বিয়ের আগে ও বিয়ের পরে

বারোটা বেজে এক মিনিট। দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে অপর্ণা। হাতের মোবাইলটা নিশ্চুপ। বুকের ভেতরে বয়ে যাচ্ছে অভিমানী ঝড়।

আজকের এ বিশেষ দিনটি ভুলে গেল অনুরাগ? খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে অপর্ণার। আজ প্রথম বিবাহবার্ষিকী। এই দিনটি নিয়ে কতই না মধুর স্বপ্ন বুনেছিল মনে। কিন্তু অনুরাগ সব ভুলে গেছে। ড্রইংরুমে বসে দিব্যি টিভি দেখছে। কাছে ডেকে শুভেচ্ছা তো জানালই না, মুঠোফোনেও ছোট একটা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাল না। অথচ এই মানুষটা বিয়ের আগে প্রতিটা দিবসে ঠিক বারোটা এক মিনিটে অপর্ণাকে শুভেচ্ছা জানাত। বিয়ের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আবেগের বয়সেরও ভাটা পড়েছে। এখন আর অপর্ণার প্রতি আগের মতো সেই আকর্ষণ নেই অনুরাগের। কথাটা মনে আসতেই অপর্ণার দুচোখ বেয়ে অসহ্য যন্ত্রণার জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

অপর্ণা?
অনুরাগের ডাক শুনে অপর্ণা আবারও ঘড়ির দিকে তাকাল। বারোটা দুই।
মনে হয় অনুরাগের ঘড়ি এক মিনিট স্লো। অপর্ণার মনের মেঘ কেটে গেল। মনে একরাশ প্রশান্তি নিয়ে দাঁড়াল অনুরাগের সামনে।

টিভির দিকে তাকিয়েই অনুরাগ বলল, এক গ্লাস পানি দাও তো অপর্ণা! বাংলাদেশ আজ নিশ্চিত জিতবে। চার-ছক্কার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

অপর্ণা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। পানির জন্য অনুরাগ আমাকে ডেকেছে? উইশ করার জন্য নয়? রাগে গড়গড় করতে করতে পানির গ্লাসটা অনুরাগকে এগিয়ে দিল।
পানির গ্লাসটা নিয়ে অনুরাগ আবারও টিভির দিকে তাকাল। অপর্ণা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে।

অপর্ণা? একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি।

এবার বোধ হয় অনুরাগের মনে পড়েছে। যা ভোলা মন! অপর্ণা মৃদু হেসে বলল,

কী কথা অনুরাগ? তুমি আজকাল সব ভুলে যাও।

আজ সুপর্ণার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মা তোমাকে যেতে বলেছে।

অপর্ণা গাল ফুটিয়ে বলল, মার সঙ্গে কথা হয়েছে।

অপর্ণা?

১২টা ১০। অপর্ণা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।

বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছ কেন বলত? এক কাপ চা নিয়ে এসো। টাইগাররা আজ ফাটিয়ে খেলছে। চা খেয়ে চাঙা হই। তুমি যদি খেলা দেখ তো বসো আর না দেখলে ঘুমিয়ে পড়।

অপর্ণা রাগে, অভিমানে ফুঁসতে ফুঁসতে অনুরাগের জন্য চা বানাতে গেল।

গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর একটু শব্দ করেই রাখল। অনুরাগ নির্বিকার। সব মনোযোগ টিভির দিকে। অপর্ণার ইচ্ছে হচ্ছে একটা আছাড় দিয়ে টিভিটা ভেঙে ফেলতে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সমুদ্রের গর্জন তুলে চায়ে চুমুক দিল অনুরাগ...তৃপ্তির সংগে বলল, আহা!

অপর্ণা ভাবল, চা-টা বোধ হয় খুব ভালো হয়েছে, সে জন্য অনুরাগ সুর তুলে আহা বলেছে। কিন্তু যখন অনুরাগ চিৎকার দিয়ে বলল, নট আউট! আমি তো আগেই বলেছি, এটা কোনোভাবেই আউট হতে পারে না।

আমার জীবনটাই বৃথা! অপর্ণা রাগে কটমট করতে করতে রুমের দিকে রওনা দিল। পেছন থেকে অনুরাগ শান্ত স্বরে অপর্ণাকে ডাক দিল,

অভিমানে অপর্ণার দুচোখ ছলছল করছে।

পেছন ফিরে অনুরাগের চোখের দিকে তাকাল। অনুরাগ এক পলক অপর্ণার দিকে তাকিয়ে আবার খেলায় দৃষ্টি স্থির করল।

অপর্ণা লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে যাও। আমি আজ ড্রইংরুমে ঘুমাব। খেলা শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যাবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

অপর্ণা আর একটা কথাও বলল না। রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।

অনুরাগ প্রথম বিবাহবার্ষিকীই ভুলে গেল? সারা জীবন তাহলে কী করবে? বিয়ের আগে পাঁচ বছরের প্রেম। তখন তো কিছু ভুলত না আর এখন? ভুলবেই তো। এখন তো পেয়ে গেছে। আসলে পাওয়ার পর কোনো কিছুর মূল্য থাকে না। অপর্ণা চোখ মুছতে মুছতে আলমারির কাছে গেল। আলমারিটা খুলে একটা প্যাকেট বের করল। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনুরাগের জন্য একটা শার্ট কিনেছিল। কিন্তু অনুরাগ যে এভাবে বিশেষ দিনটি ভুলে যাবে, তা অপর্ণা কস্মিনকালেও কল্পনা করেনি। রাগে ক্ষোভে আছাড় দিয়ে শার্টটা ফেলে দিল। লাইটটা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল অপর্ণা।

রাতের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি জ্বালাতন শুরু করল অপর্ণাকে। এক বুক কষ্টের নোনা জলে ভিজে গেল মাথার বালিশটা। অনুরাগের অবহেলাগুলো যেন তিলে তিলে দগ্ধ করছে অপর্ণাকে। এভাবে অভিমানের খেয়ায় ভাসতে ভাসতে অপর্ণা একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।

মাঝরাতে হঠাৎ অপর্ণা আলতো হাতের স্পর্শ অনুভব করল। পেছন থেকে অনুরাগ অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আর ফিসফিস করে ডাকছে। অপর্ণার নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হলো। দরজাটা ভেতর থেকে লাগাতে ভুলে গিয়েছিল। যে মানুষটা প্রথম বিবাহবার্ষিকী ভুলে যায়, সে এখন মাঝরাতে এসেছে নিজের চাহিদা পূরণ করতে। সব পুরুষ এক। স্বার্থপর!
এক ঝটকায় অনুরাগের হাতটা সরিয়ে ফেলল অপর্ণা।

অনুরাগ কিছু বলল না। আবারও অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরল। এবারও অপর্ণা অনুরাগের হাতটা সরিয়ে ফেলল। অনুরাগ তাড়াতাড়ি রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিল।

অপর্ণা ওঠো!

অপর্ণা রেগে উঠে বসল,

এত রাতে লাইট জ্বালিয়েছ কেন?

অনুরাগ পলিথিনে মোড়ানো একটা বাক্স বের করল।

নাও।

এটা কী?

অনুরাগ গর্বের সঙ্গে বলল, মিষ্টি।

অপর্ণা ভ্রু কুঁচকে বলল,

মিষ্টি? কিসের মিষ্টি?

বাংলাদেশ জিতেছে। আমি জানতাম আমাদের টাইগাররাই জিতবে। সে জন্য অফিস থেকে ফেরার পথে মিষ্টি কিনে এনেছি।

তুমি মাঝরাতে আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়েছ মিষ্টি খাওয়াতে?

হ্যাঁ ! নাও মিষ্টি খাও। অনুরাগ বাক্সটা অপর্ণার হাতে তুলে দিল।

একে তো অনুরাগ বিশেষ দিনটি ভুলে গেছে, তার ওপর এত রাতে ঘুম থেকে তুলে মিষ্টি খেতে বলছে।

অপর্ণা চিৎকার করে বলল,

তুমি আমার সঙ্গে তামাশা করো? তুমি না ও ঘরে ঘুমাবে বলেছিলে? এখানে কেন এসেছ?

অনুরাগ মুচকি হেসে বলল,

তোমাকে মিষ্টি খাওয়াতে। বাংলাদেশ জিতেছে।

রাখো তোমার মিষ্টি। অপর্ণা বাক্সটা ছুড়ে ফেলে দিল। তুমি এ রুমে ঘুমাও। আমি গেলাম।

অপর্ণা হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অনুরাগ নিষ্পলক তাকিয়ে রইল অপর্ণার প্রস্থানের দিকে।

ড্রইংরুমেই ঢুকেই অপর্ণা আঁধারের মাঝে আবিষ্কার করল সারি সারি প্রদীপ দিয়ে আঁকা ভালোবাসার হৃদয়টাকে। মাঝখানে ছোট্ট একটা কেক। ভেতরে লেখা ৩৬৫ দিন কেবল তোমাকেই ভালোবাসি।

বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল অপর্ণা!

পেছন থেকে অনুরাগ এসে জড়িয়ে ধরল অপর্ণাকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, শুভ বিবাহবার্ষিকী!

অপর্ণা এতক্ষণে সব বুঝতে পেরেছে। আয়োজন দেখেই বুঝতে পেরেছে অনুরাগ সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই তখন অমন ভণিতা করছিল।

শার্টটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। অপর্ণা পেছন ফিরে তাকাল। অনুরাগের জন্য কেনা শার্টটা পরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সেই মিষ্টির প্যাকেট। মনে মনে ভীষণ লজ্জা পেল অপর্ণা।

তোমার মনে ছিল অনুরাগ? অনুরাগ হেসে উত্তর দিল, ভুলে যাওয়ার কি কোনো কারণ ছিল? তাহলে বারোটা এক মিনিটে উইশ করলে না যে?

বারোটা এক মিনিটে উইশ করতে হবে কোথাও লেখা আছে নাকি? আর তখন যদি উইশ করতাম তাহলে তোমার অভিমানে লাল হওয়া মুখটা কি করে দেখতাম? রাগলে তোমাকে যা লাগে না! একদম সাক্ষাৎ পেতনি!

কী বললে? মজা করলাম। রাগলে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগে।

সরি অনুরাগ! আমি আসলে একটু বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছি। এভাবে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অনুরাগ রহস্যের হাসি হেসে বলল, সারপ্রাইজ তো আরও একটা বাকি আছে! কী সেটা?

বাক্সটা অপর্ণার হাতে দিয়ে বলল, ই নাও। মিষ্টি? খুলেই দেখো।

অপর্ণা বাক্সটা ধীরে ধীরে খুলল,

মিষ্টির বাক্সের ভেতরে মখমলের আরও একটা বাক্স। অপর্ণা অনুরাগের দিকে হতবাক হয়ে তাকাল। এটা কী? মিষ্টি কই?

আহা খুলেই দেখো না। বাক্সটা খুলতেই হীরার হারটা ঝলমল করে উঠল। অপর্ণা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

কি পছন্দ হলো? হীরার হার? অনুরাগ হারটা নিয়ে অপর্ণার গলায় পরিয়ে দিল। অপর্ণা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

অনুরাগ এসব কি করেছ তুমি? আমার এত দামি হারের প্রয়োজন ছিল না। আমি শুধু চেয়েছি আজকের এই বিশেষ দিনটিতে তুমি আমাকে প্রাণভরে ভালোবাসা উপহার দেবে। আমাকে শুধু শুভেচ্ছা জানালেই হতো।

তাহলে তোমার এই রাগ, ক্ষোভগুলো কি করে দেখতাম? কিসের রাগ? অপর্ণার আহ্লাদি সুর, রাগ করোনি? না তো?

ধড়াম করে কে দরজা লাগাল? ওটাতো এমনি এমনি। তাই বুঝি?

কেঁদে কেঁদে কে বালিশ ভেজাল? কই কাঁদিনি তো? ওই যে চোখের কোনে জল?

অপর্ণা অনুরাগের বুকে লজ্জায় মুখ লুকাল। অনুরাগ আলতো করে অপর্ণার মাথায় হাত রাখল। ভালোবাসায় রাগ-অনুরাগ না থাকলে ভালোবাসা জমে না।

তাই বলে তুমি আমাকে বারোটা এক মিনিটে উইশ করবে না? অপর্ণার অভিযোগ

আবার শুরু হয়ে গেল? অনুরাগ অবাক, হু আবার শুরু করেছি।

তুমিও তো আমাকে বারোটা এক মিনিটে উইশ করলে না। গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে।

ভালো করেছি! অপর্ণার হাসি।

অনুরাগ অপর্ণার দুহাত ধরে বলল,

ঠিক আছে, এখন থেকে সব দিবসে দুজন একসঙ্গে বারোটা এক মিনিটে দুজনকে শুভেচ্ছা জানাব।

অপর্ণার মৃদু হাসি আর চমৎকার প্রতি উত্তর,

মেয়েরা সারা জীবন তার পাশের প্রিয় মানুষটিকে প্রেমিক হিসেবে দেখতে চায়। বিয়ের আগের মানুষটি যখন বিয়ের পর বদলে যায়, তখন সেটা মন থেকে কখনই মানতে পারে না। মেয়েদের ম্যাচিউরিটি ওই একটা জায়গায় থেমে থাকে। সংসারের বয়স যতই বাড়ুক না কেন মেয়েরা আজীবন কল্পনাবিলাসী। কাছের মানুষটার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব সময় আকুল হয়ে থাকে। বিয়ের আগে তোমরা পুরুষেরা যতটা রোমান্টিক থাকো, বিয়ের পর হয়ে যাও চরম বাস্তববাদী। বিয়ের পর বউ আর প্রেমিকা থাকে না। তখন হয়ে যায় নিজস্ব সম্পত্তি। কজন বিবাহিত পুরুষ স্ত্রীকে সম্পদ ভাবে?

অনুরাগ মুচকি হেসে অপর্ণাকে বলল, রবি ঠাকুরের হৈমন্তী থেকে কপি-পেস্ট করলে মনে হয়?

কপি-পেস্ট না করলে তোমাকে বোঝাব কি করে? অনুরাগ হাতটা উঁচু করে বলল,

আমি কিন্তু তোমাকে সম্পদ ভাবি। ছাই ভাবো। অপর্ণার অভিমান। তোমার বিশ্বাস হয় না?

তুমিও যে বদলে গেছ সমুদ্র! অপর্ণার কণ্ঠে চাপা হতাশা!

সমুদ্র? অপর্ণার কণ্ঠে সেই পুরোনো নামটা শুনে অনুরাগের বুকের ভেতরটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠল।

কত দিন পর আমায় ‘সমুদ্র’ ডাকলে অপর্ণা!

তুমি আমায় কী যেন ডাকতে?

তুমি তো আমার ‘জলকন্যা’!

শেষ কবে যেন আমায় ‘জলকন্যা’ ডেকেছিলে?

অনুরাগ নিশ্চুপ! মনে নেই।

বদলে গেছ তুমি সমুদ্র। সঙ্গে আমাকেও বদলে দিয়েছ। বিয়ের আগে যেমনটি ছিলে বিয়ের পর তেমন আছ কি? এখন আর আমায় জলকন্যা ডাকোনা, অথচ এক সময় তোমার বিশাল সমুদ্রে এই জলকন্যা পরম সুখে সাঁতার কাটত। এখন আর আমরা ঝুম বরষায় একসঙ্গে ভিজিনা, ভরা পূর্ণিমার চাঁদ দেখি না, একসঙ্গে গান গাই না, শূন্য বিকেলগুলো পড়ে থাকে প্রিয়জনদের প্রতীক্ষায়।

বাস্তবতার নিরিখে অনুরাগের উত্তর,

আরে ওসব বিয়ের আগেই হয়। এখন কি আর সম্ভব বলো? এখন সংসার হয়েছে। দায়িত্ব অনেক। আর এই যে আজ তোমাকে হীরের হারটা উপহার দিতে পেরেছি, এটা তো আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল। বিয়ের পর যদি আগের মত বৃষ্টিবিলাস, জোছনা বিলাস করে বেড়াতাম তাহলে বিবাহবার্ষিকীতে বেলিফুল ছাড়া কিছুই জুটতোনা অপর্ণা। দেখো অপর্ণা, বিয়ের পর আমরা বেশির ভাগ পুরুষই বদলে যাই। এটা তোমাদের অভিযোগ কিন্তু আমাদের বদলে যাওয়ার পেছনের গল্পটা কেউ পড়তে চায় না।

আমরা বদলাই তোমাদের ভালো রাখার জন্য, নিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের জন্য। আমরা বদলে যাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দেব বলে। আর সে জন্যই বিয়ের পর আমরা হয়ে পরি চরম বাস্তববাদী।

দুজনের আলাপচারিতার পুরোটা সময় অনুরাগ অপর্ণার হাতটা ধরে ছিল।

অপর্ণা ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির প্রলেপ দিয়ে বলল,

এতক্ষণ ধরে আমার হাতটা যে ধরে রেখেছে সে কিন্তু এই মুহূর্তে সেই বাস্তববাদী পুরুষটি নেই, কিছু রোমান্টিকতা এখনো অবশিষ্ট আছে তোমার মাঝে।

সমুদ্র, ভালোবাসা আপেক্ষিক। সুখী হতে হলে যে অঢেল অর্থ থাকতে হবে, এমনতো কোন কথা নেই? ঐ যে বললে, বেলি ফুলের মালা! যদি দুজনের মাঝে নিখাদ ভালোবাসা থাকে , তখন ঐ বেলিফুলের মালাটাই হয়ে উঠবে হীরার চেয়ে দামি। আমাদের ভালো রাখার প্রতিযোগিতায় তোমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলো অন্য ভুবনে। খুব কাছে থেকেও তোমরা হয়ে যাও আগন্তুক । বিছানার চেনা মানুষটা কখন যে অন্তরে অচেনা মানুষে পরিণত হও, বুঝতেই পারোনা। তোমাদের ছোট ছোট অবহেলাগুলো এক সময় সম্পর্কে অভিমানের ঝড় তোলে। হারিয়ে যায় বিশ্বাস, আস্থা। ভালোবাসা হারিয়ে চায় চাপা ক্ষোভের অন্তরালে। সুখপাখি তখন কেবলই স্বপ্ন। এভাবে ভালো থেকে কি লাভ বলো? বলছি না তোমরা শুধু বদলে যাও, আমরাও বদলাই সময়ের হাত ধরে। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে পুরোনো প্রেম আর স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নেয় না।

সম্পর্ককে যত্ন করতে জানতে হয়। দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়া, আস্থা, বিশ্বাস আর সর্বোপরি ভালোবাসা। এগুলোর সংমিশ্রণ সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ হয়। চলো আজ থেকে আমরা আবারও আগের মত হয়ে যাই!

প্রতিদিন না হয় জলকন্যাই ডাকলে! মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টিতে না হয় ভিজলাম দুজনে। জোছনা বিলাস হোক কখনো সখনো। আর হাত দুটি? এমনিভাবেই ধরে রেখো!

আবেগের অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে অপর্ণা অনুরাগের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, পারবে না সমুদ্র?

অনুরাগ অপর্ণার হাতটা ধরে বলল, তাহলে চলো জলকন্যা !

কোথায়? অনুরাগ অপর্ণাকে ছাদে নিয়ে এল,

ভরা পূর্ণিমার রুপালি আলোয় অপর্ণা-অনুরাগের এক চিলতে ছাদ ঝলমল করছে।

আজ তাহলে জোছনা বিলাস হোক!

অপর্ণার চোখে একরাশ মুগ্ধতা!

চলো তাহলে দুজনে ঐ গানটা ধরি..

‘এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার,
শুধু দুজনের...’

*শাহীন আক্তার স্বাতী, কানাগাওয়া কেন, জাপান