আমিত্ব সবজনেই প্রিয় থেকেও প্রিয়

প্রতীকী ছবি। সমর মজুমদারের আঁকা ছবি
প্রতীকী ছবি। সমর মজুমদারের আঁকা ছবি

মানুষই গল্প। লেখক তার আকার। কলমের গুঁতোতে গল্পকার। সবার ওপরে নিরাকার। যিনি অনন্তকালে অফুরন্ত ভান্ডার। ত্রিভুবনে তুলনা নেই যার, তিনি কি নন গল্পকার? না, তিনি সর্বজনীন, গল্পকারেরও গল্পকার। চির অক্ষয় অমরে শেষ নেই তার।

গল্পকার একজন ভালো পাঠক। মস্তিষ্ক সায় দিলেই তিনি লেখার প্রেমে মজেন। কলম ধরতেই শুরু করেন আমি, আমিত্ব ও আমার। বেদনা স্বরেই বলতে হয়, পাঠক হিসেবে আমি লেখকের পুনঃপুন আমিত্বে বিরক্ত। নিজে লিখতে গেলে সেই আমিই মাথায় এসে ভর করে বসে। ঘিরে ধরে আমার, আমি ও আমিত্ব! কথা-কাটাকাটি হয় আমিত্বে, মিলে সংশয়, আমি কোন রাজপুত? আমাকে চেনে কে?

অনেক পড়েই লেখা উচিত। কিন্তু আজকাল তা হয়ে উঠেছে না। ব্যস্ততার বশীভূতে অল্পই পড়ি। তাতেও ভালো না লাগলে বিমুখ হই, দৃষ্টি ঘোরাই। বলি, যে লেখা হৃদয় অনুভূতির খোরাক জোগায় না তা পড়ছি কেন? কষাকষি ও অজুহাতের ছড়াছড়ি! হিসাব মিলায়ে দেখি, গল্পকার কিছু আমিত্বের হ্রাস ঘটাতে পারতেন। তবুও যে লেখক বা লেখিকা পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তার হাজার আমিও পজিটিভ। যত খুশি আমি। আমিত্বের শত ছক্কাতেও ক্ষতি নেই।

অন্যদিকে আমি কারও হৃদয়ে স্থান করে নিইনি, নিতেও পারিনি। এখন আমার আমিত্বে পাঠক-পাঠিকা বিরক্ত হবেন না কেন? আমি নিজেই এতে দুঃখিত ও বিরক্ত। প্রতিদানে সমবেদনার বিকল্প কিছুই নেই, থাকেও না। তা ছাড়া, চিরন্তন সত্যে আমিত্ব এড়ানো যায় না। লেখকের বেলায় সেটা আরও দুর্গম কঠিন। আমি না হলে কি চলে? আমার আমি ছাড়া কি সম্ভব? আমিত্বহীন কেউ হয় কি? আমিত্ব সবজনেই প্রিয় থেকেও প্রিয়। আমিত্ব শক্তি স্বস্তি দেয়, দেয় জীবন-মরণ, সত্য, সাধন, সৃষ্টি, প্রেম-ভালোবাসা, জোয়ার-ভাটা ও বিন্যাস; সবগুলোই ধ্বংসের দুর্দান্ত ক্ষমতা রাখে আমিত্বে ভূষিত ষড়্‌রিপু। যা আমিত্বে অবিরাম শত্রু। যার আশ্চর্য কামে বারংবার আমি। ঘুরে ফিরে আমিত্বের উপায় বিরল। বুঝে শুনে পথ না চললে আমিত্ব হয় সর্বহারা। বিলীন হয়ে যায় এর সত্তা, হয় না তার সহজ মুক্তি। পরাধীনে কাটে আমিত্ব।

আমিত্ব প্রেমানন্দে স্বকৃত, অবলোকনে মানুষ মুখ্য। এর অন্বেষণ অতি জরুরি। একান্ত জ্ঞান দর্শনে তা ভরসাময়। গমনাগমনে তা অক্ষয়, অমর। অপার মহিমা রহস্যে তা নিকটতম ও নির্জন। বুঝতে না গেলে তা দূর থেকেও দূরে, বহুদূরে...। সামান্যে তা মেলে না। নিরাশায় ডুবেই নীরাজন তরিতে চড়ি, স্বপ্ন পূরণে আশাও বাঁধি। লেখালেখিতে আমিত্ব গড়ি, ফুলকুড়িতে বন্ধন জড়াই ও বিসর্জনও দিই। কারণে অকারণে আমিত্ব হারাই ও খুঁজেও বের করি! কৌশলী নিরিখ বাঁধতে যাই, ঘর বাঁধি ঘর ছাড়ি! চির বিদায়ে বর্ধিত হই। ফলাফল যাই হোক, আমিত্ব বেলা ফুরায় না, এর শেষও হয় না।
...

মো. জিয়াউদ্দিন শাহ: জেদ্দা, সৌদি আরব।