বাবার জন্য গর্ব করতেই পারি

বাবার সঙ্গে লেখক
বাবার সঙ্গে লেখক

গতকাল বিশ্ব বাবা দিবসে প্রবাসে বসে বাবাকে খুব মিস করেছি। আমার বাবা সামান্য একজন কৃষক হয়েও আমাকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। জানি না, বাবার মনের আশা পূর্ণ করতে পেরেছি কি না! আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে আদুরে আমার বাবা। আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ তিনি। শত কষ্টের মাঝেও তিনি আমাকে স্কুলে পাঠিয়েছেন। আমাকে নতুন কাপড়, নতুন বইপত্র কিনে দিয়েছেন।

তিনি আমাকে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাকে সুন্দর একটি নাম, থাকার বাসস্থান এমনকি সমাজে তার পরিচয়ে পরিচিত করে দিয়েছেন। তিনি কখনো বুঝতে দেননি আমি একা। সব সময় চেষ্টা করেছেন বুকে আগলে রাখতে।
আমার বাবা আমার সুপার হিরো। সারা দিন শত পরিশ্রমের পরও ক্লান্ত হতেন না। আসলে তিনি তার ক্লান্তিটা আমাদের সামনে লুকিয়ে রাখতেন। বাবার কোনো উৎসব ছিল না। ঈদের দিন নামাজ শেষ করে হালকা কিছু খেয়েই মাঠে চলে যেতেন কাজ করার জন্য। আমি তখন ভাবতাম বাবা এমন কেন? তার কী ঈদ নাই? একটা দিন কাজ না করে বাবা আমাদের মতো ঘুরে বেড়ান না কেন? এখন আমি বুঝি বাবা কেন ঈদ উদ্‌যাপন করতেন না। তিনি শত কষ্টের মাঝেও চেয়েছিলেন আমাদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে।
তিনি সব সময় চেয়েছেন আমরা যাতে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হই। তাই নিজের জমিজমা বিক্রি করে এমনকি পরের জমিতে দিনমজুরির কাজ করে আমাদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতেন। তিনি আমাদের ভাইবোনকে শিক্ষা দিয়েছেন, আমরা যাতে বোমা নিক্ষেপ না করি এবং বোমা নিক্ষেপকারীদের ঘৃণা করি। মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ যাতে না করি। আমার বাবা একজন মহান ও দয়ালু ব্যক্তি।

বাবার সঙ্গে লেখক
বাবার সঙ্গে লেখক

কিন্তু তিনি একজন মিথ্যাবাদী। জমিতে ফসল ভালো হয়নি, পরের জমিতে দিনমজুরের কাজ নেই, তারপরও বলেছেন তিনি ভালো আছেন। তার পকেটে টাকা নেই, তবুও বলেছেন টাকা আছে। তিনি হতদরিদ্র তবুও বলেছেন আমরা গরিব নই। ক্লান্ত কিন্তু বলেছেন ক্লান্ত নই, সারা দিন কাজ করতেন। তিনি ক্ষুধার্ত কিন্তু বলেছেন তোরা খেয়ে নে আমি ক্ষুধা নাই। তিনি অসুস্থ কিন্তু বলেছেন আমি অসুস্থ নই। অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘরে শুয়ে থাকতেন তবুও ডাক্তার দেখাননি।
তিনি এখনো মিথ্যা বলেন। মাকে হারিয়ে তিনি একা। কিন্তু তিনি বলেন, আমি একা নই আমি খুব সুখী। যদি বলি কিছু লাগবে। তিনি বলেন, না আমার সব আছে কিছু লাগবে না।
তিনি মিথ্যা বলেছেন এবং এখনো বলেন শুধু আমাদের জন্য। তিনি সর্বদা চেয়েছেন আমরা যাতে সুন্দর একটি জীবন গড়ি, আমরা যাতে সুখী হই। তিনি আমাদের সুখের জন্য নিজের আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়েছেন। তিনিই আমাদের বাবা, আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করতেই পারি।

এম ওমর ফারুকী শিপন: সিঙ্গাপুরপ্রবাসী।