বাংলাদেশের জন্য নেদারল্যান্ডসের ১১ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ

বৈঠকের দৃশ্য
বৈঠকের দৃশ্য

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে নেদারল্যান্ডসের সহায়তার অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২২) শিক্ষাবৃত্তিসহ নানা ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে বাংলাদেশের জন্য ১১ মিলিয়ন আর্থিক সহায়তার বরাদ্দ রেখেছে দেশটি। এই আশ্বাস ও বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন নাফিকের (Nuffic) গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ভিক্টর রুতগারস। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালের সঙ্গে বৈঠককালে এ আশ্বাস ও বরাদ্দের কথা জানান তিনি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষা ও কারিগরি সহায়তা আরও বেগবান ও বিস্তার লাভ করবে।

নাফিক নেদারল্যান্ডসে পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তি প্রদান এবং বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ও কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনাকারী ডাচ প্রতিষ্ঠান।

ভিক্টর রুতগারস আরও আশ্বস্ত করেন, তাদের বৈশ্বিক কার্যক্রমে ৫০টি দেশের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম।

উল্লেখ্য, গত প্রায় এক বছর ধরে নেদারল্যান্ডস তাদের এই বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সহায়তা কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করেছে। এর প্রেক্ষিতে তাদের এই কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এসেছে এবং এই কার্যক্রম এখন অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রাম (ওকেপি) নামে অভিহিত। ওকেপি ইতিপূর্বে পরিচালিত নেদারল্যান্ডস ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (এনএফপি) ও নেদারল্যান্ডস ইনিশিয়েটিভ ফর ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ইন হায়ার এডুকেশনের (এনআইসিএইচই) স্থলাভিষিক্ত হবে এবং অ্যালামনাইদের আরও বেশি অংশগ্রহণ, জ্ঞানের বিনিময় ও আহরিত ফলাফল তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করবে। ওকেপি সহযোগী দেশসমূহে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য সেসব দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রণীত হয়েছে। সহযোগী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি, জড়িত ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা উন্নয়ন, ভকেশনাল ও কারিগরি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এই কর্মসূচির লক্ষ্য। ওকেপি পাঁচ বছরব্যাপী চলমান থাকবে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান, দলগত প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন-এই তিনটি বিষয়ে কাজ করবে।

বৈঠক শেষে ভিক্টর রুতগারসকে স্মারক উপহার দেন শেখ মুহম্মদ বেলাল
বৈঠক শেষে ভিক্টর রুতগারসকে স্মারক উপহার দেন শেখ মুহম্মদ বেলাল

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বেলাল বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নে টেকসই ডাচ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সহায়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ভিক্টর রুতগারস আশ্বাস প্রদান করেন, বাংলাদেশে তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের (খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুপরিবর্তন মোকাবিলা, উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য) পাশাপাশি বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

বৈঠকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা ও উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রদূত বেলাল আরও অধিক সহায়তার আহ্বান জানান। পানি বিষয়ক কূটনীতি, নীল অর্থনীতি, কৃষি ও গ্রিনহাউজ চাষাবাদ, ছাদভিত্তিক কৃষি, বনায়ন, মৎস্য চাষ, সার্কুলার টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্যের উন্নয়ন, আইন ও আইনি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্র বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতে ওকেপি পুনর্বিবেচনার সময় নাফিক বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমে উল্লেখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা করবে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে নাফিক বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে ৯ লাখ ইউরোর একটি দরপত্র উন্মুক্ত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নাফিকের এ ধরনের আরও কার্যক্রম শুরু হবে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে নেদারল্যান্ডস ক্রমশ উচ্চশিক্ষার আকর্ষণীয় দেশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যবসায়িক ও সরকারের সমন্বয় নেদারল্যান্ডসের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অতুলনীয় করে তুলেছে। তুলনামূলকভাবে মানসম্পন্ন (ইংরেজিতে) শিক্ষা টিউশন ফিসহ, বৃত্তিপ্রাপ্ত ও বিনিময় ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের বাংলাদেশ দূতাবাস দুই দেশের মধ্যে এই প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক আরও জোরদারে কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি