বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী লেবাননের ব্যবসায়ীরা

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল মোতালেব সরকার
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল মোতালেব সরকার

লেবাননের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। দেশটির রাজধানী বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যাচিভমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা। গত শুক্রবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে পাঁচতারা একটি হোটেলে এ বৈঠক আয়োজন করা হয়।

খুব স্বল্প সময়ে আয়োজন করা হলেও দেশটির বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, সমাজসেবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উৎসাহের সঙ্গে এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। তিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশেষ করে গত দশ বছরের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ তুলে ধরে লেবাননের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সবশেষে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন লেবাননের ব্যবসায়ীরা। তারা বাংলাদেশের সাফল্য ও অর্জনকে স্বাগত জানান এবং বৈঠক শেষে অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

এ বৈঠক সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্যবসা-বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পানি, জলবায়ুর পরিবর্তনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক সাফল্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ এখন সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। দেশের এ অর্জনকে লেবাননের জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করাই ছিল এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য। আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগে তাদের আগ্রহের কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ক্রমান্বয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করব।

উন্নয়ন মেলা
একই দিনে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল রং-বেরঙের বেলুন, ফেস্টুন ও পোস্টার দিয়ে দূতাবাস সজ্জিতকরণ। দিনব্যাপী সেবা নিতে আসা প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান ও তাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা, বাংলাদেশের অর্জিত বিভিন্ন উন্নয়নের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মতবিনিময় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দূতাবাসে মতবিনিময়ে প্রশ্ন করছেন একজন প্রবাসী
দূতাবাসে মতবিনিময়ে প্রশ্ন করছেন একজন প্রবাসী

সকাল থেকেই লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের চিত্র ছিল একেবারে অন্যরকম। সকাল থেকেই দূতাবাস ছিল সাজ সাজ রব। গেট সাজানো হয় বেলুন দিয়ে। দেয়ালে দেয়ালে উন্নয়নের বিভিন্ন পোস্টার সাঁটানো হয়। বিভিন্ন ধরনের সেবার জন্য বেশ কিছু স্লোগান ছিল সেগুলো দেয়ালে সাঁটানো হয়। সকালে যারা দূতাবাসে এসেছিলেন তাদের সকলের জন্য ছিল হালকা নাশতার ব্যবস্থা। চা-বিস্কুট, জুস ও পানীয়।

সেদিন যারা অফিসে এসেছিলেন তারা বেশ অবাক হয়েছেন। কারণ ৫ অক্টোবর দূতাবাসের সকল সেবা কার্যক্রম রাষ্ট্রদূত মহোদয় নিজে তদারকি করেছেন। যারা সেবা নিতে দূতাবাসে এসেছেন সকলেই তাদের নিজেদের সমস্যার কথা সরাসরি রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন। তিনি প্রায় সকল সমস্যার সমাধান ও জটিল সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করতে হবে তার প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এসব সমস্যা সমাধানের তাগিদ দেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

মতবিনিময়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন প্রবাসীরা। রাষ্ট্রদূত সেগুলো শোনেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে সরকারের বিভিন্ন অর্জনগুলো প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে দূতাবাসের হলরুমের টিভিতে দেখানো হয়। এ ছাড়া এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রবাসী শিল্পীরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর একটি জারিগান পরিবেশন করেন।

ছবি: বাবু সাহা, সাগর হাওলাদার, জসিম সরকার ও জহির রায়হান।