যুগোপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ধরন পাল্টানোর সময় এসেছে। গোটা বিশ্বের চাহিদা ও সমন্বয়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রশিক্ষণের। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। শিশুদের অনুকরণ ও অনুসরণের ক্ষমতা শুরু থেকেই খুব বেশি। তাই দেরি না করে প্রথম থেকেই তাদের নির্দিষ্ট ফর্মে আনার জন্য চেষ্টা করা দরকার মানব জাতির জন্য ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ হিসেবে। শিশুদের মেধা ছোটবেলা থেকেই আবিষ্কার করে তাদের জ্ঞান চর্চার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যুগোপযোগীকরণ করার পাশাপাশি মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা দরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আন্দাজের ওপর লাখো লাখো শিশু শিক্ষার্থীকে একই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ না করে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করা হোক নিউ ওয়ে অব এডুকেশনের লক্ষ্য নিয়ে।

বর্তমান বিশ্বে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে শিশুদের তৈরি করা হচ্ছে সাত থেকে ১২ বছরের সময়ের মধ্যে। যে সব শিশু এ সময়ের মধ্যে ভালো করছে না তারা অন্য পেশার শিক্ষায় বেছে নিচ্ছে। জার্মানিতে প্রাথমিক পর্যায়ে চতুর্থ শ্রেণি থেকে যাচাই বাছাই করে শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিশুদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যার কারণে তাদের লেখাপড়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সরাসরি বা বেসরকারি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। এরা জীবনের মূল্য খুঁজে জীবনকে মধুময় করে তুলছে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দিক দিয়ে।

লেখক
লেখক

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তারা কী হতে চায়। এই পদ্ধতি চলে আসছে পুরোনো পদ্ধতির শিক্ষার শুরু থেকে। কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন ছাড়াই ট্র্যাডিশন অনুযায়ী শিক্ষা প্রশিক্ষণ চলছে যুগ যুগ ধরে। গুগলের যুগে যেখানে কলকারখানা থেকে শুরু করে মানবজাতির চাহিদা ও শিক্ষার গতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে পুরোনো পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিলে সার্বিকভাবে শিক্ষার মান নিম্নমানের হবে বহির্বিশ্বের তুলনায়। ফলে লাখো লাখো কাগজে কলমে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আমাদের দেশে বাড়ছেই। তাদের জীবন জয়ের লড়াই চলছে আজীবন দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে।

এর কারণ, আমাদের দেশের শিক্ষার মান মূল্যায়ন হচ্ছে না তুলনামূলকভাবে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের সঙ্গে। এমনকি পাশ্চাত্যেও দেখা যাচ্ছে অন দ্য জব ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে কাজের সমন্বয় করে দ্রুত শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীকে কাজে লাগানো হচ্ছে। পাশ্চাত্যের মতো বাংলাদেশেও তাদের এ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা শেষ করে কাজে যোগদান করার কথা। এর জন্য দায়ী পুরোনো পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া।

একটি উদাহরণ দিতে চাই, আগে একটি চিঠি বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে পাঠালে তা আসতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেত। পরে তার উত্তর দিতে একই সময়। সব মিলে একটি চিঠির খবর পৌঁছাতে যে সময় লাগত এখন তা মুহূর্তের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ অতীতের প্রশিক্ষণ, ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন ছিল খুবই স্লো, আজকের যুগের তুলনায়। স্বাভাবিকভাবেই মানব জাতির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমান ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশনের যুগে। তাই আমাদের ধ্যান ও জ্ঞানে দ্রুততার সমন্বয় ঘটেছে।

এ অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষা পদ্ধতি যদি যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে পুরোনো পদ্ধতিতে চলতে থাকে তবে সমস্যা ও বেকারত্বের সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না। ডিজিটালাইজেশন বা বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক ও মানসম্মত প্রযুক্তির মোকাবিলা করার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেইভাবে গড়ে তোলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা যে লেখাপড়া করছে না তা নয়, ভূরি ভূরি জিপিএ ফাইভ হচ্ছে তার প্রমাণ। সমস্যা হচ্ছে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রচলনের জন্য। মানবতা ও নৈতিকতারও সমন্বয় ঘটাতে হবে। তবেই হবে আদর্শ সুশিক্ষা এবং তা হবে ‘আর্নিং বাই লার্নিং’ বা শেখার মাধ্যমে উপার্জন।
...

রহমান মৃধা: সুইডেন। ইমেইল: <[email protected]>


Attachments area