বাঙালির কল্যাণে বঙ্গবন্ধু সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন

আঙ্কারায় বাংলাদেশের নির্মাণাধীন দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ
আঙ্কারায় বাংলাদেশের নির্মাণাধীন দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ

বাঙালি জাতির কল্যাণে ও তাদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু নিরলস পরিশ্রম ও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করে শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এনে দেননি বরং স্বপ্নের įসোনার বাংলা বিনির্মাণে এবং বাঙালি জাতির মূল্যবোধ, আদর্শ ও লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী তাঁর বক্তব্যে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে বাংলাদেশের আপামর জনতার মন থেকে যেমন মুছে ফেলতে পারেনি, তেমনিভাবে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ সম্মানজনক একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দশটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এম আল্লামা সিদ্দীকী
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এম আল্লামা সিদ্দীকী

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মেরহান ডুনডার ও সেন্টার ফর ইউরোসিয়ান স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত আলেভ কিলিচ। তাঁরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম লজ্জাজনক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ এবং বঙ্গবন্ধুকে একজন মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁরা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের জন্য আজীবন কাজ ও দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। একটি জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর যে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও আত্মনিবেদন তা বৈশ্বিক রাজনীতিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আঙ্কারায় গত বুধবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। সকালে রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকীর নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত আঙ্কারায় বাংলাদেশের নির্মাণাধীন দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ

সকালের কর্মসূচিতে বাংলাদেশ দূতাবাস তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের (তুর্ক কিজলেই) সহযোগিতায় আঙ্কারায় বসবাসরত এক শ সিরিয়ান শরণার্থী পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। এ সময় রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী ও তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের আঙ্কারা শাখার প্রেসিডেন্ট আহমেদ হিজানলিওলু উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচি তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের সামাজিক প্রচারমাধ্যমে প্রচার পায়।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আঙ্কারায় বসবাসরত সিরিয়ান শরণার্থী পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আঙ্কারায় বসবাসরত সিরিয়ান শরণার্থী পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়

বিকেলে দূতাবাসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট কালরাতে সংঘটিত বিয়োগান্ত ঘটনার শিকার সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন ও অর্জনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। শেষে শহীদদের আত্মার শাস্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি