না পাওয়ার রং নাও তুমি

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

সারা রাত জ্বলেছে নিবিড়

ধূসর নীলাভ এক তারা
তারই কিছু রং নাও তুমি...
না পাওয়ার রং নাও তুমি...

শিল্পী ও গীতিকার সুমন কবিরের আত্মোপলব্ধির সুর ও গানের কথা। কথাগুলো উৎসাহ ছড়ায়, দেয় না পাওয়ার আনন্দ। এই আনন্দ নিতে হলে চাই ইচ্ছাশক্তির প্রত্যয়। কারও মঙ্গলে ঈর্ষান্বিত হলে ঘটে যন্ত্রণা। তৃপ্তির সায়ে মেলে সান্ত্বনা। সান্ত্বনার যোগ্য হওয়া সংঘাতময়। সংঘাত ভয়ংকর! গ্রহণে ঠকে মনুষ্যত্ব। এড়াতে চাইলেও বাসনাকুলের ঝুড়িতে জমানো ব্যাকুলতা এসে বলে, জীবনে না পাওয়ার পরিমিতিও তো কম নয়! যাই ঘটুক, ইচ্ছাময় মানুষের থাকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। শিল্পী গানে গানে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন, গ্রহণের দায়ভার বিবেকবুদ্ধির। নিলে সই, না নিলে টেড়া। ছেলেখেলার টেড়া আজকালও দমাদম চালাই। আমি এই নিমন্ত্রণে তুষ্ট ও উচ্ছ্বাসিত! কারণ নিমন্ত্রণ আনন্দের ও সম্মানের। গ্রহণও ব্যতিক্রম নয়।

ভেবো না তোমায় পেতে ব্যাকুল! ব্যাকুলতার কিছু নেই। আমরা ছুটে আসি, ছুটে যাই। চাবিকাঠি মহাজনের। মাঝখানে মানুষ বেছে নিতে পারে ভালো-মন্দের দিক। না পাওয়া! কজনে নিতে জানে, বল? নিতে চাইলে তা মূল্য দিয়েই পেতে হয়। শিখতে হয় প্রগাঢ় বিসর্জনে। আমরা জানি, সৃষ্টি ও স্রষ্টাতে মানুষ উপস্বত্ব। আয়েশে নিজেকে বাদ দিতে চাইলে বাকি থাকে কী? শুধুই জড় পৃথিবী, পৃথিবী মানেই আছ তুমি। মার্কিনি ও ব্রিটিশরা বলে, ইউ, জাস্ট ইউ। বাংলা তোমাকে গভীর বিশেষণে উপভোগ করেছে। দিয়েছে আরও বেশি। তুই, তোমার ও আপনার সমীহে রেখেছে অনড়। দুঃখের অপচর্চা চালিয়ে দেখেছি, আমাকে কিছুতেই বাদ দেওয়া যায় না, দিতে পারি না। সঙ্গে থাক তুমি। যা কিছু নেই আমার, সে পরশই তোমার। কভু কী ভেবে দেখেছ, যা কিছু নেই তোমার সে পরশই আমার। আমি প্রয়োজনে গভীর তত্ত্ব–তালাশ মূল্যায়নে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি। তুমিও জানতে হলে খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজেই দেখ না, এত বেশি রটনার কী আছে!

আমার একজন তুমি আছে, তার আছে বিশেষ বিশেষ স্বত্ব। জীবনের সকল প্রেরণায় তাকেই পাওয়ার মোহ জাগে। রহস্যভেদ প্রশান্তির বিষয় হলো, তোমার ঘরেও তারই আনাগোনা। সে সকলের, সকলেই তার। বিশ্বচরাচরে তার মালিকানা একক। তিনিই অন্তর্যামী। কেউ ডাকে ভগবান কেউ স্বামী, জগৎ-স্বামী। আমরা তারই ঘর করি। নাইওর আসি নাইওর যাই। পার্থক্য শুধু সময়ের। বুঝতেই পেরেছ, এই তুমি সেই তুমি নও যার জন্য আমি ব্যাকুল! তুমি চাইলে তাকে ৯৯-এর অধীন সম্বন্ধে ডাকতে পার। কিন্তু কে রাখে কার খবর, বল? আমি পথভ্রষ্ট, কারও খবরই রাখি না! না রাখি নিজের, না রাখি তোমার!

এখনো কী বলবে আমি তোমার জন্য ব্যাকুল? ব্যাকুল হতে হয় না। তুমি প্রকৃতিগতই এসে যাও। কোথা থেকে আস কোথায় যাও, পাই না এর ঠিকানা। আমি অনেক দূরে থাকি, তুমিও কম দূর থেকে আসনি। তোমার এলোমেলো মন। চাইলে দিয়ে বসো নয়তো কাঁদাও। আমি কেঁদে কেঁদে শেষে আর কাঁদি না। তুমি অনুশোচনায় কখনো ফিরে আসো নয়তো হও পথহারা...। যদি এসেই যাও, আমি ফিরিয়ে দেই না, দিতে পারি না। আমার ফেরানোর ক্ষমতা নেই। আমি নিজেই ক্ষমতাধরের কাছে ফেরত যাই, তোমাকে কী করে ফেরাই! আমি অবিরাম চলছি, তুমিও চলমান...। পথের ক্ষণিক দেখায় কী করে মর্মকথার স্মৃতিতে গাঁথি, বল? আমি স্মৃতি হারাতে হারাতে ক্লান্ত! অনুতাপের বন্ধন চাই না, বন্ধন এড়াতেও পারি না। আমি দাসত্ব করি, তুমি ক্রীতদাসী। সীমালঙ্ঘনে উভয়েই হই পরাজিত। অভাগার মতো হইও না অভাগিনি। ঢের ভালো নিজেকে তালাশ কর, আমাকেই পাবে। আমি অন্তঃকরণে তোমার, তুমিও আমার। আমি আত্মগুণে গুণান্বিত ও বিরাজিত। আমাকে পেতে হলে আত্ম-উপলব্ধি চাই। ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় বিভাজনই হিতকর।

জীবনে যা পাইনি, যে রূপ অদ্যাবধি দেখিনি, তুমি এর রং কী দেবে বা নেবে, বল? তুমি সাধনার ধন, আমি ভিখারি। বাদশাহি ধনও যায় রসাতলে যদি না চাহে ভুক্তভোগী। আমি সৌন্দর্য গুণে মুগ্ধ, নিতে জানি না গুণের রশ্মি! আসলে মুগ্ধতার সবই পেতে হয় না। কিছু সৌন্দর্য হৃদয় আড়ালে পুষতেও হয়। নিতে হয় না পাওয়ার রং। অধৈর্যে লাভ কী, বল? সুখানুভূতিতে সবই মিলে। আমরা পাশাপাশি ঘরেই থাকি, এক আকাশের নিচে একের অধীনে স্বেচ্ছাধীন। কবিকে দিলাম ‘শুভ সকাল’ সংবর্ধনা! আকাশে তাকিয়ে দেখি কেউ গুনছে সন্ধ্যাতারা। সুখের পাশেই নিয়তির এত সুন্দর মনোবেদনা আমি কোথায় লুকাই, বল? বেলা ঘন কালো হয়ে এসেছে, তরিও ঘাটে ভিড়ে আছে। অযথা বিলম্ব মাঝির অপছন্দ, বরং চল ওপারেই যাই। তার আগে এসো শিল্পী কবির সুমনের আরেকটা গান শুনি—

‘...বলে সুখে আছ যারা সুখে থাক এই সুখ সইবে না
দুঃখে আছ যারা বেঁচে থাক এই দুঃখ রইবে না
বন্ধু এ দুঃখ রইবে না...’

কারও সুখ সইবে না, কারও দুঃখ রইবে না। সরল সমীকরণে জাতে জাতে কাটাকাটি। তাহলে আমি দুঃখ করছি কী জন্য, বল? আমারও যে এক সমুদ্র দুঃখ আছে। দুঃখের রং বদলায় কিন্তু কোনো কিছুতেই তা ফুরায় না! তুমি তো সবই দিলে, অকৃতজ্ঞের মতো আর কত চাই। এবার চল দুজনে মিলে আগামীর রং নেই, যা কিছু না নিলেই নয়। বলেছি না, এই তুমি সেই তুমি নও। কী আশ্চর্য! বারবার সন্দেহের কী আছে! তুমি পরমেশ্বর, যত দাবি আমার সবই তোমার। জগৎ তোমার, আরাধনাও তোমারই। তোমাকেই চাই। সর্বাগ্রেই যেন পাই।

বি. দ্র. যৌবনের এলোমেলো আবেগে যার গানের অনুপ্রেরণায় উড়তেও কোনো বাধা ছিল না। আইয়ুব বাচ্চুর শোকে কষ্টই বেছে নিয়েছি। এই কষ্টে দ্বিধা নেই। আমার দ্বিধার খবরও তো কারও কাছে নেই। দ্বিধা শুধু প্রশ্নে, তিনি কী সত্যিই আকাশে উড়াল দিয়েছেন? নাকি শুধু শুধুই উড়ালের গান শুনিয়ে গেছেন! শিল্পীর কৃতকর্মের স্মরণে বলতে মন চায়—আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি...। আমাকে কষ্টই দাও। কাঁদাও, যত খুশি কাঁদাও! আমি কাঁদতেই এসেছি। শেষে যা করে খোদায়, আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে...।