দিঘল মেঘের দেশে-তিন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

রোদটা বেশ তেতে উঠেছে। নিউজিল্যান্ডে এমনিতেই রোদের তেজ বেশি। সাধারণত গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ায় আর্দ্রতা খুব কম থাকে বলে রোদের এই তেজটা একটু বেশিই হয়। এ ছাড়া হকস বে অঞ্চলে হেস্টিংস ও নেপিয়ার শহরে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি কম হয় বলে রোদ যেন ওজোন স্তর ভেদ করে গলে গলে পড়ে। কারও চেহারা ফরসা হলে, অরচার্ডে কাজ করতে এসে তাদের চেহারা তামাটে হয়ে যায়। কারও চেহারা কালো হলে তো কোনো কথাই নেই। তার চোখ দুটো আর ঠোঁট দুটো বাদে নিষ্প্রভ আলোতে চেহারা খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন বাঙালি আর আফ্রিকান নিগ্রোর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যায় না।

জাহিদ আপেল অরচার্ডের বাঙালি শ্রমিকদের দিকে তাকাল। তাদের গ্রুপের চৌদ্দজন শ্রমিকের মধ্যে নয়জনই বাঙালি। এই নয়জনের মধ্যে তিনজন ডাক্তার, দুজন ইঞ্জিনিয়ার এবং আজমল হোসেনসহ তিনজন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রিধারী। সে নিজেও উচ্চতর ডিগ্রিধারী। সাইদ আহমেদ অন্যান্য শ্রমিকদের মতো কাজ করেন না। তিনি কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অন্য অরচার্ডে চলে যান। সবার কাজ ঘুরে ঘুরে দেখেন। তার অধীনে শ্রমিকের তিনটা গ্রুপ কাজ করে। তার প্রত্যেকটা গ্রুপেই বাঙালির সংখ্যা বেশি।

শ্রমিকেরা সবাই ছাউনি থেকে দুপুরের খাবার শেষ করে আপেল গাছের সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে। সাইদ আহমেদও সেখানে আছেন। তিনি কিছুক্ষণ আগেই অন্য অরচার্ড থেকে রবার্টসন অরচার্ডে এসেছেন। সবাই আপেল গাছের ছায়ায় তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে ডাক্তার ভদ্রলোক তিনজন তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। সাইদ আহমেদ তাদের দিকে এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে জাহিদের দিকে তাকালেন। জাহিদ তার এই তাকানোর কারণ বুঝতে পারল। আর বুঝতে পেরেই একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিল। সাইদ আহমেদও হাসি দিলেন। তাদের দুজনের হাসি আশপাশে দাঁড়ানো সবার চোখে পড়ল। ডাক্তার ভদ্রলোক তিনজনেরও হয়তো চোখে পড়েছে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না।

জাহিদ জানে, নিউজিল্যান্ডে অভিবাসী হয়ে আসা সব বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক পর্যায়ে আছেন ডাক্তারেরা। তারা নিউজিল্যান্ডে রেজিস্টার্ড ডাক্তার হওয়ার জন্য তিন পার্ট পাস করলে সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন হাসপাতালে এক-দেড় লাখ ডলারের চাকরি পেয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যেই খুব দামি গাড়ি কেনেন। তার কিছুদিন পর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সার্বাবে একটা বাড়ি কেনেন। নিউজিল্যান্ড হলো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে সেরা একটি রাষ্ট্র। এখানে সরকার সব সময় জনগণের জন্য জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পাঁচটা নীতি যেমন; অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা সবার আগে নিশ্চিত করে। এরই মধ্যে চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তাই চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক ডাক্তারকে খুব উঁচু বেতন দিয়ে নেওয়া হয়। অবশ্য ডাক্তারদের দায়িত্ব ও চাপও থাকে বেশি।

তবে অন্য দেশ থেকে ডাক্তারি পাস করে নিউজিল্যান্ডে এলে তাদের রেজিস্টার্ড ডাক্তার হওয়ার জন্য তিন পার্ট পাস করতে হয়। বাঙালিদের মধ্যে অনেকেই তিন পার্ট পাস করে নিউজিল্যান্ডের রেজিস্টার্ড ডাক্তার হয়ে গেছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। অনেকে আবার বাড়তি লেখাপড়া করে জিপি হয়ে নিজেকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কয়েকজন মেডিকেল স্পেশালিস্ট হয়ে বাঙালিদের মধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।

কিন্তু নিউজিল্যান্ডের রেজিস্টার্ড ডাক্তার হওয়ার জন্য তিন পার্ট পাস করতে তিন বছর লাগার কথা হলেও কোনো কোনো বাঙালি ডাক্তাররা দুই-তিনবার ফেল করে পাঁচ-ছয় বছরের বেশি সময় লাগিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ চার-পাঁচবার দিয়ে এখনো পাস করতে পারেননি। অনেকে ডাক্তার হতে না পেরে বিফল মনোরথে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। ওখানে গিয়ে কেউ ডাক্তার হতে পেরেছেন। কেউ কেউ রেস্টুরেন্টে এখনো থালাবাসন মাজছেন। কিন্তু তাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রতিবার প্রতি পার্ট পরীক্ষা দিতে চার-পাঁচ হাজার ডলার করে ফি জমা দিতে হয়। তারা এখানকার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার থেকে সেই টাকার কোনো সাবসিডিয়ারি পান না। তাই তাদের অরচার্ড, ফার্ম বা রেস্টুরেন্টে কাজ করে টাকা জমিয়ে পরীক্ষার ফির ব্যবস্থা করতে হয়। তবে তারা জানেন, যে করেই হোক, যতবারই হোক তারা তিন পার্ট পাস করে একবার রেজিস্টার্ড ডাক্তার হতে পারলেই তাদের সামনে এক-দেড় লাখ ডলার বেতনের সোনার হরিণ দাঁড়িয়ে থাকবে। তাই তাদের অহংকার প্রথম থেকেই বেশ টান টান হয়ে থাকে। তাদের কারও আচরণ এমন পর্যায়ে চলে যায়, নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী ডাক্তারদের বাদে অন্য বাঙালিদের তারা বাঙালি হিসেবে গণ্য করতেই কার্পণ্য করে, মানুষ দূরের কথা। যদিও তাদের সংখ্যা খুব কম, তবুও তারা ক্রমান্বয়ে অন্য বাঙালিদের কাছে ভিন্ন গ্রহের প্রাণী হয়ে উঠছেন। তারা বাঙালি হয়েও বাঙালি নন, বাঙালিদের নিজের লোক নন।

জাহিদের প্রায় সাড়ে চার বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। যদিও ঘটনাটা সরাসরি বাঙালি ডাক্তারদের নিয়ে নয়। কিন্তু ব্যাপারটা খুব হাসির ছিল। তখন জাহিদের নিউজিল্যান্ডের বসবাসের মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। মার্চ মাস। কিছুদিন ধরে হকস বে অঞ্চলের প্রতিটা আপেল অরচার্ডে আপেল পিকিং শুরু হয়েছে।

জাহিদের ওটা ছিল আপেল পিকিংয়ের প্রথম বছর। জাহিদ সম্পূর্ণ নতুন বলে সাইদ আহমেদ ইচ্ছে করেই এক বড় বাঙালি গ্রুপের সঙ্গে তাকে আপেল পিকিং করতে দিয়েছিলেন। সেই বাঙালি গ্রুপে বাঙালি ছিল মোট আঠারো জন। এর মধ্যে এগারোজনই ছিলেন ডাক্তার। দুজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন কৃষিবিদ আর বাকি তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও জাহিদ নিজে।

বছরের ওই সময়টায় বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত হকস বে অঞ্চলের হেস্টিংস-নেপিয়ার শহরে লোকসংখ্যা কয়েক হাজার বেড়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপের বিভিন্ন শহর থেকে থেকে শ্রমিকেরা বিভিন্ন আপেল অরচার্ডে আপেল পিকিং করতে আসেন। অনেকে দক্ষিণ দ্বীপ থেকেও আসেন। তারা শুধু আপেল পিকিংই করেন না। সঙ্গে ম্যান্ডারিন পিকিং, এপ্রিকট পিকিং, প্লাম পিকিং, পিয়ার্স পিকিং ও আঙুর পিকিং তো আছেই। তবে তখনকার সময়টায় আপেল পিকিংয়েরই বেশি ধুম পড়ে যায়। আর প্রতিটা আপেল অরচার্ডে কত জাতের আপেল যে আছে! আর্লি কুইন, নিউজিল্যান্ড বিউটি, রয়্যাল গালা, রেড ডেলিশিয়াস, নিউজিল্যান্ড কুইন, ব্রেইবোর্ন, ফুজি, গ্র্যানিস্মিথ, নিউজিল্যান্ড রোজ, প্যাসিফিক রোজ, জেজ বা পিংক লেডি। এগুলো জাহিদের জানা নাম। এর বাইরে যে আরও কত জাতের আপেল আছে! একেক জাতের আপেল একেক সময় পারতে হয়। এ জন্য আপেল বাগানে যারা কাজ করতে আসেন, তাদের দশ-পনেরো জনের একটা গ্রুপ করতে হয়। তাদের একজন সুপারভাইজার থাকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোলার থাকে। একজন ম্যানেজার থাকে। একটা বাগান থেকে লাখ লাখ টন আপেল পিকিং হয়। আপেল বাগানের মালিকদের সারা বছরের আয় এই আপেল বাগান থেকে আসে।

কিন্তু কাজটা খুব কষ্টের। মাথার ওপর হকস বে অঞ্চলের মধ্যদুপুরে খাঁ-খাঁ রোদ থাকে। তখন আকাশে এক টুকরো মেঘ পর্যন্ত থাকে না। আকাশ এত নীল থাকে যে নীল রংটা তখন কষ্ট হয়ে গলে গলে পড়ে। এরই মধ্যে বেশ বড় একটা ঝুড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে লম্বা লম্বা মই বেয়ে আপেল গাছের চূড়া থেকে আপেল পাড়তে হয়। একেকটা ঝুড়িতে আপেল প্রায় ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ কেজি আঁটে। সেই আপেল ভর্তি ঝুড়ি একটা বড় কাঠের বাক্সে এনে ঢালতে হয়।

জাহিদের তো প্রথম বছর অরচার্ডে এসে বেশ কয়েকবার আড়ালে কেঁদেছে। সে নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, এটা ঠিক। কিন্তু এত পরিশ্রম কোনো দিন করেনি। এতো আপেল পাড়ার কষ্ট। তার ওপর কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, আপেলের আকার ও রং একটা বড় বিষয়। ম্যানেজার ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলার যেন জমের মতো ঘাড়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ ছাড়া কোনো কোনো আপেল গাছ, বিশেষ করে রয়্যাল গালা, ফুজি ও গ্র্যানিস্মিথ আপেল গাছের উচ্চতা বাংলাদেশের বড়সড় আমগাছের সমান।

তারপরও লোকজন এ কাজটা করতে আসে। বিশেষ করে সাম্যোয়া, কুক, ফিজি বা প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আসা অভিবাসীরা এ কাজটা বেশি পছন্দ করে। পয়সাও বেশি পায়। মাত্র ছয় সপ্তাহ কাজ করে পনেরো থেকে বিশ হাজার ডলার ইনকাম করতে পারে।

বাঙালিরা অবশ্য এ কাজটা ঠেকায় পড়ে করে। ডাক্তারদের নিউজিল্যান্ডের রেজিস্টার্ড ডাক্তার হওয়ার জন্য হাজার হাজার ডলার ফি জমা করা প্রয়োজন। ইঞ্জিনিয়াররা চাকরি পাচ্ছে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হকস বে এসে কাজটা করে বাড়তি কিছু পয়সা জমিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের একই হাল। কেউ চাকরি খুঁজছে, কেউ নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি কোর্স করছে বা ডিগ্রি নিচ্ছে ভবিষ্যতের ভালো কিছুর আশায়। অবশ্য যারা চাকরি পেয়ে যায় তারা কখনই এ কাজটায় আর ফেরে না। এরই মধ্যে অনেকেই ভালো চাকরি পেয়ে গেছে।

এ ছাড়া আরেকটা কারণে নিউজিল্যান্ডে অভিবাসী হয়ে আসা বাঙালিরা প্রায় সবাই প্রথম এক-দুই বছর এ কাজটা করে। এ ছাড়া উপায়ও নেই। সবাই লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে আসে। আসার সময় বিশাল অঙ্কের ঋণ করে। এত অল্প সময়ে এতগুলো ডলার তারা আর কোথাও পাবেন না। কিন্তু বাংলাদেশে সবাইতো ছিল উচ্চশিক্ষিত। সকাল-দুপুর অফিস করা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী দেখা বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী পড়ানো বাদে তারা জীবনে আর কিছুই করেনি। বাংলাদেশে খেতে-খামারে শারীরিক পরিশ্রম তো তারা কল্পনাও করতে পারেননি।

ঠিক এমনই কষ্টের কাজে কেউ যখন এসে যমদূতের মতো বিরক্ত করে, এটা-সেটা ভুল ধরে বা বকাঝকা করে, তখন সেটা গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়। তবে ম্যানেজার, সুপারভাইজার বা কোয়ালিটি কন্ট্রোলারদের এসব ভুল ধরার পেছনে কারণও আছে। এই আপেল অরচার্ডের আপেল বিক্রি করার ওপর নির্ভর করে অরচার্ডের মালিকের সারা বছরের রোজগার ও সবার বেতন।

সেদিনের দুপুরেও ছিল গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। কোথাও একটুকরো মেঘ ছিল না। আকাশের নীলটা যেন সিসার মতো গলে গলে পড়ছিল। জাহিদের স্পষ্ট খেয়াল আছে, আপেল বাগানটা ছিল হেভলুক নর্থ শহরতলির পাশে ডেইল জনসন অরচার্ডে। সেই আপেল অরচার্ডের ম্যানেজার ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলার একজনই ছিল। স্টিভেন ক্লিপ্টন। মাত্র চব্বিশ-পঁচিশ বয়সী এক যুবক। সে সবে ক্যান্টারব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হর্টিকালচারের ওপর গ্র্যাজুয়েট হয়ে ডেইল জনসন অরচার্ডে চাকরি নিয়ে এসেছে।

একজন সদ্য পাস করা বিশ্ববিদ্যালয় যুবকের চরিত্র যা হয়। মেজাজ একটু গরম থাকে। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটু কম থাকে। যার-তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। স্টিভেন ক্লিপ্টনের মধ্যে এর সবটাই ছিল। একদিন সে আপেলের রং, আপেলের আকার ও শ্রমিকদের কাজের মান দেখতে এসে এক বাঙালির কাজের মান খুব খারাপ দেখে গালি দিয়ে বসে, বাস্টার্ড!

সেই বাঙালি আবার ছিলেন ডাক্তার। ব্যাপারটা ঘটেছিল দুপুরের ঠিক পূর্বমুহূর্তে। আপেল গাছের সারিতে কাজ করার সময়ই জাহিদ উচ্চ স্বরে কথাবার্তা ও তর্কাতর্কি শুনেছিল। ছাউনিতে দুপুরের খাবার খেতে এসে জাহিদ বিস্তারিত জানতে পারে। এরই মধ্যে অনেকে দুপুরের খাবার না খেয়ে একদফা আলোচনায় বসেন। সবাই একবাক্যে অঙ্গীকার করেন, আর যা হোক ওরা স্টিভেন ক্লিপ্টনের অধীনে কাজ করবেন না। সে এমন একটা গালি দিয়েছে, বাস্টার্ড!

নিউজিল্যান্ডের মানুষ এমনিতেই খুব ভদ্র। সাধারণত উঁচু গলায় কথা বলেন না, এখানে বর্ণপ্রথা নেই বললেই চলে। এখানে মানুষ যে কাজই করুক, সবার কাছে সবার কাজ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব বাঙালিরা স্টিভেন ক্লিপ্টনের ব্যবহারে বেশ অবাকও হন।

ঠিক সেসময় স্টিভেন ক্লিপ্টন আপেল পিকিংয়ের মান বাড়ানোর জন্য উপদেশ ও পরামর্শ দিতে ছাউনিতে আসে। তাকে কাছে পেয়ে বাঙালিরা সবাই চেপে ধরে। সরাসরি কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। এমনকি কেউ কেউ নিজের গাড়ির দিকে হাঁটা ধরে। সবার মধ্যে একধরনের উত্তেজনা।

অবস্থার বেগতিক দেখে স্টিভেন ক্লিপ্টন আপেল অরচার্ডের মালিককে ফোন দেন। আপেল অরচার্ডের মালিক ফোন দেন সাইদ আহমেদকে। সাইদ আহমেদ পাশের বাগানেই ছিলেন। তিনি ফোন পাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন। এসে সব কথা শুনে তো তার মাথায় হাত।

মালিকের বাসাও আপেল বাগানের পাশে ছিল। তিনি এক বিশাল বাংলো নিয়ে থাকতেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনিও গাড়ি নিয়ে ছাউনিতে এসে হাসির হন। সব শ্রমিকেরা একযোগে চলে যাচ্ছে শুনে তারও মাথায় হাত। একসঙ্গে আঠারো শ্রমিক চলে যাওয়া মানে আপেল বাগানের বারোটা বাজবে। আপেল বাগানের প্রত্যেক জাতের আপেলকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাড়তে হয়। যদি দুই-চার-দশ দিন দেরি হয়, তাহলে সব আপেল গাছ থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে যাবে। সব জাতের আপেল পাড়ার আগে কেমিক্যাল ছিটানো হয় যাতে আপেলগুলো অল্পদিনের ব্যবধানে পেকে যেতে পারে।

বাগানের মালিক ব্যাপারটা খোলসা করার জন্য সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসেন। তিনি বিষয়টা জানার জন্য প্রথমে ম্যানেজার স্টিভেন ক্লিপ্টনকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু স্টিভেন ক্লিপ্টন নিজেও বুঝতে পারছেন না শ্রমিকদের মধ্যে সমস্যাটা কোথায়। তিনি বোকার মতো এদিকওদিক তাকান।

এ সময় একজন বাঙালি ভদ্রলোক গর্জে উঠে বলেন, আপনি কি জানেন আমি কে? আমি একজন ডাক্তার। আমার সঙ্গে এখানে আরও দশজন ডাক্তার আছেন। এ ছাড়া তিনি ইঞ্জিনিয়ার। ওই আরেকজনও ইঞ্জিনিয়ার। তিনি এগ্রিকালচারিস্ট। তিনি এক কলেজের শিক্ষক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের...।

সাইদ আহমেদ ডাক্তার ভদ্রলোককে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ভাই, মালিককে আসল কথাটা বলেন। তিনি এত কিছু বুঝবেন না।

ডাক্তার ভদ্রলোক বলেন, আমি তো ওটাই বলছি। আমরা এখান কাজ করি জাস্ট ফর টাইম বিয়িং। কিন্তু এই পুঁচকে ম্যানেজার আমাদের একজনকে বাস্টার্ড বলে গালি দিয়েছে। কত বড় অসভ্য সে। মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে শেখেনি।

বাগানের মালিক কিছু বলতে যাবেন এর আগেই ম্যানেজার স্টিভেন ক্লিপ্টন আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কালচারে বাস্টার্ড বলে ডাকা কি খারাপ?

ডাক্তার ভদ্রলোক জোর গলায় বলে ওঠেন, খারাপ মানে, কী বলো! বাস্টার্ড শব্দের মানে কি জানো? হারামজাদা। যাদের বাবার পরিচয় নেই তাদেরকেই বাস্টার্ড ডাকা হয়।

স্টিভেন ক্লিপ্টন বলল, সরি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আসলে কী, এখানে কাউকে বাস্টার্ড ডাকা না-ডাকা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। আর আমিওতো এক অর্থে বাস্টার্ড। আমার বয়স পঁচিশ বছর। অথচ আমি এখনো জানি না আমার বায়োলজিক্যাল বাবা কে! এ ব্যাপারে আমার মাথা ব্যথাও নেই। আমি স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার পরিচয়ে লেখাপড়া করেছি। সব সময় মার নাম ব্যবহার করেছি।

ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়ার পর বাগানের মালিক হেসে ফেলেন। বলেন, আমারও একই হাল!

সাইদ আহমেদসহ সব শ্রমিকেরা তৎক্ষণাৎ হা হা করে হেসে হেসে ফেলেন। পরে সবাই স্থির হয়ে ছাউনিতে দুপুরের খাবার খেয়ে ঝুড়ি ঝুলিয়ে হাসিমুখে আপেল পাড়তে সারিতে গিয়ে দাঁড়ান।

জাহিদ জানে, নিউজিল্যান্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছেলেমেয়েরাই জানে না, তাদের বায়োলজিক্যাল বাবা কে। ওদের মায়েরা কখন কার সঙ্গে নাইটক্লাবে যায়, মদ্যপান করতে করতে ক্লাবে উত্তাল নৃত্য শেষে মদের নেশায় কার সঙ্গে বিছানায় শোয়, রাতের শেষে ওরা নিজেরাই জানে না। এমনকি অনেকে জানতেও চায় না। অনেক নারী আছে, তারা কনসেপ্ট করার পর বুঝতেই পারে না কার দ্বারা প্রেগন্যান্ট হয়েছে। তবে এসব ছেলেমেয়েরা যে নিউজিল্যান্ডের সমাজব্যবস্থায় কোনো ধরনের সামাজিক শিকার হচ্ছে, তা মোটেও নয়। এখানে কেউ বাবার পরিচয়ে বড় হচ্ছে, কেউ মার পরিচয়ে বড় হচ্ছে, এ ব্যাপারগুলো কারও মাথাতেই আসে না।

জাহিদ ভাবল, তার যে কাগজের বিবাহিত স্ত্রী লিডিয়া, সেও তো জানে না তার বায়োলজিক্যাল বাবা কে? লিডিয়ার বয়স যখন দুই বছর তখন তার মা এক চোখের ডাক্তারকে বিয়ে করেন। লিডিয়া তার সৎ বাবার ঘরেই বড় হয়।

নিউজিল্যান্ডের কিছু কিছু সামাজিক রীতিনীতি জাহিদের পছন্দ না হলেও এখানকার সমগ্র সমাজব্যবস্থাটা তার পছন্দ। শুধু কী পছন্দ, এখানকার অনেক ব্যাপার-স্যাপার তাকে খুব মুগ্ধ করে। এখানে সবার বাঁচার অধিকার সমান। এ দেশে ঘটা করে সাম্যের গান গাইতে হয় না। একজন সুইপার থেকে আইনজীবী, কারখানার শ্রমিক থেকে রাজনীতিবিদ, অরচার্ড শ্রমিক থেকে সাংসদ বা মন্ত্রী, একজন রাবিশ কালেক্টর থেকে একজন বিচারপতি, সবাই একই বারে যায়। একই নাইট ক্লাবে নাচে। একই ক্লাবে খেলাধুলা করে। একই রেস্টুরেন্টে দুপুরের বা রাতের খাবার খায়। এখানে কেউ একজন আরেকজনকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না, সে অমুক বা ও তমুক। সবাই বিশ্বাস করে, এখানকার প্রতিটা মানুষের কাজ সমাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কাজ নয়, প্রতিটা মানুষই সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই একজন সাংসদ বা মন্ত্রী, বিচারপতি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুপার মার্কেট বা শপিং সেন্টারের চেক আউটে লাইন দাঁড়িয়ে জিনিসপত্রের দাম দিতে হয়। কারওর জন্য আলাদা কোনো সবুজ সংকেত বা গ্রিন সিগন্যাল নেই। এ দেশে সাংসদ বা মন্ত্রীরা নিজের গাড়ি নিজে চালান। তাঁদের জন্য কোনো পুলিশ গার্ড বা অন্য গার্ড নেই। এমনকি, গাড়ি চালানোর জন্য তাদের একজন ড্রাইভার পর্যন্ত নেই।

দুপুরটা কিছুতেই গড়াতে চাচ্ছে না। আকাশের নীল থেকে কাঠফাটা রোদ যেন আগের মতোই গলে গলে পড়ছে। অরচার্ডে আপেল গাছগুলো বড় হলে একটা সুবিধা আছে। থিনিংয়ের সময় অন্তত ছায়া পাওয়া যায়। কখনো কখনো মই বাইতে হলেও তেমন অসুবিধা হয় না। আর পিকিংয়ের মতো বিশাল একটা ঝুড়ি নিয়ে মইয়ের ওপর উঠতে হয় না। অরচার্ডে ছোট আপেল গাছগুলোর সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও তেমন আছে। ছোট আপেল গাছে মই বাইতে না হলেও গাছের ছায়া পাওয়া যায় না।

জাহিদ তার হাত ঘড়িটা দেখল। প্রায় আড়াইটা বাজে। তাদের কাজ আজ সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হবে। সচরাচর পাঁচটার সময় তাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজ কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে বলে তাদের সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। সাধারণত থিনিংয়ের সময় ঘণ্টা হিসাব করে বেতন দেওয়া হয়। যদিও আপেল পিকিংয়ের সময় কাজ হয় চুক্তি ভিত্তিতে।

সাইদ আহমেদ দুপুরের পর থেকে অনেকক্ষণ ধরেই তাদের বাগানে আছেন। আজমল আহমেদের সারিতে ঢুকে তাকে কী সব বোঝাচ্ছেন। ম্যানেজার অ্যান্ড্রু আপেলের এ সারি ও সারিতে ঘোরাঘুরি করছেন। অ্যান্ড্রু খুব মিশুক প্রকৃতির। বয়সও কম। মাত্র ছাব্বিশ বছর। শ্রমিকদের সহজে তিনি বিরক্ত করেন না। বরং হাসিঠাট্টা করে সময় কাটান।

আপেল বাগানগুলোতে ট্রাক্টর চালানোর সুবিধার্থে গাছগুলো সারি সারি করে লাগানো। শুধু আপেল বাগানেই নয়, এপ্রিকট, প্লাম, আঙুর, এমনকি কিউই ফলের বাগানগুলোতে ট্রাক্টর চালানোর জন্য গাছগুলো সারি করে লাগানো থাকে।

তারা এখন একেকজন একেকটা সারি ধরে কাজ করছে। যেহেতু ঘণ্টা হিসাবে বেতন, তাই কাজের এত তাড়া নেই। ওরা সারি ধরে নিখুঁতভাবেই কাজ করে এগোচ্ছে। আপেল গাছের কোনো শাখা বা প্রশাখায় একটার বেশি আপেল থাকলে তারা সবচেয়ে ভালোটা রেখে বাকিগুলো ফেলে দেয়।

সাইদ আহমেদ অনেকক্ষণ পর আজমল হোসেনের সারি থেকে জাহিদের সারিতে এলেন। এসেই উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, জাহিদ, আজমল স্যারকে নিয়ে আর পারলাম না।

আজমল হোসেন যেহেতু এক সময় কলেজে পড়াতেন, জাহিদ তাঁকে স্যার বলে ডাকে। তাই তার দেখাদেখি অনেকেই প্রথম থেকে আজমল হোসেনকে স্যার ডাকতে শুরু করেছেন। একটু মুরব্বি শ্রেণির যারা, তারা তাকে মাস্টার সম্বোধনে ডাকেন।

জাহিদ জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে সাইদ ভাই? স্যারের আবার কী হলো?

: সেই একই সমস্যা। তিনি কাজ বোঝেন না।

: এত ছোট আপেল গাছ, এখানেও থিনিংয়ের কাজ বোঝেন না?

: না, দেখলাম খারাপ আপেলটা ব্রাঞ্চে রেখে ভালো আপেলটা ফেলে দিচ্ছেন।

: কী বলব আর সাইদ ভাই, স্যার প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ কাজটা করছেন।

: দিন দিন তার কাজের মান খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগে যাও বোঝালে বুঝতেন। এখন বোঝাতে গেলে আরও উল্টো বুঝছেন। এতক্ষণ প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তাকে থিনিংয়ের কাজটা বোঝালাম। শেষে বললাম, স্যার এবার একটা গাছে থিনিং করেন তো। আজমল স্যার কী করলেন জান, তিনি সবার আগে ব্রাঞ্চ থেকে ভালো আপেলটা ফেলে দিয়ে খারাপ আপেলগুলোর মধ্যে থিনিং করা শুরু করে দিলেন।

জাহিদ হেসে ফেলল। যদিও প্রসন্ন হাসি নয়। বলল, এখন কী করা যায়?

সাইদ আহমেদ বললেন, জানি না। হয়তো এই অরচার্ডের বাকি দুই দিন করতে পারবেন। তারপর তার জন্য কাজ খোঁজা খুব সমস্যা হবে।

: এই অরচার্ডে কি আরও দুই দিন কাজ হবে?

: হ্যাঁ, ভেবেছিলাম আজকে কাজ শেষ হলে কালকে আধাবেলা যাবে। কিন্তু ওপাশে আরেকটা বাগান রয়ে গেছে। তবে গাছগুলো একটু বড়। তুমি তো ওটা জানই। এর আগে ওখানে কাজ করেছ।

জাহিদ জিজ্ঞেস করল, আট নম্বর ব্লক?

সাইদ আহমেদ বললেন, হ্যাঁ, ওখানেই।

: স্যার তো নিশ্চয়ই ওখানে করতে পারবেন?

: হ্যাঁ পারবেন। একদিনের কাজ তো। অ্যান্ড্রুকে কোনোমতে একটা বুঝ দেব আর কী।

: অ্যান্ড্রু আজ আজমল স্যারের কাজ দেখেছেন?

: কী বলো? আজমল স্যারের কাজ দেখে সেই তো আমাকে ফোন করে ডেকে এনেছে।

জাহিদ মাথা ঝাঁকাল। কিছু বলল না। পরবর্তী অরচার্ডে আজমল স্যারের কাজ না থাকা মানে তার ঘরে বসে থাকে। আজমল স্যারকে বাসায় রেখে জাহিদের কাজে যেতে ভালো লাগে না। সে কত করে তাকে বুঝিয়েছে ভালো করে কাজ করার জন্য। কাজটা কঠিন। বেশ কায়িক। কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে করলেই তো হয়। এ ছাড়া উপায় কী?

সাইদ আহমেদ নিজ থেকেই বললেন, নেক্সট অরচার্ডে মনে হয় আজমল স্যার নেওয়া সম্ভব হবে না।

জাহিদ এইমাত্র সে আশঙ্কাই করছিল। জিজ্ঞেস করল, আমাদের নেক্সট কাজ কোন অরচার্ডে?

: ডিক জনসন অরচার্ডে। হেস্টিংস রিভার ব্যাংকে।

: ও, সেখানের গাছগুলো তো অনেক বড় বড়। থিনিংয়ের কাজ নিশ্চয়ই?

: এখন আর কী কাজ হবে বলো?

: জি, তাই তো। না মানে, কোথাও যদি পিকিংয়ের কাজ শুরু হয়। তাহলে আজমল স্যার...। জাহিদ কথাটা শেষ করতে পারল না। তার মোবাইলটা বেজে উঠল। সে ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখল, তার ইমিগ্রেশন লইয়ার ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ড অকল্যান্ড থেকে ফোন দিয়েছেন।

ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ডের ফোন দেখে জাহিদের ভেতরটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। জাহিদ অযথাই সাইদ আহমেদের দিকে একবার তাকাল। তারপর রিসিভ করে আস্তে করে কানের কাছে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, হ্যালো!

ওপাশ থেকে ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ডের উচ্ছ্বসিত গলা ভেসে এল, জাহিদুল হোসেন, ইউর পারমানেন্ট রেসিডেন্স অ্যাপ্লিকেশন হ্যাজ বিন গ্রান্টেড।

জাহিদ যেন তার কানকে বিশ্বাস করাতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, সরি, তুমি কী আবার বলবে?

ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ড বললেন, ইমিগ্রেশন তোমার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট পারমিট গ্রান্ট করেছে। কংগ্রাচুলেশনস।

জাহিদ আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, দ্যাটস রিয়েলি গ্রেট নিউজ ফর মি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ক্যাথরিন। অনেক ধন্যবাদ।

ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ড বললেন, ইটস মাই প্লেজার। এখন তোমাকে দুই-এক দিনের মধ্যে অকল্যান্ড এসে কিছু কাগজপত্র সিগনেচার করতে হবে।

জাহিদ বলল, জি, জি, অবশ্যই।

ক্যাথরিন ডাক্সফোর্ড বাই বলে লাইন কেটে দিলেন।

সাইদ আহমেদ তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে জাহিদ, কী হয়েছে?

জাহিদ বলল, সাইদ ভাই, আমার কাগজ হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি হয়ে গেছে। বলেই সে সাইদ আহমেদকে জড়িয়ে ধরল।

সাইদ আহমেদ পিঠ চাপড়ে বললেন, এ জন্য তুমি অনেক কষ্ট করেছ।

জাহিদের চোখ এরই মধ্যে আনন্দে ভিজে এসেছে। সে ভেজা গলায় বলল, জি সাইদ ভাই, জি। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <mohibulalam.k@gmail,com>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1557092