অপার সৌন্দর্যের ব্রুকলিন ব্রিজ

ব্রুকলিন ব্রিজে লেখিকা
ব্রুকলিন ব্রিজে লেখিকা

ব্রুকলিন ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে দেখছিলাম মানুষের ছুটে চলা। কেউ হাঁটছে, কেউ সাইকেল চালাচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে। আর হালকা ঠান্ডা বাতাস শীতের বার্তা জানান দিয়ে যাচ্ছে। ব্রিজের ওপর হাঁটছি আর দেখছি দিগন্ত খোলা আকাশ, আবার ইস্ট রিভারের ঢেউ। সূর্য তখন প্রায় অস্তগামী, লাল স্নিগ্ধ এক আভা এসে পড়েছে নদীর ঢেউয়ের ওপর। কী যে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।

এ সময় কানে ভেসে এল, হ্যালো, এক্সকিউজ মি। এক আমেরিকান সুদর্শনা আমাকে বলছে।

আমি বললাম, সরি।

ডোন্ট বি সরি, সুদর্শনা আমাকে বলল।

লেখিকার মেয়ে আফসানা ও ভাগনের স্ত্রী জিনিয়া
লেখিকার মেয়ে আফসানা ও ভাগনের স্ত্রী জিনিয়া

আসলে মেয়েটা ছবি তুলছিল সূর্য ডোবার ছবি। আমার জন্য ঠিকভাবে ভিউটা নিতে পারছিল না। আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। মেয়েটা ছবি তুলল।

আবিষ্কার করলাম মেয়েটা আমাদের মতো স্বাভাবিক নয়, তার পা একটা যন্ত্রের ওপর নির্ভর (হ্যান্ডিক্যাপ)। কিন্তু মেয়েটার আনন্দে কোনো কমতি নেই, উচ্ছ্বাসে কোনো কমতি নেই। বরং সে ব্রিজের এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে চমৎকারভাবে। ছবি তোলা শেষে হেঁটে যাচ্ছে আমার চেয়েও দ্রুতগতিতে। ভালোভাবে খেয়াল না করলে বোঝার কারও সাধ্য নাই তার পায়ের অবস্থা। সঙ্গে সম্ভবত বয়ফ্রেন্ড কিংবা কাজিনও হতে পারে বা বন্ধু।

আমরাও কিছু ছবি তুললাম। আমার সঙ্গে ছিল ভাগনে রিয়াদ। ওর স্ত্রী জিনিয়া ও আমার মেয়ে আফসানা।

লেখিকার ভাগনে রিয়াদ, তার স্ত্রী জিনিয়া, লেখিকার মেয়ে আফসানা ও লেখিকা
লেখিকার ভাগনে রিয়াদ, তার স্ত্রী জিনিয়া, লেখিকার মেয়ে আফসানা ও লেখিকা

রিয়াদকে যখন বললাম আমার ছবি তুলে দিতে, রিয়াদ আমাকে বলে, কী ছবি তুলব তোমার, যে মোটা হচ্ছ দিন দিন! ক্যামেরার ফ্রেমে তো দুই দিন পর আর জায়গা হবে না। তার সঙ্গে আমার মেয়েও যোগ দেয়। বলে ভাইয়া ঠিকই বলেছে মম, তোমার এক্সারসাইজ দরকার। দেখ ওই আমেরিকান সুদর্শনা যেভাবে হাঁটছে, তুমি তো তাও পারছ না। তোমার কারণে ব্রিজ ভেঙে পড়েনি এটাই তো অনেক। সে কী হাসি তাদের।

আমি ধমকের সুরে বললাম, চুপ থাক বান্দরের দল। আমার ধমক খেয়ে ওরা আরও হাসছে। মনে মনে বললাম, ওরা আসলে ঠিকই বলেছে আমার এক্সারসাইজ দরকার।

ব্রুকলিন ব্রিজ নিউইয়র্ক শহরের ইস্ট রিভারের ওপর অবস্থিত। ব্রিজটি ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনকে যুক্ত করেছে। জার্মান ইমিগ্রান্ট জন অগাস্টাস রবলিং ব্রিজটির ডিজাইনার। ভাবছিলাম এত সুন্দর ডিজাইন, শ্রমিকদের শ্রম, শুধু কি শ্রম দিয়েছে? না, যে কেউ ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন ভালোবাসার অণু-পরমাণু যেন মিশ্রিত ব্রিজের প্রতি স্তরে স্তরে।

লেখিকার মেয়ে আফসানা
লেখিকার মেয়ে আফসানা

আস্তে আস্তে সূর্য ডুবে গেল আর জ্বলে উঠল চারপাশের লাইট। নদীতে বোটে কিছু মানুষ ছুটে চলছে, লাইফ জ্যাকেট পরিহিত। একটু দূরে উঁচু উঁচু ম্যানহাটনের বিল্ডিং অপরূপ সাজে সজ্জিত। এ আবার অন্যরকম সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্য শুধু অনুভব করা যায়, ব্যাখ্যা করা কঠিন। নীরব সন্ধ্যার হালকা ঠান্ডা বাতাস আলো ঝলমলে চারপাশ, খোলা আকাশ যেন জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট ভুলিয়ে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। মন প্রজাপ্রতির মতো উড়তে থাকে।

ব্রুকলিন ব্রিজ ১৩৫ বছর ধরে টিকে আছে। এই অপরূপ ব্রিজটি যেন নববধূর মতো। ভালো লাগা শেষ হয় না। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন দেখতে। কী যেন এক অদৃশ্য সুতোর টান এই ব্রিজের প্রতি সকলের। এই ব্রিজের কথা যখন শুনেছি ভেবেছি কী এমন আছে? কৌতূহল ছিল। সেখানে না গেলে বুঝতেই পারতাম না কী এক অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।