প্রবাসীর ঈদ ভাবনা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঈদ মানেই সারা দিন উৎসব, প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো আর প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দ ভাগাভাগি করা। ঈদ বড়দের চেয়ে ছোটদের বেশি আনন্দ দিয়ে থাকে। তবে ঈদ সবার মনেই একটু ছোঁয়া দিয়ে যায়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর বা রমজান ঈদ। বাড়তি একটা ব্যস্ততা থাকে না এই ঈদে। মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব এটি। আবেগ, অনুভূতি আনন্দ, উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ঈদ পালিত হয়। সারা বছর দেখা না হলেও এ দিন ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে অনেক পুরোনো প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলির মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান হয়ে থাকে।

কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের কাছে ঈদ আনন্দ নিয়ে আসে না। তারা হলেন প্রবাসী ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা। যারা নিজের কথা না ভেবে পরিবার ও দেশের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকৃত পক্ষে আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের দেহ থাকে বিদেশে আর মন পড়ে থাকে দেশে। প্রতিটি মুহূর্তে আমরা দেশ ও পরিবার নিয়ে ভাবতে থাকি। প্রবাস জীবন মানেই সংগ্রামী জীবন। উন্নয়নের সংগ্রাম। এ জীবন কর্মমুখর প্রতিনিয়ত। সংগ্রাম করে চলতে হয় এখানে।
ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না, সেমাই খেয়ে যাও। দীর্ঘ কর্মব্যস্ততার পর ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনের মূল কর্মসূচি।

লেখক
লেখক

ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু-একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশে ছুটে যান। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।
আমি একজন নির্মাণ প্রকৌশলী। এই প্রথম প্রবাসে ঈদ পালন করতে যাচ্ছি। মা-বাবা, ভাইবোন ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করার মজাই আলাদা। ঈদের দিন ফজর নামাজ আদায় করে কবরস্থান জেয়ারতের মাধ্যমে শুরু হতো দিনটি। নতুন পাঞ্জাবি পরে প্রথমেই আম্মুকে সালাম করে শুরু করতাম অন্যদের সালাম করা। এক সময় নিজেই ঈদের সালামি পেতাম। পরবর্তীতে তা নিজেকেই দিতে হতো। তবে সালামির নতুন টাকাটি ছোটদের হাতে দেওয়ার মাঝে একটা আনন্দও আছে। বাড়ির সবার সঙ্গে দেখা করে সালামি পর্ব শেষ করে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য রওনা করতাম। নামাজ আদায় করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কোলাকুলি করে, বাসায় ফিরে আম্মুর হাতে তৈরি নানা পিঠা ও সেমাই খাওয়ার মধ্য দিয়ে কেটে যেত সময়।
কিন্তু এবার এটি আর হচ্ছে না। মিস করতে হবে সবকিছুই। অন্য সবার মতো আমাকেও প্রবাস জীবনের ঈদ পালন করতে হব। এত সব আনন্দ ছাড়া ঈদ পালন করা খুবই কষ্টের। প্রতিবার পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিজে গিয়ে পছন্দ করে কিনে দিতে হতো। কিন্তু এবার শুধু দূর থেকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েই ঈদের এই আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারলাম। ভোগে সুখ নেই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ, প্রবাস জীবনে এই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আর এই পরীক্ষা প্রবাসী সন্তানেরাই দিয়ে আসছে।

সাইদুল ইসলাম (সুমন): সৌদি আরব।