মুসলিম নেতাদের সহযোগিতার আহ্বান

স্কট মরিসন
স্কট মরিসন

অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসবাদ দমনে মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গত ৯ নভেম্বর ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে এক বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে দেশটির মুসলমানদের সহযোগিতা সবার আগে কাম্য বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে বাঁচাতে হলে আমাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার আগেই তা ধরে ফেলতে হবে। আর এ জন্য তথ্য দিয়ে মুসলিম কমিউনিটি পুলিশকে সাহায্য করবে বলে আশা করছি।’ দেশটির মুসলিম নেতাদের নিজেদের কমিউনিটির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে মরিসন বলেন, তিনি কোনো ব্যক্তিবিশেষ ও পৃথক ঘটনার জন্য কোনো ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে নিন্দনীয় নজরে দেখার পক্ষে নন। তিনি বলেন, কেউ বললেই আমি বিশ্বাস করব না। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানেরাই সভ্য, পরিশ্রমী ও সম্মানিত।

গত ৯ নভেম্বর শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বৌর্ক স্ট্রিটে সন্ত্রাসী হামলায় হামলাকারীসহ দুজন নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হন। সোমালিয়ায় জন্মগ্রহণকারী হামলাকারীর নাম হাসান খালিফ শের আলী। হাসান শিশু বয়সে ১৯৮০ সালে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। ঘটনার দিন বেলা ৪টা নাগাদ বৌর্ক স্ট্রিটের ফুটপাথের পাশে হাসান একটি নীল রঙের গাড়ি পার্ক করেন। গাড়িটি পার্ক করার পরপরই তিনি বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য দিয়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন এবং একটি বড় ছুরি হাতে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। ছুরি হাতে বেরিয়ে এসেই হাসান প্রথম হামলা চালান বৌর্ক স্ট্রিটের বিখ্যাত কফিশপ পেলেগিরিনির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ৭৪ বছর বয়সী সিস্টো মালাস্পিনার ওপর। সিস্টো ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হাসানের মারাত্মক ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এরপর হাসান এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করার সময় ৫৮ বছর বয়সী রোডনি পিটারসন ও ২৪ বছর বয়সী একজন নিরাপত্তাকর্মীকে ছুরি দিয়ে মাথায় ও ঘাড়ে মারাত্মক জখম করেন। আহতরা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গাড়িতে আগুন দেখে দ্রুত একটি পুলিশের গাড়ি ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। হাসান পুলিশের গাড়িতে ঘুষি মেরে একটি জানালা ভেঙে ফেলেন। গাড়িতে থাকা দুজন পুলিশ তাকে থামানোর ও আটক করার চেষ্টা চালান। এর মধ্যে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আরও পুলিশ সদস্য হাজির হন। পুলিশের সঙ্গে আরও দুজন পথচারী হাসানকে আটকের চেষ্টায় এগিয়ে আসেন। হাসান অনবরত পুলিশকে হামলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ উপায়ন্তর না পেয়ে তার বুকে গুলি করে। তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই সে মারা মারা যায়। পুলিশ ধারণা করছে, সন্ত্রাসী হামলায় হাসান ছাড়া আর কেউ জড়িত নয়।

ঘটনার পরদিন শনিবার পুলিশ হাসানের মেলবোর্নের ওয়েরিবির বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। হাসানের সন্ত্রাসী হামলায় তার পরিবার তাকে সহযোগিতা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে পুলিশ তার পরিবারের কাউকেই আটক করেনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানিয়েছে, হাসানের পরিবার বলছে সে একজন মানসিক রোগী। হাসানকে বেশ কিছুদিন ধরে কেউ তাড়া করছিল বলেও তার স্ত্রী জানিয়েছে। তবে কোনো জঙ্গি সংস্থার সঙ্গে হাসানের জড়িত থাকা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

২০১৫ সালে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টার সময় হাসানের অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট জব্দ করে পুলিশ। এ ছাড়া, হাসানের বিরুদ্ধে মাদকের ব্যবহার, চুরি ও সড়ক আইন ভাঙার বিভিন্ন অপরাধী রেকর্ডও আছে পুলিশের কাছে।

বৌর্ক স্ট্রিট হামলার পর থেকে থমথমে অবস্থার বিরাজ করছে মেলবোর্ন জুড়ে। অস্ট্রেলিয়ার আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণার কাজও গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছিল। তবে সবাইকে নির্ভয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে অভয় দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া রাজ্য পুলিশের কমিশনার গ্রাহাম অ্যাশটন।

তবে এসব কর্মকাণ্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ফোরামে মুসলিম অভিবাসী নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে।