দিঘল মেঘের দেশে-চৌদ্দ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ডিনার শেষে বেডরুমে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রাকিব লাউঞ্জে গিয়ে বসল। টিভির রিমোটটা টি-টেবিলের ওপর রাখা। রাকিব হাত বাড়িয়ে রিমোটটা নিয়ে টিভি চালু করল। চ্যানেল টু বাটন চাপতেই দেখল, গ্ল্যাডিয়েটর মুভিটা চলছে। রাসেল ক্রোর মুভি। মুভিটা রাকিব আগেও দেখেছে। কিন্তু পাঁচ মিনিট দেখতেই মুভিটা শেষ হয়ে গেল। রাকিব দেয়াল ঘড়িটা দেখল। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। বাসাটা একেবারে নিস্তব্ধ।

মুভি শেষে পাত্রপাত্রীর নাম প্রদর্শনের পাশাপাশি যে আবহসংগীত বাজে, টিভিতে এখন তাই বাজছে। এ ছাড়া বাসায় দেয়াল ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে টিক টিক শব্দ করে। লাউঞ্জের পাশেই কিচেন। কিচেন থেকে রেফ্রিজারেটরের শব্দ আসছে অম-ওঁ-ওঁ-ওঁ-ওঁ। কোহিনূর ডিনার টেবিলে আসেনি। ওদের অভ্যাস আটটার দিকে ডিনার করা। গ্রীষ্মের দিনে ডে-লাইট সেভিংসের কারণে দিন বড় হয়ে সাড়ে নয়-পৌনে দশটার সময় সন্ধ্যা হলেও ওরা ঠিক আটটার দিকেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলে।

রিনেই ভাবি ও পুতুল অবশ্য রাকিবের সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসেছিল। রিনেই ভাবি সৌজন্যে প্লেট নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু পুতুল শুধু গল্প করার জন্য বসেছিল। রাকিবের সামনে কোহিনূরের যে জড়তা আছে পুতুলের মধ্যে তা নেই। পুতুল কিছুক্ষণের জন্য বসে পুরোনো দিনের গল্প তুলেছিল। পুতুল রাকিবকে পটিয়ে তার কাছ থেকে স্টেক পাই খেতো, সেই গল্প তুলে বেশ হেসেছিল। এখন পুতুল নাকি এত স্টেক পাই খায় না। এখন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সে বেশ সচেতন।

নিউজিল্যান্ডের প্রায় সব মেয়েরাই ত্রিশ বছর পর্যন্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশ সচেতন থাকে। এখানকার অনেক মেয়ে আছে, যারা শরীরের গঠন নষ্ট হয়ে যাবে বলে ত্রিশ বছর পর্যন্ত বাচ্চা নিতেও ভয় পায়। কিন্তু এসব মেয়েরাই ত্রিশ পেরোলে স্বাস্থ্য সম্পর্কে এত অসচেতন হয়ে পড়ে যে, তাদের শরীর দ্বিগুণ হতে এক বছর সময় লাগে না। তখন তারা বাচ্চা–কাচ্চার জন্ম দিয়ে হুলুস্থুল অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। রাকিব ভাবল, অথচ বাঙালি মেয়েরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয় ত্রিশেরই পরে। ত্রিশের আগে দুই-চারটা বাচ্চার জন্ম দিয়ে ত্রিশের পরে তারা নতুন করে যৌবন খুঁজে পায়।

রাকিবের ডিনার শেষ হওয়ার আগেই পুতুল উঠে চলে গেছে। শনিবারের রাত। নাইট ক্লাবে নৃত্য করার রাত। এ ছাড়া তার নাকি এক বন্ধুর জন্মদিন আজ। একদল বন্ধুবান্ধব মিলে তিন গাড়ি করে এসে কতক্ষণ আগে বাড়ির ড্রাইভওয়ে সরগরম করে পুতুলকে তুলে নিয়ে গেছে।

চ্যানেল টুতে নতুন আরেকটা মুভি শুরু হয়েছে। শনিবার রাতে ভোর রাত অব্ধি চ্যানেল টুতে একটার পর একটা মুভি হতে থাকে। মধ্যরাতের পর বেশির ভাগ সময়ই ভৌতিক মুভিগুলি শুরু হয়।

কিছুক্ষণ দেখার পর রাকিবের মুভিটা ভালো লেগে গেল। মুভিটা হলিউডের নয়, অস্ট্রেলিয়ার। মুভির নাম ব্ল্যাক ওয়াটার। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে এক বিশাল ম্যানগ্রোভ সোয়াম্পে মুভিটার শুটিং করা হয়েছে। মুভির কাহিনির শুরু এক নতুন দম্পতি নিয়ে। সেই নতুন দম্পতি তাদের এক টিনএজ বোন নিয়ে গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটাতে এক ম্যানগ্রোভ সোয়াম্পের কাছাকাছি এক বাংলোতে ওঠে। ওরা একদিন ছোট্ট স্পিডবোট ভাড়া করে চালকসহ সেই ম্যানগ্রোভ সোয়াম্পের ভেতর এক কালো পানির নদীতে ছিপ-বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এর কিছুদিন আগেই বন্যা হয়ে যাওয়ায় নদীটার কোনো নির্দিষ্ট রেখা ছিল না। ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর ছিল বুক অবধি জলে থইথই।

ওরা নদীর ধারেই ম্যানগ্রোভ সোয়াম্পের ভেতর স্পিডবোট থামিয়ে যখন মাছ ধরা ও গল্প করায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই বিপত্তিটা ঘটে। একটা বিশাল কুমির এসে স্পিডবোটটা উল্টে দেয়। স্পিডবোট উল্টে দিয়েই বোটের চালককে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু সেই নতুন দম্পতি ও তাদের সঙ্গে আসা টিনএজ মেয়েটা একটা ম্যানগ্রোভ গাছে উঠে কোনোমতে বেঁচে যায়। এদিকে নির্জন প্রান্তর। মাইলের পর মাইল মানগ্রোভ বন। ব্যাগ সমেত স্পিডবোটটা উল্টে যাওয়াতে তারা মোবাইলসহ সবকিছু হারায়। ওদিকে জলে বিশাল কুমির। বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন ও একটা নির্জন নদী। মোবাইল নেই বলে তারা কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না। ওদের একমাত্র উপায় হলো উল্টে যাওয়া স্পিডবোটটাকে ভাসানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু জলে নামবে কে? জলে নামলেই তো সোজা কুমিরের পেটে!

এটুকু দেখার পরই রাকিব বুঝতে পারল, মুভিটা শুধুমাত্র একজন অভিনেতা, একজন অভিনেত্রী, একজন টিনএজ সহঅভিনেত্রী ও এক বিশাল কুমিরকে নিয়ে করা। খুব সাধারণ একটা কাহিনি। খুব অল্প বাজেটের মুভি। কিন্তু মুভিটার ভেতর অদ্ভুত সুন্দর এক গল্প ও গঠনশৈলী আছে। গঠনশৈলী খারাপ হলে একটা উঁচুমানের কাহিনি ফুটে ওঠে না, এর প্রমাণ দ্য ব্রিকলেন মুভিটা। আবার গঠনশৈলীর চমৎকারিত্বে খুব সাধারণ কাহিনিও খুব উঁচু মানের হয়ে ওঠে।

কিছুদিন আগে রাকিব দ্য ভ্যানদাই ম্যান ল্যান্ড নামে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার ওপর একটা মুভি দেখেছিল। খুবই অল্প বাজেটের মুভি। মাত্র এক মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ হয়েছিল মুভিটা করতে। যেখানে সালমান খানের মেরিগোল্ড নামের একটা তৃতীয় শ্রেণির মুভি করতে আট মিলিয়ন ডলার খরচ হয় সেখানে দ্য ভ্যানদাই ম্যান ল্যান্ড মুভিটা করতে মাত্র এক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। মুভিটা রাকিব তিনবার দেখেছে। বেশ চমৎকার মুভি। আন্তর্জাতিকভাবে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছে।

রাকিব ব্ল্যাক ওয়াটার মুভিটা এত মনোযোগ দিয়ে দেখছিল যে, রিনেই ভাবি কখন লাউঞ্জে এসে সোফার পেছনে দাঁড়িয়েছেন সে তা খেয়াল করেনি। ¾

আস্তে করে রিনেই ভাবি ডেকে উঠলেন, এই রাকিব।

রাকিব চমকে উঠে বলল, ও, সরি ভাবি। আপনি কখন এসেছেন?

: এই তো, মিনিট খানিক হলো। তুমি এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছ?

: একটা অস্ট্রেলিয়ান মুভি দেখছি।

: মুভিটা কি ভালো? কী নাম?

: ব্ল্যাক ওয়াটার।

: হুম, আসলে আজকাল মুভি-টুভি দেখার সময় পাই না। মাঝেমধ্যে শর্ট ল্যান্ড স্ট্রিট সিরিয়ালটা দেখি। কোহিনূরও বেশ পছন্দ করে।

: আর পুতুল?

: পুতুল অনেক বড় হয়েছে রাকিব। তার পছন্দ-অপছন্দ অন্য।

: তা তো হবেই ভাবি। কোহিনূর নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে?

: হ্যাঁ, তুমি আসাতে সে আজ একটু দেরি করে ঘুমিয়েছে। নয়তো সে সাড়ে আটটা বা নয়টার মধ্যে বেডে চলে যায়।

শর্ট ল্যান্ড স্ট্রিট সিরিয়ালটা এক সময় রাকিবেরও পছন্দ ছিল। এমেন্ডাও বেশ পছন্দ করে দেখত। সেই কত বছর ধরে চ্যানেল টুতে এই সিরিয়ালটা হয়ে আসছে! সাড়ে ছয়টা বা সাতটার দিকে এই সিরিজটা শুরু হয়।

রাকিবের মনে আছে, আট-দশ বছর আগে শীতের সন্ধ্যায় লেপ মুড়ি দিয়ে গায়ে গায়ে ঘেঁষে এমেন্ডা ও সে¾ শর্ট ল্যান্ড স্ট্রিট সিরিয়ালটা দেখত। দুজন দুজনের শরীরের উষ্ণতা অনুভব করত। আহা সে কী উষ্ণতা!

রাকিব সিরিয়ালটা গত চার-পাঁচ বছর ধরে আর দেখে না।

রাকিবকে চুপ দেখে রিনেই ভাবি নিজ থেকে আবার বললেন, রাকিব, তোমার কথা বল।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, আমার কী কথা ভাবি?

: বিয়ে-শাদি এখনো করোনি জানি।

: কেমনে জানলেন?

: বিয়ে-শাদি করলে অন্তত আমাকে জানাতে।

রাকিব মৃদু হাসল। বলল, নো ডাউট।

রিনেই ভাবিও মৃদু হাসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, বিয়ে-শাদি করবে না?

: সময় হলে নিশ্চয়ই করব।

: কখন সময় হবে?

: জানি না ভাবি।

: তোমাদের কমিউনিটির মানুষ ডিভোর্স পেপারে সাইন হওয়ার পরপরই বিয়ে করে বাংলাদেশ থেকে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসে। তোমার তো এমেন্ডার সঙ্গে ডিভোর্স পেপারে সাইন হয়েছে আড়াই-তিন বছর আগেই।

: তা হয়েছে। কিন্তু ডিভোর্স পেপারে সাইন হলেই বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা আছে?

: হ্যাঁ, তা নেই। কিন্তু তুমি করছ না কেন?

: জানি না ভাবি। নতুন করে বিয়ে-শাদির কথা মাথায় আসেনি।

: বয়সটা কিন্তু থেমে থাকবে না।

: তা জানি ভাবি।

: গার্লফ্রেন্ড নিয়েছ তো?

: তা নিলে তো অনেক আগেই নিতে পারতাম। গার্ল ফ্রেন্ড নেওয়ার কথাও ভাবিনি।

রিনেই ভাবি মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, রাকিব, তুমি ছেলেটা আসলেই অন্যরকম। যদি তোমার হাসান ভাই তোমার সিকি পরিমাণ গুণ পেত? আচ্ছা, ওসব কথা বাদ দাও।

রাকিব বলল, আমি এত ভালো না ভাবি। এত ভালো হলে তো এমেন্ডা আমাকে ছেড়ে চলে যেত না।

রিনেই ভাবি এক মুহূর্তের জন্য চুপ থেকে বললেন, সেটা তো তোমার দোষ ছিল না। এমেন্ডার দোষ ছিল।

: দোষগুণ যারই থাকুক, আমাদের মধ্যে সেপারেশন আর ডিভোর্স তো হয়েছে। আবার নতুন করে বিয়ে করলে এই ঘটনা ঘটবে না এর গ্যারান্টি কী?

: এর কোনো গ্যারান্টি নেই। কিন্তু তারপরও মানুষজন বিয়ে করে। আর তোমাদের কালচারে এসব সেপারেশন বা ডিভোর্স তো কম। বাংলাদেশ থেকে একজন বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আস। সে নিশ্চয়ই তোমাকে বুঝতে শিখবে?

: এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই ভাবি। একজন আরেকজনকে বুঝতে শেখাটা সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার, কালচারের ব্যাপার নয়। আমাদের দেশেও ডিভোর্স রেট কিন্তু হূ হূ করে বেড়ে যাচ্ছে। আর ওটাও মূল বিষয় নয়। আমার আসলে বিয়ে করতেই মন সায় দেয় না।

: জীবনটাকে কি এভাবেই চালাবে?

: জানি না ভাবি। আপনিও তো এভাবে চালাচ্ছেন?

রিনেই ভাবি কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলেন।

রাকিব পূর্ণ দৃষ্টিতে রিনেই ভাবির দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই নিজে নিজে মাথা নেড়ে সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। সে তার দৃষ্টিটা রুমের এপাশ-ওপাশ করল। রাকিব কখনো নিউজিল্যান্ডে টিকটিকি দেখেনি। তবে মাকড়সা আছে। একটা মাকড়সার ঝুল রিনেই ভাবির লাউঞ্জের দক্ষিণে দেখা যাচ্ছে।

টিভিতে মাঝখানে বিজ্ঞাপন বিরতি দিয়ে ব্ল্যাক ওয়াটার মুভিটা আবার শুরু হয়েছে। রাকিব সিনেমাটায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল। এখন মুভিতে দেখাচ্ছে, স্বামী স্পিডবোটটা সিধা করার জন্য পানিতে নেমেছেন। তার স্ত্রী ও সেই টিনএজ সহঅভিনেত্রীর চোখে আতঙ্ক। কিন্তু নায়ক তাদের সান্ত্বনা দিয়ে আশ্বস্ত করছে। স্বামী জলে নেমে অনেক কষ্টে স্পিডবোটটা সিধা করল ঠিকই। কিন্তু সেই বিরাট আকৃতির কুমিরের পেটে যেতে তার এক মুহূর্তও দেরি হলো না। কুমিরের পেটে যাওয়ার আগে কালোজলে শুধু একবার আলোড়ন হলো!

রিনেই ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, রাকিব, চা খাবে?

রাকিব টিভির পর্দা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিনেই ভাবির দিকে তাকিয়ে বলল, চা, এ সময়? সকালে ওঠার যেহেতু তাড়া নেই, খেতে পারি ভাবি। কিন্তু আপনি আবার কষ্ট করতে যাবেন?

: চা বানাতে আবার কীসের কষ্ট রাকিব?

: আপনি চা খাবেন?

: তোমার সঙ্গে গল্প করতে করতে না হয় এক কাপ খেলাম।

: তাহলে চা নয়, আমার জন্য ব্ল্যাক কফি বানান। কফি কম দেবেন। চিনি এক চামচ দিতে পারেন। তবে আমি চিনি ছাড়াই ব্ল্যাক কফি খাই।

: আমি চিনি দিয়েই বানিয়ে দিই, কী বলো?

রাকিব মৃদু হেসে বলল, জি ভাবি।

পনেরো

রিনেই ভাবিকে চুপ হয়ে যেতে দেখে রাকিবও চুপ হয়ে গেল। রুমের পরিবেশটা কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মাথার ওপর বাতিটা জ্বলছে রাতের পরিবেশটাকে আরও নিস্তব্ধ করে। জানালার পাট সামান্য খোলা বলে রঙিন পর্দাটা গ্রীষ্মের হালকা বাতাসে দুলছে। মাঝেমধ্যে রডনি স্ট্রিট ধরে দু-একটা গাড়ির আসা-যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। টিভিতে মুভির নিস্তব্ধতা। মুভিটাতে জলের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে জলতরঙ্গের একটা সুর দিয়ে। টুং-টুং, ছিপি ছিপি, টুং টুং, ছলাৎ ছলাৎ। কুমিরটা জলের মধ্যে সিঁথি কেটে সাঁতরাচ্ছে কখনো এদিক, কখনো ওদিক। ম্যানগ্রোভ গাছ থেকে জলে পাতা পড়ার শব্দ-টুপ। তারপর একটু বিরতি দিয়ে-টুপ। তারপর আবারও বিরতি দিয়ে-টুপ। মুভিটাতে কুমিরের আনাগোনা ও জলের শব্দ রাকিবের দৃষ্টিকে হিম করে দিচ্ছে।

আবার বিজ্ঞাপন বিরতি আসতেই রাকিব টিভির পর্দা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিনেই ভাবির দিকে তাকাল। রিনেই ভাবি খুব আপন মনে কফি খাচ্ছেন। তার দৃষ্টিটা সদর দরজার দিকে। তিনি কিছু একটা ভাবছেন।

রাকিব ভাবল, রিনেই ভাবি সদর দরজার দিকে তাকিয়ে কী ভাবছেন? পুতুলের কথা নয়তো? পুতুল ঘণ্টা দেড়েক আগে দলবল নিয়ে নাইট ক্লাবে চলে গেছে। পুতুলের পরনে কাপড়ের কী ছিরি ছিল! একটা পাতলা টপ ও একটা মিনি স্কার্ট। স্কার্টটা এত ছোট ছিল যে নিচে যে লাল প্যান্টি পরেছে সেটাও দেখা যাচ্ছিল।

রাকিবের হাসানুজ্জামান হাসানের কথা মনে পড়ে গেল। সেই হাসান ভাই! যিনি এ দেশি এক নারীকে বিয়ে করে স্ত্রীকে প্রায় বাঙালি বানিয়ে ফেলেছিলেন। মেয়ে দুটোকেও বাঙালির আদর্শে বড় করছিলেন। একটা সুখের সংসার ছিল। তারপরও মেয়ে দুটোকে ফেলে, আদর্শ স্ত্রীকে ফেলে তিনি বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে চলে গেলেন কেন? দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসার যাপন ছিল। আর তিনি তো এমন চরিত্রের কোনো মানুষ ছিলেন না যে, কারও সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে পারেন? সফিউল, আতিক, সোহেল বা বোরহানউদ্দিনের কথা আলাদা। তাদের ধান্দাই ছিল কোনো মতে এ দেশি একটা মেয়ে বিয়ে করে নিউজিল্যান্ডের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া। পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার পর তারা সবাই চম্পট দিয়েছেন। কিন্তু হাসানুজ্জামান হাসান?

রাকিব এতগুলো বছরেও হাসানুজ্জামান হাসানের সেই রহস্যটা উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। রিনেই ভাবিও প্রকৃত অর্থে কখনই মুখ খোলেননি। তাকে জিজ্ঞেস করলেই হতাশ গলায় বলতেন, আমি জানি না। আমি সত্যি জানি না!

কফি কাপ থেকে সরু সরু ধোঁয়া উঠছে। রিনেই ভাবি আপন মনে কফি খেলেও রাকিবের কাপটা সোফার পাশের ছোট্ট সাইড টেবিলটায়। বাইরে থেকে একটানা ঝিঁঝি পোকার ডাক আসছে। জানালার পর্দার দুলুনি কখনো বাড়ছে। কখনো কমছে। আবার কখনো একেবারে থেমে যাচ্ছে।

রাকিব কফির কাপ হাতে নিতে নিতে রিনেই ভাবির দিকে আবার তাকাল। এ বাসায় আসার পর থেকেই সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার যেভাবেই হোক হাসানুজ্জামান হাসানের চলে যাওয়ার রহস্যটা উদ্‌ঘাটন করে যাবে। হাসানুজ্জামান হাসান তো সোহেল, আতিক, সফিউল বা বোরহানউদ্দিনের মতো কোনো বাহানা ধরে চলে যাননি। রাকিব যত দূর জানে, হাসানুজ্জামান হাসান এতগুলো বছর পরও আজ পর্যন্ত কোনো উকিল নোটিশ বা বিবাহ বিচ্ছেদের চিঠি পাঠাননি। তিনি তো রিনেই ভাবিকে খুব পছন্দ করতেন। অসম্ভব ভালোবাসতেন। কিন্তু সমস্যাটা কোথায় ছিল?

রিনেই ভাবির মতো একজন মায়াবতী মহিলা। হাসানুজ্জামান হাসানের মতো একজন সংসার সচেতন মানুষ। একটি চমৎকার ভালোবাসার সংসার যাপন। ফুটফুটে দুটো মিষ্টি মেয়ে। তারপরও সংসারটা ভেঙে যায়। কিন্তু কেন? রাকিব ভাবল, জীবন বড় বিচিত্র। ¾

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে রাকিব টিভির দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু মনোযোগ দিতে পারল না। টিভি ছাপিয়ে হেস্টিংসের অনেক পুরোনো স্মৃতি চোখে ভাসতে শুরু করল।

রিনেই ভাবি বেশ কিছুক্ষণ পর কথা বললেন। জিজ্ঞেস করলেন, ও রাকিব, তোমাকে শুধু কফিই দিলাম। আমি ইন্ডিয়ান দোকান থেকে চানাচুর নিয়ে এসেছিলাম। ওগুলো দিই?

রাকিব বলল, না, ভাবি। কফিটাই ভালো লাগছে। আর খেলাম তো বেশিক্ষণ হয়নি।

: ফ্রিজে পার্সিমন আছে। বেশ কচকচে। কেটে দেব?

: না না, তাও লাগবে না। আমার এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা ভাবি, আপনি ঘুমাবেন না? অনেক রাত হয়েছে। এত রাত পর্যন্ত তো আপনি জাগেন না।

: তুমিও তো ঘুমাচ্ছ না।

: আমি মুভিটা শেষ হলেই ঘুমিয়ে পড়ব। আপনি ঘুমাতে যান, প্লিজ।

: আরে না। তুমি কত দিন পরে এলে। গত সোমবারে তোমার ফোন পাওয়ার পর থেকেই আমি অপেক্ষায় আছি। কত কথা, কত গল্প জমে আছে।

: আমিও হ্যামিল্টন থেকে ভেবে এসেছি। এবার হেস্টিংস গিয়ে আপনার সঙ্গে অনেক গল্প করব।

: রিনেই ভাবি সায় দিয়ে মৃদু হাসলেন। বললেন, তোমার মনে আছে, তোমার ভাই, তুমি ও আমি অনেক রাত অবধি গল্প করতাম? কত কী যে গল্প! তারপর তুমি এমেন্ডাকে বিয়ে আলাদা বাসা নিলে। আমার মনে হয়েছিল, আমার বাসাটা যেন হঠাৎ করে খালি হয়ে গেছে। কিছুদিন বেশ খারাপ লেগেছে। পুতুল ও কোহিনূর তোমার রুমে গিয়ে ঘুরঘুর করত।

রাকিব দিঘল দৃষ্টিতে রিনেই ভাবির দিকে তাকাল। নিউজিল্যান্ডে আসার পর হেস্টিংসে এসে অন্য কৃষ্টি ও সংস্কৃতির হয়েও এই ভদ্রমহিলার কাছ থেকে সত্যি সে অনেক স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছে। তখন তার কাছে বিদেশ আর বিদেশ মনে হয়নি। মনে হয়েছে, দেশেই কোনো বড় ভাবি বা বড় বোনের বাসায় বসবাস করছে। তারপর তো এমেন্ডাকে নিয়ে নতুন সংসার।

রাকিব রিনেই ভাবির কথায় বলল, ভাবি, এমেন্ডাকে বিয়ে করে নতুন বাসা নেওয়ার পর অবশ্য আপনার মতো এমন করে ভাবিনি। তখন নতুন সংসার ও নতুন জীবন। নিজেদের নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম।

রিনেই ভাবি বললেন, ওটাই স্বাভাবিক।

রাকিব হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে বসল, আপনারটা?

রিনেই ভাবি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন, কোনটা রাকিব?

: হাসান ভাইয়ের ব্যাপারটা?

: হাসানের কোন ব্যাপারটা?

: হাসান ভাইয়ের চলে যাওয়ার ব্যাপারটা?

রিনেই ভাবি বিষণ্ন মন করে বললেন, রাকিব, ওসব কথা আজ থাক না!

রাকিবের বলতে ইচ্ছে হলো, কেন ভাবি? ওসব কথা আজ থাকবে কেন? কিন্তু সে বলল না।

রিনেই ভাবি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, এমেন্ডার সঙ্গে কথা হয়েছে?

: হয়েছে তো। গত সোমবারে একবার কথা হয়েছে। মঙ্গলবারে তাকে কনফার্ম করেছি আমি যে হেস্টিংসে আসব।

: আজ আসার পর কথা হয়নি?

: না, ভাবি। তবে সে জানে আমি হেস্টিংসে আসছি। আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এসএমএস করে দিয়েছি। সে এসএমএস করে উত্তরও দিয়েছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হবে।

: হঠাৎ এমেন্ডা তোমাকে এত জরুরি তলব করল?

: জানি না ভাবি। শুনেছি সে অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে।

: হ্যাঁ, আমিও শুনেছি। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন না কোথায় তাদের ল ফার্মের নতুন অফিস খুলেছে।

: ব্রিসবেন না, এমেন্ডা মেলবোর্নে যাচ্ছে।

: আমিও তাই শুনেছি। আপনার সঙ্গে এমেন্ডার কথা হয় না?

: হয় তো। তবে খুব একটা না। মাসে দু-একবার। আগে হেস্টিংসে বাসা ছিল বলে মাঝেমধ্যে এসে হাজির হতো। কিন্তু হেভলিক নর্থে বাসা নেওয়ার পর মাসে-ছয় মাসে একবারও আসে না।

: কী অবস্থা তার?

: তার আর কী অবস্থা হবে? চাকরি করছে। মাঝখানে হেভলুক নর্থেই একটা বাড়ি কিনেছিল। বছর খানিক আগে বিক্রি করে দিয়েছে।

: আর বিয়ে-শাদি করেনি?

: নাহ। করলে অবশ্যই আমি তোমাকে জানাতাম।

: কোনো রিলেশন?

: পারমানেন্ট কোনো রিলেশন আছে বলে মনে হয় না। সিরাজ তো তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেই কবেই। মাঝখানে অনেক দিন পারমানেন্ট কোনো রিলেশন গড়েনি। একদিন হঠাৎ করে শুনি সে একটা ছেলেকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। এ দেশি সাদা। কিন্তু কয়েক মাস পরেই নাই হয়ে যায়। এরই মধ্যে একদিন শুনি তাদের ল ফার্মের সিনিয়র এক ল ইয়ারের সঙ্গে একটা রিলেশন হয়েছে। সিক্রেট রিলেশন। এমেন্ডাই বলেছিল। কিন্তু সেই ল ইয়ারের বউ আছে। সেই রিলেশন কি টেকে?

: শুনলাম আগের ল ফার্মেই কাজ করে?

: হ্যাঁ, একই ল ফার্মে ছয়-সাত বছর কাটিয়ে দিল। এখন অবশ্য সে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করে না। সলিসিটারের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। মাঝখানে পলিটেক থেকে প্রোপার্টি লর ওপর ডিপ্লোমা করেছে।

: তাই! বেশ ভালো তো।

: আর ভালো! বলেই রিনেই ভাবি মাথা নাড়লেন।

রাকিবও মাথা নাড়ল। এমনিই।

রিনেই ভাবি বললেন, তুমি বিয়ে-শাদি করে এবার সংসারী হও। আর পেছনে তাকিয়ো না।

রাকিব বলল, আমি পেছনে তাকাই না ভাবি। মাঝেমধ্যে স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। থাক ওসব কথা। আর সংসারী? তা তো একদিন হবই। আবার নাও হতে পারি। আমি বর্তমান নিয়েই সুখে আছি।

: ওটাই রাকিব। সুখে থাক আর দুঃখে থাক সময় কিন্তু আপন নিয়মেই চলে যায়।

: হুম্ম, সুন্দর কথা বলেছেন। আচ্ছা ভাবি, আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করি।

: কোন কথা?

: আপনার কথা।

রিনেই ভাবি একটা ম্লান ও করুণ হাসি দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আমার কোন কথা?

রাকিব বলল, আপনার, পুতুল ও কোহিনূরের কথা বলেন। পুতুলকে দেখলাম বেশ বড় হয়ে গেছে। কী সুন্দর হয়েছে আপনার মেয়েটা! কোহিনূর সেই আগের মতো লাজুক আছে।

: হ্যাঁ, কোহিনূরটা এখনো ঠিক আছে। কিন্তু পুতুল?

: পুতুলের কী হয়েছে?

: পুতুলের কথা আর বলো না। সে সুন্দর না। শয়তানের হাড্ডি হয়েছে।

রাকিব মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ এ কথা কেন?

রিনেই ভাবি বললেন, আর বলো না। এ বয়সে মেয়েরা যা হয়। মদ ও নাইট ক্লাবিং। দুই দিন পর পর নতুন বয়ফ্রেন্ড!

: আঠারো-উনিশ বছর বয়স। এখন তো ওসব করবেই।

: মাঝেমধ্যে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আজকাল শুনছি, সে নাকি এটা-সেটাও টানে। কাউন্ট ডাউনে চাকরি করে যা ইনকাম করে, এর সবটাই যায় তার ফ্যাশন করা আর নাইট ক্লাবিঙে। ভাগ্যিস সে আমার বাসায় থাকে। কোথাও ভাড়া দিতে হয় না।

: আপনি কিছু বলেন না? বোঝাতে তো পারেন?

: কী যে বলো না তুমি! তুমি তো জানোই, এ দেশে আঠারোর পর ছেলেমেয়েদের কিছু বলা যায় না। তারপরও মাঝেমধ্যে মেজাজ খারাপ হলে যে কিছু বলি না, তা নয়। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। দুই-চার দিনের জন্য কোথায় যে উধাও হয়ে যায়। পরে আমাকেই খুঁজে বের করে আনতে হয়। মেয়েতো আমার। একবার তো শুনেছিলাম সে আমার বাসা ছেড়ে দেবে। এক আইরিশ ছেলের সঙ্গে সে লিভ টুগেদারও শুরু করেছিল। তার নাকি আমার বাসায় ফ্রিডম নেই। কোনো প্রাইভেসি নেই। কিন্তু পুতুলের বাসা খুঁজতে খুঁজতেই সেই আইরিশ ছেলেটার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে যায়।

: পুতুলের বয়স তো মনে হয় উনিশ?

: না না, তার বয়স বিশ পেরিয়ে গেছে।

: ও। বলেই রাকিব কী ভেবে চুপ হয়ে গেল। একটু সময় নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল। টিভির দিকে কয়েকবার তাকাল। মুভিতে এতক্ষণে কুমিরটা টিনএজার মেয়েটাকেও জলের ঘূর্ণন তুলে টেনে নিয়ে গেছে। বেঁচে আছে শুধু নায়িকা। কিন্তু নায়িকার চেহারায় স্বামী ও স্বজন হারানোর কী আকুতি! তার মধ্যে এর চেয়েও বড় আকুতি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেঁচে থাকা।

রিনেই ভাবিও টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে তিনি যে টিভির দিকে তাকিয়ে থেকেও অন্য কিছু ভাবছেন তা বোঝা যায় তার চেহারা দেখে। তিনি কফি শেষ করে কাপটা আঙুলে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
রাকিব কী মনে করে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা ভাবি, একটা কথা।

রিনেই ভাবি বললেন, হ্যাঁ, বলো।

: পুতুল বা কোহিনূর কি বাংলাদেশের কথা বলে?

: বাংলাদেশের কোন কথা?

: না মানে, বাংলাদেশের কালচারের কথা? ওরা তো ছোটবেলায় খুব বাংলাদেশ-বাংলাদেশ করত।

রিনেই ভাবি মৃদু হাসলেন। বললেন, তুমি কী যে বলো না! পুতুল ছোটবেলায় বাংলাদেশ-বাংলাদেশ করত। তখন হাসান ছিল। তুমি ছিলে। কিন্তু এখন সে বড় হয়েছে। হাসান নেই। তুমিও কোনো টাচে নেই। আচ্ছা, তোমার কথা বাদ দিলাম। হাসানই মেইন ছিল। আর বাংলাদেশের কালচারের কথা বলছ? কতক্ষণ আগে দেখনি পুতুল কী ধরনের পোশাক পরে নাইট ক্লাবে গেছে? সে কী কোনো বাঙালির স্পর্শ পায় যে বাংলাদেশের কালচার শিখবে বা ধরে রাখবে?

রাকিব সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকাল। ভাবল, সত্যি তো পুতুল কোনো বাঙালির সংস্পর্শ পায় না? আর ওদিকে বাঙালি ছেলেমেয়েরা কি¾বাঙালি মা-বাবার সংস্পর্শে থেকেও নিউজিল্যান্ডে বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছে?

রিনেই ভাবি নিজ থেকে বললেন, পুতুলের কথা বাদ দিলাম। আর কোহিনূর বাঙালি কালচার কীভাবে ধরে রাখবে? সেতো ছোটবেলা থেকেই তার বাবাকে পাচ্ছে না।

রাকিব বলল, কিন্তু ভাবি, আপনি তো ধরে রেখেছেন। একজন এ দেশি হয়েও ধরে রেখেছেন।

রিনেই ভাবি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন?

: এই যে, হাসান ভাই চলে গেছেন সেই কত বছর হলো। কিন্তু আপনি এখনো তার অপেক্ষায় আছেন।

: আমি হাসানের অপেক্ষায় আছি নাকি?

: আপনি কি নেই?

রিনেই ভাবি জবাব না দিয়ে চুপ হয়ে গেলেন।

রাকিব বলল, আপনি যদি না-ই থাকবেন তাহলে আপনার নামের শেষে এখনো হাসান শব্দটা যোগ করেন কেন?

রিনেই ভাবি আস্তে করে নিস্তেজ গলায় বললেন, আমি তোমাদের বাঙালি কালচার ধরে রেখেছি, ওটা মোটেও ঠিক না। আমি এ দেশি। আমার দ্বারা বাঙালি কালচার ধরে রাখা মোটেও সম্ভব নয়। তবে?

রাকিব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, তবে কী?

: আমি যে হাসানের অপেক্ষায় নেই, তা বলব না। আমি তাকে ভালোবেসেছি।

: এখন ভালোবাসেন না?

: হ্যাঁ, এখনো ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই এখনো তার অপেক্ষায় বসে থাকি। রাকিব, একটা কথা কী জানো, আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই বুঝি হাসান হঠাৎ করে এসে ঘরে ঢুকে রসিকতা শুরু করে দেবে। রসিকতা করে বলে উঠবে, কই গো, আমার রুনা লায়লা কই?

রাকিব হেসে ফেলল। নিঃশব্দ হাসি। রাকিবের মনে আছে, হাসানুজ্জামান হাসান ভালোবেসে রিনেই ভাবির নাম দিয়েছিলেন রুনা লায়লা। রিনেই ভাবি খানিকটা মোটা ধাঁচের মহিলা বলে তিনি দুষ্টামি করে এই নাম দিয়েছিলেন। যদিও রিনেই ভাবি দেখতে মোটেও রুনা লায়লার মতো ছিলেন না। এ ছাড়া হাসানুজ্জামান হাসান রুনা লায়লার গান খুব পছন্দ করতেন বলে রিনেই ভাবিকে এই নামে ডাকতেন। আর রিনেই ভাবিও হাসানুজ্জামান হাসানকে খুশি করানোর জন্য রুনা লায়লার কয়েকটা বাঙলা গান শিখে নিয়েছিলেন। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি চলে যেও না...। পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধু ভাগ্য হইল না...।

রিনেই ভাবি বললেন, রাকিব, তুমি কী জানো, আমি রুনা লায়লার গানগুলো এখনো মনে রেখেছি?

রাকিব অবাক হয়ে বলল, তাই নাকি!

: হ্যাঁ, তুমি শুনবে একটা গান?

: জি, শুনব। গেয়ে শোনান।

রিনেই ভাবি গাইতে শুরু করলেন। পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধু ভাগ্য হইল না। কাজল দিয়া চোখ ভরিলাম, লক্ষ্মী কেউ কইল না!

রাকিব এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। বেশ জোর শব্দের হাসি-হা হা, হা হা। বলল, সেই একই গান?

রিনেই ভাবিও হাসলেন। বললেন হ্যাঁ, সেই একই গান। আরও গান শুনবে?

: না না, থাক। হয়েছে ভাবি। আর গান শোনাতে হবে না। ভাগ্যিস রুনা লায়লা নিউজিল্যান্ডে আসেননি।

: এলে কী হতো?

: তাহলে তিনি আপনার গান শুনে আত্মহত্যা করতেন।

: চুপ, একদম চুপ। বলেই রিনেই ভাবি এবার রাকিবের মতোই বেশ জোরে শব্দ করে হেসে উঠলেন।

কয়েক মুহূর্তের জন্য ওদের হাসিতে রাতের নিস্তব্ধতা মুখর হয়ে উঠল। কিন্তু হাসি থামতেই ওদের মধ্যে নিস্তব্ধতা জেঁকে ধরল। রাতের নিস্তব্ধতা যেন আরও দ্বিগুণভাবে বেড়ে গেল। জানালার পর্দার দুলুনি ঠিক আগের মতোই হচ্ছে। রাতের হিস হিস শব্দ ছাপিয়ে একটানা ঝিঁঝি পোকার ডাক আসছে।

রাকিব একবার টিভির পর্দার দিকে তাকাল। মুভিতে এখন কুমিরটা বীরদর্পে সাঁতার কেটে চলছে। জল বিভাজনের একটা শব্দ-তির তির, তির তির। হিস হিস, হিস হিস। টুপ টুপ, টুপ টুপ। ওদিকে ম্যানগ্রোভ গাছের ওপর বসা নায়িকার একাকী কী আর্তনাদ!

রিনেই ভাবি বললেন, দাও, কফি কাপটা দাও। কিচেনে রেখে আসি।

রাকিব বলল, পরে রাখবেন প্লিজ। আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।

: কী কথা? বলো।

: আমাকে আজ কথাটা আপনার বলতে হবে। কথা ঘুরাবেন না।

: আরে, আগে বলবে তো।

: হাসান ভাই কেন চলে গিয়েছিলেন?

: সেটা তো আমি জানি না। জানলে তোমাকে অবশ্যই বলতাম। এই প্রশ্নটা আমি নিজেকেও অনেকবার করেছি। কিন্তু উত্তর খুঁজে পাইনি।

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হুম্ম। আচ্ছা, হাসান ভাইয়ের কোনো খবর জানেন কী?

রিনেই ভাবি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, জানব না কেন? অবশ্যই জানি। সে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে আছে।

: আর কোনো খবর?

: আর কী খবর?

: ওই যে, তিনি একা কিনা?

: হাসান একা নেই। সে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পর পর কয়েকটা অজি গার্লফ্রেন্ড পরিবর্তন করে এখন এক বাঙালি মহিলার সঙ্গে সংসার করছে।

: বাঙালি মহিলার সঙ্গে?

: হ্যাঁ, ডিভোর্সি বাঙালি মহিলা?

: বিয়ে করেছেন?

: হয়তো তোমাদের রীতিতে বিয়ে করেছে। অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের আইনে তো বিয়ে করতে পারবে না। কারণ সে আমার সঙ্গে এখনো ডিভোর্সে যায়নি। ডিভোর্স পেপারে সাইন না করা পর্যন্ত তো সম্ভব না।

: হ্যাঁ, তা ঠিক। কিন্তু আপনি অ্যাডিলেডে যাচ্ছেন না কেন?

: অ্যাডিলেড গিয়ে কী করব?

: সরাসরি হাসান ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন।

: ওর সামনে সরাসরি দাঁড়িয়ে লাভ?

: ভাবি, একটা মানুষের সামনে দাঁড়ালে আসল সত্যটা বের হয়ে আসে। হাসান ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। দেখবেন আসল সত্যটা বের হয়ে আসবে। আপনি বা আমি জানি না হাসান ভাই কেন রহস্যজনকভাবে চলে গেছেন।

: রহস্যটা জেনে লাভ?

: এত লাভ-লোকসানের কথা বলছেন কেন ভাবি?

রিনেই ভাবি কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলেন।

রাকিব তাড়াতাড়ি বলল, সরি ভাবি। আমি মনে হয় কথাটা একটু কঠিন করে বলে ফেলেছি।

রিনেই ভাবি মৃদু হাসলেন। বললেন, অসুবিধা নেই রাকিব। তুমি তো ভুল বলনি। কিন্তু কথা কী, একটা সময় লাভ-লোকসানের হিসাব করতে হয় না।

রাকিব বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, সেটা কেমন?

রিনেই ভাবি বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন, এই যে আমি, এখন আমি আর সাতাশ-আটাশ বছরের যুবতী না যে তোমার হাসান ভাই আমাকে দেখে খুশিতে ডগমগ ডগমগ হয়ে ভালোবাসবে। আমার এখন বায়ান্ন বছর বয়স। আই উইল বি ফিফটি থ্রি ইন নেক্সট মান্থ। হাসানের সঙ্গে পনেরো বছর সংসার করেছি। তারপর নয় বছর ধরে সেপারেশনে আছি।

: ভালোবাসার কোনো বয়স আছে ভাবি?

: হ্যাঁ, আছে। পুরুষের না থাকলেও মেয়েদের আছে। মেয়েদের চল্লিশ পেরোলেই ওদের মধ্যে হতাশা এসে ভিড় করে। তখন ওরা মনে প্রাণে যৌবনকে ধরে রাখতে চায়। আর পঞ্চাশ বছর হলেই ওরা নিজেকে বুড়ি হয়ে গেছে বলে স্থিতিতে চলে আসে। আর আমি তো পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া বায়ান্ন বছরের বুড়ি। তিপ্পান্ন হই হই বলে। আর এক মাস মাত্র।

: হাসান ভাইয়ের কি বয়স বাড়েনি?

: হ্যাঁ বেড়েছে। হাসান আর আমি তো একই বয়সী। সেই অনুযায়ী হাসানেরও বায়ান্ন বা তিপ্পান্ন বছর।

: তাহলে?

: এ ক্ষেত্রে তাহলে বলে কিছু নেই। একটা কথা খুব সোজা। মেয়েদের বয়সে বাড়ে। পুরুষদের বাড়ে না।

রাকিব মাথা নাড়ল। সে ঠিক মাথা নাড়েনি, নিজে নিজে মাথা ঝাঁকাল। রাকিব জানে, রিনেই ভাবি বরাবরই যুক্তিতে চমৎকার ছিলেন। এমেন্ডার সঙ্গে যখন তার সেই সমস্যাটা বাধে, তখন এই রিনেই ভাবিই যুক্তি দিয়ে ও ছায়া দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিলেন। ¾

এমেন্ডার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একবার রকিবের ইচ্ছে হয়েছিলেন সিরাজকে খুন করে জেলে যাবে। জীবনটা তার কাছে অর্থহীন হয়ে উঠেছিল। বন্ধু বেশে সিরাজ যে কী ব্যাপারটা করেছিল! তাতে রাকিব কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না। ওদিকে নিউজিল্যান্ডে জেলকে বলা যায় স্বর্গবাস। জেলে সেন্ট্রাল হিটিং আছে। লাউঞ্জে বিশাল টিভি। কয়েদিদের জন্য বিশাল লাইব্রেরি। সরকারি খাবার দাবার। সরকারি কাপড়-চোপড়। যেন জেল নয় সরকারির বাসস্থান। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডে খুন করে কেউ জেলে গেলে এখানে সাজা মাত্র সাত থেকে দশ বছরের হয়। এ দেশে কোনো আসামির কোনো ফাঁসির আইন নেই। ¾

কিন্তু এই রিনেই ভাবি সব জেনে রাকিবকে এসব ঝামেলা থেকে রক্ষা করেছিলেন।

রিনেই ভাবি নিজ থেকে বললেন, হাসান তো এখন আর একা নয়। এক বাঙালি মহিলা তার সঙ্গে ঘর করছে। শুনেছি তার ছেলেমেয়েও হয়েছে।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, আপনি এত খবর রেখেছেন?

: হ্যাঁ। কারণ সে আমাকে দুটো মেয়ে দিয়েছে। তার নামটা এখনো আমার নামের সঙ্গে ব্যবহার করি।

: শুধু কি তার নামটাই ব্যবহার করেন?

: না। তার স্মৃতিটুকুও বহন করছি।

: হাসান ভাইয়ের স্মৃতিটুকুও, কেন?

: কারণ পৃথিবীতে কোনো কোনো মানুষ আছে যারা বড্ড বেশি পুরোনো স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চায়। নতুন স্মৃতির নিতে ভয় পায়। আমি সেই ধরনের মানুষ।

রাকিব বিষণ্ন দৃষ্টি মেলে মাথা ঝাঁকাল।

রিনেই ভাবি নিজে কথা নিজেই টেনে নিলেন। বললেন, আরেকটা কথা। পৃথিবীতে আরও কিছু মানুষ আছে যারা চমৎকারিত্বে বিশ্বাস করে। জাদু, জীবনের জাদু। ওই যে কিছুক্ষণ আগে বললাম না, যদি হাসান একদিন চলে আসে? হাসানের সেই হাসি ও সেই রসিকতা, ওগো আমার রুনা লায়লা, তুমি কই গো...! রিনেই ভাবি একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। একটু হাসলেনও। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, একটা সুখ স্মৃতি। রাকিব, মানুষের কল্পনায় প্রতিনিয়ত সেই সব সুখ স্মৃতি ভাসে বলেই তারা বাঁচার স্বাদ পায়। সুখ স্মৃতি আর কল্পনা শেষ, মানুষ ঠুস!

রাকিব দেখল, রিনেই ভাবি হাসলেও তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।

রাকিব আর কিছু বলতে পারল না। সে নিউজিল্যান্ডে আসার পরপর এই ভদ্রমহিলা তাকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে কীভাবে আগলেই না রেখেছিলেন!

রিনেই ভাবি চোখ মুছে বললেন, রাকিব, আমার একটা শখ আছে।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, কী শখ ভাবি?

: শখটা হলো, যে মানুষটার সঙ্গে পনেরো বছর সংসার করলাম। তারপর নয়টা বছর অপেক্ষায় কাটালাম। সেই মানুষটার দেশটা একবার দেখব না!

: বাংলাদেশ যেতে চান?

: হ্যাঁ, বাংলাদেশ।

রাকিবের মনে পড়ল, হাসানুজ্জামান হাসান রিনেই ভাবিকে খুশি করানোর জন্য তাকে প্রায়ই বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু কখনো নিয়ে যাননি। এর আগেই হাসানুজ্জামান হাসান নিজেই রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, ভাবি, আপনার কবে বাংলাদেশ যাওয়ার ইচ্ছে?

রিনেই ভাবি বললেন, যাব একদিন। পুতুল স্থায়ী হোক। কোহিনূর বড় হোক। আমি টাকাপয়সা জমিয়ে এক সপ্তাহের জন্য হলেও যাব।

: না ভাবি। আপনি এত দিন অপেক্ষা করলে হবে না। আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ যেতে হবে। জীবনে কখন কী ঘটে!

: খুব তাড়াতাড়ি কীভাবে যাব? রাকিব, তুমি কী যে বলো না?

: আমি ঠিকই বলছি ভাবি। আপনি শুধু আমাকে বলেন, আপনি কবে যেতে চান।

: আমি অত টাকা কোথায় পাব যে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ যাব? এমনিতে দুটো মেয়েকে একা বড় করছি। ওদের খরচ। সংসার চালানো। আরও কত কী!

রাকিব জোর দিয়ে বলল, আপনি শুধু আমাকে এটা বলেন, আপনি কবে যাবেন?

রিনেই ভাবি এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, আমি যাব। বৃদ্ধ বয়সে হলেও যাব। আগে আমার মেয়ে দুটো নিজের পায়ে দাঁড়াক।

: আপনি একই কথা বারবার বলছেন। আপনি ভালো করেই জানেন, নিউজিল্যান্ডে ছেলেমেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য তাদের বাবা-মাকে চিন্তা করতে হয় না। নিউজিল্যান্ডের সরকারই চিন্তা করে। আপনি বাংলাদেশ যাওয়ার তারিখ ঠিক করেন। আপনার বাংলাদেশ ভ্রমণের সব টাকা আমি দেব। ওখানে থাকার ব্যবস্থাও আমি করব। আপনি শুধু আমাকে তারিখটা বলেন।

: সব টাকাপয়সা তুমি দেবে?

: জি, ভাবি। আপনার প্রাপ্যের সবটুকু তো দিতে পারব না। আমার সেই ক্ষমতাও নেই। আপনার প্রাপ্যের সামান্যটুকুই দেব।

: আমার প্রাপ্যের টাকা?

: জি, ভাবি।

: আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কীসের প্রাপ্যের টাকা?

: আপনার সেটা বুঝতে হবে না।

: তুমি এত টাকা পাবে কোথায়?

: ভাবি, আমি এখন ভালোই চাকরি করি। বেতনও বেশ পাই। কিন্তু আমার খরচ কম। খরচ করার মানুষও নেই। মাসের শেষে হাজার হাজার ডলার আমার ব্যাংকে জমা হয়। গত পাঁচ-সাড়ে পাঁচ বছরে অনেক টাকাই ব্যাংকে জমা হয়েছে। সেই টাকা থেকে খুব সামান্য টাকাই আপনাকে দেব।

রিনেই ভাবির চেহারায় একটা অদ্ভুত আভা ফুটে উঠে আবার নিভে গেল। তৎক্ষণাৎ তার চেহারায় একটা করুণ ছায়া পড়ল। ছায়াটা এত দীর্ঘ যে অল্পক্ষণের মধ্যে তিনি কেঁদে ফেললেন।

রাকিবের চোখও কেন জানি ভিজে এল। সে ভেজা গলায় বলল, ভাবি, আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষটা হলেন আপনি! (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1558805