প্রবাসে ব্যস্ততার মাঝে ঈদ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রবাসজীবন যান্ত্রিক জীবন। সময়ের পেছনে ছুটতে গিয়ে আনন্দগুলো হারিয়ে যায়। তবুও সবাই চেষ্টা করে ঈদে একসঙ্গে আনন্দ করতে। অনেকের সম্ভব হয়, অনেকের হয় না।

প্রবাসে থাকা প্রতিটি মানুষ জানে আপনজনেরা তাদের কী দিয়েছে। যে ছেলেটি দেশে থাকতে মায়ের হাতের সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছে, সে বিদেশে এসে ঘুম থেকে উঠে ছুটছে কাজের তাগিদে। যে ছেলেটি বাবার সঙ্গে বাজারে গরু কিনতে গিয়ে গোবরে পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাসির খোরাক হয়েছে এবং স্থির করেছে আর কোনো দিনও ঈদের বাজারে গরু কিনতে যাবে না, আজ প্রবাসে এসে ভাবছে সেই দিনগুলোই অনেক আনন্দের ছিল। কর্মব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে তার অনেক হাসি ও আনন্দ।

যে মেয়েটি হাতে মেহেদি লাগিয়ে মায়ের আঁচল ধরে রান্না ঘরে মজার মজার খাবার রান্না করেছে, আজ প্রবাসে এসে সে ছুটছে কাজের তাগিদে। প্রবাসেও ঈদ আছে তবে দেশের মতো এত আনন্দ নেই। দেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে বিরক্ত নিয়ে ছেলেমেয়েরা গ্রামের বাড়িতে যখন পৌঁছায়, দেখে কয়েক জোড়া অপেক্ষমাণ চোখ তাদের পথে চেয়ে আছে।

বাবা–মায়ের মমতার হাত পড়ে মাথায়—বাজান পথে কোনো কষ্ট হয় নাই তো? এই যে জিজ্ঞাসা, মায়া ও আদর, সব ভুলিয়ে দেয় পথের কষ্ট। ভালোবাসার টানে সবাই শিকড়ে ফেরে। এই ফেরার মধ্যে যে আনন্দ আছে, সুখ আছে, তার তুলনা কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। প্রবাসে ঈদ আছে, তবে সেরকম আনন্দ নেই। ব্যস্ততা ও ছুটে চলার মধ্যেই সময় পার হয়ে যায় বোঝাই যায় না।

প্রবাসে ঈদের কেনাকাটার ধুম নেই। উইকএন্ডে সময় পেলে কেউ কেনে, আবার কেউ ভাবে কী দরকার, বিশেষ করে যারা ব্যাচেলর। সবাই যে সচ্ছল অর্থনৈতিকভাবে, তা কিন্তু নয়। অনেকের হিসাব করে চলতে হয়। প্রায় সব প্রবাসীরাই ঈদে দেশে ডলার পাঠান, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী। তার কারণও আছে। তারা যে আনন্দগুলো ফেলে এসেছেন দেশে, তারা চান না সে আনন্দ থেকে পরিবারের মানুষগুলো বঞ্চিত হোক। তাদের সান্ত্বনা এটুকু যে, আমি যেভাবে থাকি না কেন, দেশে তারা তো ভালো আছে।

লেখিকা
লেখিকা

প্রবাসে অনেকে কোরবানি দেন, তবে দেশের মতো না। অনেকে একসঙ্গে কোরবানি দিলেও একজনের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দেন। আসলে সুবিধা অনুযায়ী করেন যাতে কাজের অসুবিধা না হয়। সবাই সবাইকে সাহায্য করেন। দেশে দেখা যায় গরু জবাই, মাংস কাটাকাটি, ভাগ বাঁটোয়ারা, দান করা, এসব করতে করতে বিশেষ করে ছেলেদের সময় চলে যায়।

আর মেয়েরা থাকে রান্না ঘরে, সাজগোজ নিয়ে। কার পোশাক কত নিল, কারটা বেশি সুন্দর, এর মধ্যে চলে আড্ডা। আত্মীয় বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সব মিলে হইচই।

প্রবাসে তা নেই। ঈদের দিন ছুটি নেন অনেকে। চেষ্টা করেন একসঙ্গে হতে। তবে পরদিন কাজ থাকে। যার কারণে দিনটা চলে যায় কোনো রকমে। আসলে ব্যস্ততার মাঝেই কাটে ঈদ। থাকুক সে পরিবার নিয়ে বা হোক সে ব্যাচেলর।
...

এম আর ফারজানা: নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।