সাত স্বর্গের সুখ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

পড়াশোনা শেষ করে বড় ভাই আর সহপাঠীদের তাড়নায় আমাকে চাকরি জীবন শুরু করতে হলো। প্রথম দুই চাকরিতে আমার কর্মের মেয়াদ ছিল যথাক্রমে এক ও দুই দিন। পরের সহপাঠী রাসেল আর বেনজিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যোগ দিলাম সিমেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডে। আমাদের কারিগরি বস ছিলেন মারলন পাবলানো নামে এক ফিলিপাইনের ভদ্রলোক। একদিন কথায় কথায় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়াকুব বিয়ে করবে কবে? এখনতো তোমরা ভালো চাকরি কর, ভালো বেতন পাও। উত্তরে আমি বললাম, শুধুমাত্র বোকারাই বিয়ে করে। আমার উত্তরে শুনে তিনি বললেন, ভাগ্যিস তোমার বাবা-মা সেই বোকামিটা করেছিলেন।

ইতিমধ্যেই চাকরি বদলে বাংলালিংক মোবাইল কোম্পানিতে যোগদান করেছি। সপ্তাহের প্রায় সাত দিনই ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় দৌড়াদৌড়ি করে ব্যস্ত সময় কেটে যাচ্ছে। বুয়েটে থাকাকালে এলাকাভিত্তিক কুষ্টিয়ার বড় ভাই ও ছোট ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্র ধরেই সাদিক একদিন মঙ্গলবারে ফোন দিয়ে বলল, ইয়াকুব ভাই, আপনি সিরিয়াস হলে একটা কথা বলব। জীবনে কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নেবার অভ্যাস আমার কখনোই ছিল না। এখনো নেই। বিশেষ করে সম্পর্কের ব্যাপারে। তাই সাদিকের এমন প্রশ্ন। উত্তরে আমি সাদিককে আশ্বস্ত করে বললাম, আমি সিরিয়াস। কিন্তু হাসছিলাম। সেটা বুঝতে পেরে সাদিক একই কথা আবার বলল, আপনি যদি সত্যিই সিরিয়াস হন তাহলে আমি কথাটা বলব, না হলে বলব না।

সাদিক বলে চলল, আমার বড় বোন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ে। ওনার এক বান্ধবী আছে তার জন্য পাত্র খুঁজছে। আপনি যদি সিরিয়াস হন তাহলে আমি আপনাদের একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারি। আমি বললাম, বিয়ে তো একদিন করতেই হবে, তাই সাক্ষাৎ করাই যায়। সাদিক বলল, তাহলে আমি কথা বলে, দিনক্ষণ ঠিক করে আপনাকে জানাচ্ছি।

কথা শেষ করেই আবার কাজে মন দিলাম এবং এই বিষয়টা আবার পুরোপুরি ভুলে গেলাম। বাংলালিংক তখন আলোর গতিতে তার নেটওয়ার্ক কভারেজ বাড়িয়ে চলেছে, আর আমরাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা বাংলাদেশময় দৌড়ে বেড়াচ্ছি। যেটুকু সময় অফিসে থাকি, ডকুমেন্টেশনের পেছনেই চলে যায় পুরোটা।

সেই সপ্তাহে কাজ ছিল ঢাকার মধ্যেই। তাই অফিসে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সাইটে দৌড়াদৌড়ি করছি। শুক্রবার সকালে আবার সাদিকের ফোন। ইয়াকুব ভাই আজ বিকেলে তাঁরা একটু ফ্রি আছেন, আপনি চাইলে দেখা করতে যেতে পারেন। আমি আমার বসকে কথাটা বলতেই তিনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে ঢাকা মেডিকেলের পাশেই আমাদের যে সাইটটা আছে, সেটাতে কাজ নিয়ে বের হয়ে যাও। আমি সাদিকের সঙ্গে কথা বলে তার বোনের নম্বর নিয়ে রাখলাম যাতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে তাদের ফোন দিতে পারি।

ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হলে ছাত্রজীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছি। কিন্তু কখনো ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়নি। তাই পথঘাট তেমন চিনি না। ঢাকা মেডিকেলের যে গেটটা বকশীবাজার মোড়ের দিকে। এর কোনাকুনি ফজলে রাব্বি হলের গেট। সেখানে গিয়ে ফোন দিয়ে জানালাম আমি পৌঁছে গেছি। সাদিকের বোন আমাকে জানাল, ওখান থেকে কীভাবে যেতে হবে। আমি সেই মোতাবেক এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, তিনজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তাদের সবাই পর্দানশিন, তবে একজনের পর্দা একেবারে বাড়াবাড়ি রকমের। সেই গরমের মধ্যেও হাতে হাতমোজা পরে আছে। তিনজনের মধ্যে থেকে আমি বুঝে গেলাম পাত্রী কোনজন। একবারই মাত্র পাত্রীর দিকে তাকানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। দেখলাম পাত্রীও লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে চেয়ে আছে। এরপর সেই হাতমোজা পরা ভদ্রমহিলা একাই কথা বলে গেলেন। অন্যজন অবধারিতভাবেই ছিল সাদিকের বোন। অবশ্য সে তেমন কোনো কথা বলেনি। হাতমোজা পরা মেয়েটা আমাকে তাদের একটা গেস্টরুমের মতো জায়গায় বসিয়ে, অন্যপাশে তারা তিনজন বসে আমার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করল।

মৌখিক পরীক্ষার ব্যাপারে আমার মনে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ছিল সব সময়ই। মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বন্ধু বড় ভাইদের শুধু একটা দোয়ায় করতে বলে যেতাম, আমার চেহারা দেখে যেন দরজা থেকেই না তাড়িয়ে দেয়। একবার আমার মুখ খুলতে দিলে আমাকে বাতিল করে দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু এই প্রথম মৌখিক পরীক্ষাটাকে পুলসিরাতের মতো কঠিন মনে হলো। মনে হলো এবার বুঝি আটকে গেলাম জীবনের মৌখিক পরীক্ষায়। হাতমোজা পরা মেয়েটা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। অনেকটা সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি বলের মতো। ব্যাটসম্যানেরা কোনো বল খেলতে না চাইলে ছেড়ে দেন। কিন্তু আমাকে প্রত্যেকটা প্রশ্নেরই উত্তর করতে হচ্ছিল। ভাবলাম যা হবার হবে, সত্যিটা বলে যাই, তাহলে উত্তর দেওয়া সহজ হবে। তাই আমি তার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। কখন যে ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেছে, বুঝতে পারিনি। হঠাৎ প্রশ্ন করা থামিয়ে দুজনের একজন আমাকে বলল, আপনার কিছু জানতে ইচ্ছে করলে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমার মাথা তখন ঝাঁ ঝাঁ করে ঘুরছে। তাই কী জিজ্ঞেস করব সেটা আর কোনোভাবেই মাথায় আসছিল না। আমি বললাম আমার কিছু জানার নেই।

আমি শুধু মেয়েটাকে একবারই দেখেছিলাম এবং তাকে আমার ভালো লেগে গেল মূলত দুটি কারণে। এক সে ঢাকা মেডিকেলে পড়েও আমার মতোই একেবারে সাধারণ পোশাক পরিচ্ছদ পরে আছে। আর পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থানও কাছাকাছি। উপরন্তু পরিবারের বড় মেয়ে। তাই ভাবলাম আমার মানসিকতাটাও হয়তো বুঝবে ভালোমতো। বিয়ে বিষয়ক ভাবনা কখনোই মাথায় ঠাঁই দিতাম না। তারপরও বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে তত্ত্বকথা কথা বলতাম। সেটা হচ্ছে আমি তিন জায়গায় কখনো বিয়ে করব না। প্রথমত; আত্মীয়স্বজনের মধ্যে, কারণ এতে করে ভবিষ্যতে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। দ্বিতীয়ত; প্রতিবেশীদের মধ্যে, কারণ এখানেও ভবিষ্যতে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। তৃতীয়ত, ছাত্রীদের মধ্যে, কারণ তাহলে সে সারা জীবন অন্য ছাত্রীদের সঙ্গেও আমার হয়তোবা প্রণয় ছিল, এমন ধারণা পোষণ করে আমাকে সন্দেহ করে বেঁচে থাকবে। যেটা একটা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য মোটেও ভালো নয়। এই মেয়েটা আমার তত্ত্বের সঙ্গেও মিলে গেল। কারণ সে ওপরের কোনো ক্যাটাগরিতেই পড়ে না। পছন্দ হওয়ার এটাও একটা কারণ ছিল।

এরপর সাদিককে জানালাম আমার দিক থেকে প্রাথমিকভাবে হ্যাঁ, কিন্তু আমার আরও দুই ভাই আর আব্বা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সাদিক বলল, সমস্যা নেই, আপনি সময় নেন। আমি তাদের দিক থেকেও মতামত জেনে আপনাকে জানাচ্ছি। একটু পরে ফোন দিয়ে বলল, তারাও প্রাথমিকভাবে হ্যাঁ, কিন্তু খোঁজখবর নেবেন তারপর জানাবেন। আমি আপনাকে তার নম্বর দিচ্ছি, এখন থেকে আপনি সরাসরি যোগাযোগ করলে ভালো হয়। আমার দায়িত্ব আপাতত এখানেই শেষ।

এরপর আমাকে একদিন ফোন দিয়ে জানানো হলো, মেয়ের বাবা আমাকে দেখতে আসবেন। আমি কখনোই অফিসে তেমন ভালো পোশাক পরে যেতাম না। করপোরেট অফিসে চাকরি করেও সব নিয়মকে কিছুটা উপেক্ষা করে জিনস আর টি-শার্ট পরে অফিস করি। কারণ যেকোনো সময় ঢাকার বাইরে রওনা দিতে হয়। সেদিনও একই পোশাকে অফিসে ছিলাম। দুপুরের একটু আগে আগেই ফোন। আমি অমুকের বাবা বলছিলাম। আমরা আপনার অফিসের নিচে অপেক্ষা করছি। আমি আমার রিপোর্টিং বস মিনহাজ ভাইকে বললাম, হবু শ্বশুর এসেছেন, কিছু খাইয়ে দিই, কি বলেন? তিনি বললেন, অবশ্যই না খাইয়ে ছাড়িস না। আমি বললাম, সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে তার দেওয়া নাম ধরে ডেকে বললেন, তুই আসলেই একটা ভোদাই। তোর কাছে যে কোন পাগল মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন আল্লাহ মালুম। বলে তার মানিব্যাগ থেকে একটা পাঁচ শ টাকার নোট বের করে দিয়ে বললেন, যা দেখিস কোনো অযত্ন করিস না যেন।

মেয়ের বাবা লাজুক ধরনের স্মিতহাস্য ভদ্রলোক। সারাক্ষণই চুপ থাকলেন। কথা বলে গেলেন তার সঙ্গে আসা অন্য একজন ভদ্রলোক। আমি আমার যথাসাধ্য উত্তর দিয়ে গেলাম। প্রশ্নোত্তরের মাঝেই তাদেরকে আমাদের অফিসের বিপরীতে কেএফসিতে নিয়ে বসলাম। তারপর একসঙ্গে খাবার গ্রহণ ও সেইসঙ্গে আমাদের দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা চলল। এবারও বুঝছিলাম না পরীক্ষায় পাস করব না ফেল। যা হোক সততার সঙ্গে উত্তর দিয়ে গেলাম, যা থাকে কপালে। অবশেষে তাদের বিদায় দিয়ে ফিরে আসার পর মিনহাজ ভাই বললেন, তোর ভাইভা কেমন হলো? আমি বললাম বুঝতে পারছি না, তবে সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে এসেছি। তিনি বললেন, শাবাশ, তোর দায়িত্ব শেষ। বল এখন তাদের কোর্টে।

এরপর আমি একদিন আমার ছোট দুই ভাইয়ের সঙ্গে পাত্রীর সাক্ষাৎ করিয়ে দিলাম। তারপর ওদের মতামত জানতে চাইলে ওরাও হ্যাঁ বলে মত দিল। আমার আব্বা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা বললেন, যেহেতু তোমাদের পছন্দ হয়েছে তাই আমাদেরও পছন্দ হয়েছে। মেয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হলো তাদেরও পছন্দ হয়েছে। কিন্তু যেহেতু পাত্রী বংশের বড় মেয়ে, তাই সবার মতামত নিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে হবে।

প্রথমে ঠিক হলো আগস্টের ১ তারিখ। কিন্তু মেয়ের এক খালু বাইরে থাকেন তিনি আসতে পারবেন না, তাই সেটা পিছিয়ে ৮ তারিখ করা হলো। পরে ৮ তারিখের আগে জানা গেল তিনি টিকিট পাচ্ছেন না তাই আবারও সেটাকে পিছিয়ে ১৫ তারিখ করা হলো। অবশ্য জাতীয় শোক দিবসে আমি বিয়ে করার পক্ষে ছিলাম না। তবুও রাজি হতে হলো, কারণ বিয়ের পর সেই খালু আবার ফিরে যাবেন আর শুক্রবার ছাড়া আমারও ছুটি নেই। আমার আব্বা-মা, মেজো চাচা, আমাদের গ্রামের মাতুব্বর মন্টু চাচা, তারা সবাই শুক্রবারের পক্ষেই মত দিলেন।

এদিকে বাধা হয়ে দাঁড়াল বিয়ের খরচের টাকা। আমার হাতে টাকা নেই। তখন বন্ধুদের বললাম, তোদের হাতে সময় এক সপ্তাহ, আমাকে হাজার পঞ্চাশেক টাকা জোগাড় করে দে। যদিও তখন আমি নিজেই মাসে পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি বেতন পাই। কিন্তু মাস গেলে আমার হাতে কোনোই টাকা থাকে না। টাকা না থাকার কারণগুলো বন্ধুরা জানত, তাই তারা অবাক হয়নি। দুই দিনের মাথায় আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড় করে দিয়ে বলল, যা বিয়ে কর। অতঃপর আমাদের বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের সবকিছু একেবারেই হতে পারত। কিন্তু আটকে গেলাম টাকা পয়সার জন্য। তাই আপাতত বিয়ে পরিয়ে আমাদের গিট্টুটা কোনোমতে বেঁধে ফেলা হলো। এরপর বিয়ের বাকি কাজগুলো কীভাবে হবে সেই চিন্তাটাই মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। অবশেষে পরের বছর বিয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পরিকল্পনা করতে শুরু করলাম। যদিও আমি অনুষ্ঠান করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ এগুলো আমার কাছে বাড়তি খরচ মনে হতো। কিন্তু মেয়ের বংশের সবাই আশা করে আছে তাই অনুষ্ঠান করতেই হবে একটা। তখন মেয়ে পক্ষ প্রস্তাব দিল, অনুষ্ঠান একসঙ্গে করলে কিছুটা খরচ বাঁচবে। এভাবে একসময় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো।

এরপর আমার অদৃষ্টের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্ম নিল সেটা হচ্ছে, আপনি আপনার জীবন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতেই পারেন, কিন্তু সব সময়ই সেটা কাজ করবে এমন না। যেমন যে আমি ২০০৬ সালে বিয়ে নিয়ে নানা মজা করেছিলাম, সেই আমিই ২০০৮ সালে এসে গাঁটছড়া বাধলাম। তারপর জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ দুই সন্তানের জনক। বাবা হিসেবে দায়িত্বশীল না হলেও খুব একটা খারাপ বাবা আমি না মনে হয়। কারণ আমার আট বছরের মেয়ে তাহিয়ার কাছে আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চমক। দুই বছরের রায়ান এখনো কিছু বোঝে না, কিন্তু আমার উপস্থিতি তাকে অনেক আনন্দিত করে।

আমরা গ্রানি ফ্ল্যাট বলে একটা ফ্যাটের একটা ছোট বাসার মধ্যে চড়ুই পাখির মতো বাসা বেঁধে থাকি। আমাদের হয়তো অনেক কিছুর অভাব আছে কিন্তু আমাদের যে জিনিসটার অভাব নেই, সেটা হচ্ছে আনন্দ। আমরা কারণে অকারণে আনন্দিত হই। আমরা খুব সামান্যতেই অনেক বেশি আবেগ আপ্লুত হই। আমরা অভিমান করি আবার অনেক নাটক করে সেই অভিমান ভাঙাই। কাল আমাদের এই চড়ুই পাখির জীবনের দশ বছর পূর্তি হবে। বরাবরের মতো এবারও আমরা কোনো আড়ম্বর করব না, কারণ এই দিনটা একজন বাঙালি হিসেবে শোকের দিন হিসেবেই মানি আমরা। তাহিয়া আমাদের চমক দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকারের হাতে তৈরি কার্ড বানিয়ে নিয়ে এসে আমাদের দেখায় ও শুভেচ্ছা জানায়। আমরা অনেক খুশি হই এবং সেটা দেখে তাহিয়া আনন্দে চিৎকার করে সারা বাসা মাথায় তুলে ফেলে। তার দেখাদেখি রায়ানও কিছু না বুঝেই তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দেয়। তখন সাত স্বর্গের সুখ এসে আমাদের ঘরে জায়গা করে নেয়। আর আমি মনে মনে শুধু বলি, লাইফ ইজ বিউটিফুল।

মো. ইয়াকুব আলী: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>