আমার বাগান আমার প্রশান্তি

লন্ডনে লেখিকার বাগানে সবজি
লন্ডনে লেখিকার বাগানে সবজি

লন্ডন শহরে এসে গাছ লাগাব, সেই গাছের ফলমূল, সবজি খাব, এটা এখানে আসার আগে স্বপ্নেও ভাবিনি। হয়তো কেউই ভাবে না। কারণ লন্ডন খুবই ব্যয়বহুল শহর। এখানে বাড়ির আশপাশে এত জায়গা থাকবে আর এখানকার সরকার অথবা বাড়ির মালিকেরা এই জায়গা এমনি এমনি ফেলে রাখবেন, এ রকমটা ভাবা আমাদের জন্য আসলে অসম্ভব। কারণ, আমরা যারা ঢাকা শহরের সঙ্গে ছোট থেকে পরিচিত, তারা দেখেছি একসময় ঢাকা শহরের অনেক বাসাতেই মানুষ শখ করে বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান করতেন। কিন্তু এখন মানুষের কাছে আত্মিক সৌন্দর্যের থেকে বাহ্যিক সৌন্দর্যের গুরুত্বই হয়তো বেশি। এখনো হয়তো অনেকে বাড়ির ছাদে অথবা তাদের ব্যালকনিতে শখের গাছপালা লাগান। তবে বেশির ভাগ মানুষই যাদের বাড়ির সামনে অথবা আশপাশে একটু জায়গা আছে, সেই অল্প একটু জায়গাতেই তারা সামান্য কিছু বাড়তি আয়ের জন্য হয়তো ফ্লেক্সিলোড, মুদিদোকান, পারলার অথবা দুজন সবজি বিক্রেতাকেই বসিয়ে দেন। এতে যেমন রাস্তায় চলাচলে মানুষের অসুবিধা হয়, তেমনি অল্প কিছু টাকার জন্য তাদের নিজেদের বাড়ির সৌন্দর্য ও পরিবেশ দুটোই নষ্ট হয়।

লন্ডনে লেখিকার বাগানে সবজি
লন্ডনে লেখিকার বাগানে সবজি

আমি আমার শ্বশুরবাড়ির কথাই যদি বলি, আমার বিয়ের পরে আমার শ্বশুরবাড়ির দুটো জিনিস আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। একটা হলো স্বাধীনতা। যেটা বাবার বাড়িতে অতটা পাইনি। বাবার বাড়িতে নিয়ম ছিল সব সময় মতো করতে হবে—ঘুম, খাওয়া, গোসল সবকিছু। কিন্তু আমার শাশুড়ি এসব ব্যাপারে খুবই উদার ছিলেন। স্বাধীনতার আসল স্বাদ আসলে আমি বিয়ের পরেই পেয়েছি! আর যে জিনিসটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল তা হলো, তাদের বাড়ির সামনের অনেকটা খালি জায়গা। যেটা আসলে ঢাকা শহরে খুব কম বাড়িতেই থাকে। সেই জায়গায় আম, বরই, নারিকেল গাছ ছিল আর ছিল অনেক বড় একটা পানির ট্যাংক। যেখানে বসে বিকেল–সন্ধ্যায় আমরা আড্ডা মারতাম। বাড়ির পেছনে ছিল অনেক রকম সবজির গাছ। আমি যে ঘরে থাকতাম সেই ঘরের সামনের জায়গাতেও অনেক রকমের ফুলের গাছ লাগিয়েছিলাম। তবে এখন আর সেখানে কোনো ফুলের গাছও নেই, সবজি গাছও নেই, নেই সেসব কোনো ফলের গাছ। নেই সেই ঠান্ডা বাতাস! সেই জায়গায় এখন তিনটা মুদি দোকান, আর একটা হোটেল আর আছে সেই হোটেলের কালো ধোঁয়া আর গরম বাতাস!

লেখিকা
লেখিকা

মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা কর্মকাণ্ডে গাছ আমাদের উপকারে আসে। আর নিজের হাতে গাছ লাগানোর যে আনন্দ সেটা শুধু তারাই বোঝেন, যারা লাগিয়েছেন। আজকাল গাছ কাটার তুলনায় নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে কম। এতে পরিবেশ উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে অসময়ে অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগ ঘটে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একমাত্র বৃক্ষই প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে পারে।

আমরা সকলেই জানি বেঁচে থাকার জন্য টাকার বিকল্প নেই, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য গাছের কী কোনো বিকল্প আছে? টাকার গুরুত্ব আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু গাছের গুরুত্ব কজন বুঝি।