ঈদে প্রবাসীর দুঃখ

লেখক
লেখক

দেশ ছেড়েছি বারো বছর। সেই থেকে আর দেশে ঈদ করা হয় না। প্রবাসে সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদের চাঁদ দেখা হয় না। এমনকি ঈদ কবে এটা জানার জন্য একমাত্র ভরসা ইন্টারনেট। প্রবাসে এতগুলো ঈদ করলাম কিন্তু একবারও চাঁদ দেখা হয়নি।

দেশে আমাদের বাড়িতে একটি উঁচু জায়গা থেকে সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদের চাঁদ দেখতাম। চাঁদ দেখে সবাই নতুন চাঁদ দেখার দোয়া পড়ে নিতাম। কেউ বলতেন, চাঁদের বয়স নাকি একদিন। কেউ বলতেন, দুই দিন। আমরা ছোটরা তখন এগুলো বুঝতাম-টুঝতাম না। চাঁদ দেখার পর থেকেই আমাদের ঈদ আনন্দ শুরু হয়ে যেত। অতি আগ্রহে সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম আমরা।

লেখকের মায়ের তৈরি সন্দেশ
লেখকের মায়ের তৈরি সন্দেশ

তখন ঈদের দিন মনে হয় একটু বেশিই ঠান্ডা পড়ত। তবুও ঈদের দিন গোসল করা ও নতুন কাপড় পরা সুন্নত, এসব আমরা মক্তবে পড়েই জেনে গিয়েছিলাম। আমরা ভাইয়েরা ডাবল ঈদের পোশাক উপহার পেতাম। নানা-নানি ও দাদা-দাদির কাছ থেকে ঈদের পোশাক পেতাম আমরা। আম্মা আমাদের নতুন লুঙ্গি ধুয়ে রাখতেন। বলতেন, নতুন লুঙ্গি না ধুলে পরতে নাকি আরাম হবে না। সকালে নতুন কাপড় পরে আতর মেখে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। ফিরে হান্দেশ (সন্দেশ) ও ঈদের সেমাই সবাই মিলে খেতাম একসঙ্গে।
কত বছর হলো ঈদে নতুন লুঙ্গি পরি না। ঈদে আম্মার হাতে তৈরি হান্দেশ খাওয়া হয় না। ঈদের সময় দেশ থেকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করেন ঈদ কেমন কেটেছে? তখন বলি, এইতো কেটেছে আর কি। বিদেশের ঈদতো আর দেশের মতো হয় না। বিদেশে ঈদ দেখা যায় না। চাঁদ দেখা যায় না। বিদেশে কিচ্ছু দেখা যায় না। বিদেশে ঈদের চাঁদের খবর কেউ রাখেন না। রাখার কারও সময় হয় না।
অনেক বছর আগের আমার আম্মার হাতে তৈরি সন্দেশের একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে প্রতিবছর সবাইকে ঈদ মোবারক জানাই। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না আশা করি। পাঠকের জন্য সন্দেশের সেই ছবিটা দিলাম ও অগ্রিম ঈদ মোবারক সবাইকে!

নাঈম হাবিব: জার্মানি। ইমেইল: [email protected]