উচিটার যুদ্ধবিমান মেলায় একদিন

ঘড়ির কাটায় তখন বেলা এগারোটা। উচিটার আকাশে কালো মেঘের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান। যেটি ঘণ্টায় ৬২৮ মাইল গতিবেগে ছুটে চলে। যুদ্ধের সময় কৌশলগত বিমান হিসেবে এটি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে উড়ে যায়। বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান দৃশ্যমান হওয়ার সময় আকাশে উড়ছিল এ ১০। এ বিমানটি সমর যুদ্ধে আকাশে সবার আগে সদা প্রস্তুত থাকে। এর নাকের ডগায় রয়েছে বন্দুকের নল সদৃশ লম্বা একটি দন্ড। আর আগে থেকেই নানা ভঙ্গিতে আকাশে উড়ছিল ১৯৪২ সালে তৈরি রঙিন ছোট্ট বিমানটি। রানওয়েতে উড্ডয়নের অপেক্ষায় প্রস্তৃত ছিল টি-বার্ডস (থান্ডার বার্ডস। আর গ্রাউন্ডে শোভা পাচ্ছে সাদা ধবধবে বোয়িং ৭৪৭-ড্রিম লিফটার বিমান।

বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ক্যানসাসের উচিটা শহরে গত শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুই দিনব্যাপী ওপেন হাউস অ্যান্ড এয়ার শো (২০১৮) শুরু হলেও রোববার এর পূর্ণতা পায়। এ দিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী আয়োজিত ম্যাক-কোনেল এয়ারফোর্স বেইসে হাজার-হাজার উড়োজাহাজ বান্ধব মানুষের ঢল নামে। ঢুকতে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সাজানো নানা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধকালে ব্যবহৃত কার্গো বিমানসহ অর্ধশত বিমান। শনিবার গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি আর কালো মেঘে ঢাকা আকাশে বিমান উড়তে না পারায় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ‘থান্ডার বাডর্স’ দেখতে পারেননি অনেক দর্শনার্থী। দুপুর তিনটা পর্যন্ত দেড় হাজার ফুট উঁচুতে মেঘের আনাগোনা থাকায় যেসব বিমান আকাশে সাত শ ফুট পর্যন্ত উড়ে শৈল্পিক অঙ্গভঙ্গি দেখাতে সক্ষম শুধু সেগুলোই আকাশে উড়ে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে।

রোববার এয়ার শো পূর্ণতা পায়। উচিটা শহরের আশপাশের শহর থেকে ছুটে আসা মানুষের স্রোতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মেলায় আগত উৎসুক দর্শনার্থীদের সামরিক প্ল্যান সম্পর্কে নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দেন পাইলট ও নিজ নিজ বিমান বিশেষজ্ঞ। দেখা মেলে ১৫টি পারফরমেন্স শো। এতে ছিল-এয়ার ফোর্স থান্ডার বাডর্স, প্যাট্টিয়ট প্যারাসুট টিম, রেডলাইন এয়ার শো, ব্রায়ানকোরেল এয়ার শো, স্কট ফ্রান্সিস এয়ার শো, স্মোক এন থান্ডার, টোরা, ভ্যাম্পায়ার এয়ার শো, গ্রেগ শেলটন এয়ার শো, কেস্ট পিটসচ এয়ার শো, এস মেকার এয়ার শো। পাশাপাশি ছিল এ-১০, বি-২, সি ১৭ ও কেসি-১৩৫ ফ্লাইবাই।

মেলায় ছিল শৈল্পিক কারুকাজ সংবলিত কাঠের উড়োজাহাজের খাবার স্টল। এগুলো ছিল চোখে পড়ার মতো। শত শত দর্শনার্থীকে লাইনে দাঁড়িয়ে এ সব স্টল থেকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া আগামী প্রজন্মকে এ পেশায় আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে পড়ালেখার অবারিত সুযোগসহ নানা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

এয়ার শো ঘুরে পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্যানসাসের উচিটা শহর হলো এয়ার ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এ শহরে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত সেসনা, লিয়ারজেড ও স্পিরিটসহ ডজনখানেক উড়োজাহাজ কোম্পানি। উচিটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অ্যারো স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ। একসময় প্রতি বছর এ এয়ার শো আয়োজন করা হতো। শুরু হওয়ার ছয় বছর পর কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণের জন্য এ শো উন্মুক্ত করে দেয়।

...

এমরান হোসাইন: ক্যানসাস, যুক্তরাষ্ট্র। ৥