মিশিগানে বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ

বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ
বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলা টাউনে উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশের লাল সবুজের রঙে আঁকা সর্ববৃহৎ ম্যুরাল ‘বাংলাদেশ কামিং টু আমেরিকা’। বাংলা টাউন খ্যাত হ্যামট্রামিক শহর ও ডেট্রয়েট শহরের সীমানায় বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ। বাংলা টাউনের প্রবেশদ্বারে চোখ আটকে যাবে বিশাল দেয়ালচিত্রে।

বাংলা টাউনের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট। কয়েক দশক থেকে এ শহরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের আবাস। শহরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশিরা। স্থানীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বাংলার এ ম্যুরাল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের খুব ভালোভাবেই উপস্থাপন করবে। অভিবাসী বিরোধী সরকারের সময় আঁকা এ বিশাল ম্যুরাল নিজেদের অধিকারের, মর্যাদার ও সৌন্দর্যের এক বহিঃপ্রকাশ।

বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ
বিশাল দেয়াল জুড়ে লাল সবুজে বাংলাদেশ

বাংলাদেশি জীবনচিত্রের এ দেয়ালচিত্র গত রোববার (২১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। ৫৫ ফুট বিস্তর ও ৪৬ ফুট উঁচু এ দেয়ালচিত্র। মেক্সিকোর বিখ্যাত অঙ্কন শিল্পী ভিক্টর কুইনোনেজ এ দেয়ালচিত্রটি অঙ্কন করেছেন। নিউইয়র্কের ‘মার্কা ২৭’ নামে পরিচিত এ শিল্পী নিয়ো-ইন্ডিজেনাস (নব্য-আদিবাসী) স্টাইল চিত্রাঙ্কনের জন্য খ্যাত।

ওয়ান ডেট্রয়েট নামের সংগঠনের উদ্যোগে করা এ দেয়ালচিত্র ৫৬ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় অর্ধকোটি) খরচ হয়েছে। ওয়ান ডেট্রয়েট অধিকর্তা সমাজকর্মী বিল মায়ার অভিবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে এ দেয়ালচিত্র নিয়ে অনেক দিন যাবৎ কাজ করছেন। বাংলাদেশি অভিবাসী নেতারা খুব ভালো ভাবেই নিয়েছেন। দেয়ালচিত্রের খরচের অর্ধেক জোগান দিয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। বাকি অর্থ এসেছে সরকারি কোষাগার থেকে। বাংলাদেশি আমেরিকান দ্বিতীয় প্রজন্মের কিছু তরুণ-তরুণী এ কাজের নেতৃত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটা বড় অংশের বসবাস মিশিগানের ডেট্রয়েট-হ্যামট্রামিক শহরে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জরিপ অনুসারে নিউইয়র্ক ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পর মিশিগানের ডেট্রয়েটে বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থান। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে পনেরো হাজারের বেশি অভিবাসী ও কয়েক প্রজন্মে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়াদের নিয়ে এ সংখ্যা অনেক বেশি।

দেয়ালচিত্রের সামনে ভিক্টর কুইনোনেজ (কালো সোয়েটার পরিহিত)
দেয়ালচিত্রের সামনে ভিক্টর কুইনোনেজ (কালো সোয়েটার পরিহিত)

ওয়ান ডেট্রয়েটের অধিকর্তা বিল মায়ার এ দেয়ালচিত্রের ব্যাপারে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে কাছ করছেন অনেক দিন ধরে। সঠিক দেয়াল নির্বাচন, কোন ছবির ওপর ম্যুরাল হবে, শিল্পী নির্বাচন, অর্থ সংগ্রহ সবকিছুই হয়েছে শহরের অধিবাসীদের নিয়ে।

লাল সবুজের এ বৃহৎ দেয়ালচিত্রের বাম পাশের নিচের অংশে সবুজ চা বাগান। কারণ হ্যামট্রামিক শহরের বাংলাদেশি অভিবাসীদের ৮০ ভাগ সিলেট থেকে এসেছেন। ডান পাশের চা বাগানে এক বাংলাদেশি আমেরিকান নারী, তার পরনে লাল চাদর। লাল সবুজে বাংলার পতাকার প্রতিচ্ছবি। লাল চাদরে পাশে দান পাশের নিচের অংশে আঁকা হয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। নারীর খোলা চুলে দুটি শ্বেত শাপলা। এ ছাড়া নকশিকাঁথায় সাজানো চাদর। ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আঁকা হয়েছে শহীদ মিনার। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষার এ আত্মত্যাগের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে আঁকা হয়েছে বিশাল আকৃতির ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’ বর্ণমালা।

বিল মায়ার (বাঁয়ে)
বিল মায়ার (বাঁয়ে)

অন্য জাতি গোষ্ঠী নিয়ে দেয়ালচিত্র হলেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে এই প্রথম দেশের বাইরে এত বড় ম্যুরাল।

মার্কা ২৭ ও তার সহকারী আর্টিস্ট কার্টিস প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাজ করেছেন রোববারের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে। এক সপ্তাহের অবিরত পরিশ্রমে এ চিত্রকর্ম। কথা হলো মারকা ২৭-এর সঙ্গে। জানালেন শনিবার ভোর ৪টায় তিনি শেষ করেছেন এ চিত্রকর্ম। জানালেন শেষ পাঁচ দিন প্রতিদিন ২০ ঘণ্টারও অধিক সময় ব্যয় করেছেন এ চিত্র শেষ করতে। চা বাগানের সবুজের কিছু অংশ বাদে বাকি পুরো অংশ তিনি ব্যবহার করেছেন স্প্রে পেইন্ট।

অনুষ্ঠানে আগত দর্শনার্থীদের ঝাল মুড়ি, ফুচকা ও চটপটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়
অনুষ্ঠানে আগত দর্শনার্থীদের ঝাল মুড়ি, ফুচকা ও চটপটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়

ডেট্রয়েট-হ্যামট্রামিক শহরের সীমানায় ব্রিজ একাডেমি মাধ্যমিক স্কুলের বিশাল দেয়াল জুড়ে এ চিত্রকর্ম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ মিশিগান অঙ্গরাজ্যের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলা গানের স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গান পরিবেশনা করে। বাংলাদেশি আমেরিকান নেতাদের মধ্যে অনেকে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত দর্শনার্থীদের ঝাল মুড়ি, ফুচকা, চটপটি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।