মালয়েশিয়া অবৈধ অভিবাসীদের পাশে কি কেউ দাঁড়াবেন?

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের বোর্ডিং লাউঞ্চে বসে আছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শামিম রহমান ব্যবসার কাজে ঢাকা যাবেন। বেকার সময়ে শামিম রহমান ফেসবুকে কিছু মেসেজের জবাব দিচ্ছেন। হঠাৎ একজন তরুণ এসে বাংলায় বলছে, ভাই, দেশে এক মিনিট কথা বলা যাবে?
-হ্যাঁ, যাবে। নম্বরটা বলুন

নম্বর টিপে কল দিলাম। কল রিসিভ করলেন তাঁর মা। পরে বুঝতে পারলাম তাঁর বাবা অবশ্যই পাশেই ছিল। মা ও ছেলের কথোপকথন চলছে।

মা, আমি আজকে চইলা আইতাছি। কপালে বিদেশ নাই। তোমরা কাইন্দো না। আমার কাছে কোনো টাকাপয়সা নাই, রাতে ঢাকা এয়ারপোর্টে নাইম্যা বাসে ওঠার টাকাও নাই। যদি পারো সকালে কাউরে পাঠায়ো আমারে নেওয়ার লাইগ্যা।

এই স্বল্প কয়েকটা কথা বলেই ফোনটা ফেরত দিল। এই ফাঁকে দেখে নিলাম ছেলেটির পরনের ছেঁড়া কাপড়গুলো ঢাকার কোনো রিকশাচালকের চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। পায়ের জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে। জীর্ণশীর্ণ গায়ে খালি হাতে প্লেনে উঠতে যাচ্ছে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে। সদ্য নির্বাচিত মালয়েশিয়া (মাহাথির-আনোয়ার) সরকারের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে, দালালদের কাছে জমি-বাড়ি বিক্রি সর্বস্ব হারিয়ে, হয়তো কিছুদিন হাড়ভাঙা খেটে পেটে-ভাতে পড়ে ছিল এই ঝলমলে ধনীর দেশে। বুকভরা আশা ছিল, কষ্ট করে একদিন সংস্থান হবে, টাকা হবে। ভাগ্যের টাকা ঘুরে দাঁড়াবে। বরং কিছুই হয়নি। নিঃস্ব হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে এই তরুণকে। কার কী আসে-যায়?

যদি এই ছেলেটি প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠাতেন, রেমিট্যান্সের হিসাবটা নাহয় বাড়ত। তবুও কি তাঁর ভালো-মন্দে কারও কিছু এসে যেত? আরও লাখো হতভাগার মধ্যে কয়েক শ মরে গেলেই বা কার কী? এঁদের রক্তনালির ওপর জোঁকের মতো বসে থাকা সিন্ডিকেট, যেখানে উভয় দেশের শাসক গোত্রের লোকেরাও জড়িত। এরা বেঁচে থাকলেও ওদের লাভ, মরে গেলেও ওদের লাভ।

আবার সেই আগের ঘটনায় ফিরে আসছি। ওই তরুণ ছেলেটির চোখের কোটরে যে হতাশা আর অভিশাপের ছাপ দেখেছি, তাতে মনে পড়ল, প্রকৃতির বিচার বলে একটি কথা আছে। একদিন ওদের প্রতি অন্যায়ের বিচার প্রকৃতিই করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ রইল, মালয়েশিয়া অবৈধ অভিবাসীদের তিনি যেন দেশে ফিরিয়ে নেন। অবৈধ অভিবাসীদের অমানুষিক ও লোমহর্ষক নির্যাতন থেকে রক্ষা করেন। আপনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে মানবতার মা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। প্রবাসীরাও আপনার সন্তানের মতো। মা সন্তানকে কখনো নিরাশ করে না। আশা করি, আপনিও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কারাগারে ও বাইরে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে নেবেন।

*রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক