নীল কুমুদিনীর নৃত্য-চার

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

নদীর আজ ঘুম ভাঙল বেশ দেরিতে। ঘুম ভেঙে বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটায় সময় দেখতে গিয়ে আঁতকে উঠল। দশটা বেজে গেছে!

বিছানা ছেড়ে নদী উঠল। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে জানালার পাশে গিয়ে পর্দা সরাল। পর্দা সরাতেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিটা গত রাত থেকেই শুরু হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে এ একটা সমস্যা। যখন বৃষ্টি হয়, একটানা তিন-চার দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হতে থাকে। শীত-গ্রীষ্ম কোনো ব্যাপার নয়। একবার বৃষ্টি শুরু হলেই হয়।

নদী কিছুক্ষণ স্থির হয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। গত দুই-তিন ধরেই এই শনিবারটার কথা সে ভেবে রেখেছিল। শনিবার এলেই সে রাকিবের সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে নদী যাবে কীভাবে? ছাতা মাথায় তাকে ওল্ড ফার্ম রোড পর্যন্ত যেতে হবে। ওল্ড ফার্ম রোড থেকে বাস ধরতে হবে। তারপর ওয়েলিংটন স্ট্রিটে নেমে আবার ছাতা মাথায় রাকিবের বাসায়। নদী ইচ্ছে করলে রাকিবকে ফোন দিতে পারে। কিন্তু রাকিবের গম্ভীর গলাটা শুনতে চায় না। কেন শুনতে চায় না, নদী জানে না। আবার রাকিবের বাসাতেই বা যেতে চাচ্ছে কেন, তাও সদী জানে না।

গত শনিবারের ফোনের কথাবার্তাগুলো নদীর মনে পড়ল। নদী ভাবল, একটা সময় রাকিব ভাই অনেক কিছুই তাকে বলত। খুব কম কথা বলেন তিনি। কিন্তু যতটুকু বলেন, কোনো রাখঢাক রেখে তিনি বলেন না। অথচ তিনি এত দূরের নেপিয়ার-হেস্টিংস শহরে গেলেন। একদিন থাকলেনও। কিন্তু তিনি কিছু বলে যাননি। কেন বলে যাননি? এমনকি নেপিয়ার-হেস্টিংস শহর থেকে ফিরে এসেছেন আজ পুরো সাতটা দিন হয়ে গেল। তিনি একবার ফোন পর্যন্ত দেননি।

নদী নিজের প্রতি বিরক্ত হলো। কেন সে এই অহংকারী মানুষটার কথা ভাববে? আর কেনই বা সে ওখানে যাবে? তার কী এমন ঠেকা পড়েছে?

কিন্তু নদী বেশিক্ষণ এই বিরক্তির ভাব ধরে রাখতে পারল না। নদী ভাবল, আকাশ যতই মেঘ করে আসুক। বাইরে যত বৃষ্টিই নামুক। সে আজ রাকিব ভাইয়ের বাসায় যাবেই। ওই বাসায় গিয়ে তাকে রাগের কারণটা সরাসরি জিজ্ঞেস করবে।

নদী জানালা থেকে সরে এসে বাথরুমে ঢুকল। ফ্রেশ হয়ে আড়ং থেকে তার মার কিনে দেওয়া ফতুয়াটা পরল। সঙ্গে জিনসের প্যান্ট। ফতুয়ার ওপর একটা ওড়নাও ঝুলিয়ে নিল।

শিমুল ভাবি অবশ্য নদীর এভাবে ফতুয়ার ওপর ওড়না পরা নিয়ে হাসেন। নদী শুধু ফতুয়ার ওপরই নয়, প্যান্ট-শার্ট বা পশ্চিমা পোশাক পরলেও একটা ওড়না ঝুলিয়ে নেয়। শিমুল ভাবি বলেন, এটা আবার কী কথা? এটা কী সালোয়ার-কামিজ যে ওড়না পরেছ? প্যান্ট-শার্টের সঙ্গে ওড়না কেন? আর ফতুয়ার সঙ্গে ওড়না?

নদীও হেসে বলে, অভ্যাস ভাবি, অভ্যাস। মা একসময় এভাবেই পরতে বলতেন যে।

নদী কাপড়চোপড় পরে জানালা দিয়ে আবার বাইরে তাকাল। বাইরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। নিস্তব্ধ প্রকৃতি। নিস্তব্ধ ফিন্সলি স্ট্রিটের সারি সারি ছোট ছোট ম্যাপল গাছগুলো। নিস্তব্ধ পিচের রাস্তাটা। ফুটপাত, পিচের রাস্তা ও সারি সারি সব ম্যাপল গাছ সবই ভিজছে। আহা, এমন বৃষ্টির দিনে মা নিশ্চয়ই জানালার পাশে বসে কবিতা লিখতেন!

নদী বেডরুম ছেড়ে লাউঞ্জে এল। নীরব লাউঞ্জে বসে প্লে-স্টেশন প্রোতে কী একটা গেম খেলায় ব্যস্ত। নিরালা ও মোহনা ভাবির মেয়ে মুখোমুখি বসে পুতুল সাজাচ্ছে। মোহনা ভাবি তার মেয়েটার নাম বেশ কাব্যিক রেখেছেন। আনমনা। তিনি ছেলের নামের সঙ্গে হয়তো মিলিয়ে রেখেছেন। অনাবিল ও আনমনা।

গতরাতে অনাবিল শেষপর্যন্ত অবশ্য রাতের খাবার খেয়েই গিয়েছিল। তবে যাওয়ার সময় বাবা-মার দিকে খুব একটা আগ্রহের দৃষ্টি ফেলে যে গেছে, তা নয়। বরং অনেকটা অবহেলার দৃষ্টি মেলেই তার গার্লফ্রেন্ড জেনি ও মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেছে। অনাবিল তার মেয়ের নাম এ দেশিদের নামের সঙ্গে মিলিয়েই রেখেছে—ডরথি।

অনাবিল চলে যাওয়ার পর শাহ আমিন মাত্রাতিরিক্ত চুপচাপ ছিলেন। আর কষ্ট শুধু ফুটে উঠেছিল মোহনা ভাবির মধ্যে। তিনি মধ্যরাত পর্যন্ত শুধু আহাজারিই করেছেন, আহা, কেন এই বিদেশে আসলাম? কার জন্য আসলাম? এই ছেলেমেয়েদের জন্য? আজ ছেলে আমার নেই। নিজের ছেলে বলে একটু আদর করতে পারিনি। কত দিন পরে তাকে দেখালাম! যে করেই হোক একটা নাতনি তো হয়েছে। আমাদের রক্ত। অথচ একবার কোলেও দিল না...!

নদী ভাবল, সত্যি তো অনাবিলের মেয়েটা শাহ আমিন ও মোহনা ভাবির নাতনি। তারা তার দাদা-দাদি। কিন্তু প্রথম নাতনিকে পেয়ে তারা কী কোনো আনন্দ করতে পেরেছেন?

লাউঞ্জ ঘেঁষেই ওপেন কিচেন। কিচেনে শিমুল ভাবি ও মোহনা ভাবি কিছু একটা বানাতে ব্যস্ত। নদী সেদিকে এগিয়ে গেল।

নদী দেখল, মোহনা ভাবির মাঝে গত রাতের সেই আহাজারি ও হাহাকার এখন আর নেই। তিনি বেশ প্রফুল্লচিত্তে ফুরফুরে মেজাজে শিমুল ভাবির সঙ্গে কথা বলছেন। পুরোনো গল্প তুলে হি-হি করে হাসছেন। কখনো হাসির তোড়ে শিমুল ভাবির ওপর ঢলে পড়ছেন।

নদী ভাবল, এটাই মানুষের জীবন। ভেতরে দুঃখ, বাইরে প্রফুল্লের মুখোশ! আর পরবাসে মানুষের জীবনটা যেন আরও বিচিত্র। এখানকার মানুষের ভেতর ও বাইরের মধ্যে এত ফারাক যে মাঝেমধ্যে কোনটা আসল, কোনটা নকল তা বোঝা বড় দায় হয়ে যায়!

মোহনা ভাবির প্রফুল্ল ভাবটা নদীর তবুও বেশ ভালো লাগল। এই দুই দিনে মোহনা ভাবি নদীকে সত্যি খুব আপন করে নিয়েছেন। ঠিক যেন আপন বড় বোনের মতোই তার আপন।

নদী কিচেনের দিকে এগোতেই মোহনা ভাবি বললেন, নদী, দেখ তো, পিঠা ঠিক আছে কিনা?

নদী জিজ্ঞেস করল, এটা কী পিঠা?

মোহনা ভাবি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই পিঠার নাম জানো না?

: না, ভাবি।

: তাহলে তুমি গেছ!

: গেছি মানে?

: তোমার আর স্বামীর সংসার করা হবে না।

: আমি বিয়ে করব এটা আপনাকে কে বলল?

: তাই তো, কেউ তো বলেনি?

শিমুল ভাবি কথাটা টেনে নিয়ে বললেন, আসলে নদী কখনো গ্রামে যায়নি তো, তাই এসব পিঠা চেনে না। ঢাকাতে জন্ম, ঢাকাতেই বড় হয়েছে।

মোহনা ভাবি বললেন, আমার জন্মও তো ঢাকাতে। সারা জীবন ঢাকাতেই কাটিয়েছি। তবে মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে যেতাম। আমি তো সব পিঠার নাম জানি।

নদী বলল, ভাবি, আমার মা ও আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করেছি। আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। তাই ওসব পিঠার নাম জানতে পারিনি। আমার মা কলেজে পড়ান। সারা দিন ক্লাস নিয়ে এসে বিকেলে আবার ব্যাচ করে ছাত্রছাত্রীও পড়ান। ওসব পিঠা-টিটা বানানোর উৎসব আমাদের কখনো হয়নি।

মোহনা ভাবি এগিয়ে এসে নদীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি তো এমনিই মজা করে তোমাকে কথাগুলো বললাম। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন?

নদী হেসে বলল, আমি সিরিয়াসলি নিইনি।

: তাহলে শোনো, এটা পাটিসাপটা পিঠা। বাংলাদেশে শীতকালে বানায়।

: কিন্তু এখন তো নিউজিল্যান্ডের গ্রীষ্মকাল। এখন বানাচ্ছেন যে?

মোহনা ভাবি হেসে বললেন, হুম, তা অবশ্য ঠিক। নিউজিল্যান্ডে আবার গ্রীষ্মকাল আছে নাকি? তুমি একবার ব্রিসবেনে আস। গ্রীষ্মকাল কাকে বলে বুঝবে। চল্লিশ ডিগ্রি তো খুব সাধারণ তাপমাত্রা। কোনো কোনো রাতে মনে হয়, আমরা যেন একটা গরম পাত্রের ভেতর বসে আছি। বাইরে একফোটা বাতাস থাকে না। এসিতেও তখন কাজ হয় না।

নদী বলল, একবার যাব। ব্রিসবেন ঘুরে আসব।

: কবে আসবে বলো? আমাদের বাসা কিন্তু থাকবে। আমি তোমাকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখাব। অবশ্য নিউজিল্যান্ড থেকে গিয়ে তুমি ওখানে খুব একটা ইমপ্রেসড হবে না।

: এখনই না ভাবি। আগে মাস্টার্সটা শেষ করি।

: পিএইচডিও করবে নাকি?

: জি ভাবি, আশা আছে।

: এই তো আমার বোন। লেখাপড়ার শেষটা দেখে ছাড়বে। আমাদের মতো আধা গাঙে নৌকা ভাসাবে না। আমার বিয়ে কিন্তু হয়েছে উনিশ বছর বয়সে।

শিমুল ভাবি কথাটা টেনে নিয়ে বললেন, ভাবি, কথাটা আধা গাঙে নৌকা ভাসানো না। আধা গাঙে চইর ভাঙা...!

মোহনা ভাবি বললেন, ওই, একই কথা। নদী ঠিকই বুঝে নিয়েছে। আচ্ছা নদী, কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যাচ্ছি। তুমি একটা পাটিসাপটা পিঠা খেয়ে দেখ না, প্লিজ। অনেস্ট ওপিনিয়ন দেবে কিন্তু।

নদী হাত বাড়িয়ে একটা পাটিসাপটা পিঠা নিল। কামড় বসিয়েই বলল, লা জওয়াব। চমৎকার হয়েছে।

মোহনা ভাবি একটা দিঘল হাসি দিয়ে বললেন, শিমুল ভাবি, বলেছি না, আমার বানানো পিঠা চমৎকার হয়। নদী, মাই লিটল সিস্টার, আরও একটা খাও।

নদী বলল, এত ভালো হয়েছে, একটা না, পাঁচটা লাগবে।

মোহনা ভাবি আরও খুশি হয়ে বললেন, তুমি পাঁচটা না, দশটা খাও নদী। আমি সার্থক হব।

শিমুল ভাবি বললেন, নদী পিঠার কী বোঝে? সে তো পিঠাটার নামই জানত না।

মোহনা ভাবি বললেন, দেখছ নদী, কী জেলাসি মহিলা। নিজে ভালো পিঠা বানাতে জানেন না। অথচ অন্যের ভালো পিঠা বানানো পছন্দ করেন না।

শিমুল ভাবি বললেন, পাটিসাপটা পিঠার ক্ষীর বের হয়ে গেলে তখন আর পাটিসাপটা থাকে না। পাটি আর সাপ আলাদা হয়ে যায়, হি–হি–হি!

নদী মোহনা ভাবির পক্ষ ধরে বলল, পিঠা না চিনলেও টেস্ট ভালো না খারাপ, ওটা বুঝতে তো আর সমস্যা হয় না।

শিমুল ভাবি বললেন, হয়েছে, মোহনা ভাবির আর চামচামি করতে হবে না, হি–হি–হি!

মোহনা ভাবি বললেন, বুঝছ নদী, আমি যখন শেয়ারউড পার্কে থাকতাম, তখন বেবুন ভাবি ও আমি এই শিমুল ভাবির খুঁতখুঁতে স্বভাব নিয়ে অনেক হাসাহাসি করতাম। কিন্তু আজও দেখ, তিনি সেই খুঁতখুঁতে স্বভাবটাই দেখাচ্ছেন।

নদী এবার শিমুল ভাবির পক্ষ নিয়ে বলল, না ভাবি, শিমুল ভাবি মোটেও খুঁতখুঁতে নয়। আমি এই ছয় মাসে তাকে ভালোই চিনেছি।

মোহনা ভাবি বলল, বাতাস দেখি আবার অন্যদিকে ঘুরে গেছে। নদী, তোমাকে কিন্তু আর পাটিসাপটা পিঠা দেব না।

শিমুল ভাবি ও নদী হি–হি করে হেসে ফেলল।

নদী কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই লাউঞ্জে চ্যাঁচামেচি শুরু হলো। নিরালা কী একটা খেলনা আনমনাকে দিতে চাচ্ছে না। আনমনা ওখান থেকে চেঁচিয়ে অভিযোগ করল, মা, মা দেখ, নিরালা কী পাজি, কী সেলফিস! আমাকে তার ড্যান্সিং ডলটা দিতে চাচ্ছে না। সে বলে, ওটার নাকি ব্যাটারি শেষ হয়ে যাবে।

মোহনা ভাবি হাসলেন। বললেন, আনমনা, তুমি নিরালাকে সেলফিস বলছ কেন?

আনমনা বলল, সে সেলফিস, তাই সেলফিস বলছি।

: তুমি তাকে পাজিও বলেছ।

: সে পাজি, তাই পাজি বলছি।

: তুমি কিন্তু ব্রিসবেন ফিরে গিয়ে বলবে, নিরালা কত ভালো। নিরাল এই। নিরালা ওই।

: এবার ব্রিসবেন গিয়ে বলব না। নিরালা একটা সেলফিস। ট্রু সেলফিস!

নিরালা এবার তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল।

মোহনা ভাবি ও শিমুল ভাবি লাউঞ্জে এগিয়ে গেলেন।

নীরবও পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠল। বলল, এই বদ দুটোর জন্য আমি ঠিকমতো গেম খেলতে পারছি না।

নিরালা বলল, আমি বদ না, তুমি বদ।

নীরব তার মার দিকে তাকিয়ে বলল, মা, এই বদ দুটোকে এখান থেকে নিয়ে যাও। নয়তো আমি কিন্তু এদের কঠিন পানিশমেন্ট দেব।

শিমুল ভাবি বললেন, হয়েছে। তোকে আর চেঁচাতে হবে না। আমি নিরালা আর আনমনাকে ভেতরের রুমে নিয়ে যাচ্ছি। বলেই তিনি দুই হাতে নিরালা ও আনমনার দুই হাত ধরে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলেন। মোহনা ভাবি অবশ্য ভেতরে গেলেন না। তিনি কিচেনে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন, আহা, আমার পিঠা তো পুড়ে যাচ্ছে।

নদী বলল, পিঠা পোড়ে নাই। আমি দেখছি।

মোহনা ভাবি বললেন, তারপরও। শিমুল ভাবি যা খুঁতখুঁতে। একটা পিঠা পোড়া লাগলে বলবেন দশটা পিঠা পোড়া লেগেছে। হি–হি–হি!

নদীও হাসল।

শিমুল ভাবি ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী নিয়ে আবার হাসাহাসি হচ্ছে?

মোহনা ভাবি বললেন, আপনাকে নিয়ে।

: আমাকে নিয়ে আবার কী জন্য হাসাহাসি?

: আপনি যে অনেক ভালো, এ জন্য। আই লাভ ইউ সো মাচ।

নদী হি হি করে হেসে ফেলল। নীরব লাউঞ্জ থেকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল।

মোহনা ভাবি ও শিমুল ভাবি দুজন পিঠা বানানোতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

নদী নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। তাকে কিছুক্ষণ পরই বের হতে হবে।

মোহনা ভাবি ডেকে উঠলেন, এই নদী, তুমি আবার কোথায় যাচ্ছ? পিঠা বানানো শেষ হয়নি তো? আরও দুই-একটা পিঠা খেয়ে যাও। এগুলো খাবে কে? তোমার ভাই তো ডায়াবেটিক রোগী। নাজমুল ভাইও মিষ্টি জিনিস এত একটা পছন্দ করেন না।

নদী বলল, না ভাবি, খেয়েছি তো। আর খাব না। আমি একটু বাইরে যাব।

মোহনা ভাবি বললেন, আমরাও তো বাইরে যাব। আমি আর শিমুল ভাবি প্ল্যান করেছি আজ সারা দিন বাসে করে সিটি ঘুরব। বাসে করে টি আওয়া শপিং সেন্টারেও যেতে পারি।

: তাহলে তো বেশ।

: তুমিও চল না, আমাদের সঙ্গে ঘুরবে।

নদী হেসে বলল, ভাবি, আপনাদের সঙ্গে গেলে তো ভালোই হতো। বেশ আনন্দ করা যেত। কিন্তু আমি যে আরেকটা প্রোগ্রাম করে ফেলেছি।

শিমুল ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, কী প্রোগ্রাম? রাকিব ভাইয়ের বাসায় যাবে?

নদী বলল, যেতে পারি আবার নাও যেতে পারি। তবে হ্যামিল্টন ইস্টে যাব। নিকোলাস স্যারের বাসায় যাব। স্যারের সঙ্গে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।

মোহনা ভাবি কথাটা ছোঁ মেরে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই রাকিব ভাইটা আবার কে?

নদী লজ্জা পেয়ে কিছু বলল না।

শিমুল ভাবি বললেন, ওর ফ্রেন্ড।

মোহনা ভাবি চোখ বড় বড় করে বললেন, ফ্রেন্ড না বয়ফ্রেন্ড?

শিমুল ভাবি বললেন, রাকিব ভাই যেহেতু পুরুষ মানুষ তাই বয়ফ্রেন্ডই তো হওয়ার কথা, তাই না নদী?

নদী তাড়াতাড়ি বলল, শিমুল ভাবি, আপনিও না...! মোহনা ভাবি, আসলে তিনি আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।

মোহনা ভাবি বললেন, শুভাকাঙ্ক্ষী তো বটেই। নয়তো বয়ফ্রেন্ড হবে কীভাবে?

শিমুল ভাবি হেসে বললেন, তা ঠিক। কথাটা যুক্তিসংগত।

নদী বলল, শিমুল ভাবি, আপনিও না?

মোহনা ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, নিশ্চয়ই বাঙালি?

শিমুল ভাবি বললেন, হ্যাঁ, বাঙালি। খুব ভালো মানুষ। নাজমুল রাকিব ভাইকে খুব পছন্দ করে। বলে, ছেলেটা জেনুইন।

রাকিবের প্রশংসায় নদী মনে মনে খুশি হলো। আজকাল রাকিবের কেউ প্রশংসা করলে তার কেন জানি লাগে। যেমন ভালো লাগে কেউ তার মার প্রশংসা করলে।

মোহনা ভাবি বললেন, তাহলে তো ভালোই লিটল সিস্টার। ব্রিসবেনে তাহলে তোমাদের দুজনকেই এক সঙ্গে দাওয়াত দেব।

নদী বলল, কী যে বলেন না ভাবি! আপনি যা ভাবছেন, তা নয়। তিনি আমাকে বেশ উপকার করেছেন। এখনো করছেন। এই শিমুল ভাবির বাসায় আছি, ওটা রাকিব ভাই-ই ঠিক করে দিয়েছেন। আমি তাকে বেশ সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি।

মোহনা ভাবি বললেন, আরে লিটল সিস্টার, তুমি ফান করাও বোঝো না। আমি তো তোমার সঙ্গে জাস্ট ফান করছি। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>