একটা দ্বীপ মুহূর্তে যেভাবে বদলে গেল

ছোট্ট জারিফ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ টিনের চালে উঠে তাকে উদ্ধার করা সব মামা চাচাকে স্যালুট দেয়
ছোট্ট জারিফ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ টিনের চালে উঠে তাকে উদ্ধার করা সব মামা চাচাকে স্যালুট দেয়

টিনের চালে ছোট্ট একটা বাচ্চা দেখা যাচ্ছে, অপহরণ করা হয়েছিল তাকে। ওর নাম জারিফ। স্কুল থেকে চুরি করে নিয়ে অন্ধকার একটি কক্ষে কম্বল মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল তাকে। খাটের পাশে লাঠিও রাখা ছিল। তাই ভয়ে বিছানাতেই প্রস্রাব করত জারিফ। ঘটনাটা সন্দ্বীপের।

ছোট্ট জারিফের চিন্তায় ৪৮ ঘণ্টা সন্দ্বীপের চার লাখ মানুষের খুবই কষ্টের দিন গিয়েছিল। সন্দ্বীপে এটাই প্রথম অপহরণ। এমন ঘটনায় আকাশছোঁয়া কষ্টে নীল হয়ে গিয়েছিল দ্বীপটা। কারও চোখে ঘুম নেই। পুরো সন্দ্বীপ যে একটা পরিবার। একতা যাদের মূলধন। জারিফ সেই পরিবারের বুকের ধন। যেন একমাত্র বাচ্চা। তাইতো জারিফকে উদ্ধার করতে দ্বীপের সবগুলো মানুষ পাগলের মতো ছুটেছেন যে যার জায়গা থেকে। প্রত্যেক এলাকায় রাতের অন্ধকারে টর্চলাইট, তথ্য, সাহস ও পরামর্শ দিয়ে একযোগে অভিযানে নেমেছেন পুরা সন্দ্বীপবাসী। নদীর মাঝিকে বলে দেওয়া হয়েছে, নদী পার না হতে। যাতে অপহরণকারীরা সন্দ্বীপ থেকে জারিফকে নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।

এমন উৎকণ্ঠার মধ্যে গভীর রাতে জারিফদের ঘরের সামনে চিরকুটও ফেলে রাখে অপহরণকারীরা। ওখানে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল খুন করা হবে জারিফকে। বন্ধ করতে বলেছিল জারিফকে অনুসন্ধানের কাজ।

হান্নান তারেক, সজিব খান, জাহিদ হাসান ও ফিরোজ খান। এই চার তরুণ জারিফকে উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন
হান্নান তারেক, সজিব খান, জাহিদ হাসান ও ফিরোজ খান। এই চার তরুণ জারিফকে উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন

কিন্তু জারিফসোনার মামা-চাচারা আছে না! ওরা কী আর ভয় করে? সেই ভয় মাথায় নিয়ে গোপনে পুরো সন্দ্বীপ সতর্ক পাহারা বসানো হয়। মামা চাচাদের বুদ্ধিমত্তায় শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযানের পরে জারিফ ২৪ নভেম্বর ফিরে এল মৃত্যুর মুখ থেকে।

একটা দ্বীপ মুহূর্তে একটা পরিবারে রূপান্তর হওয়ার ঘটনা আছে কি কারও জানা? যেকোনো বড় বিপদে তেমন ঘটনাই ঘটে আমাদের সন্দ্বীপে। এবারে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের সন্দ্বীপের চার তরুণ নায়কের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন হান্নান তারেক, সজিব খান, জাহিদ হাসান ও ফিরোজ খান। বুদ্ধি করে মুক্তিপণের জন্য দেওয়া নম্বর ধরে শুরু হয় তাদের অভিযান এবং হাতেনাতে তারা ধরা ফেলে অপহরণকারীকে।

অন্ধকার ঘর থেকে তারা যখন জারিফকে উদ্ধার করে তখনো ভয়ে বিছানাতেই প্রস্রাব করে দিয়েছিল জারিফ। তারপরে মামা-চাচারা কুচক্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে বুকে তুলে নেয় জারিফকে। কুচক্রীকে থানায় দেয়। কিছু মামা অবশ্য বেশি রাগে মারতেই চেয়েছিল। তবুও তারা দুষ্ট অপহরণকারীকে মারেনি। কারণ আইন আছে, আর যে দুষ্ট নারী জারিফসোনাকে অপহরণ করেছিল তার পেটে ছিল জারিফের মতোই অনাগত এক সন্তান।

তাই কুচক্রীকে থানার হাতে দিয়ে, জারিফসোনাকে নিয়ে সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়ি গিয়ে ছোট্ট জারিফ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ টিনের চালে উঠে তাকে উদ্ধার করা সব মামা চাচাকে স্যালুট দেয়। জারিফ উদ্ধার হওয়ার পরে টিনের চালে উঠিয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা দেখার মতো! আবার হাতও নাড়ে! ওরে মানিক, তোর জন্য সন্দ্বীপের চার লাখ মানুষের দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার উৎকণ্ঠা তুই যদি বুঝতি! যদি বুঝতি তোকে ফিরে পেয়ে আজ কেমন করে সুখের কান্নায় ভাসছে সন্দ্বীপ নামের চার লাখ সদস্যের একটা পরিবার।