বেসরকারীকরণ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা করছে দেশটির বর্তমান সরকার। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে দেশটির ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। সরকারের কাছ থেকে ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিসা আবেদনের এই নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ইজারা গ্রহণের ইচ্ছা জানিয়ে আবেদনও করেছে। প্রায় ১০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের এই পরিকল্পনার নানা সমালোচনা তৈরি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে।

বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা করেছিল টার্নবুল সরকার

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের সরকারি পরিকল্পনার কথা প্রথম আসে এ বছরে ফেব্রুয়ারিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সরকারের সময় অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অ্যান্ড্রু কেফোর্ড সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানান। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্লোবাল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উদ্যোগের আওতায় সরকারের সীমিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের কথা ভাবছে অভিবাসন বিভাগ। আরও বলা হয়, নতুন এই বেসরকারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে। দেশটির ভিসার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তখন জানান কেফোর্ড।

স্কট মরিসন
স্কট মরিসন

নতুন উদ্যোগের বর্তমান অবস্থা

টার্নবুল সরকারের সেই উদ্যোগের বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছে মরিসন সরকার। সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেশটির কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান মাইকেল পেজ্জুলো জানান, অভিবাসন বিভাগের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ, বাস ও কাজ করতে আসতে ইচ্ছুক আবেদনকারীর জোয়ার আসে প্রতিবছর। আর সেই চাপ সামলাতে প্রচণ্ড বেগ পোহাতে হয় বিভাগটিকে। সেই চাপ কমাতেই বেসরকারিকরণের উদ্যোগ আমলে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাপ্তরিক কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

বাড়তে পারে ভিসা আবেদনের ফি

ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণের উদ্যোগে ভিসার খরচ বাড়বে কি না, এমন প্রশ্ন আসে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টির সিনেটরদের কাছ থেকে। এই উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী ভিসা আবেদনের ফি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তারা। এ নিয়ে অভিবাসন বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভিসা ফি নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকতে পারে। তবে সেটা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার সময়ই নির্ধারিত হতে পারে। চুক্তিতে ভিসা ফি বৃদ্ধির নিয়মনীতি উল্লেখ থাকবে।

উত্তর দিচ্ছেন সীমান্ত সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান মাইকেল পেজ্জুলো
উত্তর দিচ্ছেন সীমান্ত সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান মাইকেল পেজ্জুলো

অভিবাসন কর্মী ছাঁটাই

বিরোধী দল অভিবাসন বিভাগের কর্মী ছাঁটাই করা হবে কি না, তেমন প্রশ্নও করে সরকার পক্ষকে। জবাবে পেজ্জুলো জানান, নতুন এই উদ্যোগের ফলে অভিবাসন বিভাগের কোনো কর্মী ছাঁটাইয়ের এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের।

ভিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের প্রকল্পের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ভিসা দেবে কে? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব লিন্ডা রেনল্ডস। তিনি জানান, সব ভিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র অভিবাসন বিভাগেরই থাকবে। তিনি বলেন, ‘ভিসার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই বেসরকারি করে দেওয়া হবে, এমনটা নয়। সরকার শুধু ভিসার প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুঁজছে। তারা কেবলই ভিসা প্রক্রিয়াজাত করবে, সিদ্ধান্ত নেবে অভিবাসন বিভাগ।’

কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>