সাস্কাতুনে ব্যতিক্রমধর্মী বনভোজন

মোরগ লড়াইয়ের দৃশ্য
মোরগ লড়াইয়ের দৃশ্য

গ্রীষ্মের ছুটি প্রায় শেষ। সবুজ পাতারা হলুদ হতে শুরু করেছে। বাতাসে হালকা কিন্তু অত্যন্ত মনোরম শীতের আমেজ। দিনটি ছিল অদ্ভুত সুন্দর। আকাশে ছিল মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলা। এমন একটি ছুটির দিনে কার মন চাইবে ঘরে বসে থাকতে। কানাডার সাস্কাচেওয়ান প্রদেশের সাস্কাতুনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা মেতেছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী এক বনভোজনে। শহরের কোলাহল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ড্যানিয়েলসন প্রভিন্সিয়াল পার্ক, ডিফেনবেকার হ্রদের ধারে সুন্দর একটি জায়গা। সেখানেই গত রোববার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল এগারোটা থেকে বিকেল ৭টা পর্যন্ত চলে এই ব্যতিক্রমধর্মী বনভোজনের আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় সব আয়োজন।

ভারসাম্য দৌড়ের জন্য প্রস্তুতি
ভারসাম্য দৌড়ের জন্য প্রস্তুতি

প্রায় আড়াই শ মানুষের সমাগম হয়েছিল সেদিন বনভোজনে। মজার মজার সব খেলা আর ইভেন্টে পরিপূর্ণ ছিল সেদিনের সেই বাংলাদেশিদের মিলনমেলা। সকাল এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যেই সবাই উপস্থিত হয়ে যান বনভোজনের স্থানে। শুরুতেই ডাল পুরি, আলু পুরি ও শিঙারা দিয়ে সবাই সেরে নেন মধ্যাহ্ন পূর্ববর্তী নাশতা। এরপর শুরু হয় খেলাধুলা। বাচ্চাদের জন্য ছিল বিস্কুট দৌড়, অঙ্ক দৌড়, ভারসাম্য দৌড় (দুই গ্রুপে) ও মোরগ লড়াই। চার থেকে আঠারো বছর বয়সী সব বাচ্চারাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতা
অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতা

এরপর শুরু হয় বড়দের খেলাধুলা। প্রথমেই শুরু হয় পুরুষদের বস্তা দৌড়। পাটের বস্তা না থাকায় আয়োজকেরা লম্বা গার্বেজ ব্যাগ বিতরণ করেন প্রতিযোগীদের মধ্যে। বিশজন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ভিন্নধর্মী এই দৌড় প্রতিযোগিতা সবাই দারুণভাবে উপভোগ করেছেন।

যেমন দেখি তেমন করে দেখাই–এর প্রতিযোগীরা
যেমন দেখি তেমন করে দেখাই–এর প্রতিযোগীরা

নারীদের একটি অত্যন্ত মজার পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেই পর্বটি হলো ‘কথা কানাকানি’। আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই কথা কানাকানি দেখে আসছি। এক কথা কীভাবে একে একে দশ কানে গেলে পরিবর্তিত হয় সেটাই দেখতে চেয়েছেন আয়োজকেরা। প্রথমে একজনের কানে কানে একটি কথা পড়ে শোনানো হয়। কথাটি ছিল এমন—‘ভাবি, শুনছেন? আপনিতো কোনো খোঁজ খবরই রাখেন না। পশ্চিম পাড়ের কদম আলীকে তো চেনেন? শুনলাম কদম আলী আর তার বউয়ের কান নাকি চিলে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। ভাবি, ছি ছি ছি, আপনি বলেন এইটা কোনো কথা?’ সেই কথাটি এক কান থেকে পালাক্রমে ২০তম কানে গিয়ে শেষ হয়। সর্বশেষ যার কানে কথাটি পৌঁছে আমরা তার মুখ থেকে শুনেছি তিনি আসলে কী শুনেছিলেন। তিনি শুনেছেন—‘একটা ছেলের কান দুইটা চিল ছিঁড়ে নিয়ে গেছে।’

মিউজিক্যাল পিলো
মিউজিক্যাল পিলো

এই পর্ব শেষ হওয়ার পরে নারীরা দাবি করেন, কেন শুধু তারাই এই গেম খেলবেন, কেন পুরুষেরা না? পুরুষেরা কী কথা কানাকানি করে না? তখন পুরুষদের জন্য আরেকটি খেলার আয়োজন করা হয় তা হলো—‘যেমন দেখি তেমন করে দেখাই।’ প্রায় পঁচিশজন পুরুষ মানুষ সার ধরে দাঁড়িয়ে যান একজন আরেকজনের দিকে পেছন ফিরে যাতে পেছনের ব্যক্তি কী করছেন সেটা যেন সামনের জন দেখতে না পান। প্রথম ব্যক্তিকে দেখানো হয় কীভাবে মোটরবাইক স্টার্ট দিতে হয়। তিনি যা দেখেছেন তাই তার সামনের জনকে দেখান। এভাবেই শেষ পর্যন্ত সেটা ভালুকের আক্রমণের মতো করে শেষ হয়। এই খেলাটি চলাকালে কারও কারও হাসতে হাসতে পেটে খিল লাগার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

সেরা নাচিয়ের দৃশ্য
সেরা নাচিয়ের দৃশ্য

পুরুষদের মধ্যে থেকে সেরা নাচিয়ে নির্ধারণ করা হয়। গানের তালে তালে কে কতক্ষণ নাচতে পারেন এবং গান বন্ধ করলে তাদের নাচের ভঙ্গিতেই (ফ্রিজিং) থাকতে হয়েছে। নারীদের মিউজিক্যাল পিলো ছিল অন্যতম আকর্ষণ। প্রায় চল্লিশজন নারী এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন।

পুরুষদের দড়ি টানাটানি ছিল সত্যি অন্যরকম একটা মজার খেলা। সব পুরুষদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সাস্কাতুন শহরটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। নদীর পূর্বপাড় ও পশ্চিমপাড়। দড়ি টানাটানি হয় পূর্বপাড় ও পশ্চিমপাড়ের মধ্যে। বিচারকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন যাতে দড়ির দুই পাশে প্রতিযোগীর সংখ্যা সমান থাকে। অবশেষে পূর্বপাড় বিজয়ী হয়। বনভোজনের প্রতিটি পর্বে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

পুরুষদের দড়ি টানাটানি
পুরুষদের দড়ি টানাটানি

সব শেষে পরিচালিত হয় র‍্যাফল ড্র ও বিংগো। র‍্যাফেল ড্র ও বিংগোতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। দুই খেলায় বিজয়ীদের তাৎক্ষণিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়।

দুপুরে খেলাধুলার মাঝখানে খাবার পরিবেশিত হয়। সুস্বাদু খাবারের সবাই ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বস্তা দৌড়
বস্তা দৌড়

সবশেষে ছিল পুরস্কার বিতরণ করা হয়। মেয়েদের কথা কানাকানি ও ছেলেদের যেমন দেখি তেমন করে দেখাই, এই দুইটি পর্ব ছাড়া বাকি সব ইভেন্টসের জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বনভোজনে অংশগ্রহণকারী সকল বাচ্চাদের সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকেরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং সকল ভলান্টিয়ার, আর্থিক সহযোগী ও অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

পুরস্কার বিতরণী
পুরস্কার বিতরণী

আর্থিক সহযোগিতা করে যেসব প্রতিষ্ঠান বনভোজনটিকে অনেক বেশি উপভোগ্য করে তোলে তারা হলো—হোম বাই এনস, ব্লুবেল, ন্যাচারাল ফ্রেশ মিট অ্যান্ড গ্রোসারি, গ্রিন সুপার মার্কেট, পপুলার গ্যারেজ ইনক ও অন ইওর ওয়ে কনফেকশনারি অ্যান্ড ফ্রেশ গ্রোসারি। ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন ইমদাদুল হক ও সাস্কাটুন রেম্যাক্সের প্রিয়াঙ্কা নন্দী। বনভোজন আয়োজনে ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ফয়জুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ মহসিন, আরিফুর রহমান, হাসান রহমান, আলমাস আলী, আলী আমজাদ তালুকদার, ইমদাদুল হক, গাজী সেলিম, মোহাম্মদ রশিদ ও হুজ্জাতুল্লাহসহ আরও অনেকে। বনভোজনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন নুরুল হুদা পলাশ ও খন্দকার আবেদি কাজল।

নুরুল হুদা পলাশ: সাস্কাতুন, সাস্কাচেওয়ান, কানাডা।