সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীর ভোট

অঙ্কন: তুলি
অঙ্কন: তুলি

প্রবাস জীবন হলো যান্ত্রিক জীবন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে হয়। এই যান্ত্রিক জীবনেও কাজের ফাঁকে আগে দেশের খবর নেন প্রবাসীরা। আপনজনদের ছেড়ে আসা মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে বিদেশে থাকেন ঠিকই, কিন্তু মন পড়ে থাকে দেশের মাটিতে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিটা মজবুত করে রেখেছে এই প্রবাসীরাই। চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছে প্রবাসী আয়। গত মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। গত মে মাসে থেকে জুলাই দেশে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পর্যায়ক্রমে আরও এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। ইন্টারনেট ব্যবহার করছে কয়েক কোটি মানুষ।

জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দিন নেই। অথচ প্রবাসীরা এ যুগে এসেও ভোটার হতে পারলেন না। এ বিষয় নিয়ে আগেও বলেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন যদি আন্তরিক হয়, সরকার যদি আন্তরিক হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আমরা প্রবাসীরা সহজেই ভোটার হতে পারি।

জাতীয় সংসদ
জাতীয় সংসদ

প্রশ্ন আসতে পারে কারা কারা ভোটার হতে পারবেন। আইন অনুযায়ী যারা প্রবাসে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করেন বা ডুয়েল সিটিজেন যারা। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে দ্বিধা কাজ করছে। কারণ আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকেরা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তাই ভোটার করবে কিনা এ ব্যাপারে দ্বিধা আছে।

গত এপ্রিলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি সেমিনার হয়েছিল। সেখানে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছিলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রতিটি দূতাবাসে একটি লোকাল সার্ভার স্থাপন, প্রবাসীদের সংখ্যানুপাতে রেজিস্ট্রেশন টিম তৈরি কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং নিবন্ধন কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও দক্ষ আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু এই কথাগুলো বক্তব্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে সেরকম কোনো কাজ চোখে পড়ছে না।

লেখিকা
লেখিকা

গতকাল দেখলাম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রবাসীরা যাতে বিনা খরচে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন সে ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছেন। এটা খুব ভালো দিক। যত তাড়াতাড়ি কার্যকর হবে ততই ভালো হবে প্রবাসীদের জন্য। আসলে একজন প্রবাসী দশ থেকে বারো ঘণ্টা কাজ করে যে আয় করেন, তার নিজের থাকা, খাওয়া, ইনস্যুরেন্স, অসুখ হলে ডাক্তার সব মিলিয়ে দেশে পাঠিয়ে খুব যে একটা সঞ্চয় করতে পারেন তা নয়। তাই বিনা খরচে দেশে টাকা পাঠাতে পারলে ভালোই হবে প্রবাসীদের জন্য।

যা হোক, আমার মূল প্রসঙ্গ হলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার। আমরা ভোট দিতে চাই, আর এ জন্য আগে তো ভোটার হতে হবে। যে সকল দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে সেসব দেশে তালিকা করে কী পরিমাণ বাংলাদেশি আছেন তার ডেটা তৈরি করতে হবে। তারপর রেজিস্ট্রেশন করতে হবে দেশের স্থায়ী ঠিকানা ও বিদেশের বর্তমান ঠিকানাসহ। এই কাজগুলো দূতাবাস করতে পারে বা সরকার যেভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় করতে চায় করতে পারে।

আজ না হোক কাল, একদিন না একদিন প্রবাসীরা ভোট দেবেনই। এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কারণ বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। আমরা যদি দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে দেখতে চাই তাহলে প্রবাসীদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারা যে শুধু রেমিট্যান্স মজবুত করেছেন তাই নয়, বাংলাদেশকে তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন।

(২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮)
...

এম আর ফারজানা: নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।