উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে!

নিজের, বাবার আর গ্রাম—এই তিনটির নামে মিল থাকায় বিনা দোষে হত্যা মামলায় জেলের ঘানি টানতে হলো বগুড়া সদর উপজেলার হাজরাদীঘি গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলামকে। সাড়ে তিন মাস জেল খাটার পর গতকাল বুধবার কারাগার থেকে মুক্তি মেলে তাঁর।
মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টের সহায়তায় গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান রফিকুল। এ সময় কারা ফটকে ব্লাস্টের আইনজীবী হোসনে নুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। কারাগার থেকে বেরোতে পেরে রফিকুল আবেগে কেঁদে ফেলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘শুধু পুলিশের ভুলে বিনা দোষে প্রায় চার মাস জেলে থাকতে হলো।’
আইনজীবী হোসনে নুর জানান, ২০০৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হাজরাদীঘি গ্রামের টেংরাবিল এলাকায় রিকশাচালক মোজামেঞ্চল হক শাহকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় মোজামেঞ্চলের ছেলে আমিনুর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক ফুয়াদ হোসেন।
পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। এঁদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেই জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে হাজরাদীঘি মন্নাপাড়ার রফিকুল ইসলাম (৪২) নামের আরেক ব্যক্তি জড়িত। তাঁর বাবার নাম আকবর আলী ওরফে মন্না। পুলিশ পরে রফিকুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করে।
কিন্তু গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুর রাজ্জাক ভুল করে হাজরাদীঘি তেঁতুলপাড়ার রফিকুল ইসলামকে (৪০) ওই মামলায় গ্রেপ্তার করেন। এই রফিকুলের বাবার নামও আকবর আলী। তবে এই আকবর আলীর শেষে মণ্ডল পদবি আছে। আর তিনি মৃত। পুলিশ এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেনি।
প্রকৃত রফিকুলের বদলে নির্দোষ রফিকুলকে গ্রেপ্তার এবং বিনা দোষে কারাভোগের বিষয়টি জানতে পেরে ব্লাস্ট সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট আদালত, পুলিশ সুপার, জেল সুপারসহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করে। এই আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে গতকাল রফিকুলকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজামেঞ্চল হক বলেন, আসামির সঙ্গে ওই ব্যক্তির নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নামে মিল থাকায় ভুলটি হয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরপরাধ রফিকুলকে মুক্তি দিতে পুলিশ আদালতে আবেদন করে। গতকাল তিনি মুক্তিও পান।