অরিত্রীরা ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

অরিত্রী অধিকারী। সংগৃহীত ছবি
অরিত্রী অধিকারী। সংগৃহীত ছবি

কোথা থেকে শুরু করব ভেবে পাচ্ছি না। লিখতে চাচ্ছি অরিত্রীকে নিয়ে। অরিত্রী শুধু একটি নাম নয় একটি প্রতিবাদ। এ প্রতিবাদ আমাদের ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থা আর ক্ষয়ে যাওয়া সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এ প্রতিবাদ আমাদের নষ্ট মানসিকতা আর বিচারবিহীন সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এ প্রতিবাদ সন্তানদের ভুল পথে পরিচালনার বিরুদ্ধে। অরিত্রী অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেকে হত্যা করেছে। তাই তাকে নিয়ে আজ সবাই কথা বলছে। এর আগেও অনেক অরিত্রী চলে গেছে তাদের নিয়ে এত কথা আর প্রতিবাদ হয়নি। শত শত অরিত্রী বেঁচে আছে, যারা জীবিত থেকেই প্রতিদিন নিজেকে হত্যা করছে। হত্যা করছে নিজেদের সত্তাকে, নিজেদের সৃজনশীলতা আর প্রতিভাকে। আর এসব হত্যা নীরব হত্যা বলে আমরা দেখি না, প্রতিবাদ করি না, তাই কথাও বলি না।

অরিত্রী যেহেতু ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রী ছিল, তাই এই নামী স্কুল দিয়েই শুরু করি। এই স্কুলটা নামী হলো কাদের দিয়ে? যদি বলেন শিক্ষকদের শ্রম আর তাদের শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা, তাহলে আমি বলব ভুল। আমার ভুল বলার যথেষ্ট কারণ আছে। আচ্ছা বলুন তো, ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়িয়ে আপনারা কজন আপনাদের সন্তানদের ওই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন? ভর্তি করাবার পর ওখানকার শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট আর কোচিং না করিয়ে সন্তানদের ভালো ফলাফল নিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন? স্কুলে যদি যথাযথ পাঠদান হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হয় কেন? তার মানে সেখানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের জন্য সহায়তা করা হয় না, যথাযথ পাঠ দান করা হয় না। আর যেখানে আপনার সন্তানরা যথাযথ সহায়তা পায় না সেখানে আপনার সন্তানদের পড়ানোর জন্য এত উন্মাদনা কেন?

আমি জানি আপনাদের সবার উত্তর হবে অনেক ভালো স্কুল। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্কুলগুলোর মধ্যে একটি। আর এ ভালো স্কুল আর সেরা স্কুলের নামের উন্মাদনায় আপনারা আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে কি না করছেন। আমি জানি, অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় হেরে গিয়ে লাখ টাকা দিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। অনেকে আবার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। অনেকে আবার তাদের সন্তানদের ওপরের শ্রেণি থেকে এনে নিচের শ্রেণিতে ভর্তি করাচ্ছেন। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এনে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করাবার অনেক নজির আমার পরিচিতদের মধ্যে আছে। এ অবস্থা যে শুধু ভিকারুননিসা স্কুলের তাই নয়, দেশের সব নামীদামি স্কুলগুলো একই ফ্রেমে বন্দী। আর এ সৃষ্ট অবস্থার জন্য দায়ী কে? অভিভাবক, শিক্ষক নাকি রাজনৈতিক বড় বড় লম্বা হাত? উত্তরটা আমাদের সকলের জানা। আর এই জানা উত্তরটা কি আমাদের ভাবনার বিষয় নয়?

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভালো স্কুল আমরা কীসের ভিত্তিতে বলব? জেএসসি, পিএসসি, এসএসসি অথবা এইচএসসি পরীক্ষায় কতজন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে তার ভিত্তিতে? যদি বিবেচনা তাই হয় তাহলেও তো ভালো স্কুলের মান প্রশ্নবিদ্ধ। ধরুন আপনি পাঁচ শ টাকা মূলধন নিয়ে যদি পাঁচ শ অথবা চার শ টাকা মুনাফা গড়েন তাহলে কি আপনি সফল ব্যবসায়ী? নাকি এক শ টাকার মূলধন নিয়ে পাঁচ শ টাকা মুনাফা গড়েন তাহলে আপনি সফল ব্যবসায়ী? আমাদের ভালো স্কুলগুলো পাঁচ শ টাকা মূলধন নিয়ে পাঁচ শ অথবা চার শ টাকা মুনাফা গড়ে। আমরা ডান্ডি সাতাশের মতো সে স্কুলগুলোকে ভালো ভালো বলে চিৎকার করি। যে স্কুলগুলো জিপিএ দুই মানের শিক্ষার্থীদের জিপিএ পাঁচ মানের করে তুলতে পারবে, সে স্কুলগুলো আমার কাছে ভালো স্কুল। আর এমন স্কুলে ভর্তি করাবার জন্য আর যাই হোক, শিক্ষা বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য হবে না বলে আমি মনে করি।

এবার আসি শিক্ষা কারিকুলাম, শিক্ষণ পদ্ধতি আর শিক্ষা নীতিমালা নিয়ে। আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক আর নৈতিক শিক্ষার স্থান কতটুকু? শিক্ষার্থীদের ওপর প্রতিনিয়ত চাপ—ভালো ফলাফল করতে হবে। জিপিএ ফাইভ পেতে হবে, গোল্ডেন ফাইভ। এর বাইরে জীবন মিছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজ জিপিএ ফাইভ আর গোল্ডেন ফাইভের ছকে বন্দী। এই গোল্ডেন ফাইভের খেলায় কেউ বা ফাঁস করছে প্রশ্নপত্র, কেউ বা লুফে নিচ্ছেন সেই ফেঁসে যাওয়া প্রশ্নপত্র। এ খেলার মাঠে সবাই ভুলে যাচ্ছেন নৈতিকতা আর সততা নামক শিক্ষার কথা।

অবশেষে এ খেলায় হারে কে? উত্তর অতি সহজ। আপনি আর আপনার সন্তান। নৈতিকতা আর সত্তাকে লুটিয়ে দেওয়ার হার। আর এ খেলাকে টিকিয়ে রেখেছে কে? এর উত্তরও অতি সহজ, আপনি, হে আপনি। আপনি যদি ওই প্রশ্নপত্র না কেনেন তাহলে ওরা ফাঁস করে বিক্রি করবে কার কাছে? আপনার সন্তানকে শেখান ভালো, মন্দ, নৈতিক, অনৈতিক আর মৌলিক-জীবনভিত্তিক জ্ঞান। আপনার সন্তান যদি সৃজনশীল হয়, আপনার সন্তান যদি শিখে বড় হয় তাকে রুখবার শক্তি কি কারও আছে? তাকিয়ে দেখুন আপনার চারপাশে নামধামহীন স্কুল থেকে আসা সফল মানুষের সংখ্যা কত। দেখুন আমাকে ও আমার মতো বা তার থেকে ভালো অবস্থানে যারা আছেন তাদের। আমাদের অনেকেরই শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছে নামধামহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমরা কি ভালো নেই। আমাদেরও আছে অপমানিত হওয়ার ইতিহাস। শিক্ষক, বন্ধু ও পারিপার্শ্বিক সমাজের লোক দ্বারা। অপমানে সময়ে সময়ে কি আমাদেরও আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করেনি? করেছে। আর বাঁচিয়ে রেখেছে কে জানেন? স্বপ্ন। বাবা-মার ছড়িয়ে দেওয়া স্বপ্ন। ভাইবোন ও বন্ধু-স্বজনদের স্বপ্ন। ভালো শিক্ষকদের গেঁথে দেওয়া নির্মল স্বপ্ন। তাই বাবা-মাদের বলছি, অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে আনুন। আপনাদের সন্তানদের স্বপ্ন দেখান। ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। আপনারা জেগে উঠলে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন হতে বাধ্য।

খারাপ শিক্ষক যুগে যুগে ছিল, এখনো আছে। আমার এক বন্ধুর কথা বলি। সে খুব দুষ্ট ছিল। একদিন কোনো এক অজানা কারণে তার এক শিক্ষকের কাছে সে বেদম প্রহার খেয়েছিল। তার বাবা স্কুলে এ কারণে বিচার নিয়ে গিয়েছিল ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা বিচার পাননি। উল্টো সেই শিক্ষক আমার বন্ধুর বাবাকে অপদার্থ ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য তিরস্কার করেছিলেন। আর বলেছিলেন যদি তার ছেলে এসএসসি পাস করে তাহলে ওনার হাত দিয়ে তাল গাছ গজাবে। আমার সেই বন্ধু কয়েকটি লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেছিল। পাস করার পর সে ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। স্যার তাকে দেখে গর্বভরে হেসে বলেছিলেন, কি আমার বকুনিতে মানুষ হয়েছ? উত্তরে সে বলেছিল, ‘না স্যার মানুষ আমি আগেই ছিলাম, এসেছি আপনার হাতের তাল গাছটা দেখতে।’ মেরে, বকুনি দিয়ে পেশিশক্তি দেখানো যায় কিন্তু শিক্ষকতার সম্মান কি পাওয়া যায়? আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কমবেশি আমাদের শিক্ষকদের স্মরণ করি। জীবন বদলে দেওয়ার মতো শিক্ষক আমরা কজন পেয়েছি? পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের জাগিয়ে তোলার শিক্ষক কজন দেখেছি? বিনীত শিক্ষক আমরা কজন পেয়েছি। বিনীত হওয়া মানে নত হওয়া নয়। এ মানসিকতা আমাদের শিক্ষক অভিভাবকেরা কবে অর্জন করবেন?

এবার আসি আমার নিজের গল্পে। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন একজন শিক্ষক পেয়েছিলাম। তিনি যে কী পড়াতেন তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারতাম না। তিনি নিজে সব বুঝতে পারতেন কিনা, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। প্রথম ক্লাসে এসেই তিনি আমাদের বলেছিলেন, তোমাদের ভাগ্য ভালো, তোমাদের একজন কমনওয়েলথ স্কলার পড়াচ্ছেন। কিন্তু সেদিন ওনার সামনে কতজন ভবিষ্যৎ কমনওয়েলথ স্কলার, শিক্ষাবিদ, সচিব, শিক্ষক প্রশিক্ষক, লেখক, কবি সাহিত্যিক আর রাজনৈতিক নেতা কিংবা মন্ত্রী বসে ছিল আর তাদের পড়াতে পেরে তিনি কতটা গর্বিত তা তিনি অনুধাবন করতে পারেননি।

না, সেদিন তিনি স্বপ্ন বিলাতে আসেননি, এসেছিলেন নিজেকে জাহির করতে। সেই কোর্সে আমাদের ইউনিট টেস্টের তারিখ দেওয়া হলো। আমরা সকলে স্যারকে পরীক্ষাটি এক সপ্তাহের জন্য পেছাতে অনুরোধ করেছিলাম। কারণ আমাদের অনেকের কনটেন্ট বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। স্যার রাজি হননি। তাই আমরা প্রতিবাদস্বরূপ পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিই। স্যার ডিরেক্টর স্যারের কাছে গিয়ে সেদিন অভিযোগ করেছিলেন, একদল সন্ত্রাসী ওনার পরীক্ষা গ্রহণে বাধা দিতে চায়।

লেখিকা
লেখিকা

ওই পরীক্ষাটি ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী দেয়নি। আমিও না দেওয়া দলের একজন ছিলাম, ওনার ভাষায় সন্ত্রাসী। পরীক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষার্থী নয় বরং শিক্ষার্থীর প্রয়োজনে পরীক্ষা। যিনি এ সাধারণ বিষয়টি বুঝতে পারেননি তিনিও পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে! যে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের বুঝতে পারেন না, বুঝতে চান না, বোঝার ক্ষমতা নেই, তিনি কেন শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন তা আমার মাথায় ধরে না।

এ ঘটনা বিশ বছর আগের। কিন্তু এই বিশ বছর পর আমরা যখন বন্ধুরা এক হই, আমরা আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলি। আর তাঁর কথা এলে নামের পাশে এক অশ্রদ্ধাশীল টাইটেল ছাড়া কাউকে তার নাম উচ্চারণ করতে শুনি না। সেই টাইটেলটি এখানে লেখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু বোঝার প্রয়োজন আছে। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের মূল্যায়ন করে ভালো খারাপ সব মিলিয়ে। ভালো শিক্ষক মরে গিয়েও অমর থাকেন তার শিক্ষার্থীদের মণিকোঠায়। নিজেকে জাহির করা শিক্ষক ছড়িয়ে আছে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরে। আমাদের দেশে একবার সরকারি চাকরি পেলে শিক্ষকেরা চাকরি আমার, স্কুল আমার টাইপের হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই। তাই একশ্রেণির শিক্ষক অনেকটা স্বৈরাচার হয়ে অপমান, অশালীন ব্যবহার, কোচিং বাণিজ্যে শিক্ষার্থী আর তার পরিবারকে জিম্মি করেন। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হাত ছাড়া কজন সেখানে চাকরি পায় বলুনতো? তাই চাকরি বজায় রাখতে, প্রোমোশন পেতে এমপি নেতাদের পেছনে ছোটেন। শিক্ষার্থীদের পেছনে ছোটা শিক্ষক হাতে গোনা নগণ্য।

ভুল আমরা সবাই করি। কোনো ভুলই মারাত্মক নয় যদি তা শুধরে নেওয়ার উপায় থাকে। প্রতিটি ভুল আমাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে যদি সেখানে থাকে যথাযথ কাউন্সেলিং। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কি কাউন্সেলিংয়ের কোনো কনসেপ্ট আছে? নাকি আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থায় আমরা আমাদের সন্তানদের কাউন্সেলিং করি? তিরস্কার কি শুধু শিক্ষকরাই করেন? বাবা মারা কি এ ক্ষেত্রে কম পিছিয়ে আছেন?

নিয়ম ভঙ্গ করা মানে উচ্ছন্নে যাওয়া নয়। আচ্ছা ভাবুন তো আপনি জীবনে কি নিয়ম ভাঙেননি। যাতে ছিল ফ্যান্টাসি। এখন যা মনে করে এখনও মজা পান, নিজেকে হিরো ভাবেন। যা আপনাকে দিয়েছে মধুর স্মৃতি, মধুর কৈশোর। যা জেনেও আপনার অভিভাবক-শিক্ষকেরা না জানার ভান করেছেন বা মৃদু শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানদেরও দিই না সেই সুযোগ। ভুল করে হাসাহাসির সুযোগ। কৈশোরকে উপভোগ করার সুযোগ। সবকিছুতে সিরিয়াস হওয়ার দরকার কি। অরিত্রী স্কুলে ফোন নিয়েছে। এটা তার অপরাধ। তাতে নকল ছিল কি ছিল না আমরা জানি না। আমরা জানি শিক্ষকেরা তাকে আর তার বাবা-মাকে অপমান করেছে। তবে তার বাবা-মা তার সঙ্গে কী ব্যবহার করেছেন তা কিন্তু আমাদের জানা নেই। অরিত্রী চলে গেছে, ভুলভাবে চলে গেছে। যে অরিত্রীরা বেঁচে আছে তাদের নিয়ে ভাবি। তাদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখব তা নিয়ে ভাবি। যে কারিকুলাম ক্লাসরুমে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে অক্ষম, যার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রাইভেটের আশ্রয় নিতে হয়, সে কারিকুলাম পাঠদানের উপযোগী করার জন্য শিক্ষকদের অভিভাবক আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করা দরকার। কিন্তু এমন আন্দোলন বাংলাদেশে এখনও হয়নি। তবে হওয়ার সময় এসেছে। কোচিংমুক্ত শিক্ষা আর কারিকুলামের আন্দোলন।

অরিত্রী চলে যাওয়ার জন্য একজন প্রধান শিক্ষকের করজোড়ে ক্ষমা চাইবার ছবি দেখলাম। শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পড়লাম। অরিত্রী চলে যাওয়ার জন্য কি শুধু শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক দায়ী? সেখানে কি রাষ্ট্র, শিক্ষাব্যবস্থা, অভিভাবক, সমাজ ব্যবস্থার কি কোনো দায় ছিল না? তাদের শাস্তি কে দেবে? তাদের হয়ে কে ক্ষমা চাইবে? যদি আমরা শুধু বলি আমাদের স্কুলে বিচার সংস্কৃতি নেই তাহলে ভুল বলব, বিচার সংস্কৃতি আমাদের সমাজের কোথায় আছে?

বাংলাদেশের সবাই শিক্ষাবিদ। শিক্ষা নিয়ে দু-চারবার কথা বলে হয়ে যান শিক্ষাবিদ। কারিকুলাম, পঠন, পাঠন, শিক্ষা সম্পৃক্ত জ্ঞানের কোনো দরকার নেই। বিদেশে যা হচ্ছে তা সরাসরি অনুকরণ করা হচ্ছে আমাদের মূল্যবোধ আর সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করে। শিক্ষার্থীদের পাঠ দেওয়া হচ্ছে কোনো প্রকার এপটিচিউট টেস্ট ছাড়া। কিন্তু এমন অবস্থা আর কত দিন? বাংলাদেশে এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়টি রয়েছে। শিক্ষা নিয়ে চিন্তা, সংস্কার আর গবেষণার দায়ভারটা তাদের হাতেই তুলে দিই। দেখি না আগামী পাঁচ বছরে তারা শিক্ষার কী মান আর পরিবর্তন আনে?
...

ড. নুরুন নাহার বেগম, সহযোগী অধ্যাপক, East Stroudsburg University of Pennsylvania, USA.