তাও বাবা দেখে ফেললেন। সন্ধ্যার একটু আগে আড্ডা দিয়ে রিকশা করে বাসা ফিরছিলাম। রিকশাওয়ালা মামাকে বিড়ি খেতে দেখে প্রশ্ন করলাম, মামা এত কষ্ট করে রিকশা চালান, তো বিড়ি খান কেন? এটা তো ক্ষতিকর।
—মামা যে কী কন। আমরা গরিব মানুষ, জীবনে কোনো শখ আহ্লাদ মিটাইতে পারি না। শখ কইরা এই বিড়িটাই শুধু খাই। মামা জানেন, যখন বিড়িটা ধরাইয়া একটা টান দেই নিজেরে মনে হয় বাদশা আকবর।
—তাইলে মামা সিগারেট খাইলে কি মনে হয়?
—দাম বেশি তাই খাই না। তবে মনে হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মনে হইতে পারে। মামা কি কখনো বিড়ি সিগারেট কিছু খাইছেন?
—না আমি বিড়ি সিগারেট কিছুই খাই না।
—মামা জীবনে একটা হইলেও খাইয়া দেখেন। না হইলে এর মজা কী বুঝবেন না।
রিকশাওয়ালা মামাকে আমি কী বোঝাব, উনি উল্টো আমারে বোঝাইয়া এমনভাবে সিগারেটের বিজ্ঞাপন করল যে আমিই দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলাম। তাহলে কী আমিই ভুল করছি। রিকশা থেকে নামার সময় মামা জোড় করে একটা বিড়ি ধরায়ে দিল। ওটা টানতে টানতে হাঁটতে লাগলাম। বাদশা আকবর কীভাবে হাঁটতেন তাতো জানি না। মনে হয় বুক ফুলিয়ে হাঁটতেন। আমিও বাদশা আকবরের মতো বুক ফুলিয়ে, চেহারার মধ্যে একটা ড্যাম কেয়ার ভাব এনে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে হাঁটলাম। সম্ভবত এই সময় হয়তো হিটলার আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন। যেটা আমি খেয়াল করিনি। অবশ্য খেয়াল না করারই কথা। বাদশা আকবর সবকিছু খেয়াল করবে তাতো হয় না। আচ্ছা বাদশা আকবর কি বিড়ি টানতেন? টানতেও পারেন, বাদশার মর্জি বলে কথা। গুগলে সার্চ করে দেখতে হবে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা।
—নে হারামজাদা। খাবি যখন বিড়ি খাবি কেন, সিগারেট খা।
বলেই হিটলার এক প্যাকেট সিগারেট ছুড়ে মারলেন। প্যাকেটটি আমার গায়ে বাড়ি খেয়ে আমার পায়ের সামনে পড়ল। আমাদের বাসায় কেউ ধূমপান করে না। হিটলারও না। সম্ভবত আমাকে অপমান করার জন্য কিনে এনেছেন। বাবা যেহেতু টাকা দিয়ে প্যাকেটটা কিনে এনেছেন, নষ্ট করা ঠিক হবে না। ফ্লোর থেকে প্যাকেটটা নিয়ে পকেটে ঢুকালাম। তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রুম থেকে বের হয়ে দরজার পাশে দাঁড়ালাম, কী বলেন শোনার জন্য। হিটলারের চিৎকার শুনলাম। মাকে বলছেন।
—দেখলে হারামজাদার সাহস দেখলে। কত বড় বেয়াদব, সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে গেল। বাপের কাছ থেকে সিগারেট নিল!
মাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেও মা এই কথার কোনো উত্তর দিলেন না। উত্তর দিল নিলা, বাবা তুমিই তো নিতে বললে। তুমি জানো ভাইয়া তোমার কোনো হুকুম অমান্য করে না। আর বাবা তুমি যে বললে ভাইয়া তোমার মুখের ওপর ধোঁয়া ছেড়েছে, আমার তো মনে হয় ভাইয়া তোমাকে চিনতে পারেনি।
—নিজের বাপকে চেনেনি! কি যাতা বলছিস।
—বাবা তোমার কি মনে আছে ভাইয়া শেষ কবে তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছে। ভাইয়া কখনোই ভয়ে তোমার সামনে আসে না, তোমার দিকে তাকায় না। সব সময় কথা বলে মাটির দিকে তাকিয়ে। আমার ধারণা ভাইয়া শুধু তোমার কণ্ঠস্বরটাই চেনে। আমি সিয়োর তুমি যদি কয়েকজন লোকের মাঝে কথা না বলে চুপ করে থাকো, ভাইয়া বলতে পারবে না কে তার বাবা।
নিলার কথা শুনে মা খিকখিক করে হেসে উঠলেন।
—বোকার মতো হাসবে না। ছেলে বাবারে চিনে না এটা কোনো হাসির বিষয় না। এটা পরিতাপের বিষয়। এটা লজ্জার বিষয়। এত বড় বেয়াদব আমার পরিবারে কোথা থেকে আসল আমার মাথায় ঢোকে না। আজ রাতে ওর খাবার বন্ধ। শুধু সিগারেট খেয়ে থাকবে।
আর শুনতে ইচ্ছে করল না। জানি হিটলার আরও কিছুক্ষণ বকবক করবেন। যেহেতু বলেছেন আজ খাবার বন্ধ, সেহেতু আজ রাতে আর বাসায় থাকার কোনো মানে হয় না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে রান্নাঘর থেকে লাইটারটা নিলাম। কেউ পিছু ডাকার আগেই বাসা থেকে চুপচাপ বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমে একটা সিগারেট ধরালাম। ছোট্ট একটা টান দিয়ে মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লাম। রিকশাওয়ালা মামার কথা মতো নিজেকে মনে হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এরপর সিগারেটে লম্বা একটা টান দিতেই কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এল। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চোখে পানি বড়ই লজ্জার ব্যাপার। এটা ঠিক হবে না। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছলাম। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছ। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলাম। খুলে দেখি মাত্র দুই টাকা। ছি, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক অবস্থা এত খারাপ। এই টাকায় খিদে মিটবে না। এখন ভরসা বড় আপার বাসা। বাসায় হিটলারের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হলেই আমি বড় আপার বাসায় চলে যাই। বড় আপার বাসা উত্তরা। সমস্যা হচ্ছে এই দুই টাকা দিয়ে তো আর মিরপুর থেকে উত্তরা যাওয়া যাবে না। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। হেঁটে হেঁটে উত্তরা চলে যাব। টাকার অভাবে বাংলাদেশের রাস্তায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হেঁটে উত্তরা যাচ্ছে, দেখতে ভালোই লাগবে। সিগারেটে আবার একটা দীর্ঘ টান দিলাম। এবার আর কাশি হলো না। হাঁটতে হাঁটতে একটা গান ধরলাম—‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তায় চলেছি একা...।’ বাংলার রাস্তায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, মুখে বাংলা গান বিষয়টা দেখতে মন্দ লাগছে না।
বি. দ্রষ্টব্য: হিটলারকে অপছন্দ করি। কিন্তু আমার হিটলার বাবাকে অ-নে-ক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো তাঁকে বলা হয়নি। কখনো বলা হবে বলে মনেও হয় না। অবশ্য সব ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলতেই হবে এমন তো কোনো মানে নেই। ও আরেকটি কথা, ধূমপান থেকে দুরে থাকুন, দেখবেন ভালো থাকবেন।

ইমদাদ বাবু: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ইমেইল: <[email protected]>