তথ্য সুরক্ষা আইন সংরক্ষণের ব্যবস্থা দরকার

মহিউদ্দিন বাবর হক।
মহিউদ্দিন বাবর হক।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে GDPR (General Data Protection Regulation) অর্থাৎ নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে হইচই পড়ে গেল। ইউরোপ ও আমেরিকাতে GDPR নিয়ে সভা সমাবেশ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য। ২৫ মে ২০১৮ থেকে ইইউ নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন (GDPR) কার্যকর হবে। এতে করে কেউ সম্মতি ছাড়া অন্য কারও ব্যক্তিগত ডেটা কোনো উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন না। যে কেউ তাকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে তিনি কেন তার ডেটা ব্যবহার করতে চান এবং কত দিন সে তার কাছে রাখতে চায়। সামাজিক নেটওয়ার্ক বা ই-কমার্স পোর্টাল যা দিয়ে আমরা একটি পণ্য কিনছি, তারাও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই ইউরোপে এখন যেকোনো ওয়েবসাইটে লগ ইন করতে হলে আগে GDPR-এর অনুমতিপত্রে ক্লিক করতে হয়।

কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বললেই চলে। ইচ্ছেমতো তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। তথ্য অধিকার দেখার মতো কেউ নেই মনে হচ্ছে।

নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন বাংলাদেশে কার্যকর করা উচিত।
নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন বাংলাদেশে কার্যকর করা উচিত।

আমি ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আসছি। নতুন গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যেমন কষ্টের তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টের সেই গ্রাহকদের ধরে রাখা। গত ১২ বছরের আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম মাত্র। আমি মনে করি, নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করা একটা চ্যালেঞ্জ, যার সফলতার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা সহজে নতুন গ্রাহক খুঁজে পেতে চায় এবং পায়। কীভাবে? খুবই সহজ। বাংলাদেশে রপ্তানিকারক ও গ্রাহকের সব তথ্য সংরক্ষণ বা গোপনীয়তার কোনো ব্যবস্থা নেই, যেকোনো কেউ পোর্ট বা রপ্তানিকারক অধিদপ্তর থেকে আমদানিকারকের সব তথ্য পেয়ে যায়, এমনকি বিল পর্যন্ত পাওয়া কোনো ব্যাপারই না, কত দরে কোনো পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তা-ও গোপন থাকে না। সব গ্রাহকই চায় কম দামে একই পণ্য আমদানি করতে, আর এটাকেই কাজে লাগায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মূল রপ্তানিকারকের থেকে সামান্য কম দামে আমদানিকারকের কাছে বাণিজ্যিক অফার পাঠায়। এতে আমদানিকারক বিভ্রান্তিতে পড়ে। এক-দুই-তিনবার গ্রাহকদের বোঝানো যায়, এরপর ঠিকই সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের অফার গ্রহণ করে। আমি বাংলা, ইংলিশ ও ইতালিয়ান সমন্বয় করে পণ্যের নামকরণ করেছি, যাতে অন্যদের বুঝতে সমস্যা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

ইউরোপ ও আমেরিকাতে নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে সভা-সমাবেশ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য।
ইউরোপ ও আমেরিকাতে নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে সভা-সমাবেশ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য।

ছোট্ট বাস্তব একটি উদাহরণ দিই, একটি পণ্য CIF-এ আমরা ৩ ডলারে বিক্রি করে সামান্য লাভ করি, এক কোম্পানি না বুঝেই সেটা আমাদের আমদানিকারকের কাছে দেড় ডলারে অফার করে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আমাদের জানানোর পর ওই কোম্পানির দেওয়া নম্বরে ফোন করে জানতে চাইলাম পণ্যটি আছে কি না, এক কনটেইনারে কতটি মাল আসবে, কনটেইনারের ভাড়া কত ইত্যাদি। উত্তরে তিনি বললেন, পণ্য এখন নেই, ছয় মাসের মধ্যে দেওয়া যাবে, কনটেইনারে ভাড়া ১৮০০ ডলার, এক কনটেইনারে কতটি মাল আসবে, সেটাও তিনি জানেন না। তখন আমি বললাম, এক কনটেইনারে ১২০০টি আসবে। ওই হিসেবে পণ্য আমদানিকারকের পোর্ট পর্যন্ত আসতে শুধু ভাড়া বাবদ ওনার অফারের সব ডলার খরচ হয়ে যাবে। তাহলে পণ্য তৈরি থেকে পোর্ট পর্যন্ত নেওয়ার খরচ কোথায় পাবেন? সবকিছু বলার পর বললেন, তিনি না বুঝেই অফার লেটার দিয়েছেন।

এভাবে অনেকেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভুয়া অফার লেটার দিয়ে বিভ্রান্ত করেন, যা প্রকৃত রপ্তানিকারকের জন্য ক্ষতিকর। আশা করি, সরকার আমাদের দেশের সরকার তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন।

হক মহিউদ্দিন বাবর, মিলান, ইতালি