টোকিওতে দুর্গাপূজা উদ্যাপন

দুর্গাপ্রতিমা
দুর্গাপ্রতিমা

উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাপানের রাজধানী টোকিওতে উদ্‌যাপিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত রোববার (২১ অক্টোবর) টোকিওর তাকিনোগাওয়া কাইকানে স্থাপিত অস্থায়ী মণ্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুদের সংগঠন সর্বজনীন পূজা কমিটি প্রতি বছর টোকিওতে এ পূজার আয়োজন করে থাকে। টোকিওতে এ পূজা ছিল এই সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত ২৩তম দুর্গাপূজা।

পূজারিদের একাংশ
পূজারিদের একাংশ

এবার পূজার দিনে টোকিওর আবহাওয়া ভালো থাকায় সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে পূজারিরা পূজার মণ্ডপে এসে সমবেত হতে শুরু করেন। সকালের দিকে পূজার স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রথমে এসে অস্থায়ী মণ্ডপ স্থাপন করাসহ পূজার হল তৈরি, পূজার উপকরণ তৈরি ও পূজার প্রসাদ প্যাকেট করার কাজ করতে থাকেন। এরপর একে একে পূজারিরা হলে আসতে থাকেন। এবার প্রায় পাঁচ শ পূজারি দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার চরণে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছিলেন। একবারে সবার অঞ্জলি দেওয়া সম্ভবপর হয় নয় বলে কয়েকবার মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাপানি উপস্থিত ছিলেন আবহমান বাংলা ও বাঙালি ঐতিহ্যের এ অনুষ্ঠানে।

পূজারিদের একাংশ
পূজারিদের একাংশ

মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার পর উপস্থিত সকলের মাঝে বিতরণ করা হয় পূজার প্রসাদ। প্রতি বছর পূজা কমিটি পর্যাপ্ত পরিমাণ পূজার প্রসাদ তৈরি করে থাকেন। হল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকায় পূজার দিন পূজার সব প্রসাদ তৈরি করা সম্ভবপর হয় না বলে পূজা কমিটি প্রসাদ পূজার আগের দিন শনিবারে রান্না ও প্যাকেট করে রাখেন। অঞ্জলি শেষে বিতরণ করা পূজার প্রসাদে সাধারণত থাকে পুষ্পান্ন, নিরামিষ, চাটনি, ফল ও মিষ্টি। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পূজার এ প্রসাদের জন্য।

মায়ের কপালে সিঁদুর দেওয়ার জন্য লাইন
মায়ের কপালে সিঁদুর দেওয়ার জন্য লাইন

এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পূজা কমিটির সভাপতি সুনীল রায়, সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ ও সহসাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস। শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর দুর্গাপূজার তাৎপর্য বাংলা ও জাপানি ভাষায় ব্যাখ্যা করেন পূজা কমিটির উপদেষ্টা সুখেন ব্রহ্ম। এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা পূজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা ও প্রবাসে এ দুর্গাপূজা আয়োজন করার জন্য পূজার কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ পৃথিবী থেকে যেন সকল অপশক্তি বিদায় নেয়।

পূজা কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ববিতা পোদ্দার সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

পূজা কমিটির কর্মকর্তারা
পূজা কমিটির কর্মকর্তারা

এরপরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সাংস্কৃতিক পর্বে প্রথমেই সঙ্গা ঘোষ মায়ের আগমনী গান ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। এ গানের পর ছোট ছোট শিশুরা নাচ, গান ও প্রবন্ধ পাঠ করে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। কাব্যজ্যোতি বিশ্বাস গণেশের মাতৃভক্তি সম্পর্কিত গল্পটি শুনিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দেয় দেবী দুর্গার চারপাশে আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। এ অনুষ্ঠানে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির স্কুল বিভাগের শিশুশিল্পী কথাশ্রী বিশ্বাস, ভাগ্যশ্রী পাল, প্রগতি ঘোষ, সৃজিতা বিশ্বাস, সম্প্রীতি ঘোষ, সৃদিকতা বাড়ৈ ও শ্রেয়া পাল দুটি নাচ ও দুটি গান পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। এ ছাড়া, ছোট শিশু শিল্পী হিসেবে আংকা বণিক গান, তুষ্টি বণিক নাচ, সেঁজুতি ব্রহ্ম গীতার মন্ত্রপাঠ ও তনুতা ঘোষ গান পরিবেশন করে।

বড়দের অনুষ্ঠানে প্রথমেই ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন শান্তা দাস। এরপর মিতালি ঘোষ, তনুশ্রী বিশ্বাস, বনানী পাল, পলি সরকার, সঙ্গা ঘোষ ও চৈতি বিশ্বাস মিলে ‘রাই জাগো রাই জাগো’ কীর্তনটি পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন। এরপর আরেকটি ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন পপি ঘোষ। তারপর শতাব্দী বণিক মায়ের আগমনী গান ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ পরিবেশন করেন। পরিশেষে উত্তরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ভক্তিমূলক গান ও কীর্তন দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশু শিল্পীরা
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশু শিল্পীরা

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি। এরপর মায়ের কপালে সিঁদুর দেওয়ার জন্য লাইন দেওয়া হয়। সিঁদুর দেওয়া শেষে ধুনুচি নৃত্যের তালে তালে চলে নাচ। এরপর বিজয়া দশমীর মিষ্টি দিয়ে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। পরিশেষে ভক্তরা ‘বলো, দুর্গা মা-ই কী, জয়, আসছে বছর আবার হবে! এবার মাগো বিদায় তবে, আসছে বছর আবার হবে!’ বলে দেবী দুর্গা মাকে বিদায় জানান এবং একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের পূজার সকল আয়োজন।