স্মোকি মাউন্টেনের বাচ্চা শিকারি

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

মোবাইলে টেক্সট পাঠিয়েছে ক্রিসি। রাত ৯টায় দেখা করার অনুরোধ আর একটা প্যাকেটের ছবি। দেখা করার সময় আমি যেন প্যাকেটটা সঙ্গে নিয়ে আসি। আমি চমকাই। তীব্র আবেগে লাল, নীল, বেগুনি হই। মানে নীল প্যান্ট, লাল শার্ট, আর বেগুনি টাইয়ে নিজেকে বাঁধি। মনে মনে ভাবি, আহা! ফেরার পথে নিশ্চয়ই টাইটা ক্রিসিই বেঁধে দেবে।

ক্রিসি হ্যেরেল। গ্যাস স্টেশনে কুড়িয়ে পাওয়া বান্ধবী আমার। কেউ পাতা কুড়ায়। কেউ স্মৃতি। কেউবা ল্যাম্পপোস্টের নিচে কুড়িয়ে পায় চকচকে আধুলি! আহা! আমার কৃষ্ণ ভাগ্য। এখানে, ওখানে, সেখানে কুড়িয়ে পাই শুধুই কত কত ক্রিসি!

টানা সতেরো মিনিট হেঁটে সিভিএসে ঢুকি। ক্রিসির টেক্সটটা আবারও পড়ি। এক প্যাকেট ট্রোজেন হাতে নিয়ে ক্যাশিয়ারের সামনে দাঁড়াই। আমার হাত কাপে। বুড়ি ক্যাশিয়ার তা দেখে সিকি হাসি দেয়। তারপর বলে তিন ডলার উনত্রিশ সেন্ট। আমি পকেটে হাত চালাই দ্রুত। এবার বুক কাঁপে। টাই বাঁধতে ভুল করিনি। বডি স্প্রে মাখতেও না। কিন্তু মানিব্যাগ আনতেই ভুল! বুড়ি চেয়ে থাকে। আমি বলি মানিব্যাগ ফেলে এসেছি। বুড়ির সিকি হাসি এবার জলতরঙ্গের মতো বাড়ে। আমার হাতে ট্রোজেনের প্যাকেট দিয়ে বলে টাকাটা পরে দিয়ে যেও।

নদীর পানি ঘোলা ভালো। জাতের মেয়ে কালো ভালো। ক্যাশিয়ার বুড়ি কালোজামের চাইতেও কালো। আমার ধারণা তার জাত ভালো। সে জাতের মেয়ে। না না জাতের বুড়ি! তাইতো তিন ডলার উনত্রিশ সেন্ট বাকিতে দিল আমায়।

আই ৯৫ ধরে ১০ মিনিট হাঁটলে ফিয়াদভিল। তারপর এক্সিট ৭২। তারপর ক্রিসির রাজপ্রাসাদ। রাজকন্যা আমার অপেক্ষায় সেখানে।

ক্রিসির সঙ্গে গ্যাস স্টেশনে পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব জঙ্গলে। গত উইন্টারে আমরা স্মোকি মাউন্টেন যাই। ডিয়ার হান্টিংয়ে। সারা দিন ক্রিসি তিনটা হরিণ শিকার করে। আমি একটাও না। আমার হৃদয় কোমল। ভালোবাসা দাপাদাপি করে সেখানে। বুক কাঁপে। একটা বুলেটও তাই লাগে না হরিণের গায়ে।

ক্রিসি হাসে। উপহাস করে বলে, তুমি বাচ্চা শিকারি। তুমি ব্যাঙ শিকার কর, হরিণ না! তখন দুরে একটা পাখি ডাকে। দুটো শুকনো পাতা ঝরে পড়ে। একটা কাঠ বিড়ালীর ছানা খুটে খায় ডগউড গাছের ফল। আমি বাচ্চা শিকারি কিছুই দেখি না। দেখি শুধু ক্রিসির হাসি। দুই গালের টোল, তার পিঙ্গল কেশ, গোলাপি ঠোঁট!

ক্রিসি পরেছে ব্লু টিশার্ট, ব্ল্যাক স্কার্ট। দূর থেকেও চিনতে ভুল হয় না সে ক্রিসি। আমি তার সামনে দাঁড়াই। সে হাসে। আমার বুকের ভেতর কিছু একটা মোচড়ায়। ক্রিসি বলে, এনেছ? আমি লজ্জা পাই। ক্রিসির হাতে কনডমের প্যাকেটটা দিই, যার নাম ট্রোজেন! সে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি বুকের ধুকপুক শব্দ শুনতে পাই। আবেগে চোখ বন্ধ করি।

চোখ খুলে দেখি তার পাশে অন্য রাজপুত্র! ক্রিসি জানায় তার বয়ফ্রেন্ড। আজ তারা একসঙ্গে থাকবে। আমি হাত বাড়াই। হ্যান্ডশেক করি। তার হাত সাদা আমারটা কালো। মনে মনে বলি, জাতের ছেলে কালো ভালো। আমি জাতের ছেলে! তুই শালা অজাত...!

অতঃপর সিগারেট হাতে নিয়ে বাসার পথ ধরি। মনে মনে ভাবি শহরের সবাইতো একসময় ঘুমিয়ে পড়বে। শুধু তিনজন ছাড়া—ক্রিসি, তার বয়ফ্রেন্ড আর একজন বাচ্চা শিকারি...!

ক্রিসির কথা ভেবে ভেবেই আমার রাত কাটে। সকালের রোদ্দুর এসে আলপনা ছড়ায় অগোছালো বিছানায়! তখন ঘুম ভাঙে। জানালায় তাকালে মাউন্টেন দেখি। আর দেখি আঁকাবাঁকা রাস্তা। ছুটির দিনের সকালে সেই রাস্তা ধরে জাস্টিন আসে। তার বিশালাকার জিপ দুবার হর্ন দেয়। আমি ওল্ড ইংলিশের দুটা বোতল নিয়ে জিপে বসি। আমার বন্ধু জাস্টিন ক্রিস্টোফার! ঝড়ের মতো গাড়ি চালায়। পেছনের সিটে গা এলিয়ে বসা স্মোকি আর জিনা। আমি পেছনে তাকালে আফসোস হয়। ওল্ড ইংলিশ গলা দিয়ে নামে। শরীর ঝিমায়। অ্যালকোহলের ঘোরেই তখন মনে হয় স্মোকি-জিনা দুজন সুন্দরী মেয়ে হলে কী ক্ষতি হতো? আমার দুর্ভাগ্য স্মোকি-জিনা জাস্টিনের প্রিয় দুই কুকুরের নাম!

ক্রিসি হ্যেরেল তবুও সুন্দরী এক মেয়ে ছিল। কোনো এক রাতে এক চিমটি লবণের মতো জড়িয়েও ধরেছিল। আর পেছনে বসে জিভ বার করে লেজ নাড়ানো শালা দুটো তো কুকুর...!

নদীর নাম ডিফ রিভার। দুই পাশে উইলো গাছের সারি। এখানে রোদ আসে না। জলে উইলোর এত এত ছায়া। শুধু আমার আর জাস্টিনেরটাই খুঁজে পাই না। আমার ছিপে বড় একটা কচ্ছপ ওঠে। মাতাল জাস্টিন হেসে গড়ায়। কুকুর দুটি তারস্বরে ডাকে। জাস্টিন বলে তোমার প্রিয় শখ ফিশিং? আমি মাথা দোলাই। তারপর আমি বলি, তোমার? জাস্টিন হাসে, মাতালের হাসি। মাতাল জাস্টিন হাসি থামিয়ে উত্তরে বলে, ব্রার হুক খোলা! আমি নড়েচড়ে বসি। একঢোক ওল্ড ইংলিশ টানি। জাস্টিন বোতলের শেষ তরলটুকু সাবাড় করে বলে, হ্যাঁ প্রিয় শখ ব্রার হুক খোলা। গত চার বছর কয়েক হাজার ব্রার হুক খুলেছি আমি। আমি বোতল শেষ করে ঘোরলাগা চোখে জাস্টিনকে দেখি। বলি, তুমি ভাই দেবতার কাছাকাছি। যে হাত দিয়ে হাজার হাজার ব্রার হুক খুলেছ সে হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখি? জাস্টিন তার হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি হাত ধরি। সে হো হো করে হাসে। আর কুকুর দুটো ডাকে।

অনেক দিন পর জানতে পারি আমার বন্ধু জাস্টিন ক্রিস্টোফার দেবতা না। কোনো সুন্দরীর ব্রার হুক খুলত না। সাউথ ক্যারোলাইনার একটা ব্রা ফ্যাক্টরিতে তার কাজ। প্রতিদিন ব্রার হুক খোলে আর লেভেল লাগায়। আমার মন খারাপ হয়। জাস্টিন দেবতা হলেই ভালো হতো। আমি তার শিষ্য হতাম, ব্রার হুক খোলা দেবতার শিষ্য।
...

হিমু আকরাম: হাই পয়েন্ট স্ট্রিট, নর্থ ক্যারোলাইনা, যুক্তরাষ্ট্র। ইমেইল: <[email protected]>