কানাডায় বাংলাদেশিদের কোরবানির প্রস্তুতি

ফার্মে ছাগল-ভেড়া
ফার্মে ছাগল-ভেড়া

কানাডায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হবে আগামীকাল (২১ আগস্ট) মঙ্গলবার। ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পশু কোরবানির উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন তাদের সবার নামে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানির জন্য। দেশে টাকা পাঠালেও এ দেশে প্রায় সবাই যেহেতু পরিবার নিয়ে থাকেন তাই এখানেও পশু কোরবানি করে থাকেন।

বাংলাদেশে যেমন বিশাল উৎসবমুখর পরিবেশে কোরবানি হয়ে থাকে এখানে কিছুটা হলেও সেই উৎসবের ঘাটতি রয়েছে। প্রায় ৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এই দেশটিতে মাত্র ৩ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মাঝে মুসলিম জনগোষ্ঠী ১২ লাখের কাছাকাছি। বাংলাদেশের মতো এখানে কোরবানি উপলক্ষে কোনো হাট বসে না। গরু-ছাগলের ফার্মে গিয়ে কোরবানি দিয়ে আসতে হয়।

কানাডাতেও বাংলাদেশিদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে গরু। তারপর ছাগল ও ভেড়ার অবস্থান। যারা কোরবানি দেবেন তারা ইতিমধ্যে ভাগ ঠিক করে ফেলেছেন। কানাডায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত প্রধান শহরগুলো হচ্ছে টরন্টো, মন্ট্রিয়েল, ভ্যাঙ্কুভার, ক্যালগেরি, এডমন্টন, ম্যানিটোবা, সাস্কাতুন ইত্যাদি। এ শহরগুলো থেকে ফার্মগুলোর দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। অধিকাংশ ফার্মে গরু জবাই করে ঈদের দিন মাংস বাসায় আনা যায় না। প্রথম দিন কয়েকজন গিয়ে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে আসেন।

ফার্মে গরু
ফার্মে গরু

এখানে বাংলাদেশের মতন সবাই ধরাধরি করে পশুকে মাটিতে ফেলে জবাই করা যায় না। ফার্ম থেকে পশু পছন্দ করার পর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পশুটি এনে বিশেষ ধরনের বন্দুক দিয়ে মাথায় গুলি করা হয়। গুলির সঙ্গে সঙ্গে পশুটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর যিনি কোরবানি করেন তিনি মহান আল্লাহর নামে গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করেন। জবাইয়ে পর ফার্ম কর্তৃপক্ষ চামড়া, মাথা, কলিজা ও নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিয়ে গরুটিকে একটি বিশাল হিমঘরে বিশেষ ধরনের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখেন। ঝোলানোর আগে মাথা, কলিজা, নাড়িভুঁড়ি বের করার পর পশুটির ওজন করা হয়। হ্যাঙ্গারে ঝোলানোর তিন-চার দিন পর গরুটি ফ্রোজেন হলে টুকরা করে কেটে সরবরাহ করা হয়। এরপর ওই টুকরো এনে নিজেদের মতন ভাগ করে যার যার মাংস নিয়ে যান।

তবে ইদানীং কিছু ফার্ম ঈদের দিন বিকেলের মধ্যে গরু কেটে ক্রেতার কাছে মাংস সরবরাহ করে। এখানে একটি গরুর ওজন হয়ে থাকে ১৮০ কেজি থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত। প্রদেশভেদে প্রতিটি গরুর দাম পড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ কানাডীয় ডলার। অন্যদিকে খাসি ও ভেড়ার দাম পড়ে ২৫০ থেকে ৪০০ কানাডীয় ডলার।

যারা ফার্মে গরু-ছাগল কোরবানির ঝামেলা পোহাতে চান না তাদের জন্য মুসলিম গ্রোসারি দোকানগুলো কোরবানির ব্যবস্থা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ১ থেকে ২ ডলার বেশি খরচ পড়ে। তিন ভাগের এক ভাগ মাংস গরিবকে বিলানোর বিধান থাকলেও এ দেশে সেই অর্থে গরিব খুঁজে না পাওয়ার কারণে অনেকে সমপরিমাণ ডলার বিভিন্ন মুসলিম চ্যারিটিতে দান করেন।

মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান: ম্যানিটোবা, কানাডা।