ক্যানসার চিকিৎসায় টি-কোষ ইমিউনোথেরাপি

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

ছয় বছরের এমিলি হোয়াইটহেডের রক্তের ক্যানসার। এটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় সংক্ষেপে বলে লিউকোমিয়া। রক্তের শ্বেতকণিকার এই ক্যানসার শিশুদের মধ্যে অনেক দেখা যায় ও এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে। কেমোথেরাপি ওষুধের মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুদের এই রোগ থেকে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে এই থেরাপি কাজ করে না তাদের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুর্ভাগ্য, এমিলি হচ্ছে এদেরই একজন। এই সময় ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালের ডাক্তারেরা এমিলির বাবা-মাকে একটি নতুন ধরনের চিকিৎসার কথা জানালেন, যার নাম কার-টি-কোষ থেরাপি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স্কদের রক্তের ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসকেরা নতুন এই থেরাপি এমিলিকে প্রয়োগ করার কথা ভাবলেন। বাবা-মার অনুমতি পাওয়ার পর নতুন ধরনের এই ক্যানসার থেরাপির জন্য এমিলিকে ভর্তি করানো হলো ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালে।

এমিলির রক্ত থেকে একধরনের কোষকে আলাদা করা হলো, যার নাম টি-কোষ। টি-কোষ হচ্ছে আমাদের শরীরের একধরনের শ্বেতকণিকা, এরা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষীর মতো। যা শরীরে কোনো ভাইরাস প্রবেশ করলে সোজা বাংলায় একে মেরে ফেলে। আমাদের শরীরে অনেক ধরনের নিরাপত্তারক্ষী শ্বেতকণিকা রয়েছে। এরা বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। টি-কোষকে বলা যায় একধরনের কমান্ডো, যারা বিশেষ বিশেষ মিশনের জন্য উপযুক্ত। এই কোষের উপরিভাগে একধরনের প্রোটিন থাকে, যাকে বলা হয় টি-কোষ রিসেপ্টর, যারা বিভিন্ন ভাইরাস মারার জন্য বিভিন্ন আকারে নিজেকে সাজিয়ে রাখে। অন্যভাবে বলা যায়, বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী মারার জন্য পুলিশের একেক ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার।

চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে টি-কোষগুলো ভাইরাস আক্রান্ত কোষ অথবা সুস্থ কোষকে আলাদা করতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত কোষগুলোর ওপরে এক ধরনের যৌগ পাওয়া যায় যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা বলি এন্টিজেন। এটি ভাইরাসের শরীরের একটি অংশ। সুস্থ কোষগুলোতে কোষের নিজস্ব এন্টিজেন থাকে। এর ফলে টি–কোষের ওপরে প্রোটিনটি ভাইরাস আক্রান্ত কোষের এন্টিজেনকে চিনতে পারে। টি-কোষের ওপরে রিসেপ্টর প্রোটিনটি যখন ভাইরাসে আক্রান্ত কোষকে চিনতে পারে, এটা তখন ওই কোষটিকে চেপে ধরে। এই চেপে ধরার পদ্ধতিটা হচ্ছে অনেকটা তালা ও চাবির মতো। যেমন একটি চাবি একটি নির্দিষ্ট তালাতে ফিট করে, তেমনি একেকটি ভাইরাসের এন্টিজেন একটি টি-কোষ রিসেপ্টর প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একটা নির্দিষ্ট পজিশনে লক হয়ে যায়। এভাবে আটকানোর পরে টি-কোষ ভাইরাসে আক্রান্ত কোষটিকে টি-কোষের ভেতরে অবস্থিত আর এক ধরনের প্রোটিনের মাধ্যমে ছিদ্র করে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করিয়ে ধ্বংস করে ফেলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিষাক্ত পদার্থ কোষগুলোকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।

আমাদের শরীরে আরেক ধরনের শ্বেতকণিকা আছে তাকে বলে ম্যাক্রোফেজ। এর আরেক নাম বাংলায় বলা যায় বড় খাদক। যা এই মৃত কোষের এই ময়লাগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলে। এই পদ্ধতিগুলো কিছুটা জটিল। তাই সহজভাবে সবার বোঝার জন্য খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এই লেখায় পরিহার করছি। টি-কোষকে অনেক নামে ডাকা হয়। এই ধরনের টি-কোষকে আমরা বলি হত্যাকারী টি-কোষ। আরেক রকমের টি-কোষ আছে, তাদের বলা হয় সাহায্যকারী টি-কোষ। এরা এই হত্যার মিশনে অংশগ্রহণ করে না। কিন্তু এদের কাজ হচ্ছে রাসায়নিক সংকেত পাঠিয়ে অন্য প্রতিরক্ষা কোষকে সতর্ক করা। ফলে সফল হত্যাকারী টি-কোষ একই ধরনের অনেকগুলো কোষ তৈরি করে এবং ভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

এমিলির রক্ত থেকে এই টি-কোষ আলাদা করার পর একধরনের ভাইরাস দিয়ে টি-কোষকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মাধ্যমে তার উপরিভাগে এক ধরনের নতুন রিসেপ্টর প্রোটিন তৈরি করানো হলো। এটার একটু খটমটে নাম। একে বলে ‘কিমেরিক এন্টিজেন রিসেপ্টর’ সংক্ষেপে ‘কার’। এই প্রোটিনটি এমনভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করা হলো যাতে এটি এমিলির রক্তের ক্যানসারের কোষগুলোর উপরিভাগে অবস্থিত একটি সুনির্দিষ্ট এন্টিজেনকে শনাক্ত করতে পারবে। যেমন, সাকিব আল হাসান ভালো ক্রিকেট খেলে কিন্তু আরও ভালো প্রশিক্ষণ তাকে আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি করবে। এটা সেই রকমই, টি-সেলকে আরও দক্ষ কিলার হিসেবে কাজ করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মিশনের জন্য কিছু দক্ষতা দেওয়া হলো। এমিলি যে ধরনের লিউকোমিয়াতে আক্রান্ত এই রোগীদের ক্ষেত্রে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোতে এক ধরনের এন্টিজেন প্রোটিন দেখা যায় তাকে বলা হয় সিডি-১৯। এই পরিবর্তিত টি-কোষগুলো রক্তে সিডি-১৯ বহনকারী কোষগুলোকে দেখা মাত্র চিনতে পারবে ও ওপরে বর্ণিত পন্থায় হত্যা করতে পারবে।

এই পরিবর্তিত টি-কোষগুলোকে, যারা অনেকটা নিনজা সৈন্যদের মতো, এমিলির রক্তে আবার প্রবেশ করানো হলো এবং এরা এমিলির শরীরে ঘুরে ঘুরে অপারেশন সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় নামে এই কিলিং মিশন সমাপ্ত করল। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল এমিলির শরীরে এই থেরাপি কাজ করছে না। কিন্তু ২৮ দিন পর এমিলি ক্যানসার ফ্রি হওয়া শুরু করল। আজকে এমিলির বয়স প্রায় ১৩ বছর এবং ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন প্রাণচঞ্চল কিশোরী। নতুন এই থেরাপিটি গত বছর আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ) অনুমোদন দিয়েছে এক ধরনের রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য (একিউট লিম্ফোবাসটিক লিউকোমিয়া), যাদের শরীরে প্রচলিত ওষুধ কাজ করছে না। নোভার্টিস কোম্পানি কিমারিয়াহা নামে এই থেরাপিটিকে বাজারজাত করেছে। এই থেরাপির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আরও অনেক গবেষণা চলছে, যাতে এটা অন্য ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করতে পারে। এই পরিবর্তিত টি-কোষগুলো যাতে নিজেদের সংখ্যা রক্তে আরও অনেক বাড়াতে পারে তার জন্য অনেক নতুন ধরনের ডিজাইন করা হচ্ছে।

এবার বর্ণনা করছি আরেকটি নতুন ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতির। এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে দুই বিজ্ঞানীকে—ড. জেমস এলিসন ও ড. হনজোকে। তারা কিছু প্রোটিন আবিষ্কার করেছেস যা টি-কোষের সক্রিয় হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রোটিনগুলোর কাজ অনেকটা লাইটের সুইচ অন ও অফ করার মতো। এরা টি-কোষকে ক্যানসারে আক্রান্ত খারাপ এবং স্বাভাবিক ভালো কোষকে চিনতে সাহায্য করে। খারাপ কোষকে চিনতে পারলে টি-কোষ সুইচ অন করার মতো সক্রিয় হয়ে কোষটিকে মেরে ফেলবে অথবা সুইচ অফ করার মতো ভালো কোষকে ছেড়ে দেবে। এই প্রোটিনগুলো টি-কোষের ওপরে অবস্থান করে, যাদের বলা টি-কোষ কো-রিসেপ্টর।

আগেই বর্ণনা করেছি, টি-কোষ ভাইরাস আক্রান্ত কোষকে চিনতে পারে এন্টিজেনের মাধ্যমে। কিন্তু ক্যানসার কোষগুলো যেহেতু কোষের নিজস্ব একটি অংশ তাই একে সুস্থ কোষ থেকে আলাদা করে চিনতে পারা এত সহজ নয়। এই পদ্ধতি কিছুটা জটিল। বুঝতে হলে বিজ্ঞানের এই বিষয়ের সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাই খুব সহজ ভাষায় বলছি। ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের উপরিভাগে কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের পরিমাণ অথবা আনাগোনা বেড়ে যায়। টিউমার অথবা ক্যানসার কোষগুলো অত্যন্ত ধূর্ত। এরা অনেক সময় টি-কোষকে তাদের এই পরিবর্তনটা বুঝতে দেয় না। যেমন আপনি বিদেশে গেলে ইমিগ্রেশন অফিসার নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে আপনার পাসপোর্ট স্ক্যান করে দেখে নিচ্ছে আপনার পাসপোর্ট জাল কিনা। সেরকম, টি-কোষের ওপরে এই প্রোটিনগুলো সাধারণ কোষগুলোকে পরীক্ষা করে করে দেখে নিচ্ছে তারা ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা। আক্রান্ত হলেই সাঁড়াশি আক্রমণ। অনেকটা মাদক চোরাকারবারির মতো ধরা পড়লেই গুলি করে হত্যা।

ড. হনজো টি-কোষের উপরিভাগে একটি এমন একটি প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন যা এই ধরনের চেকপয়েন্ট প্রোটিন বা কোষের ইমিগ্রেশন অফিসার এবং এর নাম হচ্ছে পিডি-১। এই পিডি-১ প্রোটিনটি সুস্থ এবং ক্যানসারে আক্রান্ত কোষকে পরীক্ষা করে দেখে নেয় এরা ভালো না খারাপ। কিছু সুস্থ কোষের উপরিভাগে আরেকটি প্রোটিন থাকে তাকে বলে পিডিএল-১। পিডি-১ যদি পিডিএল-১–এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তাহলে ধরে নেয় এই কোষটি সুস্থ। আগেই বলেছি টিউমার কোষগুলো অত্যন্ত ধূর্ত। এরা অনেক পরিমাণ পিডিএল-১ প্রোটিন তাদের কোষে তৈরি করে রাখে ফলে পিডি-১ প্রোটিন পিডিএল-১ প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং টি-কোষ এদের সুস্থ কোষ ভেবে ছেড়ে দেয়। ড. এলিসন টি-কোষের উপরিভাগে এ রকম আরেকটি নিরাপত্তারক্ষী প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন। যার নাম হচ্ছে সিটিএল-৪। সাইকেল চালানোর সময় ব্রেক করলে সাইকেল যেমন থেমে যায়, এই প্রোটিনগুলোকে আরেকভাবে বলা যায় এরা টি-কোষের নিরাপত্তা ব্রেক যাতে সুস্থ কোষগুলো টি-কোষের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

এই দুই বিজ্ঞানী এই প্রোটিনগুলো আবিষ্কার করার পর কিছু ওষুধ (অ্যান্টিবডি প্রোটিন) তৈরি করলেন যা এই প্রোটিনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে টি-কোষ ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের এই অ্যান্টিবডি থেরাপির মাধ্যমে টি-কোষকে সক্রিয় করে দিলে টি-কোষ আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলবে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের ক্যানসার থেকে শুরু করে ফুসফুস ও কিডনির ক্যানসার প্রতিরোধে অসাধারণ সাফল্য পাওয়া গেছে। এই অ্যান্টিবডি ওষুধগুলো আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ সংস্থার অনুমোদন লাভ করেছে। এদের ইংরেজিতে বলে চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর ও টি-কোষের ওপরে এই ধরনের অনেক প্রোটিন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এই নতুন ধরনের ক্যানসার নির্মূল করার পদ্ধতি যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিশন থেরাপি। অন্য কথায় আমাদের প্রতিরক্ষা কোষের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দমিয়ে দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা কোষগুলো দিয়ে ক্যানসার নিরাময়ের পদ্ধতি। অনেকটা কাটা দিয়ে কাটা তোলা। সায়েন্স ফিকশন মুভিতে যেমন রোবট দেখানো হয় যা স্পেস শিপে বাইরের শত্রুর আক্রমণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। টি-কোষের এই ক্যানসার নির্মূল করার কার্যাবলি অনেকটা সেই সায়েন্স ফিকশন মুভির রোবটের মতো।

এখানে দুই ধরনের নতুন ক্যানসার চিকিৎসার কথা জানালাম। কার টি-কোষ থেরাপি ও ইমিউন চেকপয়েণ্ট ইনহিবিশন থেরাপি। এদেরকে বলে ইমিউনোথেরাপি, যা শরীরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে ক্যানসারকে নির্মূল করার পদ্ধতি। অনেকের অটো ইমিউন রোগ থেকে তার মানে তার শরীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার শরীরের ক্রমাগত ক্ষতি করতে থাকে। এই নতুন দুই বৈপ্লবিক ক্যানসার পদ্ধতির মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই তা নয়। এদের ভীষণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কার-টি কোষ থেরাপি একটি নতুন বিষয়কে সামনে নিয়ে আসছে, তাকে বলে প্রিসিশন মেডিসিন। প্রিসিশন মেডিসিন হচ্ছে, কীভাবে একজন মানুষের জিনের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ ও জীবনযাত্রাকে বিবেচনায় রেখে তার শরীরের রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। এই ধরনের চিকিৎসার জন্য আমাদের শরীরকে মলিকিউল পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে আরও জানতে হবে। এই ধরনের গবেষণাগুলোকে বলা হয় ওমিকস গবেষণা। যেমন জিনোমিকস, প্রোটিওমিকস ও মেটাব্লমিকসের মাধ্যমে এর যাত্রা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এই গবেষণাগুলোতে যেহেতু অনেক ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয় ফলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস প্রযুক্তির গবেষণা। এখনকার বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়াও অনেকগুলো বিষয়কে একসঙ্গে যুক্ত করে গবেষণা করছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন জ্ঞান ও অসাধারণ নতুন প্রযুক্তি।

এবার বিজ্ঞান গবেষণা থেকে পলিসির ব্যাপারে আসি। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা হোয়াইট হাউস থেকে প্রিসিশন মেডিসিনের প্রকল্পের প্রস্তাব করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। সবাই ভেবেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে গবেষণার বাজেট কমিয়ে দেবেন। তা তো হয়ইনি বরং বাজেট আরও বেড়েছে। আমেরিকার ক্ষমতায় যেই দলই থাকুক না কেন জনপ্রতিনিধিরা গবেষণায় ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ধরনের প্রকল্প তারা হাতে নেয়।

আমি বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার তুলনা করতে চাই না। আমাদের দেশ থেকে সারা বিশ্বে স্রোতের মতো এখন শিক্ষার্থী আসছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আমেরিকাতে এখন চীন ও ভারতের পরে। এ ধরনের উচ্চশিক্ষিত ও গবেষণায় দক্ষ জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করা সরকারের দায়িত্ব। এর আগেও আমি লিখেছি চীনারা কীভাবে এই দক্ষ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাচ্ছে। চীন পৃথিবী বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে নিজেদের দেশে। আমি এর আগেও লিখেছি, নিজের দেশে উচ্চমানের পিএইচডি প্রোগ্রাম ছাড়া উচ্চমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অসম্ভব। বাংলাদেশে চীনাদের মতো ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান তৈরি করার মাধ্যমে এটা অর্জন করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এর সঙ্গে যুক্ত করানো যাবে পর্যায়ক্রমে। সরকার নিয়ন্ত্রিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর মাধ্যমে ঢেলে সাজানোও যেতে পারে। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প সরকার নিচ্ছে কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার নিতে পারবে না এটা আমার বিশ্বাস হয় না। পৃথিবীতে একটা উন্নত দেশ পাওয়া যাবে না যারা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা খাতে উন্নত না হয়ে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে।

পুনশ্চ: লেখাটি লেখা হয়েছে সাধারণ ও বিজ্ঞান বিষয়ে অনুরাগী পাঠকদের জন্য। এ জন্য অনেক খুঁটিনাটি টেকনিক্যাল বিষয়কে পরিহার করা হয়েছে।


সাইফুল মাহমুদ চৌধুরী: যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।