উৎসাহ উদ্দীপনায় নেদারল্যান্ডসে পয়লা বৈশাখ

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন করার জন্য নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে বাংলাদেশ হাউসে পয়লা বৈশাখে একত্রিত হয়েছিলেন প্রায় সাত শ জনেরও বেশি অতিথি। তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও আওয়ামী-লীগের নেদারল্যান্ডস শাখার নেতারা ছাড়াও ছিলেন দ্য হেগের ডেপুটি মেয়র রবিন বলদেব সিং, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ও স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলের শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয়েছিল। এ বছরের শোভাযাত্রার থিম ছিল ‘মানবতার জন্য সংস্কৃতি’। প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বিশিষ্ট অতিথিরা আনন্দ ও উৎসবের সঙ্গে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের অনেকে ইউরোপের অন্যান্য অংশ থেকেও যোগ দেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রা

বাংলা সংস্কৃতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবন বাংলাদেশ হাউস প্রথাগত মোটিফ, আলপনা, বেলুন, ফেস্টুন, পোস্টার ও ফুলের সঙ্গে সুন্দরভাবে সজ্জিত ছিল। বৈশাখী আমেজ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশিরা রঙিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজে সজ্জিত ছিলেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

বক্তব্যে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল উল্লেখ করেছেন, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন বাংলাদেশের সীমান্তে এখন আর সীমাবদ্ধ নয়, এই সর্বজনীন উৎসব বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে। এই ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব আমাদের নতুন আশার আলো সঙ্গে পুনর্জাগরিত করে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানান। প্রবাসীরা যেন তাদের গন্তব্য দেশে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উপস্থাপনের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস থেকে উপলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগান। রাষ্ট্রদূত বেলাল বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে অগ্রবর্তী হওয়ার কথা উল্লেখ করে সকলকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার বাংলাদেশ গঠনে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ মুহম্মদ বেলাল
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ মুহম্মদ বেলাল

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের গতি বজায় রাখতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ডেপুটি মেয়র রবিন বলদেব সিং তার বক্তব্যে, নববর্ষ উপলক্ষে সকল বাঙালিকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আজকের এই বৃহৎ উপস্থিতি বাঙালিদের সংহতিপূর্ণ সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি তুলে ধরায় বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের দূতাবাসকে দ্য হেগে একটি মডেল দূতাবাস হিসেবে অভিহিত করেন।
পরে উপস্থিত অতিথিদের প্রতি আমন্ত্রিত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও সম্মানিত ব্যক্তিরা নিজ ভাষায় ও বাংলায় শুভ নববর্ষ বলে এবং তাদের নিজ ভাষায় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

উৎসবে স্থানীয় বাঙালি শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা বিশেষ মাত্রা যোগ করে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গঠিত ব্যান্ড 'ত্রিমাত্রিকের বাংলা গানের উপস্থাপনা দর্শকদের আকৃষ্ট করে। বিকেলে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী হৈমন্তী ও সন্দীপনের নেতৃত্বে অতিথি শিল্পীদের একটি দল বাংলাদেশ হাউসে বাংলা গানের অনুরণন ঘটায়। জনপ্রিয় বাংলা গানের তাদের পরিবেশনা উপস্থিত দর্শকদের বিমোহিত করে যার রেশ শ্রোতাদের মাঝে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যমান ছিল।

অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবার পরিবেশন করা হয়
অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবার পরিবেশন করা হয়

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাদ্য উপভোগের পাশাপাশি কয়েকজন উত্সাহী প্রবাসী অনুষ্ঠানস্থলে স্টল দেন। এখানে নারী ও শিশুরা মেহেদি পরিয়ে দেয় ও পেইন্ট করে এবং ঐতিহ্যবাহী নাশতা ও পানীয় পরিবেশন করা হয়। মধ্যাহ্নভোজে দূতাবাস সকল অতিথিদের জন্য ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবার পরিবেশন করে। অতিথিদের বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও পিঠাও পরিবেশন করা হয়।
সামগ্রিকভাবে, বিদেশি অতিথি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের আনন্দ ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং নাচ, সংগীত ও বাঙালি খাবার সংবলিত একটি দিন উপভোগ করেন। বিজ্ঞপ্তি