একটি সরল নদীর গল্প-পাঁচ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আজ অফিসে রাকিবের অফিসে কাজের চাপ খুব বেশি ছিল। দুপুরের দিকে তার মনে হয়েছিল, আজ বুঝি সাড়ে ছয়টা বা সাতটার আগে অফিস থেকে বের হতে পারবে না। মাঝেমধ্যে তার এমনটা হয়। সাতটার দিকে সে অফিস ছেড়ে বাসায় ফেরে।

কিন্তু রাকিব সাড়ে চারটার সময় দেখল, হঠাৎ করেই কাজের চাপ কমে গেছে। ডেভিড ইটন তার মুখোমুখি কেবিন থেকে একটা স্বস্তির দিঘল হাসি দিল। একটু নিচু স্বরে বলল, যাক, বাঁচা গেল বাবা। আজ দুপুরের খাবারটাও ঠিকমতো খেতে পারিনি।

রাকিব আজ কাজের ব্যস্ততায় দুপুরের খাবারই খায়নি। অবশ্য সে সাড়ে দশটার সময় অফিসের পাশের বেকারি থেকে একটা চিকেন-অ্যাবাকাডো স্যান্ডউইচ খেয়েছিল।

রাকিব ঠিক পাঁচটার সময় অফিস থেকে বের হলো। অফিস থেকে বের হয়ে সরাসরি ম্যাকডোনাল্ডসের ড্রাইভ থ্রোতে ঢুকল। একটা ম্যাক-চিকেন বার্গার, চিপস ও স্প্রাইটের কম্বো নিল। গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতেই রাকিব একহাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে ড্রাইভ করে অন্য হাতে বার্গার, চিপস ও স্প্রাইট শেষ করল। সত্যিই সে খুব ক্ষুধার্ত ছিল।

বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল। শীতের সন্ধ্যা। সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যা নেমে আসে।

রাকিব বাসায় ঢুকে প্যান্ট শার্ট খুলে একটা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে ভারী গাউনটা চাপিয়ে নিল। আপাতত সে একটা ব্ল্যাক কফি খাবে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাক কফি খেতে খেতে শীতের সন্ধ্যার বিষণ্নতাকে অনুভব করবে।

রাকিব কফির কথা ভাবতে ভাবতেই কিচেনে গেল। হট ওয়াটার জগে পানি নিয়ে অন করে কফির কাপে পরিমাণ মতো ইনস্ট্যান্ট কফি নিল। সে আজ কফির সঙ্গে চিনি খাবে না। বিষণ্ন সন্ধ্যায় তিতা কফির স্বাদই আলাদা।

হট ওয়াটার জগে বুঁদবুঁদ শব্দ তুলে পানি গরম হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হট ওয়াটার জগে পানির বলক উঠবে। তারপর শিস দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। এ দৃশ্যটা খুব সাধারণ। রাকিব প্রতিনিয়তই এই দৃশ্যটা দেখে আসছে। কিন্তু তারপরও এখন সেই একই দৃশ্যটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। রাকিব কিচেনে এলে আরও একটা দৃশ্য দেখে। মাইক্রোওয়েভ অন করে খাবার গরম করার সময় ডিজিটাল মনিটরের সেকেন্ড কমতে থাকা সে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে।

হট ওয়াটার জগে শিস দিয়ে ধোঁয়া উঠতেই রাকিব কফির কাপে পানি ঢেলে চামচ দিয়ে নেড়ে সরাসরি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। কফির কাপে চুমুক দিতেই একধরনের প্রশান্তি এসে তার ভেতর ভিড় করল। সে দিঘল দৃষ্টি মেলে তাকাল। চারদিকে সন্ধ্যা নামলেও এখনো সন্ধ্যাটাকে ধূসর সন্ধ্যা বলা যায়। লনের পাশের পাতাহীন ওক গাছটায় তিনটা চড়ুই তখনো কিচিরমিচির শব্দ তুলে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ছে। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের দিঘল ফুটপাত ধরে তখনো এক জোড়া বৃদ্ধ দম্পতি কলকল হাসি তুলে হাঁটছেন। রাস্তার বাতিগুলো এরই মধ্যে জ্বলে উঠেছে। বাতিগুলোর সামনে সন্ধ্যার একধরনের কুয়াশা। শীতের হিন হিন বাতাস বইছে।

রাকিব কফির কাপে চুমুক দিয়ে একটা কবিতা নিয়ে ভাবতে শুরু করল। সে জানে, প্রতিটা সন্ধ্যার একধরনের হাহাকার আছে। দিন শেষের হাহাকার। দিন শেষের হাহাকার অনেকটা জীবন শেষের হাহাকারের মতো।

এই সাদা মেঘ, মেঘে মেঘে সন্ধ্যায় দিঘল মেঘের ভেলা-
কোনো যুবতীর আঁচল বিছিয়ে দেওয়া ধূসর নীল শাড়ি
অচেনা বাতাসে শুধু তড়পায়, শুধু তড়পায়। যৌবনে যুবতী যায়।
এ যে এক শত বছরের জঞ্জালের মতো গোমতীর বুকে কোনো মহাজন নৌকা বায়।
বুবুরা তখন হাত ইশারায় হাঁস ডাকে-এই প্যাক প্যাক প্যাক, এই প্যাক প্যাক...!

রাকিব কফির কাপে চুমুক দিয়ে আধা শেষ হওয়া কফির কাপটা মধ্যমা আঙুলে ঝুলিয়ে আবার দিঘল দৃষ্টি মেলল। তার চারপাশের পরিবেশটা একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সন্ধ্যাটা আরও গাঢ় হয়ে নেমেছে। চড়ুই পাখিগুলো কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। কাছেই কোথাও ঝিঁঝি পোকা ডাকছে-ঝিঁ-ই-ই, ঝিরিত, ঝিরিত, ঝিঁ-ই-ই। একটা রাত পাখি ডেকে গেল-কোয়েক-কোয়েক। একটা বিড়াল সামনের লন ধরে যেতে যেতে ডেকে উঠল-মিয়াও মিয়াও।

রাকিব একটা ভারী নিশ্বাস ফেলল। এমনিই। আতিক ক্লোডল্যান্ডে নতুন বাসায় বউ নিয়ে বেশ সুখের সংসার পেতেছে। এরই মধ্যে আতিক ট্যাক্সির শেয়ার কিনে এখন নিজের ট্যাক্সি চালাচ্ছে। নতুন পঞ্চান্ন ইঞ্চি এলইডি টিভি, নতুন ফ্রিজ, নতুন সোফাসেট আরও কত কী!

রাকিব একদিন অফিস শেষে আতিকের বাসায় দেখতে গিয়েছিল। আতিক তাকে রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়েনি। আতিকের বউটাও বেশ মিশুক। শ্যামলার মধ্যে একেবারেই ছোটখাটো ধরনের মানুষ। তবে বেশ বুদ্ধিমতী বলে বোঝা গেছে।

আতিকের সুখ দেখে রাকিবের সেদিন বেশ ভালো লেগেছে। মনে মনে কিছুটা যে হিংসা হয়নি, তা নয়। সেই হিংসাটা নিজের অপূর্ণতা থেকে। আজকাল রাকিব নদীকে নিয়ে সত্যি খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। তার জীবনে নদী না এলে সে হয়তো তার মার কথায় বা ছোট ফুফুর কথায় বাংলাদেশ থেকে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসার কথা ভাবত। আতিকের সুখের সংসার দেখে সে এতটুকু বুঝতে পারছে, আর যাই হোক একজন বাঙালি ছেলে একজন বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে জীবনের পূর্ণতা পেতে পারে। নিজের সংস্কৃতি বলে কথা। এটা শুধু বাঙালিদের ক্ষেত্রেই নয়। অন্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

রাকিব জানে, ক্রস-কালচার বলে একটা কথা আছে। কিন্তু এই ক্রস-কালচার কখনো কখনো খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর উদাহরণ ভূরি ভূরি। তবে ব্যতিক্রম সব সময়ই ব্যতিক্রম।

রাকিব কফির কাপে আবার চুমুক দিল। কফি এরই মধ্যে ঠান্ডা হয়ে গেছে। মাথার ওপর শীতের কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। সে পরনের গাউনের কলারটা তুলে দিল। কিন্তু কলারে তো মাথা ঢাকে না। এই কুয়াশায় ঠান্ডা লাগতে পারে। এভাবে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তারপরও তার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হলো।

রাকিব ঠান্ডা কফিটা এক চুমুকে শেষ করে কবিতাটার কথা না ভেবে নদীর কথা ভাবতে শুরু করল। নদী এখনো তার নাবিদ ভাইয়ের দোকানে রোববারেই কাজ করে। এই সেমিস্টারটা শেষ হলে সে শনিবারেও কাজ শুরু করবে।

রাকিব ভাবল, নদী এখন তার নাবিদ ভাই, জুঁই ভাবি ও মৌনতাকে নিয়ে বেশ ভালোই আছে। মাঝেমধ্যে মৌনতাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। নদী এখন নিজে গাড়ি চালায়। যখন ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে যেতে যেতে পারে।

মূলত গাড়িটা রাকিবই নদীকে দিয়েছে। তার পুরোনো গাড়িটা। পুরোনো গাড়ি বলতে একেবারে পুরোনো গাড়ি নয়। আট বছরের পুরোনো মডেল। এখনো বেশ ঝকঝকে তকতকে আছে। নদী তো বলেছে, সে গাড়ি কিনলে এত ঝকঝকে তকতকে দামি গাড়ি কিনতে পারত না। কালো রঙের গাড়ি হওয়াতে গাড়িটা আরও ঝকঝকে তকতকে লাগে।

রাকিব একটা ফোর হুইল টয়োটা প্রাডো কিনেছে। মেটালিক ব্লু। নদী অবশ্য তার জন্য মেরুন রঙের একটা গাড়ি পছন্দ করেছিল। টয়োটা ক্লুগার। কিন্তু টয়োটা ক্লুগার ফোর হুইল ড্রাইভ নয়। অল হুইল ড্রাইভ।

রাকিব তার প্রাডো গাড়িতে নদীকে নিয়ে একদিনই দূরে কোথাও ঘুরতে গেছে। অবশ্য খুব বেশি দূরে নয়। গর্ডনটন জিলং টি এস্টেটে। গর্ডনটন জিলং টি এস্টেট নামেই টি এস্টেট। আসলে সেখানে কোনো চা বাগান নেই। মূলত একটা পর্যটকদের জন্য একটা পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। তারপরও সেদিন পুরো বিকেলটা ওখানে ওদের বেশ ভালো কেটেছে।

রাকিব একটা মধ্যমা আঙুলে কফির কাপটা ঝুলিয়ে রেলিঙে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইল। সন্ধ্যাটা এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। রাতের উঠতি ভাগ। তার সময়টা যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। আবার তার ব্যালকনি থেকেও সরতেও ইচ্ছে করছে না। তখনো ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক আসছে। বাসার ভেতরের লাউঞ্জের আলো খানিকটা ব্যালকনিতে এসেও পড়েছে। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট ধরে দু-একটা গাড়ি আসা যাওয়া করছে। গাড়ির হেডলাইটের বিস্তৃত আলো ছড়িয়ে পড়তে পড়তেই আবার উঠতি রাতের নিষ্প্রভ আলোছায়াটা থমকে দাঁড়াচ্ছে।

একটা গাড়ি হেড লাইটের বিস্তৃত আলো ছড়িয়ে এসে রাকিবের বাসার ড্রাইভওয়েতে এসে থামল। রাকিব অবাক হয়ে দেখল, গাড়িটা কালো। তার গাড়িটা চিনতে অসুবিধা হলো না। গাড়িটা চিনেই রাকিব মনে মনে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। নদী যে এই কালো গাড়িটা নিয়ে আগে কখনো রাকিবের বাসায় আসেনি, তা নয়। বেশ কয়েকবারই এসেছে। কিন্তু এই সময়? হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিতভাবে?

নদী গাড়ি থেকে নেমেই প্রথমে রাকিবের ফ্ল্যাটের ওঠার দোতলার সিঁড়িটার দিকে তাকাল। পরক্ষণই কী ভেবে সে রাকিবের বাসার ব্যালকনির দিকে দৃষ্টি ফেলল। দৃষ্টি ফেলেই সে দেখতে পেল, এই শীতের কুয়াশার মধ্যেও রাকিব ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।

নদী নিচ থেকে গলা বাড়িয়ে বলল, এই যে কবি সাহেব, আপনি এই শীতের মধ্যেও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

রাকিব কিছু না বলে হাসল।

এই আবছায়া অন্ধকারে অবশ্য রাকিবের এই হাসি নদীর দৃষ্টিগোচর হলো না। নদী আবার জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার, কথা বলছেন না যে?

রাকিব এবার সরল উত্তর দিল, কফি খাচ্ছিলাম তো। শীত-ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে গরম কফি খাওয়ার মজাই আলাদা।

: বেশ ভালো। কবিতার ভাব আসেনি তো?

: হ্যাঁ, বলতে পার।

: তাও বেশ ভালো। কিন্তু কবি সাহেব, আমি যে আপনাকে ফোন দিয়েছি, ধরেননি কেন?

: কই, ফোন দিয়েছিলে নাকি?

: একবার নয়, কয়েকবার। প্রথমে মোবাইলে। পরে ল্যান্ড নম্বরে। দুটোর একটাও ধরেননি।

: স্ট্রেঞ্জ! আমি মোবাইল বা ল্যান্ড ফোন কোনোটারই শব্দ পাইনি। মোবাইল ও ল্যান্ড ফোন দুটোই বেডরুমে তো, তাই হয়তো।

: কিন্তু আমারও কেমন জানি মনে হয়েছিল, আপনি বাসায়। আমি আজ বিকেলে নাবিদ ভাইয়ার দোকানে গিয়েছিলাম। ওখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত জুঁই ভাবি ও মৌনতার সঙ্গে কাটিয়েছি। ফেরার পথে ভাবলাম, আপনার সঙ্গে একবার দেখা করে যাই। তাই ফোন দিয়েছিলাম।

রাকিব বলল, সরি। আমি আসলে অন্যমনস্ক ছিলাম মনে হয়। তাই শুনিনি।

নদী নিচ থেকে বলল, হয়েছে। আপনাকে আর সরি বলতে হবে না। এখন আপনি কী নিচে আসবেন, নাকি আমাকে ওপরে আসতে হবে?

রাকিব তাড়াতাড়ি বলল, এটা আবার কী কথা? তুমি ওপরে আস।

নদী বলল, না, মানে, আমরা আজ একটু বাইরে খাব তো। তাই বলছিলাম কী, আপনি যদি রেডি থাকেন, তাহলে সরাসরি নিচে চলে আসেন। ওপরে উঠে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমার বেশ ক্ষুধা পেয়েছে।

রাকিব বলল, আমি রেডি নই। তুমি ওপরে আস। আর আমরা মানে, কে কে রেস্টুরেন্টে খাবে?

নদী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বলল, আমরা মানে, আমি আর আপনি। আর আজ আমি আপনাকে খাওয়াব।

রাকিব ব্যালকনি ছেড়ে ভেতরে এসে দরজা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, তুমি খাওয়াবে মানে?

নদী দরজা গলে লাউঞ্জে ঢুকে বলল, আমি খাওয়াব মানে আমার টাকায় খাওয়াব। আমি নাবিদ ভাইয়ার দোকানে কাজ নেওয়ার পর সপ্তাহে একদিন কাজ করি আর যা-ই করি, বেতন তো পাচ্ছি। আগের কিছু টাকা জমিয়ে মাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলাম। আজ আপনাকে নিয়ে ডিনার করব।

: তুমি খাওয়াবে কেন?

: আমি খাওয়াব না কেন?

: না, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, তুমি সপ্তাহে মাত্র একদিন কাজ কর। কীই–বা টাকা পাও?

: যা পাই, এতে আমাদের আজকের ডিনার হয়ে যাবে। আজ কিন্তু কারি পটে তন্দুরি চিকেন আর নান রুটি খেলে হবে না। আজ আরও অনেক কিছু খেতে হবে।

রাকিব মৃদু হেসে বলল, আচ্ছা। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>