সমন্বয়, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবতা সংরক্ষণের আহ্বান

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দৃশ্য
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দৃশ্য

সহনশীলতা, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবতার সংরক্ষণ চর্চা সকলের জন্যই অনুকরণীয়। প্রাচীন মানবসভ্যতার অংশ হিসেবে এখনো ভারতীয় হিন্দু সভ্যতা আধুনিক বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি ধারণে প্রাসঙ্গিক। কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের সরকার নভেম্বর মাসকে হিন্দু হেরিটেজ মাস ঘোষণা করায় তা উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আলোচকেরা তাদের আলোচনায় আরও তুলে ধরেন, কীভাবে প্রাচীন ভারতীয় মুনি-ঋষি-দার্শনিকদের অগ্রসর চিন্তা-ভাবনা পশ্চিমি সভ্যতার আধুনিকপন্থী কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের মতে, বহু সংস্কৃতির দেশ কানাডার উদার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য হিন্দু ঐতিহ্য, দর্শন, বিশ্বাস ও জীবনাচার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে উদাহরণ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

ওন্টারিও হিন্দু হেরিটেজ উদ্‌যাপনের এই আলোচনা সভা ও শিশু-কিশোরদের আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান টরন্টো শহরের সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম কেন্দ্র ডোম অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটির হলে গত রোববার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সম্মিলিতভাবে এই আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন টরন্টোর সক্রিয় হিন্দু মন্দিরগুলোর প্রতিনিধি ও হিন্দু হেরিটেজের সংগঠকেরা। পরবর্তীতে আরও অনুষ্ঠান পালনের জন্য আয়োজকেরা ওন্টারিও হিন্দু অর্গানাইজেশন নামে একটি স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে তুলেছেন। হিন্দু হেরিটেজ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ওন্টারিওতে প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী গীতা পাঠে অংশ নেয় প্রবাসী প্রজন্মের কিশোর সার্বভৌম রায় মজুমদার ঋদ্ধি। শুরুতে হিন্দু স্বয়ং সেবক সংঘের পক্ষ থেকে সুমিত্রা পাল হিন্দু ঐতিহ্যভিত্তিক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। ওন্টারিও হেরিটেজ আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন সুরজিৎ রায় মজুমদার। এরপর সীমান্ত নিরাপত্তাবিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার এমপিপি প্রেরিত শুভেচ্ছা বার্তা মঞ্চে পাঠ করে শোনান তার প্রতিনিধি জ্যাক নিক্সন। বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এমপিপি ডলি বেগম ও টিডিএসবি ট্রাস্টি পি ক্যান্ডাভাল।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনার বিভিন্ন দৃশ্য
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার বিভিন্ন দৃশ্য

আলোচনা অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক শীতাংশু চক্রবর্তী, অধ্যাপক সুজিত দত্ত, প্রবীণ পুরোহিত প্রসাদ ব্যানার্জি ও শ্যামল ভট্টাচার্য, হিন্দু স্বয়ংসেবক সংঘের ধর্মেন্দ্র ঢোলাকিয়া, গবেষক-লেখক সুব্রত কুমার দাস ও মুক্ত চিন্তক লেখক আকবর হোসেন।

অনুষ্ঠানে আলোচক ও অতিথিদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তব্য দেন অলোক চৌধুরী, ঋতুশ্রী ঘোষ, বিজিত রায়, চিত্ত ভৌমিক, শিবু চৌধুরী, সুদীপ দে, সঞ্জিত দাশ, সুরজিৎ রায় মজুমদার ও সুশীতল সিংহ চৌধুরী প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির প্রবীণ শাস্ত্রজ্ঞ মহাদেব চক্রবর্তী, বাসুদেব বোস ও দেবকুমার শর্মা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সুজিৎ কুসুম পাল ও ঋতুশ্রী ঘোষ।

আলোচনার আগে এই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের জন্য হিন্দু ঐতিহ্যভিত্তিক রচনা লেখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর। তিন গ্রুপে বিজয়ী তিনজনসহ অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে সনদ ও পুরস্কার হিসেবে মেডেল দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ছিল নাচ ও গানের ছোট্ট অথচ দৃষ্টিনন্দন আয়োজন। এতে অংশ নেয় তাপস দেবের কোরিওগ্রাফিতে মানসী, চারুসী, আরিয়ানা ও মম। ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করে দিয়া স্যানাল ও অঙ্কিতা সাহা। একক শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করে পারিজাত পাল, অনুষা রায় ও অন্বিতা সাহা।