আগামীর রঙের রাজ্য
একদিন বিকেলবেলা আগামী মহীরাজের জেঠু শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী দুটি ক্যানভাস দেখিয়ে বললেন, আগামী তুমি একটাতে আঁকো, আমি আরেকটাতে আঁকব। এ ঘটনা ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরের। সেদিন ছিল আগামীর তৃতীয় জন্মবার্ষিকী। ব্যাস সেই থেকে শুরু। অবশ্য আগামীর প্রথম তিন বছর কেটেছে তাদের ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা সুমনা হকের সব বিমূর্ত ছবি দেখে।
আগামী মহীরাজের বয়স এ বছর ১০ পূর্ণ হয়েছে। ছয়-সাত বছর বয়স থেকে আগামী প্রতিদিন নিয়ম করে ছবি আঁকে। এরই মধ্যে পাঁচ শর বেশি ক্যানভাস ভরেছে রং দিয়ে। কাগজের চাইতে আগামী ক্যানভাসে ছবি আঁকতে ভালোবাসে বেশি। জল রং, অ্যাক্রিলিক, মিক্সড মিডিয়া সব ধরনের রং ব্যবহার করতে ভালোবাসে। আগামী কোনো আর্ট স্কুলে যায়নি এখনো। আপন মনেই ছবি আঁকে।
আগামীর ১০ বছর পূর্তিতে কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ব্যারিংটনে আয়োজন করা হয় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর। এ প্রদর্শনী আয়োজনে সহযোগিতা করে ঢাকার গ্যালারি কায়া। আগামীর আঁকা ১০৮টি ছবি স্থান পেয়েছিল প্রদর্শনীতে। প্রায় দুই শরও বেশি অতিথি এসেছিলেন ৬ ঘণ্টার এই প্রদর্শনীতে। বলা বাহুল্য প্রথম দুই ঘণ্টাতেই আগামীর সব ছবি বিক্রি হয়ে যায়। এ উপলক্ষে গ্যালারি কায়া একটি ক্যাটালগও প্রকাশ করে। প্রদর্শনীতে সাহিত্যিক আনিসুল হক, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন ও প্রভিডেন্স সিটির আর্ট ডাইরেক্টর স্টেফিনি ফরটুয়ানো আগামীর ছবি নিয়ে কথা বলেন।
২০১৫ সালে আগামীর একটা ছবি দিয়ে নিউইয়র্কের আর্টিস্ট ফোরাম একটি ফোল্ডার প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী আগামীর আঁকা ছবি দিয়ে চারুকলার বকুলতলায় মঞ্চ বানায়। একই শিল্পীগোষ্ঠী ২০১৭ সালে আগামীর আঁকা ছবি দিয়ে তাদের সংগঠনের আমন্ত্রণপত্র বানায়।
আগামী চার বছর বয়সে তার মাকে হারায়। তার মা নীতা মহলানবীশের স্বপ্ন ছিল আগামী যেন পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্পচর্চার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখে। আগামীর বাবা মহীতোষ তালুকদার তাপস পেশায় একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তিনি ‘আমরা কজন’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে সংস্কৃতির অঙ্গনে তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আগামীর চাচা শিল্পী সাইফুদ্দিন আহমদ মাহবুব বছরে দুবার করে ঢাকা থেকে বোস্টন আসেন শুধু আগামীর সঙ্গে বসে ছবি আঁকার জন্য।
আগামী এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান, সাঁতার, এসব নিয়ে আগামীর সময় কাটে। আর আগামী বই পড়তে খুব ভালোবাসে। আগামী এবারের প্রদর্শনীর ছবি বিক্রির অর্ধেক টাকা রাখবে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডের জন্য। বাকি অর্ধেক টাকা তাদের সেভ দ্য আর্থ, সেভ দ্য এনভায়রনমেন্ট নামে ক্লাবে ডোনেট করবে।
আগামী মহীরাজ বিশ্বাস করে, মানুষের প্রথম কাজ হওয়া উচিত প্রকৃতি বাঁচানো। আগামী নিজেকে মিনি ইকো অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসে। আপনারা সবাই আগামীর জন্য আশীর্বাদ করবেন। ও যেন ওর মার মনের আশা পূরণ করতে পারে।