বাংলাদেশের উপকূলে ভাঙন ঠেকানোর কৌশল নিয়ে নেদারল্যান্ডসে আলোচনা

শেখ মুহম্মদ বেলালের সঙ্গে আদ স্মাল, টম ইয়েসবার্ট ও মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী
শেখ মুহম্মদ বেলালের সঙ্গে আদ স্মাল, টম ইয়েসবার্ট ও মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী

কৃষি বিষয়ে হার্ভার্ড নামে পরিচিত ওয়াখেনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের উপকূলে ভাঙনসহ অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয় রোধে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের উপকূল রক্ষার অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং ব্যাপক পরিবেশ সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশে তা কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে ওয়াখেনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদ স্মাল, অধ্যাপক টম ইয়েসবার্ট এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালের সঙ্গে সম্প্রতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আলোচনা করেছেন। মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরীর গবেষণার সূত্র ধরে তাঁরা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী জৈব প্রকৌশল ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব টেকসই উপায়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর যে প্রাথমিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। তাঁরা ওয়াখেনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের যৌথ উদ্যোগে কুতুবদিয়ায় সম্ভাবনা যাচাই করার উদ্দেশ্যে ঝিনুকের প্রাচীর তৈরি করে উপকূল রক্ষার যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে তা তুলে ধরেন। তাঁরা জানান এই গবেষণা সফল হলে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ঝিনুকের প্রাচীর ব্যবহার জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় ব্লু-ইকোনমির যে সম্ভাবনার দ্বার বাংলাদেশের জন্য উন্মোচিত হয়েছে তা উল্লেখ করেন। ডাচ অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার, চিংড়ি, কাঁকড়া, পার্ল চাষ, খাঁচায় মৎস্য চাষ এবং বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন। সামুদ্রিক প্রাণী চাষে সফলতা অর্জিত হলে তা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যেমন সহায়ক হবে তেমনি রপ্তানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
তিনি ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেদারল্যান্ডস সফরের পরে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায়িক সম্পর্কে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা তুলে ধরেন। ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডসের পরামর্শানুযায়ী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা (ডেলটা প্ল্যান ২১০০) সম্পাদিত হয়েছে এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাচ সহযোগিতা ও পরামর্শ অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাচ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উভয় দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়।
অধ্যাপক স্মাল ও ইয়েসবার্ট জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে জৈব প্রকৌশল ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। সামুদ্রিক মৎস্য ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ, বাণিজ্যিকভাবে এসব মৎস্য ও প্রাণী চাষ, পার্ল কালচার ও খাঁচায় মৎস্যচাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ওয়াখেনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় উপদেশমূলক সহায়তা প্রদান করতে পারে বলে জানান। এ বিষয়ে তারা উভয়েই বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সাধনে সহায়তা করার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
শেখ মুহম্মদ বেলাল দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের সর্বাত্মক আশ্বাস প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি